নামজারি ছাড়াই জমি হস্তান্তর করার নিয়ম
আসসালামু আলাইকুম! সম্মানিত পাঠক বৃন্দ, আশা করছি সুস্থ থেকে নিজ কাজে ব্যস্ত হয়েছেন। এই মুহূর্তে আপনি নামজারি ছাড়া জমি হস্তান্তর করার নিয়ম বা পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। আজ আমরা আপনার পছন্দের বিষয়টি নিয়ে আলোকপাত করবো। পুরো বিষয়টি জানতে হলে আমাদের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত আপনাকে থাকতে হবে।
অনেকেই মনে করেন নামজারি ছাড়া জমি রেজিস্ট্রেশন করা অত্যন্ত সহজ একটি ব্যাপার। কিন্তু বিষয়টি মোটেও তা নয়, আপনি নামজারি ছাড়া কোন ধরনের সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারবেন না শুধুমাত্র একটি সম্পত্তি ব্যতীত। এখন চলুন আমরা জেনে আসি সেই একটি সম্পত্তি কোনটি যেটি নামজারি ছাড়াই হস্তান্তর করা সম্ভব।
ভূমিকা
নামজারি এমন একটি বিষয়, যার দ্বারা ভূমি মালিকদের কে ভিন্ন ভিন্ন তালিকাভুক্ত করণ করা হয়। তবে বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে কোন ধরনের সম্পত্তি নামজারি ছাড়া হস্তান্তর করা বৈধ নয়। একটিমাত্র সম্পত্তি যা নামজারি ছাড়াও রেজিস্ট্রেশন করা সম্ভব, এ বিষয়ে আমরা আজ আপনাকে জানাতে চলেছি। তাহলে চলুন আলোচনা শুরু করা যাক।
নামজারি কি
এ পর্যায়ে আমরা জানবো নামজারি টি আসলে কি? নামজারি হচ্ছে এক ধরনের ভূমি সম্পর্কিত দলিল বা প্রমাণপত্র। এই নামজারীর মাধ্যমে কোন এক ভূমি মালিক তার কতটুকু জমি অবশিষ্ট রয়েছে, জমির শ্রেণী কি, জমির দাগ নম্বর, মৌজার নাম, উপজেলা ও জেলার নাম এবং কতটুকু অংশ সে পাবে তা এই খতিয়ানের মাধ্যমেই বা নামজারির মাধ্যমে জানা যায়।
অন্যভাবে আমরা বলতে পারি, নামজারি হচ্ছে একটি ভূমি মালিককে অন্য আরেকটি ভূমি মালিক হতে পৃথকভাবে তালিকাভুক্তকরণ করা। যার মধ্যে থাকবে উক্ত জমির পরিমাণ, শ্রেণী, দাগ নম্বর, মৌজা নম্বর, খতিয়ান নম্বর, জেলা এবং উপজেলার নাম বৃত্তান্ত। এ সকল তথ্যের সমাহারের ভিত্তিতে যে কাগজীয় দলিল সরবরাহ করা হয় মূলত নামজারি বা খতিয়ান। বাস
কোন সম্পত্তি নামজারি ছাড়া হস্তান্তর করা সম্ভব নয়
বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে কোন প্রকার সম্পত্তি নামজারী ব্যতীত হস্তান্তর করা সম্ভব নয়। শুধুমাত্র একটি সম্পত্তি যা নামজারি ছাড়াই হস্তান্তর করা যায় এ বিষয়ে আমরা নিজে আলোকপাত করবেন ইনশাল্লাহ। তবে এখন যে সম্পত্তিগুলো নামজরি ছাড়া হস্তান্তর করা যায় না সে বিষয়ে জানিয়ে দিই আপনাকে।
আপনি একটি জমি ক্রয় করেছেন এখনো সেই জমির নামজারি করেননি সেই জমি হস্তান্তর করতে পারবেন না।
আরো পড়ুনঃ জাল দলিল চেনার উপায় কি এবং প্রতিকার
