আসমানী কিতাব কয়টি ও কি কি এবং কার উপর অবতীর্ণ হয়
আসসালামু আলাইকুম! সুপ্রিয় পাঠক বৃন্দ আশা করছি আল্লাহর রহমতে ভালো থেকে নিজ কাজে মনোযোগী আছেন। আপনি আসমানী কিতাব সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। আজ আমরা এই পোস্টে আসমানী কিতাব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করি মনোযোগ সহকারে এবং ধৈর্য নিয়ে সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে নিবেন, এতে করে আপনি আসমানী কিতাব সম্পর্কে একটি পূর্ণাঙ্গ ধারণা লাভ করতে পারবেন।
কিতাব শব্দের অর্থ বই, গ্রন্থ ,পুস্তক। আসমানী কিতাব বলতে আমরা বুঝি মহান আল্লাহ তায়ালার প্রদত্ত বই, গ্রন্থ বা পুস্তক মানবজাতির হেদায়েতের জন্য নবী-রাসূলদের কাছে আসা ওহী। মহান আল্লাহ তা'আলা পথভ্রষ্ট মানবজাতির জন্য বিভিন্ন সময়ে নবী রাসূলগণদের মাধ্যমে হেদায়েতের দিশা হিসেবে আসমানী কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। এই আসমানী কিতাবসমূহ হযরত জিব্রাইল আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন ফেরেশতা, তিনি নবী রাসূলদের কাছে আল্লাহর বার্তাগুলো পৌঁছে দিতেন।
সূচনা
ইসলামের পরিভাষায় যে সকল কিতাব সমূহ আল্লাহর পক্ষ হতে মানবজাতির হেদায়েতের জন্য নাজিল করা হয়েছে তাহাই হচ্ছে আসমানী কিতাব। আর এ সকল আসমানী কিতাবসমূহ নবী ও রাসূলগণদের মাধ্যমে আল্লাহর প্রিয় বান্দার পথভ্রষ্টতা থেকে বাঁচার জন্য হেদায়েত স্বরূপ প্রেরণ করা হয়েছে। আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাকে তার কথাগুলো সরাসরি না বলে আসমানী কিতাবের মাধ্যমে তা জানিয়েছেন। আসমানী কিতাবগুলো হচ্ছে একজন আল্লাহ ভীরুর জন্য বা মুসলমানের জন্য দিকনিদর্শন ও সংবিধান।
পোষ্টের বিষয় বস্তু
- আসমানী কিতাব কয়টি
- আসমানী কিতাবগুলো কি কি
- প্রধান চারটি কিতাব গুলো কি কি
- তাওরাত কোন জাতির উপর অবতীর্ণ হয়
- যাবুর কোন জাতির উপর অবতীর্ণ হয়
- ইঞ্জিল কোন জাতির উপর অবতীর্ণ হয়
- কোরআন কোন জাতির উপর অবতীর্ণ হয়
আসমানী কিতাব কয়টি
মহান আল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন সময়ে মানবজাতির হেদায়েতের জন্য বেশ কিছু কিতাব জিব্রাইল (আঃ) এর মাধ্যমে নবী ও রাসুলগণ কে উপহার হিসেবেনাযিল করেছেন। আমরা জানি আসমানী কিতাবের মোট সংখ্যা ১০৪ টি তার মধ্যে প্রধানত চারটি কিতাব রয়েছে এবং বাকি ১০০টি রয়েছে সহিফা।
আসমানী কিতাবগুলো কি কি
আসমানি কিতাব গুলোকে দুই ভাগে বিভক্ত করা যায়-
- প্রধানত কিতাব চারটি যা কিতাব হিসাবেই অবতীর্ণ হয়েছে।
- এবং ১০০টি রয়েছে সহিফা বা ছোট কিতাব হিসাবেও আমরা জেনে থাকি।
প্রধান চারটি কিতাব গুলো কি কি
- তাওরাত যা অবতীর্ণ হয় হযরত মুসা (আঃ) এর উপর।
- যাবুর যা অবতীর্ণ হয় হযরত দাউদ (আঃ) এর উপর।
- ইঞ্জিল যা অবতীর্ণ হয় হযরত ঈসা (আঃ) এর উপর।
- সর্বশেষ আল-কোরআন যা অবতীর্ণ হয় আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর।
বাকি ১০০ খানা সহিফা
- ১০ খানা সহিফা অবতীর্ণ হয় হযরত আদম আলাই সাল্লাম এর উপর।
- ৫০ খানা সহিফা অবতীর্ণ হয় হযরত শীষ আলাইহি সাল্লাম এর উপর।
- ৩০ থানা সহিফা অবতীর্ণ হয় হযরত ইদ্রিস আলাইহিস সালাম এর উপর।
- ১০ খানা সহিফা অবতীর্ণ হয় হযরত ইব্রাহিম আলাই সাল্লাম এর উপর।
তাওরাত কোন জাতির উপর অবতীর্ণ হয়
