মৃত স্বামীর সম্পত্তির উপর বিধবা স্ত্রীর অধিকার
আসসালামু আলাইকুম! সু-প্রিয় পাঠক বৃন্দ, নিশ্চয় আপনি মৃত স্বামীর সম্পত্তির উপর বিধবা স্ত্রীর অধিকার সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। আজ আমরা উক্ত বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। উক্ত বিষয়টিতে সম্পূর্ণ ধারণা অর্জন করতে হলে আমাদের এই পোস্টটি আপনাকে শুরু হতে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে নিতে হবে।
আমাদের সমাজে অনেকেই মনে করে থাকেন যে, স্বামী মৃত্যুবরণ করলে তার তত্ত্ব সম্পত্তির উপর বিধবা স্ত্রীর কোন অধিকার থাকে না। কিন্তু বিষয়টি মোটেও ঠিক নয়। স্বামী মৃত্যুবরণ করলে, স্বামীর তেক্ত সম্পত্তির উপর বিধবা স্ত্রী এক বা একাধিক স্ত্রী হলেও সকল স্ত্রী তার স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে নির্দিষ্ট অংশের ভাগীদার হবে।
ভূমিকা
মৃত স্বামীর সম্পত্তির ওপর বিধবা স্ত্রীর অধিকার এ বিষয়ে বেশ কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে, তাহলে আপনি উক্ত বিষয়টিতে একটি সুষ্ঠ সমাধান নিয়ে আসতে পারবেন। অন্যথায় আপনি একটি সুস্থ সমাধান করতে ব্যর্থ হবেন। এবং যদি আপনি একটি বিষয়ে পারদর্শী হন তাহলে বাকি প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে ব্যর্থ হবেন।
মৃত স্বামীর সম্পত্তির উপর স্ত্রীর অধিকার মর্মে কিছু প্রশ্ন
- মৃত স্বামী কি মুসলিম। অর্থাৎ ধর্মীয় ভাবে তিনি কোন ধর্মের অনুসারী?
- মৃত স্বামীর রেখে যাওয়া ওয়ারিস এর অন্তর্ভুক্ত কোন সকল ব্যক্তি?
- মৃত ব্যক্তি নিঃসন্তান কিনা, এটা গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে হবে?
- মৃত ব্যক্তির নিজ নামের সম্পত্তি কিনা, অথবা সে তার বাবার হতে পাবে এরকম বিষয় কিনা?
- মৃত ব্যক্তির একাধিক স্ত্রী রয়েছে কিনা?
- মৃত ব্যক্তির একাধিক স্ত্রী থাকলে সকল স্ত্রীর বৈধতা রয়েছে কিনা, অর্থাৎ কারো সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে এরকম বিষয় আছে কিনা এটি বিবেচনা করতে হবে।
উপরোক্ত প্রশ্নগুলো ছাড়াও সালিশি বৈঠকে ওয়ারিস গন্দের আলাপ-আলোচনায় অন্য কোন তথ্য উঠে আসলে সেগুলোও গুরুত্ব সহকারে বিচার-বিশ্লেষণ করতে হবে।
এখন আসা যাক মূল বিষয়- আমরা আজ মুসলিম পারিবারিক আইন বিধান মতে মৃত স্বামীর রেখে যাওয়া বা ত্যক্ত সম্পত্তির উপর বিধবা স্ত্রীর অধিকার বিষয়ে আলোকপাত করি।
আরো পড়ুনঃ ফারাজ কাকে বলে? ইসলামে ফারায়েজ শিক্ষার গুরুত্ব।
প্রিয় পাঠক মৃত স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তির উপর বিধবা স্ত্রীর অধিকার মর্মে এখন আপনাকে কয়েকটি ধাপে জানানোর চেষ্টা করছি, নিশ্চয়ই বিষয়টি ধৈর্য সহকারে পড়ে নেবেন।
মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশ ছেলে অথবা মেয়ে কিংবা উভয় থাকলে
মৃত ব্যক্তি যদি নিঃসন্তান না হয়ে থাকে তাহলে, উক্ত মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পত্তির উপর বিধবা স্ত্রী মোট সম্পদের দুই আনা অংশ এর অধিকার পেয়ে থাকে অর্থাৎ মোট সম্পদের ১৬ ভাগের দুই ভাগ বিধবা স্ত্রী পেয়ে যাবে। একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি ক্লিয়ার করা যাক। যাতে করে আপনি বিষয়টি একেবারে সহজভাবে বুঝে নিতে পারেন।
উদাহরণঃ মনে করুন, মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন সিরাজী তার মোট সম্পদের পরিমাণ ২৭৬ শতক অর্থাৎ দুই একর ৭৬ শতক। তিনার একজন স্ত্রী, দুইজন পুত্র, তিনটি কন্যা, একটি মৃত পুত্রের কন্যা, দুইজন সহোদর ভাই এবং একমাত্র বোন রেখে মৃত্যুবরণ করলেন। এখন প্রশ্ন হল কে কতটুকু সম্পত্তির ভাগ পাবে?
