নাবালকের জমি হস্তান্তরের নিয়ম কি?
***প্রশ্ন নাবালকের জমি হস্তান্তরের নিয়ম কি?
***সমাধানঃ মুসলিম আইনঃ-মুসলিম আইন অনুসারে, পিতা নাবালকের স্বাভাবিক অভিভাবক। নাবালকের পক্ষে পিতা বিশেষ কারনে (যেমন- নাবালকের ভরন-পোষণ, শিক্ষা খরচ, চিকিৎসা খরচ ইত্যাদি) নাবালকের সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারেন। পিতার মৃত্যুতে অন্য কেউ নাবালকের সম্পত্তি হস্তান্তর করতে চাইলে তাকে আদালতের অনুমতি নিতে হবে।
*নাবালকের সম্পত্তি বিক্রি’ বলতে প্রথমত আমরা যা বুঝি তা হচ্ছে, একজন ‘নাবালক’ যে কিনা এখনো ‘সাবাল’ হয়নি, কিন্তু তার নামে কিছু সম্পত্তি রয়েছে, সেই সম্পত্তি বিক্রি।
*নাবালকের সম্পত্তি বিক্রি করার প্রক্রিয়া। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, অন্য কারো সম্পত্তি বিক্রি নিয়ে তো আলাদা করে কথা বলতে বা লেখা পড়তে দেখা যায় না; যার সম্পত্তি বিক্রির প্রয়োজন হয়, সে গিয়ে সাব- রেজিস্ট্রি অফিসে ক্রেতার কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে। সেখানে, নাবালকের সম্পত্তি বিক্রি নিয়ে কেন আলাদা করে এতো মাতামাতি?
নাবালকের সম্পত্তি বিক্রি নিয়ে কেন এতো মাতামাতি?- প্রিয় ভাই/বোন, মাতামাতিটা সবসময় ব্যতিক্রমকে নিয়েই হয়ে থাকে। নাবালকের বিপরীত হচ্ছে সাবালক; সাবালক কে তার সম্পত্তি বিক্রি করতে কখনো কাউকে জিজ্ঞাসা করতে হয় না। সাবালক নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারে, তাই তার স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করতে তার কাওকে জিজ্ঞাসা করতে হয় না। নাবালক ব্যক্তি সাবালক হওয়ার আগ পর্যন্ত তার সম্পত্তি বিক্রি করার জন্য বাবাই যথেষ্ট। মনে রাখার সুবিধার্থে আরও সহজ করে বললে বলা যায়, সাবালকের সম্পত্তি বিক্রির ক্ষেত্রে তার বাবা- মা, আত্মীয়- স্বজন, কোন অভিভাবকের অনুমতির প্রয়োজন নেই। সেখানে, নাবালককে তার সম্পত্তি বিক্রি করতে হলে বাবা- মা, আত্মীয়- স্বজন বা কোন অভিভাবকের দ্বারস্থ হতে হবে। অথ্যাৎ বাবা- মা, আত্মীয়- স্বজন, কোন অভিভাবক ব্যতীত নাবালকের সম্পত্তি বিক্রি করা সম্ভব নয়। যদিও নাবালক নিজের সম্পত্তি নিজে বিক্রি করতে পারে না, কিন্তু নাবালকের নামে সম্পত্তি ক্রয় করা সম্ভব।
