OrdinaryITPostAd

জৈব সার ব্যবহারের উপকারিতা জৈব সার ব্যবহারের গুরুত্ব

সুপ্রিয় পাঠক বিন্দু আপনি কি জৈব সার সম্পর্কে জানতে আগ্রহী! তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্যই। আজ আমরা এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে জানানোর চেষ্টা করব জৈব সারের গুনাগুন এবং এর ব্যবহার। আপনাকে জৈব সার এর সম্পর্ক ধারণা নিতে হলে আমাদের এই পোস্টটি প্রথম থেকে একেবারে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে নিতে হবে।
জৈব সার এমন একটি সার যার ব্যবহারের ফলে একজন কৃষকের জমি কোন অবস্থাতেই ক্ষতির সম্মুখীন হয় না। বরঞ্চ দীর্ঘ সময় ধরে জমির গুনাগুন একই মাত্রায় ধরে রাখতে সক্ষম হয়। এবং ফসল উৎপাদনেও কাঙ্ক্ষিত ফলাফল এনে দেয়। এজন্য জৈব সার এর ভূমিকা ও গুরুত্ব বর্তমান সময়ে অপরিসীম।

ভূমিকা

জৈব সার এক ধরনের উৎকৃষ্ট মানের সার। যাহা আমরা পেয়ে থাকি প্রাণিজ ও উদ্ভিদের ধ্বংসাবশেষ ও ব্যবহার অনুপযোগী বর্জ্য হতে। সাধারণত বর্জ্যগুলোকে একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত করার পরেই জৈব সারের রূপান্তরিত হয়। আর এই জৈব সার ব্যবহারের ফলে জমির গুনাগুন বৃদ্ধি পায় এবং ফসল উৎপাদনে কাঙ্খিত পরিমাণে হয়ে থাকে।

আর্টিক্যালের বিষয় বস্তু

  • জৈব সার কি
  • জৈব সার কাকে বলে
  • জৈব সারের উপাদান
  • জৈব সারের ব্যবহারের গুরুত্ব
  • জৈব সারের ব্যবহারে অসুবিধা
  • জৈব সার ব্যবহারের উপকারিতা

জৈব সার কি

জৈব সার হচ্ছে এক ধরনের প্রাকৃতিক সার। যা প্রাণী ও উদ্ভিদ এর ধ্বংসাবশেষ হতে পাওয়া যায়। প্রকৃতপক্ষে জৈব সার হচ্ছে মাটির জন্য একটি বিশেষ গুণাবলীর সার। যা রাসায়নিক সার থেকে বহুগুণ শক্তিশালী এবং দীর্ঘস্থায়ী। জৈব সারের মধ্যে রয়েছে খনিজ উৎস যা প্রাণীর মল-মত্র হতে, উদ্ভিদের উচ্ছিষ্ট বর্জ্য হতে একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জৈব সার পাওয়া যায়।

জৈব সার কাকে বলে

যে সকল সার কোন কেমিক্যাল ব্যবহার না করে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে প্রাণী এবং উদ্ভিদের ধ্বংসাবশেষ হতে উৎপাদনকৃত বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পাওয়া, ঊনকৃষ্ট মানের যা মাটির পুষ্টি গুনাগুন ও ক্ষমতাবৃদ্ধিতে পূর্ণ সহায়তা প্রদান করে তাই হচ্ছে জৈব সার। অন্যভাবে বলা যায়, যে সকল সার প্রাণীর দেহ হতে নির্গত হয় এবং উদ্ভিদ এর উৎপাদিত বর্জ্য হতে পাওয়া যায় তাহাই হচ্ছে জৈব সার।

জৈব সারের উপাদান

বেশ কয়েকটি উপকরণের মাধ্যমে জৈব সারের উৎপাদন হয়। তার মধ্যে আজকে আমরা আলোচনা করব প্রাণীজ বর্জ্য ও উদ্ভিদ বর্জ্য নিয়ে।

