ভিপি সম্পত্তি / শত্রুর সম্পত্তি কি ? এবং ফেরৎ পাওয়ার প্রকৃয়া।
আসসালামু আলাইকুম সুপ্রিয় পাঠক বৃন্দ আপনি কি অর্পিত সম্পত্তি/ শত্রু সম্পত্তি/ভিপি সম্পত্তি সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? আজ আমরা এই পোস্টে অর্পিত সম্পত্তি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব ইনশাল্লাহ। আপনি যদি আমাদের এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়ে নিতে পারেন তাহলে আশা করছি ভিপি সম্পত্তি/ অর্পিত সম্পত্তি/ শত্রু-সম্পত্তি সম্পর্কে আপনি একটি পূর্ণাঙ্গ ধারণা লাভ করতে পারবেন।
অর্পিত সম্পত্তি হচ্ছে সেই সকল সম্পত্তি যে সকল ব্যক্তিবর্গ দেশ বিভাজনের সময় তৎকালীন পাকিস্তান হতে দেশ পরিত্যাগ করে হিন্দুস্থান অর্থাৎ বর্তমান ভারত চলে গিয়েছে তার স্থাবর সম্পত্তিগুলো রেখে দিয়ে। উক্ত স্থাবর সম্পত্তি গুলোই বর্তমানে অর্পিত সম্পত্তি বা শত্রু সম্পত্তি হিসেবে চিহ্নিতকরণ করা হয়েছে। আমাদের এই দেশে বারবার বিভিন্ন আইনের মাধ্যমে উক্ত সম্পত্তিগুলো তাদের অরজিনাল মালিকদের ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বেশ কিছু জটিলতার কারণে তা এখনো সম্পূর্ণরূপে অরজিনাল মালিকদের কে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়নি।
সূচনা
অর্পিত সম্পত্তির মাঝে অনেক সাধারণ জনগণের সম্পত্তি ও এর অন্তর্ভুক্ত হয়ে গিয়েছিল যার ফলশ্রুতিতে সাধারণ জনগণ অনেক ভোগান্তির মধ্যে পড়ে। সাধারণ জনগণের আন্দোলনের তবে পড়ে সরকার তাদের সম্পত্তিগুলো এক বিবৃতির মাধ্যমে তাদের ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেই। অর্পিত সম্পত্তি বর্তমানে সরকারি হেফাজতে রয়েছে যা উপসহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং জেলা প্রশাসক উক্ত ভূমিগুলোর তদারকি করে থাকে।
সূচিপত্র-
ভিপি সম্পত্তি / শত্রুর সম্পত্তি কি ?
VP এর পূর্ণরূপ Vested Property. ভিপি সম্পত্তি হচ্ছে সেই সকল সম্পত্তি যা ৬ সেপ্টেম্বর ১৯৬৫ সাল হতে ১৬ ই ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত যে সকল ব্যক্তিবর্গ বা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ হতে অর্থাৎ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান হতে ইন্ডিয়ার উদ্দেশ্যে চলে গিয়েছিল এবং সেই সময় ভারতে বসবাস বা অবস্থান করছিল তাদের ত্যক্ত স্থায়ী সম্পত্তি গুলোকে ভিপি সম্পত্তি বা শত্রুর সম্পত্তি বলা হয়। ১৯৫০ সালের আইনের অধীনে উক্ত সম্পত্তি ভেস্টেট প্রপার্টি বা ভিপি বা শত্রু সম্পত্তি হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