***একজন নাবালক সম্পত্তি ক্রয় করতে পারে বা গ্রহণ করতে পারে কিন্তু পক্ষান্তরে বিক্রি কেন করতে পারে না কেন?
সাবালকত্ব আইন ১৯৭৫ অনুযায়ী ১৮ বছরের কম বয়সী যেকোনো ব্যক্তির ‘নাবালক’। সাবালকত্ব আইনই বলে দিচ্ছে, আপনাকে সাবালক হতে হলে অন্তত ১৮ বছর বয়সী হতে হবে। কেউ কেউ এখানে আবার প্রশ্ন করতে পারেন যে, ১৮ বলতে আসলে ১৮ বছরে পড়লে নাকি ১৮ বছর পূর্ণ হলে?- উত্তর হচ্ছে, ১৮ পূর্ণ হলে।
চুক্তি আইন ১৮৭২ অনুযায়ী কোন নাবালক ব্যক্তি চুক্তি সম্পাদন করতে পারে না। জমি ক্রয় বিক্রয় এক ধরনের চুক্তি। আর চুক্তি আইন অনুযায়ী নাবালক চুক্তি সম্পাদন করতে পারে না। অর্থাৎ, চুক্তি আইনেও বাঁধা রয়েছে।
সচেতন পাঠক প্রশ্ন করতে পারেন যে, বিক্রয় যেমন চুক্তি, ক্রয়ও তেমন চুক্তি। নাবালক তো ক্রয় বিক্রয় দুটোই করতে পারেন না, তাহলে পূর্বে কেন বলা হল যে, একজন নাবালক সম্পত্তি ক্রয় করতে পারে বা গ্রহণ করতে পারে কিন্তু পক্ষান্তরে বিক্রি করতে পারে না। আপনার প্রশ্নের জন্য অবশ্যই সাধুবাদ জানাই। আপনার প্রশ্নের জবাবে জানানো হচ্ছে যে, সম্পত্তি হস্তান্তর করা হয় হস্তান্তর আইন ১৮৮২ অনুসারে। আর এই হস্তান্তর আইনেই নাবালকের বরাবর বা অনুকূলে বা নাবালকের পক্ষে কোন সম্পত্তি হস্তান্তরে কোন বিধি নিষেধ নেই। যার ফলে, নাবালকের অভিভাবক কোন সম্পত্তি নাবালকের পক্ষে ক্রয় করলে তা বৈধ হবে। হস্তান্তর আইন নাবালকের সম্পত্তি হস্তান্তরে বাঁধা প্রদান করলেও নাবালকের অনুকূলে সম্পত্তি হস্তান্তরে বাঁধা প্রদান করেননি। যেহেতু তথ্য প্রযুক্তির যুগ, তাই আরও মিন উদাহরণ টানলে বলা যায়, নাবালকের সম্পত্তি ক্রয় বিক্রয়ের সময় মনে রাখতে হবে, Incoming free, outgoing blocked. অর্থাৎ, নাবালকের অনুকূলে তথা নাবালকের নামে সম্পত্তি আসতে পারবে, কিন্তু নাবালকের সম্পত্তি বাহিরে যেতে পারবে না।
১৯০৮ সালের রেজিস্ট্রেশন আইনের ৩৫ ধারা মতে, কোন নাবালক দলিল সম্পাদন করতে পারবে না। নাবালকের পক্ষে তার বাবা বা মা বা অভিভাবক দলিল সম্পাদন করতে হবে।
উপরোক্ত ৪ টি আইনে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে যে বাঁধা প্রদান করেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে একজন নাবালক চাইলেও তার সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারবে না। হোক সেটা সাফ কবলা তথা বিক্রি বা দান বা অন্য যেকোনো কিছু।
প্রশ্ন হচ্ছে একজন নাবালকের সম্পত্তি বিক্রির করার প্রয়োজন কেন?
