রেকর্ড সংশোধন কি? রেকর্ড সংশোধন কিভাবে করতে হয়?
সু-প্রিয় পাঠক বিন্দু আপনি কি রেকর্ড সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জানতে চাচ্ছেন বা সমস্যায় আছেন? চিন্তার কোন কারণ নেই আজ আমরা আপনাদের সামনে রেকর্ড সংশোধন বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনা করব। আপনার যদি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জানার এবং সমাধান নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা থেকে থাকে তাহলে পোস্টটি মনোযোগ সহকারে এবং ধৈর্য নিয়ে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইলো।
ভূমি মানুষের একটি স্থায়ী সম্পদ। এই স্থায়ী সম্পদের যদি দখল পজিশন কিংবা কাগজপত্র এর কোন সমস্যা থেকে থাকে তাহলে মাথার উপর অনেক বোঝা চেপে থাকে। যেন কোন কিছুই ভালো লাগে না, মন বসে না মনে হয় কোন এক অজানা কিংবা জানা সমস্যায় সকল সময় তাড়া করে বেড়ায়। তাই বলবো আপনার নিজ ভূমি এর সকল কাগজপত্র আপটেড রাখুন এবং ভূমি বিষয়ক দুশ্চিন্তা হতে মুক্ত থাকুন।
সূচনা
রেকর্ড ভূমি মালিকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর এই রেকর্ড যদি কোন কারণবশত ত্রুটি হয়ে যায় তাহলে সেটা কোন মালিকের জন্যই সুখকর বয়ে আনে না, বরঞ্চ চিন্তার কারণ হয়। আজ আমরা আপনাদের চিন্তামুক্ত করার জন্যই উক্ত বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনা করব ইনশাল্লাহ। যাতে করে আপনার রেকর্ডিও কোন ভুল ভ্রান্তি থাকলে তা কিভাবে সমাধান করবেন কোথা গেলে এর সমাধান পাবেন এসব নিয়েই মূলত আজকের আলোচনা।
আর্টিকেলের বিষয়বস্তূ
- ভূমি রেকর্ড কি।
- ভূমি রেকর্ডের জন্য কি কি কাগজপত্র থাকা আবশ্যক।
- রেকর্ড সংশোধন কি।
- জমি ভুলে অন্যের নামে রেকর্ড হলে কি করব।
- কিভাবে বুঝবেন কার নামে জমিটি রেকর্ড হয়েছে।
- রেকর্ড সংশোধন করতে কত সময় লাগে।
- করণিক ভুল কি।
- করণিক ভুল গুলো কি কি।
- ভুল রেকর্ড সংশোধনের জন্য এসি ল্যান্ডদের নির্দেশ কি।
- ভুল সংশোধনের জন্য কি করতে হয়।
- রেকর্ড সংশোধন মামলায় কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন।
ভূমি রেকর্ড কি
ভূমি রেকর্ড হচ্ছে সরকার কর্তৃক পরিচালিত ভূমি মন্ত্রণালয় এর জরিপ বিভাগ কর্তৃক একটি কার্যক্রম। যাহা একটি নির্দিষ্ট সময় নির্দিষ্ট স্থানে ভূমি মালিকদের মালিকানা প্রমাণস্বরূপ একটি নির্দিষ্ট আয়তনের মৌজাভিত্তিক মৌজা ম্যাপ, খতিয়ান, দাগ নম্বর এবং মালিকের বৃত্তান্ত উল্লেখপূর্বক যে রিপোর্ট তৈরি করা হয় তা হয় হচ্ছে ভূমি জরিপ।
ভূমি রেকর্ডের জন্য কি কি কাগজপত্র থাকা আবশ্যক
- রেজিস্ট্রি কৃত দলিল থাকতে হবে।
- পূর্বের রেকর্ডীয় খতিয়ান থাকতে হবে।
- জমিটি নামজারি/মিউটেশন/খারিজ থাকতে হবে।
- ওয়ারিশান সম্পত্তি হলে বন্টন-নামা দলিল থাকতে হবে।
- ওয়ারিশান সনদ সংগ্রহে রাখতে হবে।
- প্রয়োজনে মৃত্যু ব্যক্তির মৃত্যুর সনদ সংগ্রহে রাখতে হবে।
- ভূমি উন্নয়ন কর এর (হাল-সন) দাখিলা সংগ্রহ রাখতে হবে।
- জমিটি একটি সার্ভেয়ার দিয়ে সীমানা পিলার করে রাখতে হবে।
- জমিটিতে যদি কোন মামলা হয়ে থাকে তাহলে মামলার রায়ের কপি সংগ্রহে রাখতে হবে।
