আম গাছের পরিচর্যা ও কোন সার ব্যবহার করা ভালো-
সূচনাঃ আম হচ্ছে একটি সুস্বাদু ফল। আমাকে ফলের রাজা বলা হয়ে থাকে। আমাদের বাংলাদেশে জাতীয় গাছ হিসাবে আম গাছকেই নির্ধারণ করা হয়। এটি এমন একটি ফল যা প্রতিটি মানুষের প্রিয় একটি খাবার, এই ফলটি সকল বয়সের মানুষের খেতে পছন্দ করে। তাই তো আম নিয়ে রয়েছে অনেক গল্প কথা। এই রসালো ফল এর স্বাদের ভিন্নতা রয়েছে ,একেক জাতের আমের স্বাদ একেক রকম, তবে এটি এমন একটি ফল যে ফলের মধ্যে বিভিন্ন স্বাদ এর আস্বাদন পাওয়া যায়। বর্তমান সময়ে আম দিয়ে বিভিন্ন ধরনের মুখরোচক খাদ্য তৈরি হচ্ছে, এর মধ্যে অন্যতম একটি পদ হচ্ছে আমের আচার! প্রতিটি মানুষের চাহিদার বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়ায়।
সূচিপত্রঃ
- আম কোথায় পাওয়া যায়।
- আম কে কেন্দ্র করে যা যা হয়।
- আম গাছের পরিচর্যা।
- আম গাছের জন্য কোন কোন সার ব্যাবহার করা।
- আম গাছে কখন পানি দিতে হয়।
- আমের গুটি ঝরে পড়ার কারণ কি।
- আমের গুটি ঝরা রোধ করার উপায়।
- ব্যবসায়িক ভিত্তিতে আমের চাষ।
- আম দিয়ে মুখর চোখ খাবার তৈরি।
- আম গাছের কাঠের ব্যবহার।
- প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে।
আম কোথায় পাওয়া যায়ঃ আমরা আম গাছ বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলে দেখতে পাই। আমাদের বাংলাদেশের আবহাওয়াতে আম গাছ সুন্দরভাবেই বেড়ে ওঠে, এবং এর ফলনও ভালোই পাওয়া যায়। তবে বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলের থেকে উত্তর অঞ্চলের বিশেষ করে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, এসব অঞ্চলে আম উৎপাদন বেশি হয় এবং বাণিজ্যিকভাবে আম চাষ উত্তর অঞ্চলেই হয়ে থাকে। তাই তো আমের রাজধানী হিসেবে খ্যাতো উত্তর অঞ্চলের রাজশাহী জেলা।
আম কে কেন্দ্র করে যা যা হয়ঃ
- আম নিয়ে ব্যবসা হয় অর্থাৎ ব্যবসায়িক ভিত্তিতে আম চাষ করা হয়।
- আম নিয়ে বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরি করা হয় যা অত্যন্ত সুস্বাদু ও মুখরুচক হয়ে থাকে।
- আমের ঔষুধি গুনাবলীও রয়েছে।
- আম কাঠের ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় অনেক আসবাবপত্র তৈরি করা যায়।
- আম গাছ প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে এবং এর দ্বারা বনায়ন করাও সম্ভব হয়।
- আম গাছ একটি স্থাবর সম্পত্তির হিসাবে কাজ করে থাকে।
- আম নিয়ে সরকারি ভাবে গবেষণা হয় এবং এর জন্য অনেক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়।