তাওরাত হচ্ছে হযরত মূসা আলাইহি সাল্লাম এর উপর অবতীর্ণ একটি আসমানি কিতাব। জাহাজ ০৬ই রমজান অবতীর্ণ হয়। এটি পাঁচ খন্ডে বিভক্ত, তাওরাত হচ্ছি ইহুদিদের ধর্মীয় রীতি নীতি ও বিধি-বিধান এবং ধর্মীয় গ্রন্থ। ইহুদী-খ্রিস্টান ও মুসলিমরা এই তিন ধর্মালম্বী মনে করে এটি একটি ঐশ্বরিক বাণী যাহা আল্লাহর নবী হযরত মূসা আঃ এর উপর নাযিল হয়েছে। তাওরাত কিতাব হিব্রু ভাষায় নাযিল হয়।
যাবুর কোন জাতির উপর অবতীর্ণ হয
যাবুর কিতাব হযরত দাউদ সাল্লাম এর উপর অবতীর্ণ হয়। যাবুর কিতাব ইউনানী ভাষায় অবতীর্ণ হয়। যাবুর হচ্ছে বড় চারটি আসমানি কিতাবের মধ্যে একটি যা ঐশ্বরিক বাণী। মহান আল্লাহতালা এটি দাউদ আলাই সাল্লাম এর কওমের জন্য অবতীর্ণ করেছিলেন, এই কিতাবটি রমজান মাসের ১২তারিখ অবতীর্ণ হয়েছিল। এই কিতাব টি হযরত দাউদ আলাই সাল্লাম এর পুত্র হযরত সুলাইমান আলাইহি সাল্লাম এর সময়কালেও পবিত্র গ্রন্থ হিসাবে বিবেচিত হতো।
ইঞ্জিল কোন জাতির উপর অবতীর্ণ হয়
ইঞ্জিল কিতাব আসমানী কিতাব গুলোর মধ্যে বড় একটি কিতাব যা আল্লাহ তায়ালা হযরত ঈসা (আঃ) উপর তার কওমের জন্য নাজিল করেছিলেন। হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম এর কওমের মাতৃভাষা ছিল সুরিয়ানী বিধায় ইঞ্জিল কিতাব সুরিয়ানি ভাষায় অবতীর্ণ হয়। বনি ইসরাঈল এর জন্য এটি একটি ধর্মীয় গ্রন্থ।
কোরআন কোন জাতির উপর অবতীর্ণ হয়
কোরআন এমন একটি গ্রন্থ যা সমস্ত মানবজাতির জন্য হেদায়েত ও পথপ্রদর্শক। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর অবতীর্ণ হয়। পবিত্র রমজান মাসের শবে কদরের রাত্রে পবিত্র আল কোরআন নাযিল হয়। সর্বশেষ কিতাব হিসাবে আল্লাহ তা'আলা আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর পবিত্র আল কুরআন নাযিল করেন। পবিত্র আল কুরআনের ভাষা হচ্ছে আরবি ভাষা, যাহা জান্নাতি ভাষা।
সর্বশেষ আসমানি কিতাব আল কোরআন আসার ফলে পূর্বের যত কিতাব অবতীর্ণ হয়েছিল সকল কিতাব রোহিত হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। আল কুরআন শুধু মাত্র মুসলমানদের কিতাব নয়, বরঞ্চ এই কিতাব সকল মানবজাতির জন্য হেদায়েতের একটি গ্রন্থ। যা প্রতিটি মানুষ মনে প্রানে সাদরে গ্রহণ করিলে তার জীবন ধন্য হয়ে যাবে। এই কোরআনের সংস্পর্শে যারা এসেছে তারা এ পৃথিবীতে একজন নজির সৃষ্টি করে গেছেন। এবং ভবিষ্যতেও যারা এই কোরআনের সহবতে থাকবে যারা আল্লাহর বান্দা হিসাবেই থাকবেন।
উপসংহার
প্রতিটি আসমানী কিতাবের উপর ঈমান আনা ফরজ। এজন্য কোন আসমানী কিতাবকে অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। কারণ প্রতিটি আসমানী কিতাব হচ্ছে আল্লাহর কর্তৃক মানবজাতির হেদায়েতের জন্যই প্রেরিত। তবে আমাদের গ্রন্থ পবিত্র আল কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার পর পূর্বের যত সব আসমানী কিতাব ছিল সকল রোহিত হয়ে গেছে।
লেখক এর কথা
আমাদের জীবনে পবিত্র আল-কুরানি হোক গাইডলাইন বা সংবিধান। যেহেতু মহান আল্লাহ তায়ালা এটিকে একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান হিসাবে আমাদেরকে উপহার দিয়েছেন তাই এটা কে আমাদের জীবনের সংবিধান হিসেবে মেনে নেওয়ায় শ্রেয়। সুপ্রিয় পাঠক আমাদের এই পোস্টটি যদি আপনার সামান্যতর উপকার হয়ে থাকে তাহলে আপনার পরিচিতজনদের মাঝে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
আমাদের পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে আমাদের পক্ষ থেকে জানাই আন্তরিক
Bestwold নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url