OrdinaryITPostAd

পেঁপে চাষের জন্য জাত নির্বাচন এবং পেপে চাষের জন্য জমি নির্বাচন

সুপ্রিয় পাঠক বিন্দু আসসালামু আলাইকুম! আমরা লক্ষ্য করছি যে, আপনি পেঁপে সম্পর্কে ধারণা নিতে চাচ্ছেন। আশা করছি আপনাকে আমরা পেঁপে সম্পর্কে একটি উত্তম ধারণা দিতে পারব। পেঁপে সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা নিতে হলে আপনাকে আমাদের এই পোস্টটি শুরু হতে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে নিতে হবে। আজকে আমরা এই পোস্টটিতে পেঁপে সম্পর্কে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
পেঁপে হচ্ছে এক ধরনের সম্পূরক ফল। এটি আমরা সবজি হিসাবে ও ব্যবহার করতে পারি। আবার ওপর দিকে এর রয়েছে বিশেষ ঔষধি গুণ। আর এই ফলটি আমজনতা সকলের মাঝে সুপরিচিত, এটি একটি এমন ফল যা শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ বয়সের মানুষও এই ফল স্বাচ্ছন্দে খেতে ভালোবাসে। এই ফলটি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করেও বেশ লাভবান হওয়া যায়। আবার একটি বাড়িতে দু-তিনটি গাছ থাকলেও সেই পরিবারের সবজির চাহিদা পূরণ হয়ে যায়।

ভূমিকা

পেঁপে চাষ অত্যন্ত লাভজনক একটি চাষাবাদ। কারণ পেঁপের রয়েছে একটি বড় মার্কেট বা চাহিদা। এই ফলটি একেবারে শুরু হতে শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন স্থলে বিভিন্ন চাহিদা পূরণ করে থাকে। যেমন আমরা বলতে পারি ফুল থেকে ফল হওয়া মাত্রই আমরা তা ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করতে পারি, একটু বড় হয়ে গেলে তা আমরা সবজি হিসাবে ব্যবহার করে থাকি, আবার এই ফলটি পেকে গেলে তা আমরা সুস্বাদু ফল হিসেবে ব্যবহার করি।

পেঁপে চাষের জন্য জাত নির্বাচন

পেঁপে চাষ করতে হলে প্রথমে আপনাকে এর জাত সম্পর্কে জানতে হবে। কারণ পেপের জাত যদি ভালো না হয় বা আপনি যদি ভাল জাত নির্বাচন করতে না পারেন তাহলে পেঁপে চাষ করে কাঙ্খিত ফলাফল নিশ্চিত করতে পারবেন না। এজন্য পেঁপে চাষের পূর্বেই আপনাকে একটি উন্নত মানের ভালো জাত নির্বাচন করে নিতে হবে। ভালো যাতে ভালো ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

আমাদের বাংলাদেশের বিভিন্ন কোম্পানির বিভিন্ন জাতের পেঁপে চারা বীজ উৎপাদন করে থাকে। এর মধ্যে কিছু রয়েছে আমাদের দেশী জাত এবং কিছু রয়েছে উন্নত মানের হাইব্রিড জাত। তবে জেনে রাখা ভালো যে দেশী জাতের পেঁপে গুলো অত্যাধিক স্বাদ হয় কিন্তু এর সাইজ ছোট হয় এবং ফলন কম হয় পক্ষান্তরে উন্নত জাতের হাইব্রিড গুলোনেই ফলন বেশি হয়।

দেশি পেঁপের কিছু জাত- গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষক, অধ্যাপক নাসরিন আক্তার আইভি দেশি দুইটি পেঁপের জাত উদ্ভাবন করেন, জাত দুইটি হলো- গাইনাডোই ও সিয়াস, যা লাল ও হলুদ বর্ণের পেতে।

উন্নত হাইব্রিড পেঁপের কিছু জাত- রেড লেডি,সুইট লেডি, পুসা বামন, কর্গ মধু শিশির, সুরভী, শাহী ইত্যাদি।

