OrdinaryITPostAd

জরিপ বলতে কি বুঝায়? জরিপের ইতিহাস আলোচনা-

 

জরিপ বলতে কি বুঝায়? জরিপের ইতিহাস আলোচনা-

 


সুচিপত্র-

 

জরিপ বলতে কি বুঝায়? জরিপের ইতিহাস আলোচনা-জরিপ বলতে কোন একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে তথ্যগুলো সুনিদৃষ্ট ভাবে লিপিবদ্ধ বা তথ্যভিত্তিক উপস্থাপন করার প্রক্রিয়া বুঝায়, জরিপ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যেমন- ভূমি জরি, তথ্য জরিপ, জনসংখ্যা  জরিপ, মোবাইল ফোন ইউজার জারিপ, ইত্যাদি।

 

ভূমি জরিপ কি- ভূমির অবস্থান আয়তন শ্রেণী সংবলিত মৌজাভিত্তিক নকশা,খতিয়ান,দাগ,পরিমাণ, মালিকের নাম, ঠিকানা, দিয়ে যে সকল তথ্যভিত্তিক রিপোর্ট তৈরি করা হয় তাহাই হচ্ছে ভূমি জরিপ।

 

 

 

জরিপের ইতিহাস- জরিপের উৎপত্তিস্থল ধরা হয় মিশরকে। তৎকালীন বর্ষার সময় মিশররে নীলনদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে নীলনদের দুইপাশে থাকা আবাদি জমিগুলো পলিমাটি পড়ে ভরাট হয়ে যেত, যার ফলে সাধারণ মানুষের জমিগুলোর সীমানা বিলুপ্ত হয়ে যেত। নীল নদের পানি যখন কমে যেত তখন প্রজাদের মধ্যে এই জমিগুলো নিয়ে বা জমির সীমানা গুলো নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হত, যা মারামারি হানাহানি এমনকি খুনাখুনি পর্যন্ত হয়ে যেত।  ওই সমস্ত সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে মিশরের পন্ডিত বর্গ আলোচনার মাধ্যমে বা জ্যামিতিক আলোচনা শুরু করে।

 

*তৎকালীন মিশরে দেশের সর্বপ্রথম গ্রিক পন্ডিত থেলস জ্যামিতির শিক্ষা লাভ করেন তা  মিশর দেশে সর্বত্রে ছড়িয়ে দেন। পরে তার ছাত্র পিথাগোরাস জ্যামিতিক শাস্ত্রের আরও উন্নয়ন সাধন করেন।  এরপর প্রায় ২০০ বছর অতিক্রম করে যাই, তথাপিও জ্যামিতিক শাস্ত্রের সূত্রগুলো একত্রিত করা হয়ে ওঠেনি বিক্ষিপ্ত অবস্থায় থেকে যায়।  খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ বছর আগে তৎকালীন আলেকজান্ডার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌতপূর্ব অধ্যাপক গ্রীক পন্ডিত ইউক্লিড জ্যামিতিক সূত্রগুলোকে একত্রিত করে একটি সুবিন্যস্ত বই রচনা করেন এবং সে বইয়ের নামকরণ করা হয়ইউক্লিড ইলেমেন্ট “  পরবর্তীতে তার এই বই ব্যাপক আকারে বহু ভাষায় অনুবাদ করা হয়।

 