আরো পড়ুনঃ জমি রেজিস্ট্রি করার কতদিন পর মুল দলিল পাওয়া যায়
সমাধানঃ মৃত ইসমাইল হোসেন সিরাজী যেহেতু দুইজন পুত্র সন্তান, তিনটি কন্যা সন্তান, একটি মৃত পুত্রের কন্যা এবং একমাত্র স্ত্রী রেখে মৃত্যুবরণ করেছেন। সেহেতু তার ওয়ারিশ হিসেবে উক্ত তিন শ্রেণীর ব্যক্তিবর্গ তার রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে অংশীদার হবে। এক্ষেত্রে দুইজন সহদার ভাই, এবং একমাত্র বোন তিনার ত্যক্ত সম্পত্তি হতে বঞ্চিত হবেন।
এখন আসা যাক উক্ত সম্পত্তিটুকু কোন ব্যক্তি কতটুকু অংশ পাবে
এখানে দুইটি আইন প্রয়োগ করা যায়, একটি হচ্ছে কোরানিক আইন যা আমাদের মানা ফরজ। অপরটি বর্তমান বাংলাদেশ মুসলিম পারিবারিক আইন এ কিছুটা ব্যতিক্রম রয়েছে যা কোরআনের সাংঘর্ষিক। আমি এখন আপনাকে দুইটি আইনের বিষয়ে জানিয়ে দিব। কোরআনে আইন মোতাবেক- বিধবা স্ত্রী আবাসা হিসাবে মোট সম্পদের দুই আনার অংশ প্রাপ্ত হবেন।
বাকি সম্পত্তি পুত্রসন্তান দুই ভাগ এবং মেয়ে সন্তান এক ভাগ হিসেবে বন্টন করে নেবে। অর্থাৎ বিষয়টি এরকম দাঁড়াবে, মৃত ইসমাইল হোসেন সিরাজীর মোট সম্পদ ২৭৬ শতক এটির মধ্যে হতে তার বিধবা স্ত্রী প্রাপ্ত হবেন ৩৪.৫ শতক এর অংশীদার। তাহলে বাকি থাকছে ২৪১.৫ শতক সম্পত্তি। এই সম্পত্তিটুকু তার রেখে যাওয়া দুই পুত্র সন্তান এবং তিন জন কন্যা সন্তান নিজ অংশ মোতাবেক পেয়ে যাবেন।
প্রতিটি পুত্র সন্তান পাবে ৬৯ শতক এবং প্রতিটি কন্যা সন্তান হবে ৩৪. ৫ শতাংশ। এক্ষেত্রে কোরআনিক আইন মর্মে মৃত পুত্রের কন্যা বঞ্চিত হবে। এটিই কোরআনের আইন এটি প্রত্যেকটি মুসলমানের জন্য মেনে নেওয়া ফরজ।
মুসলিম পারিবারিক আইন অনুসারে যে অংশটুকু পরিবর্তন হবে তা হচ্ছে কোরআনের বর্ণিত সকল অংশই প্রাপ্ত হবে তার সাথে এই আইনে মৃত পুত্রের কন্যাও উক্ত অংশের প্রাপ্য হবে। সেই প্রাপ্য অংশটুকু কতটুকু সেটি এখন আপনার নাকি জানিয়ে দিচ্ছে। সেই অংশটুকু হচ্ছে মৃত্যু পুত্রটি জীবিত থাকলে যে পরিমাণ অংশের অংশীদার হতো ঠিক ততটুকু পরিমাণের অংশ তার জীবিত কন্যা প্রতিনিধি হিসাবে পেয়ে যাবে।
মৃত ব্যক্তি যদি নিঃসন্তান হয় তাহলে তার বিধবা স্ত্রী কতটুকু সম্পদের ভাগীদার হবে
মৃত ব্যক্তির যদি কোন সন্তান না থাকে, তাহলে তার রেখে যাওয়া বিধবা স্ত্রী বা স্ত্রীগণ তার রেখে যাওয়া সম্পত্তির মোট ১৬ ভাগের ৪ভাগের অংশ পেয়ে যাবে। এক্ষেত্রে যদি মৃত ব্যক্তির একাধিক স্ত্রী থাকে তাহলে চার আনা অংশ যতজন স্ত্রী থাকবে ঠিক তত জন স্ত্রীর মধ্যে সমান হারে ভাগ হয়ে যাবে।
