বায়ো গ্যাস কি? পরিবেশ বান্ধব হিসেবে বায়োগ্যাসের ভূমিকা
আসসালামু আলাইকুম সু-প্রিয় পাঠক বৃন্দ আপনি কি বায়োগ্যাস সম্পর্কে একটি বিস্তারিত ধারণার জন্য গুগলে সার্চ করেছেন? তাহলে আমরা আপনাকে দিচ্ছি এর একটি সুস্থ ধারনা। সম্পর্কে একটি পূর্ণাঙ্গ ধারণা নেওয়ার জন্য আপনাকে আমাদের এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে নিতে হবে।
বায়োগ্যাস হচ্ছে এক ধরনের জৈব গ্যাস! যাকে কৃত্রিম গ্যাস হিসাবে ও বলা যায়। এই গ্যাস উৎপাদন করার জন্য বেশ কিছু উপকরণের প্রয়োজন হয় এবং এটি উৎপাদন করতে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রক্রিয়া অনুসরণের প্রয়োজন পড়ে। উপকরণ এবং প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হওয়ার মাধ্যমে পাওয়া যায় বায়ো গ্যাস।
ভূমিকা
বায়োগ্যাস একটি পরিবেশ বান্ধব জ্বালানি শক্তি। বায়ো গ্যাস উৎপাদনের ফলে বেশ কয়েকটি সুবিধা আমরা পেয়ে থাকি তার মধ্যে অন্যতম সুবিধা গুলো হচ্ছে জ্বালানি শক্তি, জৈব সার, পরিবেশ দূষণ, সুস্থ পরিবেশ, আর্থিক ম্যাটার, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। নিচে আমরা পর্যায়ক্রমে সবগুলো বিষয়ে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব ইনশাল্লাহ।
বায়োগ্যাস কি
বায়োগ্যাস হচ্ছে এক ধরনের জৈব গ্যাস! যাহা পচনশীল জৈব বর্জ্য হতে উৎপন্ন হয়ে থাকে, এমনকি বিভিন্ন প্রাণীর মলমূত্র, বিষ্ঠা এই গ্যাসের প্রধান উপকরণ। পচনশীল জৈব বর্জ্যের মধ্যে আমরা পেয়ে যাব বিভিন্ন শাক সবজির খোসা, ডিমের খোসা, কৃষি জাত হতে উৎপন্ন জৈব বর্জ্য, প্রাণীর মল মূত্র এবং বিষ্ঠার মধ্যে গোবর, লাদি, মুরগির লিটার ইত্যাদি।
বায়োগ্যাস কাকে বলে
যেকোনো অব্যবহারিত জৈব বর্জ্য এবং পশুর মলমূত্র হতে উৎপন্ন মিথেন, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন এর সমন্বয়ে যে গ্যাস উৎপন্ন হয় তাকে আমরা এনারবিক ডাইজেশন বলে থাকি। আর এই এনারবিক ডাইজেকশন কেই মূলত বায়ো গ্যাস হিসেবে জেনে থাকি বা এভাবে বলা যায় এনারবিক ডাইজেকশন হচ্ছে বায়োগ্যাস।
বায়োগ্যাসের উৎপাদন পদ্ধতি
বায়োগ্যাস উৎপাদন করার জন্য একটি ট্রাংক এর প্রয়োজন, যে ট্রাঙ্কে অক্সিজেন প্রবেশ করতে পারবে না এ ধরনের। সম্পূর্ণ বায়ু নিধন একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বায়োগ্যাস উৎপাদন হয়ে থাকে, আর এই প্রক্রিয়াটিকে আমরা বলে থাকি এনাবিক ডাইজেকশন। বায়ো গ্যাস উৎপাদনের মূল উপাদান হচ্ছে জৈব বর্জ্য, প্রাণীর বর্জ্য অর্থাৎ মলমূত্র এবং বিষ্ঠা। এ সকল উপকরণ একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পূর্ণ হয়ে বায়ো গ্যাসের উৎপাদন হয়।
অক্সিজেন এর উপস্থিতি রোধ করে! যে সকল অ-ব্যবহারিত জৈব পদার্থ সমূহ কে এবং প্রাণিজ বর্জ্য কে একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পচানোর ব্যবস্থা করে যে গ্যাস উৎপাদন করা হয় তাই মূলত বায়ো গ্যাস উৎপাদনের পদ্ধতি
পরিবেশ বান্ধব হিসেবে বায়ো গ্যাসের ভূমিকা
প্রাচীন কাল হতেই রান্নাবান্না ও জ্বালানির কাজে ব্যবহার হয়ে আসছে বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি। যার মধ্যে রয়েছে গরু হতে উৎপাদিত গোবর, ছাগল ও বকরি হতে উৎপাদিত লাদি, গাছ হতে উৎপাদিত খড়ি, এবং বিভিন্ন লতাপাতার মাধ্যমে উৎপাদিত খড়। আর এ সকল জ্বালানি উপকরণ আমরা ব্যবহার করে একদিকে যেমন প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার অন্যতম মাধ্যম বনায়ন ধ্বংস করছি, অপরদিকে প্রাণীজ বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলে জৈব সার এর ধ্বংস করে দিচ্ছে।
যারফলে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা, গাছ ও বনয়ন কেটে ফেলার ফলে তৈরি হচ্ছে প্রাকৃতিক ধ্বংস, অপরদিকে জৈব সার উৎপাদন না করার জন্য জমিতে প্রয়োগ করা হচ্ছে অধিক মাত্রায় রাসায়নিক সার যার ফলে জমির উর্বরতা শক্তি দিনে দিনে হ্রাস পাচ্ছে। সবমিলিয়ে আমরা একটি বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি।