ভূমি জরিপের উদ্দেশ্য এবং প্রয়োজনীয়তা কি হতে পারে-

  • একজন ভূমি মালিকের সঠিক সীমানা নির্ধারণ করার জন্য ভূমি জরিপের প্রয়োজনীয়তা আছে।
  • ভূমির সঠিক মালিক নির্ণয় করার জন্য এর গুরুত্ব  অপরিসীম।
  • মৌজাভিত্তিক ভূমির মালিকানা নির্ধারণ করা ভূমি জরিপের একটি বড় উদ্দেশ্য।
  • হালনাগাদ খতিয়ান সরবরাহ করা এবং উক্ত ভূমির হাল মালিব চিহ্নিতকরণ করা।
  • খতিয়ানের শ্রেণী দাগ নম্বর জমির পরিমাণ এর তথ্য নির্ণয় করা।
  • সরকারের একটি আয়ের বড় উৎস ভূমি উন্নয়ন কর এর জন্য প্রয়োজনীয়তা।
  • খাস জমির পৃথকীকরণ করা এবং তা বন্দোবস্তের ব্যবস্থা করা।
  • মজা ভিত্তিক নকশা প্রণয়ন করার জন্য ভূমি জরিপের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
  • ভূমি জরিপের ফলে নতুন নকশা প্রণয়ন করা হয়।
  • জরিপের ফলে পূর্বের জরিপের কোন ভুল ত্রুটি থেকে থাকলে তা সংশোধন করে নেয়া যায়।

 

ভূমি জরিপ করতে কি কি যন্ত্রপাতির ব্যবহার করা হয়-

  • প্রথমত লাগবে একটি মৌজা ম্যাপ।
  • টেপ ফিতা, চেইন, শিকল, অথবা কাপড়ের ফিতা এর ব্যবহার হয়।
  • গুনিয়র স্কেল বা ইঞ্চি স্কেল।
  • মেটাল বা  গান্টার্স স্কেল।
  • কাটা কম্পাস এর ব্যবহার হয়।
  • ক্যালকুলেটরের প্রয়োজন হয়।
  • রুলার বা স্কেল বড় ধরনের স্কেল।
  • ম্যাগনিফাই গ্লাস বা আতসী কাঁচ।
  • দিক নির্ণয় করার জন্য একটি যন্ত্র যা কমপাস নামেও পরিচিত।
  • চাদা,এবং বছরে জমি পরিমাপের সকল সূত্র পকেটে থাকা আবশ্যক।
  • রাফখাতা মূল খাতা এবং কার্বন কপি।
  • পেন্সিল কলম এবং হাইলাইটস পেন।
  • প্রয়োজনীয় খুঁটি খাম্বা এর ব্যবস্থা রাখতে হবে।

 

 

একজন ভূমি জরিপ কারক (আমিন) কিভাবে ভূমি জরিপ করবে-

  • যে প্লটের ভূমির পরিমাপ করতে হবে তার একটি হাত নকশা অঙ্কন করতে হবে একটি রাপ খাতাই। এরপর উক্ত জমিটির মৌজা ম্যাপ থেকে প্রতিটি বাহুর সঠিক পরিমাপ খাতায় লিখে রাখতে হবে প্রয়োজনে ছোট ছোট খণ্ড করে নকশার মাপ নিতে হবে। কাটা কম্পাস এর সাহায্যে মাপ তুলে গান্টার স্কেল অথবা গুনিয়ার স্কেল বা ফিট স্কেল এর মাধ্যমে মাপটি নির্ণয় করতে হবে বর্তমানে  ডিজিটালাইজ হওয়ার ভিত্তিতে কম্পিউটারের মাধ্যমে অটোক্যাড অ্যাপস এর সাহায্যে মাপ তোলা যায়।
  •  
  • যে প্লাটি মাপতে হবে তা ভালোভাবে ঘুরে ঘুরে দেখে নিতে হবে। কোন জায়গার দিয়ে মাপটা তুললে সঠিক মাপ পাওয়া যাবে এবং দেখে নিতে হবে যেই স্থান হতে মাপটি তুলতে হবে সেই স্থানে কোনরকম বাধা- বিঘ্ন সৃষ্টি হয় কিনা,যেমন:- গাছের বাধা, বাড়ির বাধা, পুকুরের বাধা, ইত্যাদি। বাধা মুক্ত পজিশন হতে জমির মাপ করতে হবে এবং মাপ হতেই নির্ধারণ করতে হবে উক্ত মাপটি কোন সূত্রের মাধ্যমে ফলাফল নিয়ে আসা যায়, প্রয়োজনে একাধিক নিয়মের মাপ তুলে নিতে হবে।
  •  
  • জমিটিতে কোন স্টেশন বা আনুমানিক সীমানা রেখা আছে কিনা তা নির্ণয় করতে হবে। খুঁজে বের করতে হবে স্টেশন কোথায় আছে, যদি স্টেশন খুঁজে পাওয়া না যায় তা হলে একই জায়গায় চারটি আইল মিলিত হয়েছে এমন স্থান অথবা তিনটি আইলের মিলিত  হয়েছে এমন স্থান কে  আনুমানিক সীমারেখা ধরে নিয়ে জমিটি পরিমাপ করতে হয়। যদি আশেপাশে এরকম কোন আলামত না পাওয়া যায় তাহলে স্থানীয় যারা আছে তাদের হতে বিষয়টি ক্ষতিয়ে নিতে হবে যে আশেপাশে কোন জায়গা থেকে মাফ করলে মোটামুটি মাপটি সঠিক হয়ে থাকে অর্থাৎ আশেপাশের প্লটের মালিকদেরকে জিজ্ঞাসা করলে তারা অনেক তথ্য আপনাকে দিতে পারবে। সকল বিষয়ে সমন্বয় করে আপনাকে একটি জমির সঠিক পরিমাপ করে দিতে হবে।