পেঁপে চাষের জন্য জমি নির্বাচন

পেঁপে চাষ প্রায় সকল ধরনের মাটিতেই হয়ে থাকে তবে দোঁআশ মাটি এবং বেলে দোঁআশ মাটি পেঁপে চাষের জন্য উপযুক্ত। পেঁপে গাছ একেবারে জলবদ্ধত্ সহ্য করতে পারে না, এজন্য প্রয়োজন উঁচু এবং মাঝারি উঁচু ধরনের জমি। এবং এমন মাটি হতে হবে যা দ্রুতপানি নিষ্কাশন হয়ে যায়, প্রয়োজনে ভালোভাবে ড্রেনেজ ব্যবস্থা করতে হবে যাতে করে দৃষ্টির পানি জমে না থাকে।

পেঁপে চাষের জন্য জমি প্রস্তুত

পেঁপে চাষের জন্য মাটি নির্বাচন শেষ হলে উক্ত মাটিটি কে বা জমি টিকে ভালোভাবে কয়েকবার চাষ করে নিতে হবে যাতে করে মাটিগুলো ঝুরঝুরে হয়ে যায় প্রয়োজনে তিন থেকে চারটি চাষ করতে হবে এবং ওটার দিয়ে মাটিটি সমান করে নিতে হবে। সুবিধামতো জমিটিতে ব্যাড করে নিতে হবে অর্থাৎ ড্রেনেজ ব্যবস্থা করে নিতে হবে যাতে করে বৃষ্টির পানি জমে না থাকে।

পেঁপে চারা রোপনের উত্তম সময়

বর্তমান বছরের প্রায় সকল সময় পেঁপে চাষ করা যায়। তবে আশ্বিন ও পৌষ মাস পেঁপে লাগানোর জন্য উপযুক্ত সময়। সে হিসেবে ইংরেজিতে যদি বলি তাহলে (সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর) এবং (ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি) এ সকল সময়ে পেঁপে চারা রোপনের জন্য উপযুক্ত । এই দুই সময় পেঁপে চারা রোপন করার কারণে বেশ কিছু উপকার পাওয়া যায়।

তার মধ্যে হচ্ছে যেহেতু সময়টাই মোটামুটি শীত চলে আসে এবং ভরপুর শীত থাকে, যার কারণে গাছ খুব একটা বেশি বৃদ্ধি পায় না, আর গাছ বড় না হওয়ার ফলে এবং বয়স বেড়ে যাওয়ার জন্য পরবর্তী সময়ে ঝড়ের কবলে পড়লেও গাছের তেমন কোন ক্ষতি হয় না এবং গাছ ছোট থাকায় এবং গাছের বয়স বৃদ্ধি পাওয়াই ছোট গাছেও পেঁপের ফুল চলে আসে।

পেঁপে চাষে সার প্রয়োগ পদ্ধতি

প্রতিটি ফসলেই বা চাষাবাদ এই সার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যা মাটির খাদ্য রস এবং পুষ্টির যোগান দেয় যার ফলশ্রুতিতে উক্ত আবাদ এর ফলন নির্ভর করে। পেঁপে চাষের ক্ষেত্রেও বেশ কিছু সারের প্রয়োজন হয় যেমনটা নিচে দেওয়া হল-
  • গোবর সার অর্থাৎ জৈব সার- চারা রোপনের ১৫ থেকে ২০ দিন পূর্বেই প্রতিটি গর্তে বা থানায় ১২ থেকে ১৫ কেজি প্রয়োগ করতে হয়।
  • ইউরিয়া- চারা রোপনের একমাস পর পর প্রতিটি গাছে ৫০ গ্রাম করে। এবং ফল আসার পূর্বে, ফুল আসলে এর পরিমাণ দ্বিগুণ করতে হবে।
  • টিএসপি- প্রতি বিঘাতে দুই থেকে তিন কেজি জমির কোয়ালিটি অনুযায়ী।
  • এমওপি- চারা রোপনের একমাস পর পর প্রতিটি গাছে ৫০ গ্রাম করে। এবং ফল আসার পূর্বে, ফুল আসলে এর পরিমাণ দ্বিগুণ করতে হবে।
  • জিংক সালফেট- জমির উর্বরতা শক্তির উপর নির্ভর করে প্রয়োগ করতে হবে।
  • বোরিক অ্যাসিড-
  • জিপসাম-