এ সকল সম্পত্তির মালিকানা বর্তমানে এদেশের সরকার (Evacuee Property) সম্পত্তি হিসেবে নাগরিকের সম্পদ দেখভাল করছে। Vested Property সংক্ষিপ্ত রূপে VP সম্পত্তি হিসেবেই অধিক পরিচিত। ভিপি সম্পত্তি বা শত্রু সম্পত্তি বাংলাদেশের আইনে বেচাকেনা বা হস্তান্তর করা কোন কিছুরির বিনিময় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। বর্তমানে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আইন এর মাধ্যমে পূর্বের মালিকদের নিকট হস্তান্তর বা ফেরত প্রদানের প্রক্রিয়া চলমান, যদি কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান উক্ত জমির দাবিদার হয় তাহলে উক্ত জমির কাগজপত্র প্রমাণ সহকারে জেলা প্রশাসক এর কার্যালয়ে দাখিল করতে হবে।
ভিপি সম্পত্তি প্রত্যাবর্তন সংশোধন আইন-
ইতিপূর্বে বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি ভিপি সম্পত্তি প্রত্যাবর্তন সংশোধন আইন হয়ে গেছে যেমন ২০০১, ২০০৮, ২০১১, ২০১২, ২০১৩. ভিপি সম্পত্তি বা শত্রু সম্পত্তির মাঝে বহু সাধারণ জনগণের সম্পত্তি ভিপি সম্পত্তির আওতায় চলে আসে। দশে অক্টোবর ২০১৩ তারিখে সরকারি একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে বিতর্কিত “খ” তপশীল অর্থাৎ সাধারণ জনগণের যে সকল সম্পত্তি ভিপি সম্পত্তির আওতাধিন হয়ে গেছিল তাহা জনগণের দাবির প্রেক্ষিতে বাতিল করা হয়।
অর্পিত সম্পত্তির “খ” তপশিল ভুক্ত এমন কিছু সম্পত্তি অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে গেছিল যা কখনোই ভিপি সম্পত্তির আওতাধীন ছিল না তা সাধারণ জনগণের সম্পত্তি ছিল। ফলে সাধারণ জনগনকে হানাহানির মুখোমুখি হতে হয়। এরি ধারাবাহিকতায় ”খ” তফশিলভুক্ত সম্পত্তিটি সংশোধনের দাবি উঠে, পরবর্তীতে হানাহানি মুখোমুখি হতাহত ঠেকাতে সরকার ”খ” তফসিলভুক্ত সম্পত্তির সংশোধন বা বাতিল করার উদ্দেশ্য নিয়ে সংসদে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পন আইন (দ্বিতীয় সংশোধন) ২০১৩ উপস্থাপন ও পাস করে।
অর্পিত সম্পদ বা শত্রু সম্পদ বর্তমানে কাদের কাছে আছে-
- ”ক” তফসিলভুক্ত অর্পিত সম্পত্তি বর্তমানে সরকারের নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসক ও উপ-সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর অধীনে এর সকল কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সরকারি গেজেট প্রকাশের পরবর্তী ৩০০ দিনের মধ্যে যদি উক্ত জমির কোন দাবিদার না পাওয়া যায় তাহলে উক্ত সম্পত্তি সমূহ সরকার স্বল্প মেয়াদে এবং দীর্ঘ মেয়াদে বন্দোবস্ত বা লিজ দিয়ে থাকে।
- ”খ” তফশিল ভক্ত অর্পিত সম্পত্তি বর্তমানে ব্যক্তি মালিকানাধীন অবস্থায় রয়েছে যা উক্ত জমির মালিক কোন আইনি পদক্ষেপ ছাড়াই হস্তান্তরের অধিকার রাখে। যা আইনত বৈধতা প্রদান করা হয়েছে।
অর্পিত সম্পত্তি বা শত্রু সম্পত্তি কিভাবে ফেরত পাওয়া যায়-
- যখন সরকার গেজেট প্রকাশ করে সেই সময়কালে যে সকল সম্পত্তি গেজেটের অন্তর্ভুক্ত থাকে তাহা নিয়ম অনুসারে ৩০০ দিনের মধ্যে আবেদন দাখিল করতে হবে।
- ভিপি সম্পত্তি বা অর্পিত সম্পত্তি বা শত্রু সম্পত্তি ফিরে পেতে হলে দাবিদারকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে অর্থাৎ তার অবশ্যই বাংলাদেশী নাগরিকত্ব থাকতে হবে।
- অর্পিত সম্পত্তির দাবিদার কোন একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তি অথবা প্রতিষ্ঠান হতে পারে।