পরিবেশ রক্ষা এবং একই সাথে একটি জমির উর্বরত শক্তি বৃদ্ধির জন্য বায়োগ্যাস এর ব্যবহার হতে পারে একটি উত্তম সমাধান। আমরা যদি গবাদি পশুর বর্জ্য পুড়িয়ে না ফেলি, জ্বালানির জন্য গাছ ও বন্যায়ন না কাটি, একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উৎপাদিত বায়োগ্যাস এর ব্যবহার করি, তাহলে আমরা একই সাথে বহু মাতৃক সুবিধা পেয়ে যাব।
একদিকে বায়ো গ্যাস উৎপাদনের ফলে আমরা যথাযথভাবে অব্যবহারিত জৈব বর্জ্য এর সঠিক ব্যবহার করতে পারব, অপরদিকে আমরা পেয়ে যাব জ্বালানির জন্য বায়োগ্যাস এবং জমিতে প্রয়োগ করার জন্য জৈব সার যা একটি জমির উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। তাহলে আমরা বায়োগ্যাস উৎপাদন করে একদিকে যেমন পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করছি অপরদিকে আমাদের দৈনিক চাহিদার জন্য যে জ্বালানির প্রয়োজন তারও একটি সুষ্ঠু সমাধান হয়ে যাচ্ছে।
বায়োগ্যাসের ব্যবহার
বায়ো গ্যাস ব্যবহারের ফলে আমরা নানান ধরনের সুবিধা পেয়ে থাকি- বাসা বাড়ি, এবং ক্ষুদ্র কলকারখানা এর জ্বালানি শক্তির ব্যবহার। যেমন-রান্না বান্না, আলোকসজ্জা, মেশিনাদি-যন্ত্র চালানো।
- জ্বালানি হিসেবে বায়ো গ্যাসের ব্যবহার।
- বায়োগ্যাস উৎপাদনের ফলে প্রাপ্ত জৈব সারের ব্যবহার।
- সঠিকভাবে অব্যবহারিত জৈব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা।
- পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা।
- বড় ধরনের আর্থিক সুবিধা।
বায়োগ্যাস উৎপাদন করতে গিয়ে আরো কি কি পাওয়া যায়
বায়ো গ্যাস উৎপাদনের ফলে আমরা বেশ কিছু সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকি তার মধ্যে রয়েছে-
জ্বালানি শক্তি জন্য মিথেন গ্যাস, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন।
- কৃষি ক্ষেত্রে ব্যবহার করার জন্য রয়েছে উন্নত মানের স্বল্পমূল্যের জৈব সার।
- রাসায়নিক সার ব্যবহার কমানোর ফলে অর্থে বেঁচে যাওয়া।
- গাছপালা এবং বন্যায়ন কর্তন না করার ফলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা থাকে যার ফলে নানান ধরনের রোগ বালাই হতে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
উপসংহার
এজন্য আমরা বলতেই পারি বর্তমান সময়ে বায়োগ্যাসের উপর গুরুত্ব দেওয়া প্রতিটি মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বর্তমান সময়ে জ্বালানি শক্তি এর দাম যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে যার কারণে তৈরি হচ্ছে আর্থিক সংকট, অপরদিকে বনয়ন ধ্বংস করার মাধ্যমে তৈরি হচ্ছে পরিবেশগত দুর্যোগ, গবাদিপশু ও কৃষি জাত হতে উৎপাদিত বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলার মাধ্যমে সংকট হচ্ছে জৈব সারের। সব মিলিয়ে বায়ো গ্যাস উৎপাদন হচ্ছে একটি উত্তম সমাধান।
লেখকের কথা
আমি মনে করি বায়োগ্যাস উৎপাদন করার জন্য সরকার মহোদয় যে ভূমিকাটি রাখছে তা আরো জোরদার করা, এবং বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান হতে মানুষদের উৎসাহিত করা বায়োগ্যাস উৎপাদনের জন্য, এতে করে পরিবেশের ভারসাম্য যেমন রক্ষা পাবে, ঠিক একই ভাবে জমির উর্বরতা শক্তি ও বৃদ্ধি পাবে। এজন্য আমাদের প্রতিটি মানুষকেই বায়োগ্যাস উৎপাদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।
পরিশেষে বলে যেতে চাই!!! আমাদের আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনাদের কিঞ্চিৎ পরিমান উপকারে লেগে থাকে, তাহলে আপনাদের পরিচিতজনদের মাঝে লেখাটি শেয়ার করে দেবেন যাতে করে উক্ত বিষয়টি আপনার পরিচিত জন্য, জেনে উদ্বুদ্ধ হতে পারে।
আমাদের আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে আপনাকে জানাই আন্তরিক
অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি পোস্ট। লেখককে ধন্যবাদ