বন্টননামা দলিলের রেজিস্ট্রেশন খরচ কত ও বন্টননামা দলিল কি
আসসালামু আলাইকুম! প্রিয় পাঠক বৃন্দ, আশা করছি সকলের সুস্থ থেকে নিজ কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। আজকে আমাদের বিষয় বন্টননামা দলিলের রেজিস্ট্রেশন খরচ কত, বন্টননামা দলিল কি? আশা করছি আপনি তো বিষয় নিয়ে জানতে চাচ্ছেন। যদি এমনটি হয়ে থাকে তাহলে এর সমাধান পেতে আপনাকে আজ আমাদের সাথে শেষ পর্যন্ত থাকতে হবে।
বন্টননামা দলিল হচ্ছে পারিবারিক সম্পত্তি বা ওয়ারিশান সম্পত্তি নিজেদের মধ্যে ভাগ বন্টন করা। তবে বণ্টননামা দলিল অবশ্যই রেজিস্ট্রি ভুক্ত হতে হবে। আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে, ওয়ারিশান সম্পত্তি বা পারিবারিক সম্পত্তি নিজেদের মধ্যে মৌখিকভাবে সাম বন্টন করে নিয়ে ভোগ দখল করতে থাকি। কিন্তু যখন কোন জমির মূল্য বৃদ্ধি পায় তখনই বাধে মূল সমস্যা। চলুন উক্ত বিষয়ে একটি স্পষ্ট ধারণা নেওয়া যাক।
ভূমিকা
আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় হচ্ছে পারিবারিক বন্টনামা দলিলের রেজিস্ট্রি সম্পর্কে, এবং এই দলিল রেজিস্ট্রি করতে কি কি কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়, রেজিস্ট্রি খরচি বা কত? এবং উক্ত দলিলটি রেজিস্ট্রি না করলে কি কি সমস্যায় পড়তে হয় এর বিস্তারিত আলোচনা করার ব্রত নিয়েছি। তাহলে চলুন আলোচনা শুরু করা যাক।
বন্টন বিষয়টি আসলে কি
প্রিয় পাঠক! মনে করুন, আপনার বাবা কিংবা মায়ের কিছু সংখ্যক সম্পত্তি রয়েছে। আপনারা ভাই-বোন রয়েছেন, যার মধ্যে তিনজন ভাই, দুইজন বোন, এক মৃত ভাইয়ের-এক ছেলে এক মেয়ে, আরো রয়েছে একটি মৃত বনের স্বামী, দুই ছেলে এক মেয়ে। আপনার বাবা এবং মা দুই জনেই মৃত্যুবরণ করেছেন।
এখন আপনার বাবা-মায়ের ত্যক্ত সম্পত্তি আপনাদের ভাই-বোন এবং ভাতিজা, ভাগ্নি, ভগ্নিপতি এদের মধ্যে যে ভাগাভাগিটা হবে অর্থাৎ কে কতটুকু জমি পাবে তার একটি সুস্পষ্ট পদ্ধতি কি বন্টন বলা হয়। আমাদের বাংলাদেশে প্রচলিত দুইটি আইন রয়েছে, যার মধ্যে একটি হচ্ছে সরাসরি কোরানিক আইন এবং অপরটি হচ্ছে মুসলিম পারিবারিক আইন।
এ বিষয়ে আমাদের আরেকটি পোস্ট আছে আপনারা চাইলে উক্ত আইন দুইটি বিস্তারিত জেনে নিতে পারেন, আপনাদের সুবিধার জন্য নিচে তার লিংক দিয়ে দিলাম।
বণ্টননামা দলিল
ওয়ারিশান সম্পত্তি ওয়ারিশ গনের মধ্যে ইসলামী ফারায়েজ বা মুসলিম পারিবারিক বন্টনআইন অনুযায়ী প্রতিটি ওয়ারিসকে তার প্রাপ্য অংশটুকু প্রদান করে একটি সুনির্দিষ্ট ফর্মে সরকারের সরবরাহ কৃত স্ট্যাম্পে লিখিত, যাহা সাব রেজিস্টার অফিস কর্তৃক রেজিস্ট্রি কৃত একটি প্রমাণ পত্রকে মূলত বন্টননামা দলিল বলা হয়।
বণ্টননামা দলিল করতে কি কি কাগজপত্র লাগে
- বণ্টন নামও দলিল করতে প্রথমে যেটি লাগে সেটি হচ্ছে ওয়ারিশ গনদের একাত্মতা বা সহমত পোষণ করা।