- অর্পিত সম্পত্তি পেতে হলে তৎকালীন সময়ে যারা ভারত হতে বাংলাদেশ গমন করেছিলেন তাদের বিনিময় দলিল অথবা উক্ত সম্পদের প্রমাণপত্র বা
- প্রদত্ত সম্পত্তির বিবরণী জমা প্রদান করতে হবে।
শত্রু সম্পত্তির নামের পরিবর্তন-
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তানিদের দেওয়া বা ভারতীয়দের দেওয়া “শত্রু সম্পত্তির” নাম পরিবর্তন করে নাম রাখা হয় ”অর্পিত সম্পত্তি”। এ সকল অর্পিত সম্পত্তি অনেকবার তাদের মূল মালিকদের কাছে বা তাদের উত্তরাধিকারীদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। তবে তা বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় বিধিমালা না থাকায় বারবার উদ্যোগ নেওয়ার পরেও তা সঠিকভাবে এর কার্য পরিচালনা করা হয়ে ওঠেনি।
অর্পিত সম্পত্তির জন্য আবেদনের প্রক্রিয়া-
- অর্পিত সম্পত্তি অর্জনের জন্য অবশ্যই বিনিময় দলিল রেজিস্ট্রি করা থাকতে হবে।
- বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ
- যদি কোন মামলা থেকে থাকে তাহলে মামলা নিষ্পত্তির কাগজ থাকতে হবে।
- অর্পিত সম্পত্তির জন্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান উভয়ে আবেদন করতে পারবে।
- সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র সহ কম্পিউটার এর দোকানে অনলাইনে আবেদন সম্পন্ন করতে হবে।
- আবেদন সম্পন্ন হলে তা প্রিন্ট করে বের করতে হবে এবং ২০ টাকার কোট ফ্রি সংযুক্ত করতে হবে।
- আবেদনের হার্ডকপি সংশ্লিষ্ট কার্যালয় জমা প্রদান করতে হবে।
- সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা বিচার বিশ্লেষণ করে চূড়ান্ত হলে আপনাদেরকে নির্ধারিত অর্থ পরিশোধ করতে হবে।
- নির্ধারিত অর্থপরিষদ করা হলে অফিস কর্তৃক ডিসিআর প্রদান করা হয়।
উপসংহার
অর্পিত সম্পত্তি হতে নিজ সম্পত্তি আলাদা করণ করতে হলে যথাযথ নিয়মে উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি অথবা জেলা প্রশাসক এর কার্যালয়ে আপনার কাছে থাকা লিগ্যাল ডকুমেন্টস এর মাধ্যমে আবেদন করে আপনার প্রকৃত জমি ফিরিয়ে পেতে পারেন। আর যে সকল ব্যক্তি তার লিগ্যাল ডকুমেন্টস প্রদান করতে পারবে তাকে উক্ত জমি অবশ্যই ফেরত দেওয়া হয়।
লেখকের কথা
আপনার জমিটুকু যদি অর্পিত সম্পত্তির মধ্যে কোনভাবে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায় তাহলে আপনার কাছে যে সকল অরজিনাল কাগজপত্র রয়েছে তা নিয়ে উপসহকারী কমিশনার (ভূমি)র নিকট আবেদন করে আপনার কাঙ্খিত জমিটি ফেরত নিয়ে আসতে পারেন। সর্বশেষ আপনার কাছে এটুকুই বলি আমাদের পোস্টটি পড়ে যদি আপনার সামান্যতর উপকারে এসে থাকি তাহলে আমাদের এই পোস্টটি আপনার পরিচিত জনদের মাঝে শেয়ার করে দিবেন আশা করা যায় যার প্রয়োজন এই পোস্টটি হতে তার উপকার হবে।
উপরোক্ত পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে আপনাকে জানাই আন্তরিক
Bestwold নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url