প্রথমত, নাবালক বা সাবালক যেই হোক না কেন, তার মৌলিক চাহিদাগুলো (অর্থাৎ, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা) পূরণের স্বার্থে নাবালক বা সাবালককে অর্থ ব্যয় করতে হয়। এখন আপনি আমি এমনও পরিবার দেখেছি যারা সাবালক পুত্র বইকি সাবালক পুত্রের স্ত্রী সন্তানকেও বাড়ির কর্তা তথা সাবালক পুত্রের পিতা ভরণপোষণ দিচ্ছে সাথে মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করার অর্থও। অন্যদিকে, নাবালকের ভরণপোষণের জন্য তার সম্পত্তি বিক্রি করতে হচ্ছে, এমন পরিবারও আমরা কদাচিৎ দেখতে পাই। এই ধরনের পরিবার হয়ত কয়েক হাজারে একটি বলে আমরা সচরাচর এই ধরনের আইনি জটিলতা দেখতে পাই না। কিন্তু, এই ধরনের অনেক নাবালক রয়েছে যারা তাদের বাবা বা মায়ের মৃত্যুতে সম্পদের মালিক হয়ে যাচ্ছে অথবা বাবা মা কোন সম্পদ নাবালক সন্তানের নামে ক্রয় করেছেন, এখন ‘পরিস্থিতির শিকার’ হয়ে বা ‘পরিস্থিতির বিবেচনায়’ উক্ত সম্পত্তি বিক্রি করতে হচ্ছে, তখন গিয়ে আলোচ্য জটিলতাটি চলে আসছে। আপনি পরিস্থিতির শিকার মানে হচ্ছে, আপনি বাধ্য। একজন নাবালকের ভরণপোষণ দিতে গিয়ে তার বাবা-মা বা অভিভাবক যখন ব্যক্তিগতভাবে অপারগ তখন তিনি নাবালকের সম্পত্তি বিক্রি করতে বাধ্য। অথবা, দেখা যাচ্ছে যে, নাবালকের সম্পত্তিটি বিক্রি না করে দিলে সেটি ধ্বংসের পথে। এখানেও আপনি প্রশ্ন রাখতে পারেন, যে সম্পত্তি নাবালকের জন্য ধ্বংসের পথে সেটি কে ক্রয় করবে?- কিছু সম্পত্তি থাকে যেগুলো একজনের জন্য বা এক পেশার মানুষের জন্য যখন শেষ হয়ে যায় বা ধ্বংস হয়ে যায় তখনি কেবল সেটি অন্যের জন্য ক্রয় করার উপযুক্ত হয়, নাবালকের সম্পত্তি যখন বিনষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়, তখন সেটি নাবালকের অভিভাবক বিক্রি করতে পারবে।
নাবালকের ভরণপোষণের জন্য প্রয়োজন না হলেও আপনি অভিভাবক হিসেবে যখন দেখছেন যে নাবালকের সম্পত্তিটির দাম বা মূল্য একেবারে দ্বিগুণ হয়ে গেছে বা কেউ দ্বিগুণ মূল্য পরিশোধ করে উক্ত সম্পদ ক্রয় করতে চাচ্ছে, তখন নাবালকের সম্পত্তি বিক্রি করা বা না করা কোনটা নাবালকের পক্ষে স্বার্থপরতা, সেটাও নিশ্চয়ই আমাকে বলে দিতে হবে না? তাছাড়া, সম্পত্তির মূল্য বিভিন্ন সময়ে কতো কারণে বৃদ্ধি পেতে পারে তার তো আর কোন ইয়ত্তা নেই।
যখন নাবালকের সম্পত্তি হাত ছাড়া হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয় বা কেউ নাবালকের সম্পত্তি অবৈধভাবে হাতিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, তখন নাবালকের অভিভাবক পরিস্থিতির বিবেচনায় উক্ত সম্পত্তি বিক্রি করে উক্ত অর্থ নাবালকের জন্য অন্য কোন নিরাপদ স্থানে বিনিয়োগ বা ব্যাংকে গচ্ছিতও রাখতে পারেন।
কে বা কারা নাবালকের সম্পত্তি বিক্রি করতে পারেঃ কে বা কারা নাবালকের সম্পত্তি বিক্রি করতে পারবে
