নামজারি কি? ই-নামজারির আবেদন কিভাবে করতে হয়?
আসসালামু আলাইকুম, Bestwold এ আপনাকে স্বাগতম! সুপ্রিয় পাঠক আশা করছি আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছেন। এই মুহূর্তে আপনি নামজারি কি, ই-নামজারির আবেদন কিভাবে করতে হয় এই বিষয়ে জানতে আগ্রহী। আজ আমরা উক্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করব, এই পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে নিলে আপনি আপনার সমাধানটি পেয়ে যাবেন।নামজারি কি, ই-নামজারির আবেদন কিভাবে করতে হয়, এর খরচ কত এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা আজ আমরা করছি, পর্যায়ক্রমে আলোচনা গুলো মনোযোগ সহকারে পড়ে নিন তাহলে নামজারি সম্পর্কে একটি বিস্তারিত ধারণা পেয়ে যাবেন। চলুন তাহলে শুরু করা যাক।
সূচনা
নামজারি হচ্ছে ভূমি সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। যার মাধ্যমে ভূমি মালিকগণ নিজ নামে ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনা পরিষদ করে থাকে এবং এর মাধ্যমে মালিকানা সত্ত স্থাপন করে থাকে। নামজারি একপ্রকার কর্তন বটে। অর্থাৎ আমরা সহজ ভাবে যদি বললি তাহলে বিষয়টি এরকম হবে, কোন কারনে ভূমি মালিকগণ তার নিজের বা ওয়ারিশান সূত্রে পাওয়া সম্পত্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে নিজ সত্ত ত্যাগ করে নতুন ভূমি মালিকের নামে সত্ত ছেড়ে দেওয়াকে নামজারি কর্তন বা মিউটেশন বলা হয়।
নামজারি এর সমার্থক শব্দ সমূহ
নামজারি, খারিজ, মিউটেশন, জমা ভাগ, জমা একত্রীকরণ, রেকর্ড কারেকশন, নামজারি পত্তন,নামজারি কর্তন, ই-নামজারি। উপরোক্ত সকল শব্দগুলোই একই অর্থে ব্যবহৃত হয়।
নামজারি কেন করতে হয়
যে কোন মাধ্যমে কোন জমি বা ভূমির মালিকানা পেয়ে থাকলে প্রথমেই তার রেজিস্ট্রেশন ইনসিওর করতে হবে এর পর-পরই নামজারি/ খারিজ/ মিউটেশন করে নেওয়া উক্ত মালিকের নিজ দায়িত্ব। কোন স্থায়ী সম্পত্তি অর্থাৎ জমির মালিকানা প্রমাণ করার জন্য দলিল যেমন গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ নামজারি করা। এজন্য নামজারি করা একপ্রকার বাধ্যতামূলক।
আরো পড়ুনঃ ভূমি উন্নয়ন কর অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন
নামজারীর মাধ্যমে আলাদাভাবে নিজ নামে সত্ত সৃষ্টি হয়। এর মাধ্যমে ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান করা হয়, যাহা মালিকানা প্রমাণ করার একটি গুরুত্বপূর্ণ ডকমেন্টস। যে কোন মাধ্যমে জমির মালিকানা পাওয়ার পরেও যদি কেউ নামজারি না করে থাকে তাহলে সেটি তার জন্য অনেক বিপদের কারণ হতে পারে।
নামজারি কি
নাম জারি হচ্ছে একটি জমির পূর্ণাঙ্গ ডকুমেন্ট। যাহাতে ভূমি মালিকের নাম, দাগ নম্বর, খতিয়ান নম্বর, হোল্ডিং নম্বর,জমির শ্রেণী, জমির পরিমাণ, এবং মন্তব্য কলমে আগত তথ্য দেওয়া থাকে। অর্থাৎ উক্ত খতিয়ানের মালিক কিভাবে বা কিসের ভিত্তিতে মালিক হলো তার বিবরণ উল্লেখ থাকে।
আরো পড়ুনঃ জমির মালিকানা বের করার উপায়
নামজারি হচ্ছে রেকর্ড কারেকশনের একটি পূর্ণাঙ্গ মাধ্যম, যাহা পরবর্তীতে সরকারিভাবে কোন রেকর্ড হলে উক্ত নামে তাহা রেকর্ড ভুক্ত হয়। অন্যভাবে বলা যায় নামজারি হচ্ছে পূর্ব মালিকের নাম কর্তন করে নতুন মালিকের নাম অন্তর্ভুক্ত করণ করাই হচ্ছে নামজারি।