- জমিটির পূর্ব মালিক যদি নাবালক/আদিবাসী হয়ে থাকে তাহলে জেলা প্রশাসকের অনুমতি পত্র সংগ্রহ রাখতে হবে।
- প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র নথিভুক্ত করে রাখতে হবে।
রেকর্ড সংশোধন কি
রেকর্ড সংশোধন হচ্ছে পূর্ব ভূমি মালিকের নাম পরিবর্তন করে নতুন ভূমি মালিকের নাম সংযোজন করাই হচ্ছে রেকর্ড সংশোধন। রেকর্ড সংশোধনের প্রক্রিয়া দুই ধরনের হয়ে থাকে-
- নামজারি/ মিউটেশন/খারিজ/জমা ভাগ/ নাম পর্তন (একই জিনিস) এর মাধ্যমে।
- সরকার কর্তৃক পরিচালিত ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে জরিপ বিভাগ কর্তৃক রেকর্ড সংশোধন।
জমি ভুলে অন্যের নামে রেকর্ড হলে কি করব
জমি ভুলে অন্যের নামে রেকর্ড হয়ে গেলে প্রথমেই আপনার করণীয় কোন ব্যক্তির নামে জমিটি রেকর্ড হয়েছে তা নিশ্চিত করা। এরপর তার সাথে প্রয়োজনে কথাবার্তা বলে বিষয়টা তাকে জানানো। এবং তার কাছে জেনে নিতে হবে সে কিসের ভিত্তিতে উক্ত জমিটি রেকর্ডভুক্ত করেছে। যদি সে রেকর্ড করে থাকে তাহলে তার স্বপক্ষে সে প্রমাণপত্র প্রদান করবে। আর যদি রেকর্ড কর্তৃপক্ষের ভুলে হয়ে থাকে তাহলে তা রেকর্ড সংশোধন মামলার মাধ্যমে সংশোধন করে নিতে হয়।
কিভাবে বুঝবেন কার নামে জমিটি রেকর্ড হয়েছে
আপনার খতিয়ানে যদি জমির পরিমাণ কম থাকে তাহলে আপনাকে পার্শ্ববর্তী দাগের মালিকগণের খতিয়ান দেখে নিতে হবে কার নামে আপনার জমির অংশটুকু বেশি রেকর্ড হয়েছে। অনেক সময় খতিয়ানে ঠিক থাকে অথচ দাগে জমির পরিমাণ কম থাকে। দুই ক্ষেত্রেই আপনাকে পার্শ্ববর্তী দাগ সমূহের খতিয়ান এবং ওয়ার্কিং পর্চা সংগ্রহ করে তা হতে তথ্য জেনে নিতে হবে।
উক্ত মালিক বর্গ যদি আপনাকে খতিয়ান ও ওয়ার্কিং পর্চা দিতে অ-সমতি জানাই তাহলে জেলা রেকর্ডরুম বা সেটেলমেন্ট অফিস হতে দাগ নাম্বার প্রদান করে ও সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রদান করে উক্ত কাগজদয় সংগ্রহ করে নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনি নিজে নিজে যদি না পারেন, তাহলে এ বিষয়ে যারা এক্সপার্ট অর্থাৎ আপনার এলাকার বিভিন্ন দলিল লেখক এবং ভূমি জরিপ কারকদের সহযোগিতা নিতে পারেন। তাদেরকে বিষয়টি জানালে তাহারা আপনাদেরকে যথাযথ কাগজ সংগ্রহ করে দিবে।
রেকর্ড সংশোধন করতে কত সময় লাগে
- যে রেকর্ড সংশোধনটি নামজারি/খারিজ/মিউটেশন এর মাধ্যমে হয়ে থাকে তাহার সময়সীমা ৪৫ কর্মদিবস।
- আর যে রেকর্ড সংশোধনটি সরকার কর্তৃক পরিচালিত ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে জরিপ বিভাগ করে থাকে তাহা একটি লেন্দি প্রশেষ এবং সময় সাপেক্ষ।
- আর যদি মামলার মাধ্যমে রেকর্ড সংশোধন করা হয় তাহলে সেটি উভয় পক্ষের স্বার্থের ওপর এবং আদালত এর বিচারের উপর সময় কম বেশি লেগে থাকে, এজন্য এটার নির্দিষ্ট ভাবে কোন সময় বলা যায় না।
করণিক ভুল কি
যে সকল তথ্য ইচ্ছাকৃত ভাবে ভুল না হয়ে বরঞ্চ অইচ্ছাকৃত ভাবে ভুল হয়ে গেছে তাহা হচ্ছে করণিক ভুল। করণিক ভুল টাইপিং মিসটেক এর কারণেও হতে পারে। এর সমাধান স্থানীয় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) উক্ত ভুলগুলো সংশোধন করে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করে। তবে বাস্তব চিত্র এই যে কোন সহকারি কমিশনার (ভূমি) বিষয় টি আমলে না নিয়ে সরাসরি আদালতের সরনাপর্ন হওয়ার পরামর্শ প্রদান করে থাকে।
