ওয়ারিশ সনদ কি? ওয়ারিস সনদ করতে কি কি কাগজপত্রের প্রয়োজন?
আপনি কি ওয়ারিশ সনদ করা নিয়ে চিন্তিত? যদি আপনার সমস্যা ওয়ারিশ সনদ সম্পর্কে থাকে তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আপনার প্রশ্নের বা আপনার সমস্যার সমাধান আমরা এই আর্টিকেলে তুলে ধরেছি, আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ে শেষ করলে আশা করছি আপনার সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
যেকোনো ব্যক্তির যদি স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি থেকে থাকে তবে সেই ব্যক্তি ওয়ারিশ সম্পর্কে অবশ্যই জ্ঞাত থাকার কথা। তবে এটি সংগ্রহ এবং কার্যকারিতা সম্পর্কে ধারণা অনেক সময় থাকে না, ওয়ারিশ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা এবং জ্ঞান আহরণের জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি আমরা আপনাদের মাঝে নিয়ে এসেছি।
সূচনা
ওয়ারিশ সনদ একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিলও বটে। তবে এটি সংগ্রহ করে কোন একজন মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া উত্তরাধিকার গন। উত্তরাধিকার সনদপত্রের প্রয়োজন হয় বা ওয়ারিশ সনদদের প্রয়োজন হয় মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া স্থাবর ও অস্থাবর সকল সম্পত্তি ভাগ বন্টন এবং তার আর্থিক বিষয়ক বিভিন্ন কাজের জন্য।ওয়ারিশ সনদ সংগ্রহ শুধু তাদেরই প্রয়োজন হয় যারা মৃত ব্যক্তির ওয়ারিস বা উত্তরাধিকারী।
আর্টিকেলটির বিষয়বস্তু
- ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকারী কারা।
- ওয়ারিশ সনদ কি।
- ওয়ারিশান সনদপত্রের আবেদন ফরম কোথায় পাওয়া যায়।
- ওয়ারিশ সনদের আবেদন প্রক্রিয়া।
- ওয়ারিশ সার্টিফিকেট এর মেয়াদ।
- ওয়ারিশ সনদ পরিবর্তন হতে পারে কি।
- ওয়ারিশান সনদপত্র করতে কি কি কাগজপত্রের প্রয়োজন।
- ওয়ারিশান সনদপত্র কি কি কাজে ব্যবহার হয়।
- ওয়ারিশান সনদ কিভাবে যাচাই করা হয়।
ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকারী কারা
কোন মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া রক্তের সম্পর্কিত ব্যক্তি এবং নিকট আত্মীয়, দূরবর্তী আত্মীয় যারা মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তিতে ভোগ দখলের বা মালিক হওয়ার যোগ্যতা রাখে তারাই হচ্ছে মৃত ব্যক্তির ওয়ারিস বা উত্তরাধিকারী। এক্ষেত্রে আমরা বলতে পারি মৃত ব্যক্তির অরেশদের মধ্যে যারা পড়ে তারা হচ্ছে-
বাবা মা, দাদা দাদী, নানা-নানী, ভাই বোন স্ত্রী, ছেলে মেয়ে, ভাতিজা ভাতিজি, ভাগ্নে ভাগ্নী, ফুফু চাচা, নাতি নাতনি, ইত্যাদি।
ওয়ারিশ সনদ কি
ওয়ারিশ সনদ হচ্ছে কোন মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া রক্তের সম্পর্কিত, নিকট আত্মীয়, দূরবর্তী আত্মীয় ব্যক্তিবর্গের নাম বয়স ও সম্পর্ক উল্লেখ করে স্থানীয় সরকার প্রশাসন অর্থাৎ ইউনিয়ন পরিষদ/ পৌরসভা/ জেলা পরিষদ/ সিটি কর্পোরেশন এর প্রধান যে সিগনেচারিত এবং যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শেষে একটি উত্তরাধিকার সনদ প্রদান করে থাকে তাহাই হচ্ছে ওয়ারিশান সনদ।
ওয়ারিশান সনদপত্রের আবেদন ফরম কোথায় পাওয়া যায়
সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ/ উপজেলা পরিষদ/ জেলা পরিষদ/ পৌরসভা/ সিটি কর্পোরেশন এ অথবা নিকটস্থ সকল কম্পিউটারের দোকানে উক্ত সনদপত্রের ফরম পাওয়া যায়।
ওয়ারিশ সনদের আবেদন প্রক্রিয়া
অনির্দিষ্ট স্থান হতে ফরমটি সংগ্রহ করে সঠিক তথ্য প্রদান করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির নিকট হতে ভেরিফাই করে নিয়ে তা সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে জমা প্রদান করতে হয়। বর্তমান সময়ে কিছু কিছু কার্যালয়ে অনলাইন ভিত্তিক সনদপত্র সরবরাহ করে থাকে সেক্ষেত্রে অনলাইনে আবেদন করার পর তা স্থানীয় সরকার প্রশাসনের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার মাধ্যমে উক্ত সনদপত্রটি লাভ করা যায়।