- মনে করেন আপনাদের বন্টননামা দলিলটি করতে যে সকল প্রমাণাদি প্রয়োজন তার সবকল কিছু আপনাদের কাছে রয়েছে কিন্তু আপনাদের ওয়ারিশ গনদের মধ্যে কে কোন অংশটুকু নিবে তার সমঝোতা হয়নি তাহলে কিন্তু উক্ত সম্পত্তি আর বন্টন দলিল হবে না। অতএব সম্পত্তি বন্টন করতে হলে ওয়ারিশ গনদের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতেই উক্ত দলিলটি সম্পাদন হতে হবে।
- মৃত ব্যক্তির মৃত্যু সনদপত্র।
- তার রেখে যাওয়া ওয়ারিস গনদের ওয়ারিশান সার্টিফিকেট।
- মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পত্তির সকল কাগজীয় দলিলাদি।
বন্টন-নামা দলিল রেজিস্ট্রির নিয়ম
- সকল অংশীদার বা ওয়ারিশ গন সমঝোতার ভিত্তিতে কে কোন সম্পত্তিটি নিতে চায় তার একটি পূর্ণাঙ্গ খসড়া।
- একজন দক্ষ মোহরী বা আইনজীবী যে বন্টন-নামা দলিলটি সম্পাদন করবে।
- মোহরী বা আইনজীবীর দলিল সম্পাদনের কাজটি বা দলিল লিখার কাজটি সম্পূর্ণ হলে সকল ওয়ারিসগণের সিগনেচার বা স্বাক্ষর উক্ত দলিলে নিতে হবে।
- ওয়ারিশগণের মধ্যে কোন একজন ওয়ারিশ যদি কোনক্রমে বাদ পড়ে যায় তাহলে উক্ত দলিলটির কার্যকারিতা হারাবে।
- সম্পাদনকৃত দলিলটি সংশ্লিষ্ট সাব রেজিস্ট্রি অফিস এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট ফি প্রদান করে রেজিস্ট্রির আবেদন করে নিতে হবে।
- সাব রেজিস্টার সকল কাগজপত্র পর্যালোচনা করে সঠিকতার প্রমাণ পেলে উক্ত দলিলটি রেজিস্ট্রি করার অনুমতি প্রদান করবেন।
- এরপর সকল ওয়ারিশগণ উক্ত সাব রেজিষ্টারের ভলিউমে নিজ নিজ অংশে স্বাক্ষর প্রদান করবেন।
- দলিলটি সম্পূর্ণ রেডি হয়ে গেলে উক্ত দলিলটি sub-register রেজিস্ট্রি ভুক্ত করে নিবেন।
বণ্টননামা দলিলের রেজিস্ট্রি খরচ কত
বণ্টন-নামা দলিলের রেজিস্ট্রির খরচ দলিলে লিখিত মূল্যের উপর ভিত্তি করেই এর খরচ হয়ে থাকে-চলুন এক ঝলকে দেখে আসি উক্ত দলিলের খরচ সমূহ:
বন্টনকৃত সম্পত্তির দলিলে লিখিত (বৃহত্তম এক পক্ষের অংশের মূল্য বাদ দিয়ে) মোট মূল্য (রেজিস্ট্রেশন আইন-১৯০৮, এর ধারা ৭৮বি অনুসারে)
আরো পড়ুনঃ নামজারি ছাড়াই জমি হস্তান্তর করার নিয়ম
- অনুর্ধ ৩ লক্ষ টাকা হলে ৫০০ টাকা ।
- অনুর্ধ ১০ লক্ষ টাকা হলে ৭০০ টাকা
- অনুর্ধ ৩০ লক্ষ টাকা হলে ১২০০ টাকা
- অনুর্ধ ৫০ লক্ষ টাকা হলে ১৮০০ টাকা
- ৫০ লক্ষ টাকার উর্ধে হলে ২০০০ টাকা
- স্ট্যাম্প সুল্ক ৫০ টাকা।
- ২০০ টাকার স্ট্যাম্পে হলফনামা।
- ই-ফিঃ ১০০/=
- এন-ফিঃ বাংলায় প্রতি ৩০০ (তিন শত) শব্দ বিশিষ্ট এক পৃষ্ঠা বা উহার অংশ বিশেষের জন্য ১৬ টাকা। ইংরেজি ভাষায় প্রতি ৩০০ (তিন শত) শব্দ বিশিষ্ট এক পৃষ্ঠা বা উহার অংশ বিশেষের জন্য ২৪ টাকা।
- (নকলনবিশগনের পারিশ্রমিক) এনএন ফিসঃ- বাংলায় প্রতি ৩০০ (তিনশত) শব্দ বিশিষ্ট এক পৃষ্ঠা বা উহার অংশ বিশেষের জন্য ২৪ টাকা। ইংরেজি ভাষায় প্রতি ৩০০ (তিনশত) শব্দ বিশিষ্ট এক পৃষ্ঠা বা উহার অংশ বিশেষের জন্য ৩৬ টাকা।
বন্টননামা দলিল কেন করা হয়
বন্টননামা দলিল এজন্য করা হয় যে, ওয়ারিশদের মধ্যে ওয়ারিশান সম্পত্তি যাতে করে ভাগ বাটোরা হওয়ার পর অর্থাৎ মৌখিক ভাবে ভাগ বাটোয়ারা হওয়ার পর, কোন ওয়ারিস অন্য আরেকজন ওয়ারিশের প্রাপ্ত অংশটুকু মধ্যে কোন প্রকার দাবি দাওয়া যেন না করতে পারে, এজন্য বন্টননমা দলিলটি রেজিস্ট্রি করে নিতে হয়।
