OrdinaryITPostAd

রাজশাহী জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং উপজেলা সমূহ

সু-প্রিয় পাঠক বিন্দু আসসালামুয়ালাইকুম! আপনার মনের অতীন গহীনে এখন বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং উপজেলা সমূহ তে কি রয়েছে তা জানার আকুতি রয়েছে। আমরা আজ আপনাকে জানানোর চেষ্টা করব রাজশাহী শহর নিয়ে। আশা করছি আপনি যদি আমাদের সাথে শেষ অব্দি থাকেন তবে অবশ্যই রাজশাহী জেলা সম্পর্কে একটি ধারণা পাবেন।
রাজশাহী জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য

রাজশাহী হচ্ছে একটি প্রাচীনতম নগরী, এটির রয়েছে বেশ ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থানসমূহ, রয়েছে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতেও সুনাম, রাজশাহীকে ধরা হয় শিক্ষানগরী, রেশম বস্ত্র তৈরীর বিশাল সমাহার, ধরা হয় আমাদের অতি প্রিয় একটি ফল আম এর শহর। এই রাজশাহীতে রয়েছে বর্তমান সময়ের কাল বিজয়ী কণ্ঠশিল্পী, মোটিভেশনাল স্পিকার, রাজনৈতিকবিদ, শিক্ষক, নাট্যকার ইত্যাদি।

ভূমিকা

রাজশাহী জেলা উত্তরবঙ্গের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর! এটি উত্তর পশ্চিমঅঞ্চলিও সীমান্তবর্তী একটি জেলা। এই জেলাটি বাংলাদেশের পুরাতন সকল জেলাগুলোর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা। এই জেলাটির উৎপাদিত আম, রেশম বস্ত্র ছাড়াও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সবুজ নগরী হিসেবে রয়েছে অত্যন্ত সুনাম যা ইতিমধ্যে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতে রয়েছে।

রাজশাহী জেলার নামকরণ

এই জেলাটির নামকরণ নিয়ে রয়েছে বেশ কিছু মতভেদ আমরা এখন আপনাকে কয়েকটি মতভেদ এর ব্যাখ্যা প্রদান করব-

এই শহরটির প্রাচীন নাম ছিল মহাকালগড়! এই অঞ্চলটি ছিল প্রাচীন পুন্ডবর্ধন জনপদের অংশ, এর জনবসতি হাজার বছরের পুরনো প্রথা ও ঐতিহ্য বহন করে, পাল ,সেন, মৌর্য, গুপ্ত, মঙ্গল, এমনকি ইংরেজরাও এ অঞ্চলে শাসন প্রতিষ্ঠা করে। এজন্য অনেকে মনে করেন পঞ্চদশ শতাব্দীর তৎকালীন ভাদুড়িয়া দিনাজপুরের জমিদার রাজা গণেশ! তার নাম ছিল রাজা শাহ।

এজন্য মনে করা হয় রাজা এবং শাহ এই দুই এর সমন্বয়ে এ অঞ্চলের নামকরণ করা হয় রাজশাহী। অপরদিকে রাজশাহী শব্দটি বিশ্লেষণ করলে দুইটি ভিন্ন ভাষার একই অর্থবোধক দুইটি শব্দ পাওয়া যায়, এক সংস্কৃত দুই ফারসি, সংস্কৃত শব্দ হতে এসেছে রাজা এবং ফারসি শব্দ হতে এসেছে শাহ। এই দুই ভাষার সমন্বয় করে উদ্ভব হয় রাজশাহী শব্দের, ই ধারাবাহিকতায় অত্র অঞ্চলের নামকরণ করা হয় রাজশাহী।

ভিন্ন এক মতে উদ্ভব হয় যে ১৭১৪ সালের নবাব মুর্শিদকুলি খান, নাটোরের রামজীবন কে দায়িত্বভার প্রদান করেন। রামজীবন ১৭৩০ সালে মারা গেলে তার দত্তপুত্র রামকান্ত রাজা হন। ১৭৫১ সালে রামকান্তের মৃত্যুর পরে তার স্ত্রী ভবানী অর্থাৎ রানী ভবানী উত্তরাধিকারী লাভ করেন। আর এই রানী ভবানীর দেওয়া নাম হচ্ছে রাজশাহী। এর প্রমাণ পাওয়া যায়, রানী ভবানীর জমিদারীকেই রাজশাহী বলা হতো এবং এই চাকলার বন্দোবস্তের কালে রাজশাহী নামের উল্লেখ পাওয়া যায়।

অনুমান করা হয় রামপুর এবং বোয়ালিয়া নামক দুটি গ্রামের সমন্বয় রাজশাহী শহর গড়ে উঠেছিল, প্রাথমিক পর্যায়ে রামপুর বোয়ালিয়া নামে অভিহিত হলেও পরবর্তীকালে রাজশাহীর নামটি সর্ব সাধারণের নিকট গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে।