  • ভূমি জরিপের কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গেলে প্রত্যেকটি ভূমি মালিক কে অথবা যে প্লট মাপার জন্য যাওয়া হয়েছিল সেই প্লটের প্রত্যেকটা দিক বা প্রতিটি বাহু নির্দিষ্ট পরিমাণ উল্লেখ করে একটি ওয়ার্কিং স্কেচ আপনাকে তৈরি করে দিতে হবে। যা ভূমি মালিক অথবা যে কেউ  বিষয়টি ক্লিয়ার বুঝতে পারে। যাতে জমির পরিমাণ, খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর, উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের স্বাক্ষর, সর্বোপরি আপনার শীল স্বাক্ষর দিয়ে একটি সংরক্ষিত স্টেটমেন্ট ভূমি মালিকদের কে সরবরাহ করতে হবে।

 

একজন সার্ভেয়ার বা আমীন তার কি কি কাজের ওপর গুরুত্ব প্রদান করবে-

  • আঞ্চলিক মাপ এবং জাতীয় বা ইন্টারন্যাশনাল মাপ এর প্রতি লক্ষ্য রেখে ভূমি জরিপ করতে হবে।
  • যে ভূমিটি বা প্লটটি পরিমাপ করতে যাবে যদি প্লটটি বিরোধ সম্পন্ন হয় তাহলে সার্ভেয়ারের উচিত দুই পক্ষের মতামত আগে শ্রবণ করা তারপর জমিটি পরিমাপ করা।
  • ভূমি পরিমাপের সময় মাথা গরম করা যাবে না, কারো কথায় কান না দিয়ে নিজের দক্ষতা অনুসারে ভুমিটি পরিমাপ করতে হবে। নচেৎ গণিতের ভুল হওয়া। এজন্য হিসাব নিকাশে ভুল ভ্রান্তি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
  • জমিটি ইতিপূর্বে যদি কোন পরিমাপ হয়ে থাকে তাহলে পূর্বের সার্ভেয়ারের সমালোচনা না করে আপনার নিজের মাপটি আপনি উপস্থাপন করবেন। কাগজপত্র, সরজমিনে, এবং মৌজা ম্যাপ যা থাকবে তা বিচার বিশ্লেষণ করে পরিমাপ করে আপনাকে ফলাফল ঘোষণা করতে হবে। 
  • কারো কথায় প্রভাবিত না হয়ে অর্থাৎ প্রলোভন এর লোভে না পড়ে মূল নকশায়, কাগজ , এবং ধরো জমিনে যাহা পাবেন তাহাই উল্লেখ করিতে হইবে।  কোন সময়ের জন্য ফটোকপি নকশায় জমির পরিমাপ করা যাবে না এতে করে জমির পরিমাণ ভুল হয়ে যাবে।