আরো পড়ুনঃ ২০২৪ সাল হতে কোন ধরনের জমি খাস করা হচ্ছে
যদি ওয়ারিশান সম্পত্তি মৌখিক ভাবে বন্টন করে, ওয়ারিশগন নিজ নিজ অংশ ভোগ দখল করতে থাকেন। তবে এই ভাগ বন্টন যদি সাব রেজিস্টার কর্তৃক রেজিস্ট্রি না করা হয় তাহলে উক্ত সম্পত্তির কোন সম্পত্তি যদি দাম কম বেশি হয়ে যায় তাহলে সেই ভাগ্যটোয়ারা অন্য অরিস কর মেনে নিতে চায় না। এমনকি এর ফলশ্রুতিতে মামলার মোকদ্দমা পর্যন্ত হয়ে যায়।
এজন্য প্রত্যেক ওয়ারিসগণ এর উচিত মৌখিকভাবে বন্টনকৃত সম্পত্তিগুলো সুনির্দিষ্ট শর্ত বা নিয়ম মেনে সাপ রেজিস্টার কর্তৃক রেজিস্ট্রি করে নেওয়া। যেন ভবিষ্যতে কোন ওয়ারিস অন্য আরেক ওয়ারিশের প্রাপ্ত অংশে দাবি-দাওয়া করতে না পারে। উক্ত সম্পত্তির মূল্য বৃদ্ধি হোক কিংবা অবকাঠামো তৈরি হোক কোন ক্রমেই যেন তার প্রাপ্য অংশটুকু অপর ওয়ারিশের নিকট থাকা হিস্যা টুকু দাবি দাওয়া করতে না পারে।
বর্তমান সময়ে ভূমি সংক্রান্ত যত মামলা রয়েছে তার সিংহভাগ এই ওয়ারিশান সম্পত্তির জটিলতা জনিত। তাই বর্তমান সময়ে ভূমি মন্ত্রীর জোরালো তাগিদ আছে যে, ওয়ারিশান সম্পত্তি ভাগ বাটোয়ারা করার পর তা অবশ্যই রেজিস্ট্রি ভুক্ত হতে হবে। মৌখিকভাবে আর কোন বা পারিবারিকভাবে ছাম বন্টন আর কোন কার্যকর হবে না।
ওয়ারিশান সম্পত্তি অবশ্যই প্রত্যেক ওয়ারিসদের মাঝে সঠিক নিয়মে সঠিকভাবে ভাগ বন্টন করে তা রেজিস্ট্রি ভুক্ত করে নিজ নামে নামজারি করে নিতে হবে। যদি ওয়ারিশান সম্পত্তি বন্টননানা থাকে এবং তা নিজ নামে খারিজ না থাকে তাহলে উক্ত সম্পত্তি কোনভাবেই হস্তান্তর করা যাবে না।
উপসংহার
বর্তমান সময়ে কড়া নির্দেশ আছে যে, ওয়ারিশান সম্পত্তি অবশ্যই ভাগ বন্টনের পর তা রেজিস্ট্রি করা বাধ্যতামূলক। এবং রেজিস্ট্রেশন পূর্ণ হলে ওয়ারিশগণ নিজ নিজ নামে একক ভাবে বা আলাদাভাবে নামজারি সম্পন্ন করবে। এখন থেকে কোন সম্পত্তি নামজারি ব্যতীত রেজিস্ট্রি ভুক্ত করণ করা হবে না। অতএব ভূমি মালিকগণ সকলে সতর্কতা অবলম্বন করেন।
লেখকের কথা
আপনার যদি এক খন্ড ভূমি থেকে থাকে, তাহলে অবশ্যই সেটি আপনার কাছে বেশ মূল্যবান। তাই বলবো আপনার উক্ত সম্পদ নিজ দায়িত্বে সকল কাগজপত্র ঠিক রাখুন এবং আপনার সম্পত্তিটি যদি আপনার নামে নামজারি করা না থাকে, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব নিজ নামে নামজারি করে ফেলুন। এবং ভূমি উন্নয়ন কর প্রতিবছর পরিশোধ করে এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখুন।
আমাদের এই পোস্টটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার পরিচিত জনদের মাঝে শেয়ার করে দিন, যাতে করে তারাও উপরোক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে একটি ধারণার নিতে পারে।
শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে জানাই আন্তরিক
ধন্যবাদ
Bestwold নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url