নাবালকের অভিভাবক বলতে আমরা অনেকেই আবার আইনগত অভিভাবক এবং কার্যত অভিভাবক এর মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারি না। আইনগত অভিভাবক হচ্ছে, যে অভিভাবক নাবালকের স্বার্থে নাবালকের শরীর এবং সম্পত্তির দায়িত্ব নিবেন এবং প্রয়োজনবোধে সম্পত্তি বিক্রি, বন্ধক, যেকোনো ধরনের পরিবর্তন, পরিবর্ধন, হস্তান্তর ইত্যাদি করতে পারেন। পক্ষান্তরে কার্যত অভিভাবক হচ্ছে, যে অভিভাবক স্বেচ্ছায় নাবালকের শরীর বা সম্পত্তির দায়িত্ব নিতে পারেন কিন্তু নাবালকের সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারেন না এবং তিনি যদি কোনভাবে সম্পত্তি হস্তান্তর করে থাকেন তবে তা বাতিল বলে গণ্য হয়। সাধারণত অভিভাবক বাবার বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে তবে তারা ব্যর্থ হলে মায়ের বংশের আত্মীয় না সে দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারে। আইনগত অভিভাবকের ক্ষেত্রে পিতা ব্যতীত বাকি সকলেই আদালত কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত হবেন; কেননা পিতা স্বাভাবিক অভিভাবক।
আমরা পূর্বেই জেনেছি যে, সাবালকত্ব আইন ১৯৭৫ অনুযায়ী ১৮ বছরের কম বয়সী যেকোনো ব্যক্তির ‘নাবালক’। চুক্তি আইন ১৮৭২ অনুযায়ী কোন নাবালক ব্যক্তি চুক্তি সম্পাদন করতে পারে না। জমি ক্রয় বিক্রয় এক ধরনের চুক্তি। আর চুক্তি আইন অনুযায়ী নাবালক চুক্তি সম্পাদন করতে পারে না। ১৯০৮ সালের রেজিস্ট্রেশন আইনের ৩৫ ধারা মতে, কোন নাবালক দলিল সম্পাদন করতে পারবে না। নাবালকের পক্ষে তার বাবা বা মা বা অভিভাবক দলিল সম্পাদন করতে হবে। এখন আমরা জানবো বাবা, মা বা অন্যান্য অভিভাবক কিভাবে নাবালকের অভিভাবক হয়ে নাবালকের সম্পত্তি বিক্রি, বন্ধক বা হস্তান্তর করতে পারবেন।
নাবালকের বাবা
নাবালকের সম্পত্তি নাবালকের পিতা কারো কোন প্রকারের ওজর আপত্তি বা অনুমতি ব্যতীতই বিক্রি করতে পারবেন। কেননা, নাবালকের পিতা নাবালকের স্বাভাবিক অভিভাবক।
স্বাভাবিক অভিভাবক এর মৃত্যু হলে যেমন অন্যান্য অভিভাবকেরা নাবালকের অভিভাবক হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারেন ঠিক তেমনি স্বাভাবিক অভিভাবক যদি তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয় সেক্ষেত্রেও অন্যান্য অভিভাবক চাইলে নাবালকের অভিভাবক হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারেন।
তাছাড়া নাবালকের অভিভাবক হওয়ার জন্য মা-বাবা দাদা-দাদী নানা-নানী ইত্যাদি আত্মীয়স্বজনের মধ্যে যদি মতবিরোধ সৃষ্টি হয় সে ক্ষেত্রেও নাবালকের অভিভাবক নিশ্চিত করার জন্য আদালত নাবালকের অভিভাবক নিয়োগ করে দিতে পারেন।
আবার, যদি একজন নাবালকের অভিভাবক হওয়ার জন্য একের অধিক আবেদনকারী থাকে সেই ক্ষেত্রে কে অভিভাবক হবে এটা নিশ্চিত করার জন্য আদালতের দ্বারস্থ হতে হবে।
নাবালকের মা
