উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত হয় কারা এবং কারা কখনোই বঞ্চিত হয়না
আসসালামু আলাইকুম, সুপ্রিয় পাঠক বিন্দু আপনারা উত্তরাধিকার সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। আমরা আজ এই পোষ্টের মধ্যে কোন কোন শ্রেণীর ব্যক্তিবর্গ উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত হবে এবং কোন কোন ব্যক্তি কখনোই উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত হবে না এ বিষয়ে আলোকপাত করবো ইনশাল্লাহ। আপনারা যদি মনোযোগ সহকারে আমাদের পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়তে পারেন তাহলে উত্তরাধিকার সম্পর্কে একটি ভালো ধারণা হয়ে যাবে।
ইসলামী উত্তরাধিকার আইনে কোন কোন ব্যক্তি কে কোন অবস্থাতেই সম্পত্তি হতে বঞ্চিত করা যায় না এবং কোন কোন ব্যক্তি উত্তরাধিকার আইনে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়ে যায় এ বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা এই পোস্টে থাকছে আশা করছি আপনি মনোযোগ সহকারে আমাদের এই পোস্টটি সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত পড়বেন এবং আপনার মতামত জানাবেন।
সূচনা
মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে যে সকল ব্যক্তি উত্তরাধিকার হিসাবে যোগ্যতা সম্পন্ন হয়ে থাকে তাদেরকে মৃত ব্যক্তির ওয়ারিস ধরা হয়। সম্পর্কের মধ্যে এমন কিছু সম্পর্ক আছে যারা মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পত্তির ভাগ কোন অবস্থাতেই ছেড়ে দেই না পক্ষান্তরে এমন কিছু সম্পর্ক আছে যারা মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে কোনরকম উত্তরাধিকার বর্তায় না। আমরা আজ এই দুইটি বিষয় নিয়েই আলোচনা করব।
পোস্ট এর বিষয়বস্তু
- উত্তরাধিকার হিসাবে কোন কোন ব্যক্তিবর্গ কখনোই বঞ্চিত হয় না
- উত্তরাধিকার হিসাবে কোন কোন ব্যক্তি বঞ্চিত
- মুসলিম পারিবারিক আইনের মাধ্যমে বঞ্চিত ব্যক্তি
- মুসলিম পারিবারিক আইনে কয়জন ব্যক্তি প্রতিনিধিত্ব করতে পারে
- ত্যাজ্য পুত্র বা কন্যার উত্তরাধিকার কি হবে
- একজন হিজড়া কি উত্তরাধিকারী হতে পারে
উত্তরাধিকার হিসাবে কোন কোন ব্যক্তিবর্গ কখনোই বঞ্চিত হয় না
- পিতা- নির্দিষ্ট অংশ ১/৬ এবং অবশিষ্টভোগী হিসেবে সম্পত্তিতে ভাগ পেয়ে থাকে।
- মাতা- নির্দিষ্ট অংশ ১/৬এবং কোন কোন ক্ষেত্রে ১/৩ অংশ পেয়ে থাকে। মৃত ব্যক্তি যদি কোন সন্তানাদি না থাকে তাহলে মাতা ১/৩ অংশ পেয়ে থাকে এবং সন্তানাদি যদি থাকে তাহলে ১/৬ অংশ।
- পুত্র- এর কোন নির্দিষ্ট নেই। তবে অবশিষ্ট ভোগী হিসেবে সম্পত্তি পেয়ে থাকে।
- কন্য- কন্যা একজন হলে মোট সম্পত্তির অর্ধেক এবং একের অধিক কন্যা সন্তান হলে মোট সম্পত্তির তিন ভাগের দুই ভাগ সমস্ত মেয়েদের মধ্যে বন্টন হবে সমান হরে।
- স্বামী- মোট সম্পত্তির চারভাগের এক ভাগ স্বামীর অংশ তবে সন্তানাদি না থাকলে মোট সম্পত্তির অর্ধেক অংশ স্বামী পেয়ে যাবে।
- স্ত্রী- মোট সম্পত্তির ৮ভাগের একভাগ স্ত্রী পাবে তবে যদি সন্তানাদি না থাকে তাহলে মোট সম্পত্তির চার ভাগের একভাগ স্ত্রী হিসেবে পেয়ে যাবে।
উত্তরাধিকার হিসাবে কোন কোন ব্যক্তি বঞ্চিত
দাস বা ক্রীতদাস/দাসী-