আম গাছের পরিচর্যাঃ আম গাছে মুকুল আশার পূর্বে হতেই এর পরিচর্যা শুরু হয়ে যায়। গাছে মুকুল আসার ১ থেকে দেড় মাস পূর্বেই এর পরিচর্যার কার্যক্রম হাতে নিতে হয়। বর্ষাকাল পার হওয়ার সাথে সাথে কিছু পরিচর্যা থাকে যা করতে হয়। যেমনটি বলতে পারি বর্ষাকালে প্রবল বৃষ্টি হওয়ার ফলে আম গাছের নিচে অনেক স্যাতসেতে ভাব থাকে সেগুলো পরিষ্কার করে দিতে হবে, বর্ষাকালে অনেক ঘাস জন্মে সে ঘাসগুলো পরিষ্কার করে দিতে হবে, আগাছা পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। গাছের আঁশ- পাশে ভালো করে খুড়ে নিতে হবে। প্রয়োজনমতো জৈব সার ব্যবহার করতে হবে। অল্প পরিমাণ রাসায়নিক সার ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে যতটা সম্ভব রাসায়নিক সার ব্যবহার না করাই উত্তম।
আম গাছের জন্য কোন কোন সার ব্যাবহার করা ভালোঃ একটি গাছ রোপনের পর গাছটির স্বাস্থ্য এবং খাদ্যের জন্য বেশ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয় তার মধ্যে একটি হচ্ছে সার ব্যবস্থাপনা। গাছের বয়স বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে তার দৈহিক বৃদ্ধি ঘটে থাকে এজন্য তার প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য ও ভিটামিনের। একটি গাছে যে সকল সার প্রয়োগ করতে হয়- জৈব সারের ব্যবস্থা করতে হবে। রাসায়নিক সারের মধ্যে- ইউরিয়া, টি এস পি, এম ও পি, জিপসাম, জিংক সালফেট, বোরিক এসিড, ইত্যাদি।
আম গাছে কখন পানি দিতে হয়ঃ আম গাছে মুকুল আসার পর হতে পানি সেচের প্রয়োজন হয়। যদি আম গাছের জমিটি শুকনো থাকে তাহলে সেচের ব্যবস্থা করতে হয়। তবে সাধারণত আমের মুকুল গুটি আকার ধারণ করলে পানির সেচ দিতে হয়, যাতে করে গুটিগুলো ঝরে না পড়ে। প্রথম সেচ দেওয়ার পর যদি আর কোন বৃষ্টিপাত না হয় এবং গাছের জমিটি শুকনো আকার ধারণ করে তাহলে সাধারণত ১৫ দিন পর পরের ব্যবস্থা করতে হয়, এভাবে আমের গাছের গোড়ায় অন্তত চার থেকে পাঁচটি সেচের ব্যবস্থা করতে হয়।
আমের গুটি ঝরে পড়ার কারণ কিঃ
- প্রাকৃতিক কারণ- একটি আমের থোকায় অনেকগুলো মুকুল থাকে এরই মধ্যে বেশ কিছু গুটির আকার ধারণ করে এর সংখ্যা ৩০ থেকে ৬০ টি ধারা যায়, সর্বশেষ একটি থোকাতে এক থেকে পাঁচটি, জাত ভেদে এর থেকেও বেশি আম টিকে যায়। তবে এক দুইটির বেশি থোকাতে আম থাকলে এর সাইজ আকার অনেকাংশে ছোট হয়ে যায়।
- মাটিতে রসের অভাব- মাটিতে রসের অভাব দেখা দিলে আমের গুটি ঝরে যায়। আমের সিজনে বৃষ্টিপাত কম হলে এই সমস্যা প্রপো টাকার ধারণ করে।
- পোকার আক্রমণ হলে- আমি গুটি আসার পরে এক ধরনের পোকা আমের গুটির রস খেয়ে ফেলে যার ফলে আমের গুটি ঝরে যায়।
আমের গুটি ঝরা রোধ করার উপায়ঃ একটি ঠকাতে অনেকগুলো গুটি থাকে সাধারণত একটি ঠকাতে একটি আম হওয়া ভালো এতে করে ফলন ভালো হয়। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে বছর একটি থোকাতে একটি গুটি পাওয়া যায় সে বছর আমের ফলন ভালো হয় তবে গুটি ঝরা বন্ধ করতে বোরিক এসিড ১০ লিটার পানিতে ৬ গ্রাম হারে মিশিয়ে ১০ থেকে ২০ দিন পর পর স্প্রে করলে গুটি ধরা অনেক আছে কমে যায়। গাছের নিচে রসের অভাব হলে গুটি ঝরে যায় এজন্য পর্যাপ্ত রসের ব্যবস্থা করার জন্য প্রয়োজন অনুপাতে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে এবং প্রতি লিটার পানি ইউরিয়া সার প্রয়োগ করলে গুটি ঝরা কমানো যায়। বিভিন্ন ধরনের রোগ ও পোকামাকড়ের হতে আমের গুটি রক্ষার জন্য বাজারে বেশ কিছু ঔষধ পাওয়া যায় এর মধ্যে ছত্রাকনাশক কীটনাশকের স্প্রে করতে হবে।