নামজারি করার সুবিধা সমূহ
- মালিকানা প্রমাণের একটি গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস তৈরি হয়।
- নিজ নামে ভূমি উন্নয়ন কর পরিষদ করা যায়।
- ভূমি উন্নয়ন কর বা দাখিলা এর মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি ডকুমেন্টস পাওয়া যায়।
- সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর আওতাভুক্ত হওয়া যায় অর্থাৎ সরকারি ভূমি রেজিস্ট্রারে ভূমি মালিকের নাম ঠিকানা পাওয়া যায়।
- নিজেকে কর দাতা হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।
- বিভিন্ন ধরনের মামলা মকদ্দমা হতে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
- ভূমির মালিকানা হালনাগাদ করা যায়।
- সরকারি জরিপ কাজে এর গুরুত্ব পাওয়া যায়।
- তাৎক্ষণিক ভাবে জমিটি হস্তান্তর করা যায়।
- জমিটি সরকারের এক নম্বর খতিয়ান হতে বাঁচানো যায় অর্থাৎ খাস জমি হতে পৃথকীকরণ করা যায়।
- উক্ত জমির বিক্রেতা বা দাতা পুনরায় অন্য কারো কাছে জমিটি হস্তান্তর করতে ব্যর্থ হয়।
নামজারি না করার অসুবিধা সমূহ
উক্ত জমির দাতা বা বিক্রেতা জালিয়াতি করার সুযোগ পায় অর্থাৎ ক্রেতা জমি নামজারি না করলে, বিক্রেতা বা দাতা তা পুনরায় হস্তান্তর করে ফেলতে পারে।
নামজানি না করা থাকলে, দাদার নিকট হতে দ্বিতীয় কোন গ্রহীতা জমেটি না জেনে-বুঝে গ্রহণ করতে পারে।
পূর্বের মালিকের নামেই জমিটি বহাল থেকে যায়।
জমির মালিক গুরুত্বপূর্ণ দুইটি ডকুমেন্টস থেকে বঞ্চিত হয়। যেমন- প্রস্তাবিত খতিয়ান, ভূমি উন্নয়ন কর এর দাখিলা।
প্রয়োজন অনুসারে জমির মালিক তাৎক্ষণিক জমিটি হস্তান্তর করতে ব্যর্থ হয়।
অনা-কাঙ্ক্ষিত কিছু মামলা এবং ভোগান্তি ও সর্বোপরি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।
নিজ নামে ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান করতে ব্যর্থ হয়।
সরকারি কোনো রেকর্ড পরিচালনা করলে তাৎক্ষণিকভাবে জমিটি রেকর্ড করতে বাধাগ্রস্থ হয়।
মালিকানা প্রমাণ করতে বাধা গ্রস্থ হয়।
ই নামজারির আবেদন কিভাবে করতে হয়
সর্বপ্রথম যে জমিটি ই-মামজারি করতে চাচ্ছি তার সকল ডকুমেন্ট একত্রিত করতে হবে। উক্ত ডকুমেন্টস এর ভিত্তিতে অনলাইন এর মাধ্যমে জমিটি নামজারির আবেদন করতে হবে। প্রথমে আপনার ডিভাইস হতে একটি ব্রাউজার ওপেন করে নিতে হবে এবং সার্চ বক্সে www.land.gov.bd সার্চ করতে হবে। এরপর আপনার সামনে একটি ইন্টারফেস ওপেন হবে।
আরো পড়ুনঃ অনলাইন এর মাধ্যমে ই-নামজারির আবেদন
শেখান হতে ই-নামজারি অপশনে ক্লিক করে প্রবেশ করতে হবে। এবং ইস্টার চিহ্নিত তথ্যগুলো অবশ্যই প্রদান করতে হবে এবং যা যা প্রয়োজন সকল কিছু পূরণ করে আবেদনটি সাবমিট করতে হবে। আবেদন সাবমিট করা হয়ে যাওয়ার পর আপনার মোবাইল ফোনে একটি টুকেন নম্বর আসবে সেইটুকেন নাম্বারটি ব্যবহার করে পেমেন্ট সম্পন্ন করতে হবে পেমেন্ট সম্পন্ন করা হয়ে গেলে আপনার আবেদনের কাজ সম্পন্ন হয়ে গেল।
নামজারি করতে কি কি কাগজের প্রয়োজন হয়
- রেজিস্টিকৃত দলিল এর ফটোকপি অথবা সাটিফাই কপি।
- ক্ষেত্রবিশেষে বা প্রয়োজনে বায়া দলিল এর ফটোকপি।
- সর্বশেষ রেকর্ডীয় খতিয়ান এর ফটোকপি।
- প্রস্তাবিত খতিয়ান থেকে থাকলে তার ফটোকপি।
- ভূমি উন্নয়ন কর এর দাখিলা। (হাল-সান এর)
- ওয়ারিশান সম্পত্তি হলে, ওরিশান সনদপত্র।