রাজশাহী জেলার ভৌগোলিক অবস্থান এবং রাজশাহী জেলার আয়তন

এই জেলাটির পূর্বে নাটোর জেলার অবস্থান, পশ্চিমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, উত্তরে বৃহত্তর নওগাঁ, এবং এর দক্ষিণে রয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, কুষ্টিয়া জেলা এবং পদ্মা নদী এর অবস্থান। দেশের প্রধান নদী গুলোর মধ্যে পদ্মা নদী ভারত হতে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এ জেলার মধ্য দিয়ে। রাজশাহী জেলার মোট আয়তন হচ্ছে ২৪২৫.৩৭ বর্গ কিলোমিটার। বর্তমানে এ জেলায় রয়েছে নয়টি উপজেলা, ১৪ টি পৌরসভা, ৭১ টি ইউনিয়ন পরিষদ, ১৪৮১ টি মৌজা, গ্রাম রয়েছে ১৭৩০ টি, সিটি কর্পোরেশন একটি এবং কিছু সংখ্যক মেট্রোপলিটন থানা রয়েছে।

শিক্ষা নগরী হিসেবে রাজশাহী

শিক্ষা দীক্ষায় এই অঞ্চলের অর্থাৎ রাজশাহীর সুনাম দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে গণ্ডিতে বেশ অবদান রেখেছে, এ জেলাতে রয়েছে স্বনামধন্য বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, দেশবরেণ্য কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যা এ জেলাতে অবশিষ্ট তার নাম তুলে ধরা হলো-

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, পোস্টাল একাডেমী, পুলিশ একাডেমী, রাজশাহী কলেজ, নিউ গভমেন্ট ডিগ্রী কলেজ, রাজশাহী সিটি কলেজ, রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, সার্ভে কলেজ রাজশাহী, টিচার ট্রেনিং সেন্টার, শারীরিক শিক্ষা কলেজ।

রেশম গবেষণা কেন্দ্র, হোমিওপ্যাথিক কলেজ, অঞ্চলিক লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ইনস্টিটিউট অফ হেলথ টেকনোলজি, ভোকেশনাল টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট, দারুস সালাম কামিল মাদ্রাসা, মদিনাতুল উলুম কামিল মাদরাসা, সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই জেলাতে রয়েছে যা দেশের গৌরবময় অবদান রেখে যাচ্ছে।

শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিকাশে রাজশাহী

একটু লক্ষ্য করলে দেখা যায় এ অঞ্চলে শৈল্পিক বিভিন্ন কাজের চিত্র রয়েছে, যেমেইনটি রয়েছে মৃৎশিল্প, হস্তশিল্প। সাহিত্য চর্চাতেও রয়েছে বেশ অবদান এ অঞ্চলের ভাওয়াইয়া ও গম্ভিরা এর মত আঞ্চলিক সংস্কৃতি বিশেষ দিক রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে এ জেলায় সাঁওতাল জনগোষ্ঠী যা আদিবাসী হিসাবে বেশ পরিচিত, এই সাঁওতালদের রয়েছে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি।

প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনে রাজশাহী

এ জেলাতে রয়েছে বেশ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের সমাহার, এই উপমহাদেশের প্রথম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সংগ্রহশালা এই জেলাতেই অবস্থিত যা বর্তমানে বরেন্দ্র জাদুঘর নামে প্রচলিত। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে রয়েছে এ জেলাতে পুঠিয়া রাজবাড়ী, বাঘা শাহী জামে মসজিদ, কিসমত মারিয়া মসজিদ এবং বিবির ঘর দুর্গাপুর, হাওয়াখানা পুঠিয়া, বিহারাইল মাজার তানোর, উপমবাড়ী এবং মক্রম মা মাজার গোদাগাড়ী, শাহ আলী কুলি বেগ (রাঃ) এর মাজার কুমোরপুর গোদাগাড়ী।

রাজশাহীর গুণী ব্যক্তিবর্গ

  • রানী ভবানী।
  • মহারানী হেমন্ত কুমারী দেবী।
  • বাংলাদেশের প্রথম বুদ্ধিজীবী শহীদ শামসুজ্জোহা এ জেলার কৃতি সন্তান।
  • জাতীয় চার নেতার এক নেতা একেএম কামরুজ্জামান হেনা এই রাজশাহীর কৃতি সন্তান।
  • বিশিষ্ট সমাজসেবী প্রধান সরকার।
  • জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোর।
  • কবি ও সাহিত্যিক নরোত্তম দাস ঠাকুর।
  • জাতীয় দলের ক্রিকেটার খালেদ মাসুদ পাইলট ও সাব্বির রহমান।