একজন দাস কখনো তার প্রভুর সম্পত্তি অংশীদার হিসাবে দাবি করতে পারে না। কারণ দাস সর্বদা মালিকের সেবায় নিয়োজিত। একজন দাসের নিজের বলতে কিছুই থাকেনা। জন্য সে সম্পদ হতে বঞ্চিত।
বেধর্মী বা ধর্ম পরিত্যাগকারী-
মুসলমানদের সম্পত্তি শুধুমাত্র মুসলমান ধর্মালম্বীদের আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যেই ভাগ বন্টন হয়ে থাকে। কোন ব্যক্তি যদি ধর্ম ত্যাগ করে তাহলে সেই ব্যক্তি তার পূর্বপুরুষ সহ সকলের সম্পত্তির ভাগ হতে বঞ্চিত হয়। এক্ষেত্রে বলা বাহুল্য যে একজন মুসলমানের সাথে অপর একজন বেধর্মীর আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকলেও সে কখনো সম্পত্তির কোন দাবি দেওয়া রাখতে পারবেনা।
হত্যাকারী-
কোন ব্যক্তিকে যদি কোন ব্যক্তি হত্যা করে বসে তাহলে তার সম্পত্তিতে হত্যাকারী ওয়ারিশ হয়ে থাকলেও সে মৃত ব্যক্তির তেক্ত সম্পত্তির কোন পরিমাণের দাবি করতে পারবে না। হত্যা ইচ্ছাকৃতভাবে হোক আর অনিচ্ছাকৃতভাবেই হোক যেভাবেই সংঘটিত হোক না কেন হত্যাকারী ব্যক্তি নিহিত ব্যক্তির সম্পত্তি হতে ছিটে ফোটাও কোন সম্পদ এর অধিকার রাখে না বা যোগ্যতা হারায়।
জারজ সন্তান/অবৈধ সন্তান-
জারজ সন্তান তার অবৈধ পিতার সম্পত্তিতে কোনরূপ দাবী দেওয়া করতে পারবে না। অবৈধ সন্তান কেবলমাত্র তার মাতার সম্পত্তির উত্তরাধিকার হয়। এক্ষেত্রে তার মাতার অনুকূলে যে সকল আত্মীয়-স্বজন আছে তাদের সম্পত্তিতে ভাগ পেতে পারে।
নিরুদ্দেশ ব্যক্তি-
কোন ব্যক্তি যদি ২৫ বছরের অধিক সময় হারিয়ে থাকে তাহলে আমরা উক্ত ব্যক্তিকে হয় মৃত ধরে নিব,না হয় নিরুদ্দেশ হিসেবে চিহ্নিত করব। আবার হানাফী মত অনুসারে কোন ব্যক্তি যদি ৯০ বছর বয়স হয় আর নিরুদ্দেশ হয় তা হলে উক্ত ব্যক্তিকে মৃত হিসেবে ধরে নিয়ে সম্পত্তি বন্টন করতে হবে।
সম্পূর্ণ অংশ হতে বঞ্চিত-
পিতার উপস্থিতিতে যদি ঊর্ধ্বপুরুষ থেকে থাকে তাহলে তারা বঞ্চিত হবে। যেমন: পিতার উপরে দাদা, দাদার বাবা। আবার পিতার উপস্থিতিতে পুত্রের করলে বা তারও নিম্নগামী বংশধর উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত হবে। দুই বা ততোধিক বোন থাকলে বিমাতা বোনেরা বঞ্চিত হবে। আবার দুই বা ততোধিক কন্যা থাকলে পুত্রের কন্যা রা যতই নিম্নগামী হোক না কেন তারা উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত হবে।
মুসলিম পারিবারিক আইনের মাধ্যমে বঞ্চিত ব্যক্তি
মুসলিম পারিবারিক আইনে পিতা জীবিত অবস্থায় পুত্র মারা গেলে, পুত্রের রেখে যাওয়া ওয়ারিসদের মধ্যে যদি ছেলে, মেয়ে, স্ত্রী থেকে থাকে, তাহলে মৃত ব্যক্তির ছেলে এবং মেয়ে তার বাবার প্রতিনিধি হিসেবে দাদার সম্পত্তির সম্পূর্ণ অংশ যেটা তার বাবা পেতো গোটা টুকুই পেয়ে যাবে। এক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির স্ত্রী সম্পত্তি হতে বঞ্চিত হয়। বলে রাখা ভালো যে মৃত ব্যক্তির শুধু যদি একটি কন্যাও থেকে থাকে সে ক্ষেত্রেও একজন মেয়েই তার বাবার প্রতিনিধিত্ব হিসাবে বাবার প্রাপ্য সম্পূর্ণ অংশটি মেয়ে পেয়ে যাবে।
মুসলিম পারিবারিক আইনে কয়জন ব্যক্তি প্রতিনিধিত্ব করতে পারে
মুসলিম পারিবারিক আইনের চার ধরনের ব্যক্তি প্রতিনিধিত্ব করার অধিকার রাখে। চারজন ব্যক্তি হলো
- মৃত ব্যক্তির পুত্র।
- মৃত ব্যক্তির কন্যা।
- মৃত ব্যক্তির পুত্রের পুত্র বা কন্যা।
- মৃত ব্যক্তির কন্যার পুত্র বা কন্যা।
ত্যাজ্য পুত্র বা কন্যার উত্তরাধিকার কি হবে