আপনারা পারিবারিক বন্টন করে ওয়ারিশান সম্পত্তিগুলো নিজ নামে সুবিধা মত ভাগ করে নিয়েছেন, এবং তা যথাযথ রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রিও করে নিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা নামজারি করেননি এরকমটি হলে উক্ত জমি আপনি হস্তান্তর করতে পারবেন না।
আপনি আপনার বাবার কাছে কিংবা মায়ের কাছে বা ভাই-বোন,দাদা-দাদি,নানা-নানি কর্তৃক হেবা কৃত বা দানের মাধ্যমে জমি পেয়েছেন বা আপনাকে দিয়েছে কিন্তু এখন পর্যন্ত আপনি উক্ত জমিটি নামজারি করেননি তাহলে আপনি সেই জমিটি হস্তান্তর করতে পারবেন না।
মনে করুন আপনি একটি জমি এ্যাওয়াজ বদল করেছেন অর্থাৎ বিনিময় করেছেন এখন যে জমিটি বিনিময় করে আপনি মালিক হয়েছেন বর্তমানে উক্ত জমিটি আপনার নামে নামজারি করেননি তাহলে সেই জমিটিও আপনি হস্তান্তর করতে পারবেন না।
কোন ধরনের জমিটি নামজারি ছাড়াই হস্তান্তর করা সম্ভব
বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে শুধুমাত্র একটি শ্রেণীর জমি বা সম্পত্তি হস্তান্তর করা যায় যার নামজারীর প্রয়োজন হয় না। চলুন এ পর্যায়ে আমরা জেনে আসি সেই জমিটি বা সম্পত্তি কোনটি-
শুধুমাত্র,কেবলমাত্র,একমাত্র পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত অর্থাৎ ওয়ারিসান সম্পত্তি পারিবারিক বন্টন করার পূর্ব পর্যন্ত উক্ত জমিতে আপনার যে অংশ, শুধুমাত্র সেই অংশটুকু আপনি কোন প্রকার নাম জারি ছাড়াই হস্তান্তর করতে পারবেন।
তবে এখানেও একটি শর্ত রয়েছে, শর্তটি হচ্ছে এইরকম যদি আপনার পূর্বপুরুষের নামে নামজারি করা থাকে বা আপনার পূর্ব পুরুষটি রেকর্ডীয় খতিয়ানের মালিক হয়ে থাকে শুধুমাত্র এক্ষেত্রেই উক্ত জমিটি আপনি নামজারি ছাড়াই হস্তান্তর করতে পারবেন। এর ব্যতিক্রম হলে আপনাকে উক্ত জমিটি নামজারি এর অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, তারপরে আপনি হস্তান্তর করতে পারবেন।
একটি সম্পত্তির নামজারি না করার অসুবিধা সমূহ
আপনি কোন সম্পত্তি, যেকোনো মারফতে উক্ত জমিটির মালিকানা লাভ করেছেন তথাপি আপনি উক্ত জমিটি নামজারি করেন নাই। এক্ষেত্রে আপনার নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হতে পারে, নিচে আপনাকে আমরা কিছু সংখ্যক অসুবিধা জানিয়ে দিচ্ছি-
- মালিকানার পৃথকীকরণ থাকেনা।
- ভূমি উন্নয়ন কর পরিষদ করতে বাধা গ্রস্থ হতে হয়।
- জমিটি আপনার! এর প্রমাণস্বরূপ দুইটি কাগজীয় ডকুমেন্টস হতে আপনি বঞ্চিত থাকেন।
- নিজ নামে খতিয়ান সরবরাহ থাকে না।
- নিজ নামে ভূমি উন্নয়ন কর পরিষদ করতে পারেন না।
- উক্ত জমিটি অন্য কেউ বেশি করে নামজারি করে ফেললে তা আপনার জমি এই মর্মে প্রমাণ করতে আপনাকে অনেক ঝামেলা পোহাতে হবে।