রাজশাহী জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ

পদ্মার অববাহিকার তীরে অবস্থিত প্রাচীনের জনপদ রাজশাহী। এ জেলায় রয়েছে প্রত্নতাত্ত্বিক ইতিহাস সমৃদ্ধশালা এবং বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়, মসজিদ,মন্দির। আম ও রেশম বস্ত্রের জন্য বিখ্যাত এ জেলায় রয়েছে অলি আউলিয়া।
  • রাজশাহী ইউনিভার্সিটি।
  • বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর রাজশাহী।
  • মুক্তমঞ্চ, পদ্মা গার্ডেন, বিজিবি, টি বাধ, আই বাধ রাজশাহী।
  • সাফিনা পার্ক গোদাগাড়ী রাজশাহী।
  • শহীদ জিয়া শিশু পার্ক।
  • এ কে এম কামরুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান।
  • পুঠিয়া রাজবাড়ী, হাওয়াখানা।
  • রাজশাহী কলেজ ও সাহ মখদুম (রাঃ) এর মাজার।
  • বাঘা শাহী জামে মসজিদ ও জাদুঘর।

রাজশাহীতে ধর্ম যাজকদের অবস্থান

এই জেলায় রয়েছে বেশ কিছু ধর্ম প্রচারক মুসলিম ধর্মাবলম্বী এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ধর্মযাজক রয়েছে এই জনপদে।
  • হযরত শাহ মখদুম রাযিআল্লাহু তা'আলা আনহু।
  • শাহ আলী কুলি বেগ রহমাতুল্লাহ আলাইহি।
  • সুলতান নাসির উদ্দিন নুসরাত শাহ।
  • শ্রী শ্রী নরোত্তম দাশ ঠাকুর।

রাজশাহী জেলার ঐতিহ্য

এই জেলায় বেশ কিছু ঐতিহ্য রয়েছে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি ঐতিহ্য আজ আপনার মাঝে তুলে ধরব, যেটি প্রায় বিলুপ্তের দ্বারপ্রান্তে। “ঢোপকল” ঢোকল রাজশাহী শহরের অন্যতম প্রাচীন ঐতিহ্য! রাজশাহীবাসীর জন্য সার্বক্ষণিক বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে তৎকালীন সময়ে মহারানী হেমন্ত কুমারী এর উদ্যোগে নির্মিত হয় ঢোপকল। যার অন্যতম নিদর্শন এই রাজশাহী শহরেই অবস্থিত যা বর্তমানে প্রায় বিলুপ্তের পথে।

রাজশাহী জেলার উপজেলা সমূহ

রাজশাহী জেলাতে মোট ৯টি উপজেলা রয়েছে
১) গোদাগাড়ী, ২) তানোর, ৩) পবা, ৪) মহনপুর, ৫) পুঠিয়া, ৬) চারঘাট, ৭) দূর্গাপুর, ৮) বাঘা, ৯) বাগমারা।

রাজশাহীর যাতায়াত ব্যবস্থা

রাজশাহীতে আসতে চাইলে অতি স্বল্প সময়ে স্বল্প খরচে আপনি রাজশাহী ভ্রমণ করতে পারবেন। এর জন্য আপনাকে যা করতে হবে। রাজশাহী আসার জন্য মাধ্যম রয়েছে তিনটি-
  • ক) স্থলপথ- দেশের যেকোনো প্রান্ত হতে কোচ সার্ভিসের মাধ্যমে আপনি অনায়াসেই রাজশাহী চলে আসতে পারবেন।
  • খ) রেলপথ- আপনি রেলপথেও রাজশাহী ভ্রমণ করতে পারেন। বাংলাদেশের রেলওয়ে পশ্চিম অঞ্চলের প্রধান কার্যক্রম এর রাজশাহীতে অবস্থিত।
  • গ) আকাশ পথে- , আপনি চাইলে আকাশ পথেও রাজশাহী ভ্রমণ করতে পারেন, কারণ রাজশাহীতে আছে একটি বিমানবন্দর যা শাহমুখদুম বিমানবন্দর হিসাবে পরিচিত।

উপসংহার

ইতিহাস ও ঐতিহ্য ভরা পদ্মার তীরবর্তী এই শহর রাজশাহী, একটি মনোমুগ্ধকর শহর যেখানে রয়েছে বিশুদ্ধ বাতাস এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নগরী। আপনি যদি কখনো রাজশাহী এসে থাকেন তাহলে বুঝতে পারবেন এর নৈসর্গিক পরিবেশ, দিনের বেলায় এর একরকম দৃশ্যপট, অপরপ্রান্তে রাতের রাজশাহী এক ভিন্ন রূপ ধারণকারী দৃশ্যপট।

লেখকের কথা

আমরা যদি আপনাকে রাজশাহী সম্পর্কে স্বল্প পরিমাণে কিছু ধারণা দিয়ে থাকতে পারি তাহলে আপনি আমাদের এই পোস্টটিকে আপনার পরিচিত বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে তাদেরকে পড়ার সুযোগ করে দেন।
আমাদের সাথে শেষ পর্যন্ত থাকার জন্য আপনাকে জানাই আমাদের পক্ষ হতে আন্তরিক
ধন্যবাদ





এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Bestwold নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url