- নাবালকের সম্পত্তি হলে বা আদিবাসীর সম্পত্তি হলে, জেলা প্রশাসক এর অনুমতি পত্র এবং আইনত অভিভাব এর সনদপত্র।
- মামলা কৃত জমি হলে রাই এর কপি।
- আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয় পত্র এর ফটোকপি।
- অনলাইন আবেদন পত্র এর হার্ড কপি।
- প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহে রাখতে হয়।
নামজারি এর সময়সীমা
একটি নামজারি আবেদন দাখিলের পর হতে সর্বোচ্চ ৪৫ কর্ম দিবসের মধ্যে সম্পাদিত হয়ে থাকে। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে এর সময় কম বেশি হতে পারে।
নামজারি আবেদনের জন্য কত অর্থের প্রয়োজন
- নামজারির জন্য আবেদন ফি ৫০ টাকা।
- নোটিশ জারি ফি ২০ টাকা।
- রেকর্ড কারেকশন ফি ১০০০ টাকা।
- খতিয়ান সরবরাহ ফি ১০০ টাকা।
- মোট ১১৭০ টাকা সরকারি খরচ।
বাকি খরচ অঞ্চল ভেদে নামজারির খরচ ভিন্ন ভিন্ন এজন্য স্থানীয় খরচের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় অর্থ।
নামজারি করণ এর ধাপসমূহ
- কোন একটি ডিভাইসের মাধ্যমে বা কম্পিউটার এর দোকান হতে নামজারির আবেদন সম্পন্ন করতে হয়।
- নামজারির আবেদনসম্পন্ন হলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) একটি কেস নম্বর প্রদান করে।
- আবেদনটি সরজমিনে তদন্তের জন্য ইউনিয়ন সহকারী ভূমি অফিসারের কাছে প্রেরণ করা হয়।
- ইউনিয়ন সহকারী ভূমি অফিসার তা তদন্ত করে উপসহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর তদন্ত রিপোর্ট প্রদান করেন।
- উপসহকারী কমিশনার ভূমি ইউনিয়ন ভূমি সহকারী অফিসার এর তদন্তের ভিত্তিতে একটি শুনানি তারিখ ধার্য করে থাকে।
- শুনানির তারিখ পক্ষগণকে নোটিশের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়।
- শুনানের দিন সকল অরিজিনাল দলিলাদি উপসহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর উপস্থাপন করতে হয়।
- শুনানি কার্য সম্পন্ন হলে উপসহকারী কমিশনার (ভূমি) উক্ত নামজারিটির আদেশ প্রদান করে থাকে।
- সর্বশেষ রেকর্ড সংশোধন ফ্রি ও খতিয়ান ফি অর্থাৎ ডি.সি.আর এর টাকা পরিশোধ করে নামজারি কাজ সম্পন্ন করতে হয়।
- নাম জারি সম্পূর্ণ হলে ইউনিয়ন ভূমি অফিস এ উক্ত খতিয়ানের সংশ্লিষ্ট হোল্ডিং খুলে ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান করতে হয়।
উপসংহার
নিজ ভূমি সংরক্ষণ করি, ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা নিরেশন করি। সময় মতো ভূমি উন্নয়ন কর পরিষদ করব, নিজের জমি খাস হবার হাত থেকে রক্ষা করব। দেশের স্বার্থ রক্ষা করব সর্বোপরি জমি সংক্রান্ত সকল ডকুমেন্টস নিজ দায়িত্বে সংরক্ষণ করে রাখবো। বিশেষ করে নামজারিতে অবহেলা করব না এবং দ্রুত নামজারি এর কার্য সম্পাদন করে নেব।
লেখক এর কথা
সময় মতো ই-নামজারি সম্পন্ন করুন, আপনার নিজভূমিটি সুরক্ষিত রাখুন। পরিশেষে বলতে চাই আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনার যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার পরিচিত জনদের মাঝে শেয়ার করতে দিন যাতে করে তারাও বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারে।
শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে জানাই অসংখ্য
ধন্যবাদ
Bestwold নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url