ভুট্টা কিভাবে চাষ করতে হয় এবং ভূট্রা চাষের আয় ব্যায়
সূচনাঃ ভুট্টা একটি সার্বজনীন খাদ্য। ভুট্টা এমন একটি খাদ্য তালিকা যা বেশ কিছু প্রাণী এর স্বাদ আস্বাদন করে থাকে। এই ভুট্টা দ্বারা আমাদের বেশ কিছু খাদ্যের তৈরি হয়। ভুট্টা বেশকিছু খাদ্যের কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহারিত হয়ে থাকে। ভুট্টা একটি দীর্ঘ ও সল্প মেয়াদী ফসল। এটি একটি অর্থকারী ফসল যা দেশী এবং আন্তর্জাতিক বাজারে বেশ কদর রয়েছে। বিশেষ করে বর্তমান সময়ে ভুট্টা গাছের বেশ কদর রয়েছে কারণ ভুট্টার গাছ গো-খাদ্যের জন্য একটি বিশেষ উপকরণ যা দীর্ঘ সময় পর্যুন্ত সংরক্ষণ করে গবাদি পশুর খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা যায়।
সূচিপত্রঃ-
- ভুট্টা কিভাবে চাষ করতে হয়।
- ভুট্টা চাষের জন্য স্থান নির্বাচন।
- ভুট্টা চাষের জন্য মাটি প্রস্তুত।
- ভুট্টা বীজ নির্বাচন।
- ভুট্টার বীজ বোপন।
- ভুট্টা চাষে সেচ ব্যবস্থাপনা।
- ভুট্টা চাষের সার ব্যবস্থাপনা।
- ভুট্টা চাষের রোগ বালাই।
- ভুট্টা চাষের উপযুক্ত সময়।
- ভুট্টার ফল সংগ্রহ।
ভুট্টা কিভাবে চাষ করতে হয়ঃ- স্থান নির্বাচন,মাটি প্রস্তুত, ভুট্টা বীজ নির্বাচন, ভুট্টার বীজ বোপন ,সেচ ব্যবস্থাপনা,সার ব্যবস্থাপনা, রোগ বালাই, উপযুক্ত সময়, ফল সংগ্রহ।
ভুট্টা চাষের জন্য স্থান নির্বাচনঃ- ভুট্টা চাষের জন্য প্রয়োজন মাটি। এটি এমন একটি ফসল যা মাটি ব্যতীত অন্য কোথাও চাষ উপযোগী নয়। এমনকি মাটির মধ্যেও বেশ কিছু ভাগ রয়েছে, সব মাটিতে ভুট্টা চাষ সম্ভব না। তাহলে ভুট্টা চাষ কোন মাটিতে উপযোগী সেটা আমরা জানতে চাই! ভুট্টা চাষের জন্য এমন একটি স্থান নির্বাচন করতে হবে যে স্থানটিতে পানি জমে থাকে না। এবং ভুট্টা চাষের জন্য উপযোগী মাটি হচ্ছে- দোয়াশ মাটি, বেলে দোয়াশ মাটি।
ভুট্টা চাষের জন্য মাটি প্রস্তুতঃ
- নির্বাচিত স্থান ভালোভাবে চাষ করে নিতে হবে।
- এমন ভাবে চাষ করতে হবে যাতে করে মাটিগুলো ঝুরালো হয়ে যায়।
- চাষ করার সময় দেখে নিতে হবে যে যন্ত্র দিয়ে চাষ করব সে যন্ত্রের মাধ্যমে যেন ৮থেকে ১০ ইঞ্চি গভীরতা হারে চাষ হয়ে যায়।
- প্রয়োজনে একাধিকবার চাষ করতে হবে, যাতে করে মাটিগুলো একেবারে ঝুরালো হয়ে যায়।
- জমি চাষের সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে জৈব সার মাটির মধ্যে মিশিয়ে দিতে হবে।
- প্রয়োজন অনুসারে স্বল্প পরিসরে রাসায়নিক সার ব্যবহার করা যেতে পারে তবে রাসায়নিক সার ব্যবহার না করাই ভালো। রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে মাটির উর্বরতা শক্তি ধীরে ধীরে কমে আসে।
ভুট্টার বীজ বোপনঃ ভুট্টার বীজ একটি সিরিয়াল করে বা সারি সারি করে বীজ বপন করতে হয়। একটি লাইন থেকে আরেকটি লাইনের দূরত্ব সাধারণত ১৮ থেকে ২৪ ইঞ্চি হয়ে থাকে। এবং একটি বীজ হতে আরেকটি বীজের দূরত্ব অর্থাৎ একটি গাছ হতে আরেকটি গাছের দূরত্ব সাধারণত ৮ ইঞ্চি হতে ১০ ইঞ্চি হয়ে থাকে। মাটি প্রস্তুতিকরণ এরপর যদি মাটির এক থেকে দেড় ইঞ্চি গভীরে রসালো ভাব থাকে তাহলে বৃষ্টি উক্ত রসালো স্থানে বসিয়ে মাটি দ্বারা চাপা দিয়ে দিতে হয়। আর যদি রসালো ভাবটি মাটিতে না থাকে তাহলে হালকা একটু মাটির নিচে রেখে দিতে হয় এবং হালকা সেচের ব্যবস্থা করতে হয়। তবে ভুট্টার বীজ মাটিতে রস ভাব থাকা অবস্থায় বোপন করা উত্তম। কারণ মাটির যদি রস ধারণ ক্ষমতা বেশি থাকে তাহলে শুকনো মাটিতে বীজ বপন করার পর সেচ দিলে বীজ পচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ভুট্টা চাষে সেচ ব্যবস্থাপনাঃ ভুট্টা এমন একটি চাষাবাদ যা জলবদ্ধতা একেবারেই সহ্য করতে পারে না। তবে মাটি ও আবহাওয়ার উপর ভিত্তি করে মাটি যদি শুকনো থাকে তাহলে ভুট্টার জমিতে সেচের ব্যবস্থা করতে হয়। সাধারণত ভুট্টার জন্য চার থেকে পাঁচটি সেচের ব্যবস্থা করতে হয়।