- সময়, অর্থ, পরিশ্রম সকল কিছুর অপচয় হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
নিজ নামে নামজারি করার সুবিধাসমূহ
- ভূমি উন্নয়ন কর এর দাখিলা আপনার নিজ নামে সরবরাহ করা হবে।
- আপনার পৃথক একটি খতিয়ান এর সৃষ্টি হবে এবং পৃথক হোল্ডিং তৈরি হবে।
- ভূমির সংক্রান্ত আরো দুইটি কাগজীয় দলিল আপনার তৈরি হয়ে যাবে।
- আপনার জমিটি অন্য কেউ বেশি করে নামজারি করতে পারবে না।
- আপনি আপনার জমিটির একটি সুরক্ষিত পর্যায়ে রাখতে সক্ষম হবেন।
- নিজ নামে নাম জারি করা থাকলে আপনি যেকোনো সময় উক্ত জমিটি হস্তান্তর করতে পারবেন।
প্রচলিত আছে নামজারি ছাড়াই জমি হস্তান্তর করা যায়
এখন আসা যাক! আপনি বলতে পারেন আমরা তো জানি নামজারি ছাড়াই নাকি জমি হস্তান্তর করা যায় এটি কিভাবে সম্ভব?লোক মুখে অনেক কথাই প্রচলিত আছে যা আমাদের এই সমাজে বা আইনের বিরোধী। আপনি শুনতে পাবেন যে নামজারি ছাড়াই জমি হস্তান্তর করা যায়, কিন্তু বাস্তবিক ক্ষেত্রে এর কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই ওই যে বললাম একটিমাত্র সম্পত্তি ছাড়া।
তবে সেটিরও নাম জারি থাকতে হবে আপনার পূর্বপুরুষের নামে তাছাড়া উক্ত জমিটিও হস্তান্তর করা সম্ভব নয়। এটি কেবলমাত্র প্রচলিত কথা আর কি, যে নামজারি ছাড়াও জমি হস্তান্তর করা যায়। আপনি নিশ্চয় জেনে থাকবেন আমাদের সমাজে বেশ কিছু প্রথা বা এমনি এমনি কিছু কথা প্রচলিত আছে যার বাস্তবিক কোন ভিত্তি নেই। ঠিক এমন একটি বিষয় হচ্ছে এটি, তা হচ্ছে নামজারি ছাড়াই জমি হস্তান্তর করা যায়।
উপসংহার
আপনি যদি কোন যোগসাজোস করে মহরি বা এসিলেন্ট বা সাব রেজিস্টার অফিসের সাব রেজিস্টার এর সাথে অবৈধ আলাপ-আলোচনা করে আপনি নামজারি ছাড়া কোন প্রকার হস্তান্তর করেন তাহলে মনে রাখবেন তাৎক্ষণিকভাবে কাজটি হয়ে গেলেও এর ভবিষ্যৎ অনেক খারাপ। কোন না কোন দিন অবশ্যই আপনাকে উক্ত সম্পত্তিতে নিয়ে বিপাকে পড়তে হবে।
লেখক এর কথা
সুপ্রিয় পাঠক আপনার উদ্দেশ্যেই বলছি! যদি আপনি কোন জমি হস্তান্তর করতে চান, অথবা কোন জমি কিনতে চান তাহলে অবশ্যই উক্ত ব্যক্তিটির নামে নাম জারি আছে কিনা তা দেখে নিবেন। বা আপনার জমি হয়ে থাকলে আপনার নামে নামজারি সম্পূর্ণ করে নিবেন। এর ব্যতিক্রম হলে আপনাকে কোন না কোন সময় এর ঝামেলা পোহাতেই হবে, আর এটা নিশ্চিত।
পরিশেষে বলে যেতে চাই আমাদের এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে বা উপকারে এসে থাকে তাহলে আপনার পরিচিত জনদের মাঝে আর্টিকেলটি শেয়ার করে দিবেন যাতে করে তারাও এই বিষয়ে একটি স্পষ্ট ধারণা রাখতে পারে।
আমাদের সাথে শেষ পর্যন্ত থাকার জন্য আপনাকে জানাই আমাদের পক্ষ হতে আন্তরিক
ধন্যবাদ
মূল্যবান তথ্যটি জানানোর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।