আমাদের বর্তমান সমাজে একটি ধারণা প্রচলিত আছে যে, তেজ্যকৃত পুত্র বা কন্যা কোন ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকার হিসাবে সম্পত্তির ভাগ পায় না। যদিও এই ধারণাটির মোটেও কোন ভিত্তি নেই। ইসলাম ত্যাজ্য বিষয়টি সাপোর্ট করে না অর্থাৎ ইসলামের তেজ্যকৃত সন্তান বা পুত্র-কন্যা বলতে কিছুই নেই। রক্তের সম্পর্ক বা ঔরসজাত সন্তান হলেই সে তার ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকার হিসাবে যোগ্যতা লাভ করে। এজন্য ইসলামে ত্যাজ্য করার কোন অবকাশ নেই।
যদি কোন পিতা-মাতা তার সন্তানকে কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে, সেক্ষেত্রে তাকে সম্পত্তি হতে বঞ্চিত করতে সম্পূর্ণ পরিমাণ পারে না। তবে যদি মনে করে এক তৃতীয় অংশ বঞ্চিত করতে পারে। কারণ কোন ব্যক্তি তার মোট সম্পদের এক তৃতীয় অংশ সম্পদ দান-হেবা যা খুশি করতে পারে উত্তরাধিকারের মধ্যে। তবে সম্পূর্ণ সম্পত্তি দান-হেবা করতে পারবেনা উত্তরাধিকারীদের মধ্যে।
একজন ব্যক্তি আইনি মাধ্যমে যে সকল কারণে নিঃশর্তবান হতে পারে
- সমস্ত সম্পত্তি বিক্রয় করে
- সমস্ত সম্পত্তি উইল করে
- সম্পত্তি বিনিময় করে
একজন হিজড়া কি উত্তরাধিকারী হতে পারে
আমাদের সমাজে মনে করা হয় হিজড়া ব্যক্তি সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হতে পারেনা। বিষয়টি মোটেও ঠিক নয়, একজন হিজড়া যেভাবে অন্য স্বাভাবিক ছেলেমেয়েরা সম্পত্তির উত্তরাধিকার এর যোগ্যতা লাভ করে ঠিক একই ভাবে হিজড়া ব্যক্তিও উত্তরাধিকার হিসেবে যোগ্যতা লাভ করে। তবে এর কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে।
যেমন হিজড়া ব্যক্তির যদি আচরণ স্বভাব চরিত্রে বেশি প্রকাশ পায় পুরুষের মত তাহলে পুরুষের ন্যায় সম্পত্তি পাবে, আবার যদি আচার-আচরণ স্বভাব চরিত্র মেইলি ভাব বেশি প্রকাশ পায় তাহলে মেয়ের অংশের সমান ভাগ পাবে। তবে সাধারণত হিজড়াদের ভাগ মেয়েদের ভাগের সমানই হয়ে থাকে।
উপসংহার
উত্তরাধিকারীদের অংশ মোতাবেক সম্পত্তি বন্টন করা কোরআনের একটি আইন যা মুসলমানদের ওপর পালনীয় কর্তব্য। অংশীদারের অংশ অর্থাৎ উত্তরাধিকারের অংশ যারা প্রাপ্য যোগ্যতা রাখে তাদেরকে প্রাপ্য যোগ্যতা অনুসারে সম্পত্তির ভাগ বন্টন করে দেয় ভালো। উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত হয় এমন ব্যক্তির সংখ্যাও কম নয়। আমরা এ বিষয়ে আপনাদের ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করলাম মাত্র।
লেখক এর কথা
যে সকল উত্তরাধিকারগন উত্তরাধিকারী হওয়ার সত্বেও সম্পদ হতে বঞ্চিত হয় দেখা যাচ্ছে তারা কোন না কোন দিক থেকে কোন না কোন সম্পদ পেয়ে উপকৃত হয়ে যাচ্ছে। অতএব আল্লাহর বিধান মেনে নেওয়াটাই সকলের জন্য মঙ্গল করুক কারণ তিনি সর্বশক্তিমান ও সর্ব জ্ঞানী। প্রিয় পাঠক আমাদের পোস্টটি পড়ে যদি আপনি সামান্য পরিমাণেও উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের এই পোস্টটি আপনার পরিচিতজনদের মাঝে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
শেষ পর্যন্ত ধৈর্য নিয়ে আমাদের পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে জানাই আমাদের পক্ষ হতে আন্তরিক
Bestwold নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url