- প্রথম সেচ- বীজ বপণের ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে অর্থাৎ বীজের পাতা যখন গজাবে গজিয়ে দুই থেকে ছয়টি পাতা হয়ে যাবে।
- দ্বিতীয় সেচ- বীজ বপনের পর হতে ৬০ থেকে ৬৫ দিনের মধ্যে অথবা বীজের পাতা যখন ১০ থেকে ১২ পাতা পর্যন্ত হয়ে যাবে।
- তৃতীয় সেচ- ৮০ থেকে ৮৫ দিনে অথবা মাথায় ফুল আসার সময় হয়ে যাবে এমন পর্যায়ে।
- চতুর্থ সেচ- বীজ বপণের তিন মাস পর অথবা মোচায় নরম দুধের মত আকার ধারণ করবে তখন।
- পঞ্চম সেচ- গাছের বয়স চার মাস হয়ে গেলে অথবা মোচা শক্ত দানা আকার ধারণ করলে।
- তবে মাথায় রাখতে হবে সেচের বিষয়টি উপরোক্ত সময়ের কম বেশি হতে পারে, এক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যে, যে স্থানে ভুট্টা রোপন করা হয়েছে সেই মাটির অবস্থা দেখে সেচ প্রদান করতে হবে।
ভুট্টা চাষের সার ব্যবস্থাপনাঃ পর্যাপ্ত পরিমাণে জৈব সার ব্যবহার করতে হবে। জৈব সার মাটিতে রস ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, মাটির ক্ষয় রোধ করে, উর্বরতা বৃদ্ধি করে ইত্যাদি। তবে স্বল্পপরিসরে রাসায়নিক সার ব্যবহার করা যেতে পারে। বর্তমান সময়ে জৈব সারের চেয়ে রাসায়নিক সারের ব্যবহার বেশি হচ্ছে। ভুট্টা চাষে আমরা যে সকল রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে পারি এর মধ্যে রয়েছে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি, এমওপি, জিপসাম, জিংক সালফেট ইত্যাদি।
তবে মনে রাখতে হবে প্রতিভার পানি দেওয়ার পূর্বে স্বল্প পরিমাণে সার প্রয়োগ করা ভালো এক্ষেত্রে আমরা দুইটি থেকে তিনটি ভাগে ভাগ করে নিতে পারি। প্রথমে সার প্রয়োগ করবো মাটি যখন প্রস্তুত করব তখন। দ্বিতীয় কিস্তিতে ছাড় প্রয়োগ করবো গাছের বয়স যখন একমাস হয়ে যাবে। তৃতীয় সার প্রয়োগ করব গাছের বয়স যখন পঞ্চাশ থেকে দুই মাস হয়ে যাবে।
ভুট্টা চাষের রোগ বালাইঃ ভুট্টায় বেশ কিছু রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে তার মধ্যে লেধা পোকায় কাটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও রয়েছে কাটুই পোকা যা পাতাও ডগাগুলো কেটে ফেলে, ঘাস ফড়িং, ক্যালসিয়ামের ঘাটতি, পাতা হলুদ হয়ে যাওয়া, ফ্লি বিটল পোকায় আক্রান্ত হওয়া ইত্যাদি।
ভুট্টা চাষের উপযুক্ত সময়ঃ বাংলাদেশে ভুট্টা চাষ এখন সারা বছরই হয়ে থাকে। তবে সাধারণত তিনটি সময় ভুট্টা চাষ বেশি লক্ষ্য করা যায়। খরি, রবি, গ্রীষ্ম এই তিনটি সময়।
- খরি- সাধারণত ইংরেজি মাসের মধ্যজুন- মধ্যজুলাই এর আদর্শ সময়ে।
- রবি- এটি মধ্য অক্টোবর হতে মধ্য নভেম্বর পর্যন্ত আদর্শ সময় ধরা হয়।
- গ্রীষ্মে- এই ভুট্টা মধ্য ফেব্রুয়ারী হতে মধ্যমার্চ পর্যন্ত বপন করা হয়ে থাকে।
খরচ সমূহ-
- জমিটি ভালোভাবে চাষ করার জন্য ১৫০০/=
- বীজ ক্রয়- ২৫০০ /=
- বীজ বপন করার জন্য শ্রমিক চারজন- ২০০০/=
- জৈব সার এবং রসায়নিক সার সব মিলিয়ে- ৫০০০/=
- সেচ খরচ- ১২০০/=
- কাটায় মাড়াই এবং ছাড়াই- ৩০০০/=
- মোট খরচ- ১৫২০০/=
আয় সমূহঃ
বর্তমান সময়ে এক বিঘা ভুট্টা কর্তন করে গবাদি পশুর খাদ্য হিসাবে বিক্রয় করলে বিঘা প্রতি ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা পাওয়া যায়।
যদি ভুট্টা সম্পূর্ণ পাকিয়ে কাটায় , মাড়াই,ঝাড়াই করা হয় তাহলে বিঘা প্রতি মাটি ভেদে ৩০ থেকে ৪০ মন ভুট্টা পাওয়া যায়।
যা বাজার মূল্য এক হাজার থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত পাওয়া যায় সে তুলনায় পাকা ভুট্টা বিক্রি করলে ৩০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা পর্যন্ত পাওয়া সম্ভব।
Bestwold নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url