পেঁপে চাষের জন্য সেচ ব্যবস্থাপনা

সেচের বিষয়টি হচ্ছে মাটিতে কিরকম রস ধরে রাখতে পারে এর ওপর ভিত্তি করে সেচ দেওয়া হয়ে থাকে। চারা রোপনের পরে যদি উক্ত জমিতে রস না থাকে তাহলে সাত থেকে দশ দিনের মধ্যে একটি সেচ দিতে হবে। এবং পরবর্তী সেচ প্রতি পনের দিন পর পর দিতে হবে। আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে অনেক সময় অনাবৃষ্টি এবং অতিবৃষ্টি হয়ে থাকে।

কন্যা বৃষ্টির সময় মাটিতে রসের ভিত্তিতে সেচ প্রদান করতে হবে। পক্ষান্তরে অতিবৃষ্টির সময় ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো হবে করে নিতে হবে যাতে করে জমিতে কোন রকম পানি জমে না থাকতে পারে। কারণ পেঁপের গাছ একেবারেই জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। জমিতে জলবদ্ধতার সৃষ্টি হলে পেঁপে গাছ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

পেঁপে গাছে ফুল ও ফল আসতে কত দিন সময় লাগে

পেঁপে চারা জাত ভেদে এই সময়ের ব্যবধান হয়ে থাকে। তবে সাধারণত হাইব্রিড ও উন্নত জাতের চারাই শীতের আগের রোপন করলে মোটামুটি চার-পাঁচ মাস সময়ের মধ্যে গাছে ফুল চলে আসে এবং তা ছয় থেকে সাত মাসের মধ্যে কাঁচা পেঁপে সংগ্রহ করা যায়। কাঁচা পেঁপে সবজি হিসাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ যা প্রতিটি মানুষ স্বাচ্ছন্দে খেয়ে থাকে।

একটি পেঁপে গাছ থেকে কতটি ফল পাওয়া যায় 

পেঁপে গাছের জাতের ভিত্তিতে এর ফলনের কম বেশি হয়ে থাকে, তবে সাধারণত আমরা লক্ষ্য করে থাকি একটি ভালো ও উন্নত জাতের পেঁপে গাছে ৫০ থেকে ৭০ টি পেপে পাওয়া যায়। এবং এর আকার ও সাইজ জাত ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।

বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পেঁপে চাষ 

এটি এমন একটি ফল বা ফসল যা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ উপযোগী। সারা বছরই পেপের চাহিদা থেকে থাকে। এই ফলটি এমন একটি ফল যা একেবারে ছোট হতে পাকা পর্যন্ত প্রত্যেকটি স্তরে এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, এই ফলটি একদিকে ঔষধি গুন সম্পূর্ণ, এটি সবজি হিসেবে ব্যবহার করা হয়, এবং ফল হিসাবে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

যার ফলশ্রুতিতে এর চাহিদা অপরিসীম থাকাই এর বাণিজ্যিক একটি দিক রয়েছে। এজন্য পেঁপে চাষ বাণিজ্যিকভাবেও করা সম্ভব বা বাণিজ্যিক ভাবেও এর চাষ হয়ে থাকে। এমনকি একটি ছোট পরিবার যে পরিবারে পাঁচ থেকে সাত জন সদস্য রয়েছে সে সকল পরিবারের জন্য দুই থেকে তিনটি গাছ থাকলেই সারা বছরের পেপের চাহিদা পূরণ হয়ে যায়।

উপসংহার

পেঁপে চাষ একটি লাভজনক আবাদ, কারণ এর চাহিদা কোন সময় কমতি পড়ে না। বছরের সকল সময় এই ফলের চাহিদা রয়েছে। এই ফলটির বিভিন্ন রকম চাহিদা রয়েছে যেমন ঔষধি, সবজি এবং ফল। যার জন্য এই ফলটির রয়েছে বিশেষ চাহিদা। এবং এটি চাষাবাদ করাও অত্যন্ত সহজ অতি অল্প সময়ে সোম ব্যয় করে এর থেকে একটি ভালো উপার্জন পাওয়া যায়।

লেখক এর কথা- আমাদের এই পোস্টটি পড়ে আপনার যদি ভালো লাগে তাহলে আমাদের এই পোস্টটি আপনার পরিচিতজনদের মাঝে শেয়ার করে দিবেন, যাতে করে আপনার পরিচিতজন রাও এই বিষয়ে একটি ধারণা লাভ করতে পারে।

আমাদের এই পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে আপনাকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Bestwold নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url