বলে রাখা ভালো যে মৃত স্বামীর পূর্বে যদি কোন স্ত্রী মৃতবরণ করে তাহলে উত্তর স্ত্রীর গর্ভজাত সন্তান থাকলেও সেই স্ত্রী উক্ত সম্পদ হতে পূর্বেই বঞ্চিত হয়েছে। আরো জেনে রাখা ভালো যে কোন স্ত্রী সঙ্গে যদি বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে থাকে তাহলে উক্ত স্ত্রীও তার মৃত স্বামীর ত্যক্ত সম্পত্তি হতে বঞ্চিত হবে।
গুরুত্বপূর্ণ দুইটি বিষয় যা অনেকেই ভুল করেন
এক, মৃত ব্যক্তির একাধিক স্ত্রী থাকলে! মৃত ব্যক্তির পূর্বে যদি কোন স্ত্রী মৃতবরণ করে তাহলে উক্ত স্ত্রীর সন্তান সন্ততি থাকলেও তার মায়ের অংশ হিসাবে পিতার রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে কোন দাবি করতে পারবেন না। কারণ তিনার মা তিনার পিতার পূর্বেই মৃত্যুবরণ করেছেন এজন্য উক্ত স্ত্রী পূর্বেই স্বামীর অংশ হতে বঞ্চিত হয়েছেন।
দুই, মৃত ব্যক্তির যদি কোন স্ত্রীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ হয় তাহলে সেই স্ত্রী মৃত ব্যক্তি রেখে যাওয়া সম্পত্তি হতে বঞ্চিত হয়। তবে জেনে রাখেন যে তারা প্রাপ্তাই স্ত্রীর গর্ভজাত সন্তান কিন্তু মৃত ব্যক্তিরই একজন ওয়ারিস। এজন্য উক্ত সন্তান তার পিতার রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে অংশীদার হবে কিন্তু তালাকপ্রাপ্ত তার স্ত্রী মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি হতে বঞ্চিত হয়।
উপসংহার
আজ আপনাদের কে মুসলিম ফারায়েজ এর বিষয়ে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করলাম মৃত ব্যক্তির স্ত্রী কতটুকু অংশ এর ভাগীদার হবে। আশা করছি খুব শীঘ্রই আপনাদেরকে হিন্দু আইন, খ্রিস্টান আইন,বদ্ধ আইন এ মৃত স্বামীর সম্পত্তিতে বিধবা স্ত্রীর অধিকার সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করব ইনশাল্লাহ।
লেখকের কথা
অনেকেই ধারণা পোষণ করেন যে, মৃত স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তির উপর তার বিধবা স্ত্রীর কোন অধিকার থাকে না। তবে আমরা শিক্ষিত সমাজ এই বিষয়টি একটু চিন্তা করে দেখেন সাধারণভাবে কোন আইনি ভাবে নয় তাহলে বিষয়টি বুঝে আসবে। আমার নিজের দেখা এই বিষয়টিকে ইস্যু করেই বহুত মানুষ মামলা পর্যন্ত করে বসে। তাই বলব সঠিক জানুন সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন।
পরিশেষে বলতে চাই আমাদের লিখা এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার পরিচিতজনদের মাঝে শেয়ার করে দিন, যাতে করে বিভ্রান্তিকর অবস্থায় উক্ত বিষয়টি অবহেলায় অবজ্ঞা করে কোন ভুল সিদ্ধান্ত না নিয়ে বসে।
শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে জানাই আমাদের পক্ষ হতে আন্তরিক
ধন্যবাদ
Bestwold নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url