প্রাণিজ বর্জ্য- জৈব সারের উপাদানের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে প্রাণিজ বর্জ্য। প্রতিটি প্রাণীর বর্জ্য হতেই জৈব সার উৎপাদন করা সম্ভব, এর মধ্যে গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি কবুতর, বেস উল্লেখযোগ্য গোবাদী-পশু, গরু মহিষ হতে গোবর, ছাগল বকরি হতে লাদি পেয়ে থাকে। হাঁস মুরগি কবুতর এদের লিটার হতে উনকৃষ্ট মানের জৈব সার উৎপাদন হয়।

তাছাড়া গবাদি-পশুর মূত্র হতে এবং বিভিন্ন ধরনের পশুর হাড় হতে, মাছ হতে , বেশ ভালো মানের জৈব সার উৎপাদন হয়ে থাকে। যা জমির পুষ্টি ও খনিজ এর চাহিদা পুরন করে এবং ফসল এর ফলন উৎপাদন বৃদ্ধি করে। আমরা এভাবে বলতে পারি যে গোবাদি-পশুর ধংসাবষেশ হতে প্রাপ্ত উৎপাদন কৃত বর্জ্য যা জৈব সারের একটি উৎকৃষ্ট মানের মূল উপাদান।

উদ্ভিদ বর্জ্য- জৈব সার উৎপাদনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে উদ্ভিদ বর্জ্য। জৈব সার এর অধিকাংশ কাঁচামাল পাওয়া যায় এই উদ্ভিদ হতেই। বিভিন্ন লতাপাতা, গাছ-গাছড়া, এবং চাষাবাদকৃত ফসলাদির উচ্ছিষ্ট অংশ যা উদ্ভিদ বর্জ্য হিসেবে বিবেচিত। যেমন আমরা চিহ্নিত করতে পারি সবুজ ঘাস, সবুজ লতাপাতা, কৃষি জমিতে উৎপাদিত ফসলের উচ্ছিষ্ট অংশ, প্রভৃতি।

উদ্ভিদ বর্জ্যকে আমরা প্রক্রিয়াধীন করে বা একটি বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পচিয়ে জৈব সার উৎপাদন করতে সক্ষম হয়। আর এই জৈব সারটি জমির উৎপাদন শক্তি বৃদ্ধি করে, ফসলের গুণগত মান বৃদ্ধি করে, জমিতে পানি ধরে রাখতে সহায়তা করে, এরকম বিভিন্ন ধরনের অনেক সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকি জৈব সার হতে। এছাড়াও জৈব সার উৎপাদনের জন্য আরও বিভিন্ন উপকরণ রয়েছে।

জৈব উপকরণ- বিভিন্ন ধরনের শাকসবজির খোসা, ডিমের খোসা, মাছের আইিস, ইত্যাদি।

জৈব সারের ব্যবহারের গুরুত্ব

জৈব সার একটি প্রাকৃতিক সার! যার কারণে এর লং জিবিটি অত্যধিক। এসার প্রয়োগ করার ফলে তার গুনাগুন দীর্ঘদিন ধরে উক্ত জমিতে প্রতিফলিত হয়, যা রাসায়নিক সারের কয়েক গুণ বেশি। রাসায়নিক সার ব্যবহারে যেমন জমির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পায় ধীরে ধীরে জমির উৎপাদন ক্ষমতা কমে যায়। পক্ষান্তরে জৈব সার ব্যবহার করার ফলে জমির বা মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায় ফসল উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

জৈব সার ব্যবহারের ফলে মাটিতে নাইট্রোজেন, ফসফোরাস, পটাশিয়াম এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান পেয়ে থাকে। যার ফলশ্রুতিতে মাটির উৎপাদন ক্ষমতা শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ঘাটতি গুলো সঠিকভাবে প্রয়োজন অনুপাতে পূরণ করে দেয় এই জৈব সার। এজন্য আমরা বলতে পারি জৈব সারি একমাত্র সমাধান মাটি ঠিক রাখার জন্য।