একটি জমি বা ভূমি ক্রয় করতে ক্রেতার করণীয় কি কি হওয়া উচিত-

  • জমি বিক্রেতার নিকট হতে ক্রয় ইচ্ছুক ভূমি সংক্রান্ত সকল তথ্য এর আপডেট নিতে হবে।  সি.এস হতে বর্তমান মালিক পর্যন্ত দলিল খতিয়ানের ধারাবাহিকতা নির্ণয় করে নিতে হবে।
  • উক্ত জমির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাওয়ার পর একজন আইনজীবী অথবা মুহুরী এর দ্বারা কাগজপত্র গুলো সঠিকতা যাচাই করে নিতে হবে।
  • নাবালকের সম্পত্তি অথবা আদিবাসীদের সম্পত্তি হলে জেলা প্রশাসকের অনুমতি পত্র আছে কিনা তা খতিয়ে নিতে হবে।
  • ওয়ারিশান সম্পত্তি হলে, ওয়ারিশান সনদ এর প্রয়োজন হবে।
  • জমিটি ইতিপূর্বে হস্তান্তর হয়েছে কিনা সে ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে হবে।প্রয়োজনে জমিটির বায়না করে উক্ত জমিতে একটি মালিকানা সাইনবোর্ড স্থাপন করে দিতে হবে। যদি সম্ভব হয় স্থানীয় দৈনিক পত্রিকাতে জমেটিক ক্রয় সংক্রান্ত তথ্য দিয়ে বিজ্ঞাপন দিতে হবে। এতে করে উক্ত সম্পত্তিতে কারো অংশ থাকলে বা হিস্যা থাকলে সে বিষয়ে আপনাকে জানাতে পারবে।
  • জমিটি খাস জমে কিনা, সরকারী স্বার্থ জড়িত আছে এমন কোন সম্পত্তি কিনা, শত্রু-সম্পত্তি অর্থাৎ ভিপি সম্পদ কিনা তা দেখে নিতে হবে। কিংবা সরকারি একোয়ার করা জমি কিনা তা নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে।
  • ওয়ারিশান সম্পত্তি হলে তাহা হিস্যা অনুযায়ী বিকৃত জমি সঠিক আছে কিনা তা নির্ণয় করে নিতে হবে।
  • জমিটি একজন দক্ষ সার্ভার দ্বারা পরিমাপ করে সীমানা পিলার করে নিতে হবে।
  • সর্বোপরি একজন দক্ষ দলিল লেখক এর মাধ্যমে উক্ত জমিটি রেজিস্ট্রি করে নিতে হবে। 

 

একটি জমি বা ভূমি বিক্রয় করতে বিক্রেতার করণীয় কি কি হওয়া উচিত-

  • ক্রেতাকে তার ভূমি সংক্রান্ত সকল ডকুমেন্টস এর ফটোকপি সরবরাহ করতে হবে।
  • প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের কমতি থাকলে তা বিক্রেতাকে সংগ্রহ করে দিতে হবে।  যেমন:-  ওয়ারিশান সনদ, নাবালকের  অভিভাবক হলে জেলা প্রশাসকের অনুমতি পত্র, হাল সনের ভূমি উন্নয়ন কর এর দাখিলা ইত্যাদি।
  • ক্রেতাকে উক্ত জমি সঠিকভাবে মেপে সীমানা করে দেওয়া।
  • ক্রেতা উক্ত জমি কেনার সমার্থ রাখে কিনা তা বিবেচনা করে নিতে হবে। 
  • মূল দলিল সিগনেচার করার পূর্বে বা টিপসই দেওয়ার পূর্বে  আর্থিক লেনদেন মিটিয়ে নিতে হবে।
  • জমিটি রেজিস্ট্রি বায়না হয়ে থাকলে উক্ত সময়ের মধ্যে ক্রেতা যদি কিনতে ব্যর্থ হয় তাহলে একটি জিডি করে রাখতে হবে অন্যথায় উল্টো ক্রেতা চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
  • দলিলে কোন তথ্য গোপন রেখে দিয়ে দলিল করা যাবে না।
  • সর্বোপরি জমিটি ক্রেতাকে রেজিস্ট্রি দলিল করে দিতে হবে।

 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Bestwold নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url