ব্যবসায়িক ভিত্তিতে আমের চাষঃ আমি এমন একটি ফল যা সকলেই খেতে পছন্দ করে। এই ফলটি কাঁচা এবং পাকা দুই ভাবেই খাওয়া যায়। আম দিয়ে হয় নানান ধরনের রেসিপি, এজন্যই তো আমের চেয়ে ব্যাপক চাহিদা। আর এই আমের চাহিদার প্রেক্ষিতেই রয়েছে একটি বিশাল মার্কেট, এবং আম একটি অর্থকারী ফসলও বটে। যার ভিত্তিতে আম চাষের জন্য চাষীদের উদ্বুদ্ধ করে। বাণিজ্যিকভাবে আম চাষের সম্ভাবনা রয়েছে ব্যাপক, বাংলাদেশের উত্তর অঞ্চলে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আম চাষ করা হয়। তবে সরকারি সহায়তা পেলে সারা বাংলাদেশ বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এই ফলের চাষ করার সম্ভাব। বাংলাদেশের আম দেশের গুন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে, যার ফলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও অনেক অবদান রয়েছে। সবকিছুর ভিত্তিতে বলাই যায় এদেশে আমের একটি বিশাল ব্যবসায়িক মার্কেট রয়েছে, যার উপর ভিত্তি করে আম চাষের সংখ্যা বৃদ্ধি হয়ে চলেছে।
আম দিয়ে মুখর চোখ খাবার তৈরিঃ আম দিয়ে বিভিন্ন ধরনের মুখরূচক খাবার তৈরি করা হয়। কাঁচা আম দিয়ে তৈরি হয় আমের আচার, আম থেকে তৈরি হয় আমতা, আমের জুস, আম দরা, ছোট ছোট আম দিয়ে তৈরি হয় আমলা, আম থেকে তৈরি হয় বিভিন্ন ধরনের ম্যাংগো চকলেট, তৈরি হয় চাটনি, পাকা আম খেতে অনেক সুস্বাদু। নাম না জানা আরো অনেক পদের তৈরি হয় এই আম থেকেই।
আম গাছের কাঠের ব্যবহারঃ একটি ভালো মানের আম গাছ থেকে পাওয়া যায় কাঠ। আরে আম কার্ড থেকেই তৈরি হয় বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র। যেমন: টেবিল, চেয়ার, দরজা, জানালা, চৌকাঠ, পায়া ইত্যাদি।
প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করেঃ আম গাছে থেকে আমরা ছায়া পাই, যা প্রখর রৌদ্রের মধ্যে একটি শান্তির নীড়। আম গাছ মানুষের ছাড়া কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে আবার অক্সিজেন ছাড়ে যা প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় একটি বড় অবদান।
উপসংহারঃ আম নিয়ে কথার শেষ নাই আম একটি জাদুকরি ফল। যা প্রতিটি মানুষেরই চাহিদার বিষয়বস্তু, আমের রয়েছে বিভিন্ন ধরনের স্বাদ, জাত ভেদে রয়েছে এর দেখার সৌন্দর্য। যাই বলি না কেন আম সম্পর্কে বলার কমতি থেকে যায় যেন। পরিশেষে বলতে চাই আমের একটি বিশাল মার্কেট রয়েছে যা নতুন আম চাষিদের জন্য একটি সম্ভাবনার দোয়ার। তাই আম চাষে আত্মনিয়োগ করুন এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠুন। আর যাদের রয়েছে দুই একটি আমের গাছ তারা মনোযোগ সহকারে আমের গাছটির পরিচর্যা করে, বেশি উৎপাদনের আনন্দ অনুভব করুন।
Bestwold নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url