ওয়ারিশ সার্টিফিকেট এর মেয়াদ
কোন নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই! তবে এটি সাধারণত ৯০ দিনের জন্য সরবরাহ করা হতো, কিন্তু বেশ কিছু জটিলতার কারণে এর সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে যা নতুন ভাবে ৩৬৫ দিন নির্ধারণ করা হয়। অনেকেই মনে করতে পারেন প্রথমে বললাম কোন নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই, পরক্ষণেই বলছি ৯০ দিন ৩৬৫ দিনের জন্য ইস্যু করা হয়, এজন্য বিভ্রান্তিকর অবস্থায় পড়তে পারেন তার জন্য বিষয়টি ক্লিয়ার করা প্রয়োজন।
নির্দিষ্ট কোন সময় নেই! এর কারণ হচ্ছে কোন ব্যক্তি আজকে যদি ওয়ারিশান সনদ সংগ্রহ করে এবং তার কিছুদিন পরেই উক্ত ওয়ারিশান সনদে থাকা কোন ব্যক্তি যদি মৃত্যুবরণ করে তাহলে সেই ওয়ারিশান সনদের কার্যকারিতা হারায়। সেক্ষেত্রে আমরা বলতেই পারি ওয়ারিশান সনদের কোন সময় সেমা নেই। আরে এটাও মনে রাখতে হবে যে একবার ওয়ারিশ সনদ তুলে তো আর সারা জীবন চলবেনা।
ওয়ারিশ সনদ পরিবর্তন হতে পারে কি
অবশ্যই ওরিশান সনদের পরিবর্তন হতে পারে। তবে এটির একটি সু-নির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করতে হবে, যেমন সনদের মধ্যে কোন ব্যক্তি যদি অনুপস্থিত থাকে সেক্ষেত্রে তার নাম উক্ত সনদে নিয়ে আসার জন্য সনদ পরিবর্তন হতে পারে। আবার কোন ব্যক্তি যদি উক্ত সনদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে এবং মৃত্যুবরণ করে সে ক্ষেত্রেও উক্ত সনদটি পরিবর্তন হতে হবে।
ওয়ারিশান সনদপত্র করতে কি কি কাগজপত্রের প্রয়োজন
- যে ব্যক্তির ওয়ারিশান সনদ নেওয়া হবে তার মৃত্যু সনদ প্রয়োজন।
- মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া ওয়ারিশদের নামের তালিকা।
- মৃত ব্যক্তির সাথে উক্ত ব্যক্তির সম্পর্ক ও বয়স।
- ওয়ারিস ব্যক্তির জাতীয় পরিচয় পত্র কাডের ফটোকপি।
- স্থানীয় জনপ্রতিনিধির/মেম্বার/ কাউন্সিলর/ কমিশনার এর ভেরিফাই তথ্য।
- ওয়ারিশান সনদপত্রের জন্য আবেদন ফরম।
ওয়ারিশান সনদপত্র কি কি কাজে ব্যবহার হয়
- মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশ হিসেবে ব্যবহার হয়।
- মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ভাগ বন্টনের জন্য এটির ব্যবহার হয়।
- সম্পত্তি নামজারি/মিউটেশন/খারিজ করার জন্য প্রয়োজন হয়।
- সম্পত্তি রেজিস্ট্রি করার জন্য প্রয়োজন হয়।
- ব্যাংক ও বীমা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান এ সনদপত্রের চেয়ে থাকে।
- আদালত কর্তৃক উত্তরাধিকার সনদ পেতে হলে এটির প্রয়োজন হয়।
ওয়ারিশান সনদ কিভাবে যাচাই করা হয়
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা গ্রাম পুলিশ এর মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া কতজন রক্তের সম্পর্কিত ব্যক্তি নিকট আত্মীয় বা দূরবর্তী আত্মীয় আছে তা নিশ্চিত হওয়ার মাধ্যমে স্থানীয় সরকার প্রশাসন আবেদনকৃত ওয়ারিশান সনদ এর কপি প্রদান করে থাকে।
উপসংহার
উত্তরাধিকার সনদপত্র অর্থাৎ ওয়ারিশান সনদপত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট যা মৃত ব্যক্তির নামে ইস্যু করা হয়। তাই এটি কোন ব্যক্তি মৃত্যুর পর তার যদি রেখে যাওয়া কোন স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি থেকে থাকে তার জন্য উক্ত সনদটি জরুরী ভিত্তিতে সংগ্রহ করা একান্ত উত্তরাধিকারীদের দায়িত্বর মধ্যে পড়ে।
লেখক এর কথা
ওয়ারিশান সনদপত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল, তাই এটি সংগ্রহে রাখা অতীব জরুরী। উপরোক্ত লেখাগুলো পড়ে যদি আপনার অল্প কিছু উপকারে এসে থাকে তাহলে আমাদের এই আরটিকালটি লাইক ও শেয়ার করে আপনার পরিচিতজনদের মাঝে ছড়িয়ে দিন। এতে করে যাদের বিষয়টি জানা নেই এবং যাদের প্রয়োজন তারা অতি সহজেই উক্ত বিষয়টি জানতে পারবে।
সম্পূর্ণ আরটিকাল টি পড়ার জন্য আপনাকে জানাই আমাদের পক্ষ হতে আন্তরিক
Bestwold নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url