আপাত দৃষ্টিতে মাকে আমরা বাচ্চার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ অভিভাবক মানলেও আইনত মা কিন্তু স্বাভাবিক অভিভাবক নন। মুসলিম পারিবারিক আইন অনুসারে, সন্তানের কাস্টাডির ব্যাপারেও মায়ের রয়েছে লিমিটেড অধিকার। সন্তান কার কাছে থাকবে এই নিয়ে বিতর্ক শুরু হয় তখন আপনাকে যেতে হবে মুসলিম পারিবারিক আইনে। মুসলিম পারিবারিক আইন অনুসারে, ছেলে সন্তান ৭ বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের কাছে থাকতে পারবে এরপর সে স্বাভাবিক অভিভাবক বাবার কাস্টাডিতে চলে যাবে। আর মেয়ে সন্তানের বেলায় সাবালিকা হওয়া পর্যন্ত মায়ের কাছে থাকবে, তারপর বাবার কাছে চলে যাবে। সাধারণত, বাবা মায়ের মধ্যে তালাক হয়ে গেলে সন্তান কার কাছে থাকবে এই বিরোধ নিষ্পত্তিতে উক্ত বিধানটি মান্য করা হয়। কিন্তু, নাবালক সন্তানের সম্পত্তি বিক্রি বা বন্ধকের ক্ষেত্রে কিন্তু এই ধরনের কোন বয়স সীমা নেই। এখানে একচেটিয়া অধিকার দেওয়া হয়েছে শুধুমাত্র বাবাকে। মা যদি অভিভাবক হয়ে নাবালকের সম্পত্তি বিক্রি করতে চায়, তখন মাকে অবশ্যই আদালতের অনুমতি নিতে হবে।
অন্যান্য অভিভাবক
বাবা মা ছাড়াও আরও অনেক নিকট আত্মীয়ও একজন নাবালকের অভিভাবক হতে পারেন। একজন নাবালকের জন্য কারা কারা অভিভাবক হতে পারেন, তাদের একটা লিস্ট নিম্নে দেওয়া হবে যার মাধ্যমে আমরা জানতে পারবো কারা ইচ্ছে করলে আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে কোন নাবালকের অভিভাবক হতে পারেন। লিস্টটি নিম্নরূপ:
পিতা
পিতার উইল দ্বারা নিয়োগকৃত ব্যক্তি
দাদা ও দাদার উইল দ্বারা নিয়োগকৃত ব্যক্তির
আপন/সহোদর ভাই
রক্তের সম্পর্কের ভাই
আপন/সহোদর ভাইয়ের ছেলে
রক্তের সম্পর্কের ভাইয়ের ছেলে
পিতার আপন/ সহোদর ভাইয়ের ছেলে
পিতার রক্তের সম্পর্কের ভাইয়ের ছেলে
মাতা নাবালকের অভিভাবক যিনি নাবালক এর পক্ষে নাবালকের কল্যাণে নাবালকের সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারে।- ১৪ ডিএলআর ৫০৬
প্রথমত, আদালত তাকেই নাবালকের অভিভাবক হিসেবে নিযুক্ত করলেন যার মাঝে নাবালকের কল্যাণ নিহিত। নাবালকের কোন প্রকারের অকল্যাণ হতে এমন ব্যক্তিকে কখনো তার অভিভাবক হিসেবে আদালত নিয়োগ করবেন না।
দ্বিতীয়ত, নাবালকের বয়স, ধর্ম এবং জেন্ডার/লিঙ্গ এই তিনটি বিষয়কে বিবেচনায় নিয়ে কোন ব্যক্তি নাবালকের জন্য যোগ্য অভিভাবক হবেন সেই বিষয়টি বিবেচনা করবেন। বাবা-মা একজন বা উভয়ই যদি মৃত হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে ওনাদের শেষ ইচ্ছা বা ঐ জাতীয় কিছু যদি থেকে থাকে সেই ক্ষেত্রে শেষ ইচ্ছা অনুসারে ও অভিভাবক নিয়োগ করা হতে পারে বা আদালত সেটাকে কিছুটা গুরুত্ব দিতে পারেন। তারপর আবেদনকারী নিজে কতটা চরিত্রবান, আর্থিকভাবে কতটা সক্ষম এবং আবেদনকারী এবং নাবালকের মধ্যকার সম্পর্ক সেটা কতটা ঘনিষ্ঠ সেই বিষয়টিও বিবেচনা করে দেখবেন। তাছাড়া, আবেদনকারীর সাথে নাবালকের বা নাবালকের সম্পত্তির সঙ্গে অতীত এবং বর্তমান কোন সম্পর্ক থাকলে সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখবেন।