বর্তমান সময়ে রাসায়নিক সারের যে ছড়াছড়ি এর ফলশ্রুতিতে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, দিন দিন জমির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে এবং অধিক পরিমাণে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করেও পর্যাপ্ত পরিমাণ ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না। এতে করে একদিকে খরচের সংখ্যা যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে অন্যদিকে পর্যাপ্ত পরিমাণ উৎপাদন না পাওয়ায় জনমনে চাষাবাদের একটি অনিহার সৃষ্টি হচ্ছে।

আমাদের কাছে যেহেতু রাসায়নিক শারীরিক বিকল্প হিসেবে জৈব সারের একটি অপশন রয়েছে, সেক্ষেত্রে আমাদেরকে জৈব সারের প্রতি গুরুত্ব বেশি দিতে হবে, প্রয়োজনে কৃষি মন্ত্রণালয় হতে কৃষি বিভাগ কর্তৃক জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে। যাতে করে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে জৈব সারের ব্যবহার বৃদ্ধি করা যায়।

এতে করে যেমন খরচ বাচবে ঠিক তার বিপরীতে জৈব সারের ব্যবহারের ফলে মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পাবে, চাষাবাদ করে জনগণের শান্তি ফিরে আসবে এবং কাঙ্খিত উৎপাদন নিশ্চিত করা যাবে। এজন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে জৈব সার উৎপাদন করা এবং জৈব সারের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

জৈব সারের ব্যবহারে অসুবিধা

  • জৈব সার ব্যবহারের যত সুবিধা আছে তার মধ্যে কিছু অংশ অসুবিধা আছে কারণ সুবিধাও অসুবিধা ছাড়া কোন কিছুই হয় না।
  • জৈব সার এ নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম এর পরিমাণ অত্যন্ত স্বল্পমাত্রায় থাকে, না থাকে বললেই চলে।
  • জৈব সারের রেজাল্ট ধীরগতি সম্পন্ন।
  • পরিমাণে বেশি লাগে।
  • মাটিতে বাল্ক সৃষ্টি করে।

জৈব সার ব্যবহারের উপকারিতা

  • জৈব সার এর ব্যবহারে খরচ কমায়।
  • মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে।
  • উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
  • দীর্ঘ সময় ধরে এর কার্যকারিতা লক্ষ্য করা যায়।
  • মাটির কাঠামো ও গুণগত মান উন্নত করে
  • জৈব সার ব্যবহারের ফলে মাটিতে অনেক দিন ধরে রস ধরে রাখে।
  • সেচের পরিমাণ কম লাগে।
  • অধিক মাত্রায় রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে নষ্ট কৃত জমি, রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে প্রাণ ফিরে আসে।

উপসংহার

রাসায়নিক সার এর ক্ষতির হাত হতে বাঁচাতে হলে অধিক পরিমাণে জৈব সার ব্যবহার করার নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে প্রশাসনিক ভাবে এটির প্রচার প্রচারণা বৃদ্ধি করতে হবে। যাতে করে প্রান্তিক পর্যায়ের চাষী বর্গ জৈব সার ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ হতে পারে। এর ফলশ্রুতিতে চাষী বর্গ যেমন অনেক খরচের হাত থেকে বেঁচে যাবে অপরদিকে ভালো উৎপাদনের ফলে লাভবান হবে।

লেখক এর কথা

আমার মনে হয় বর্তমান সময়ে রাসায়নিক সারের যে উপদ্রব, তা হতে বাঁচার একমাত্র সমাধান জৈব সার উৎপাদনের বৃদ্ধি করা এবং প্রান্তিক পর্যায়ে ভর্তুকি প্রদান করে হলেও জৈব সার উৎপাদনে উৎসাহ প্রদান করা। যাতে করে একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ের চাষীও জৈব সার উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করতে পারে। এজন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি অবশ্যই বঞ্চনীয়।

পরিশেষে পাঠকের কাছে একটি নিবেদন থাকবে যে, যদি আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার পরিচিত জনদের মাঝে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

আমাদের এই পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে আপনাকে জানাই আন্তরিক 

ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Bestwold নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url