করণিক ভুল গুলো কি কি
- ভূমি মালিকের নাম ঠিকানাই ভুল।
- দাগ নম্বর ভুল।
- জমির হিসাব ভুল।
- জমির অংশ ভুল।
- বানান ভুল। ইত্যাদি
ভুল রেকর্ড সংশোধনের জন্য এসি ল্যান্ডদের নির্দেশ কি
ভূমি জরিপ কালে করণীয় ভুল এবং ছোটখাটো যে সকল ভুল থাকে তা স্থানীয় এসি ল্যান্ড সাহেব অর্থাৎ সহকারী কমিশনার (ভূমি) উক্ত ভুলগুলো সংশোধন করে দেয়। ছোটখাটো ভুলের জন্য দেওয়ানী আদালত এ মামলার ঝামেলা থেকে মুক্ত রাখার জন্য উক্ত দায়িত্ব সহকারী কমিশনার (ভুমি) বরাবর ন্যস্ত করা হয়েছে। যাতে করে মামলা মোকাদ্দামের ঝামেলা ছাড়াই জনগণ এর সুবিধা নিতে পারে।
ভুল সংশোধনের জন্য কি করতে হয়
করণিক ভুল হলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর আবেদন করতে হয়। তিনি তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষন করে ভুল সংশোধন করে থাকেন। এবং স্বার্থসংশ্লিষ্ট কিংবা রেকর্ড সংশোধন বিষয়ক ভুল হয়ে থাকলে তাহা দেওয়ানী আদালতের মাধ্যমে/ ল্যান্ড সার্ভিস ট্রাইবুনাল এর মাধ্যমে মামলা করে উক্ত ভুল সংশোধন করে নিতে হয়।
রেকর্ড সংশোধন মামলায় কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন
- রেজিস্ট্রিকৃত দলিল মামলা কৃত জমির।
- রেকর্ডিও খতিয়ান।
- নামজারি খতিয়ান।
- ওয়ারিশান সনদ।
- working পর্চা বা মাঠ পর্চা।
- সংশ্লিষ্ট জমির মৌজা ম্যাপ।
- পার্শ্ববর্তী সকল দাগের নকশা খতিয়ান ওয়ার্কিং পর্চা।
- জাতীয় পরিচয় পত্র।
- একজন অভিজ্ঞ আইনজীবী।
উপসংহার
ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা গুলো যত দ্রুত সম্ভব সমাধান করে নেওয়া উচিত। নিজের এবং পরিবারের গাফেলতির কারণে অনেক সময় উক্ত ভুলগুলো হয়ে থাকে অতএব জমি জায়গার কাগজ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখি এবং ভোগান্তি মুক্ত এবং ত্রুটিমুক্ত স্থায়ী সম্পদ গড়ে তুলি। আমাদের ব্রতই হোক এমন ভূমি সংক্রান্ত কাগজপত্র সকল সময় আপডেট রাখবো ঝামেলা মুক্ত সম্পদ গড়বো।
লেখকের কথা
সমস্যা হয়েছে! সমাধান অবশ্যই আছে। এর জন্য টেনশন না করে যথাযথ এবং সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র সংগ্রহ করে যথাযথ মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব। যদি আমার সম্পদ সঠিক ওয়েতে গড়ে তুলি তাহলে সাময়িক ভুলগুলো সময়ের ব্যবধানে অবশ্যই সমাধান হবে।
সুপ্রিয় পাঠক আমাদের পোস্টটি যদি আপনাকে ভালো লেগে থাকে এবং সামান্য যদি উপকারে এসে থাকে তাহলে উক্ত পোস্টটি আপনার পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করতে ভুলবেন না, হতে পারে আপনার শেয়ারের মাধ্যমে আপনার পরিচিত জন তার কৃত ভুলগুলো সমাধান করে নিতে পারবে।
পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে আপনাকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা
Bestwold নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url