এতক্ষণ তো জানলাম মুসলিম আইন অনুসারে, নাবালকের অভিভাবকত্ব নিয়ে। এবার আসি জানুন, হিন্দু আইন অনুসারে নাবালকের অভিভাবকত্ব নিয়ে। হিন্দু আইনে নাবালকের অভিভাবক ৩ প্রকারে ভাগ করা হয়ে থাকে।
প্রথমত, মুসলিম আইনের মত হিন্দু আইনেও নাবালকের স্বাভাবিক অভিভাবক পিতা। কিন্তু, পিতা জীবিত যদি না থাকলে সে ক্ষেত্রে নাবালকের মাতা নাবালকের স্বাভাবিক অভিভাবক হতে পারবেন। নাবালকের মাতা নাবালকের পিতার অবর্তমানে স্বাভাবিক অভিভাবক হবে, যেটা মুসলিম আইনের ব্যতিক্রম; এমনকি পুনরায় বিবাহ করলেও এই অভিভাবকত্ব হারাবেন না। কিন্তু এখানে একটি কথা উল্লেখযোগ্য যে, পিতা যদি জীবিত অবস্থায় উইলের মাধ্যমে কোনো অভিভাবক নিযুক্ত করে দিয়েছেন সে ক্ষেত্রে পিতার মৃত্যুতে মা জীবিত থাকা সত্ত্বেও স্বাভাবিক অভিভাবক হতে পারবেন না। পিতার অবর্তমানে পিতার নিযুক্ত ব্যক্তি নাবালকের অভিভাবক হবেন, এটি হচ্ছে হিন্দু আইনে নাবালকের অভিভাবক হওয়ার।
দ্বিতীয় উপায়। তাছাড়া, আদালতের মাধ্যমে নাবালকের অভিভাবক নিযুক্ত করা যায়। প্রথম দুই উপায়ের অনুপস্থিতিতে।
তৃতীয় উপায়ে হিন্দু আইনে নাবালকের অভিভাবক নিয়োগ করা যাবে আর নাবালকের বয়সের যে ব্যপারগুলো রয়েছে সেগুলো হিন্দু-মুসলিম উভয় আইনের ক্ষেত্রেই সমান থাকবে।
নাবালকের অভিভাবক নাবালকের সাথে প্রতারণা করে বা নাবালকের সম্পত্তি আত্মসাৎ করে সেক্ষেত্রে নাবালকের জন্য আইনি প্রতিকার কি?
কোন ব্যক্তি যদি আদালত কর্তৃক আইনানুগ প্রক্রিয়ায় অভিভাবক হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পরও নাবালকের মঙ্গলার্থে বা নাবালকের স্বার্থ ব্যতীত অন্য কোন অসৎ উদ্দেশ্যে নাবালকের সম্পত্তি বিক্রি করে বা বন্ধক রাখে না অন্য যেকোনো ধরনের হস্তান্তর করে থাকে, সেই ক্ষেত্রে নাবালক ব্যক্তি সাবালক হবার তিন বছরের মধ্যে ওই হস্তান্তর বাতিল করার জন্য আদালতে মামলা করতে পারবেন। অর্থাৎ কোনভাবে নাবালকের আইনানুগ অভিভাবক হয়ে নাবালকের সম্পত্তি আত্মসাৎ করার কোন প্রকারের উদ্দেশ্য যদি থেকেও থাকে সেটিও কিন্তু বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। কেননা নাবালকের তিন বছর সময় দেওয়া হয়েছে সাবালক হওয়ার পরে মামলা করার জন্য। অর্থাৎ নাবালক চাইলেই নাবালক থাকা অবস্থায় তার অভিভাবক তার সম্পত্তি যেখানেই হস্তান্তর করুক না কেন সেটি যদি তার স্বার্থে বা মঙ্গলার্থে করা না হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে নাবালক সেটি মামলা করে উক্ত হস্তান্তর বাতিল করতে পারবে এবং নিজের সম্পত্তি নিজের কাছে ফেরত নিয়ে আসতে পারবেন। সম্পত্তি হস্তান্তর বাতিলের বিষয়টি দেওয়ানী মামলা অন্তর্ভুক্ত। নাবালক ব্যক্তির সাবালক হওয়ার পর দেওয়ানী মামলার পাশাপাশি দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর অধীনে ফৌজদারি মামলাও করতে পারবেন। পরিশেষে ধন্যবাদ দিয়ে বিদায় নিচ্ছি আল্লাহ হাফেজ সুস্থ থাকবেন এবং সুস্থ জীবন যাপন করবেন।
Bestwold নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url