পিপিআর কি? পিপিআর এ আক্রান্ত পশুর লক্ষণ কি
প্রিয় পাঠক বৃন্দ আসসালামু আলাইকুম! আশা করছি আল্লাহর রহমতে সুস্থ থেকে নিজ কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। এই মুহূর্তে আপনি পিপিআর সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। আজ আমরা এই আরটিকালের মাধ্যমে আপনাকে পিপিআর সম্পর্কে জানাবো ইনশাল্লাহ। এজন্য আপনাকে আমাদের এই পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে নিতে হবে।
সকল সময় মনে রাখতে হবে, যে কোন রোগের প্রতিকার করার থেকে প্রতিরোধ করাই উত্তম। অর্থাৎ বলতে চাচ্ছি যে, আপনার কোন রোগ হয়েছে তা চিকিৎসা করে ভালো করা যায়। তবে এমনটি হলে কেমন হয়! যে কিছু নিয়ম মেনে চললে কিংবা কিছু ভ্যাকসিন নিয়ে নিলেন যাতে করে উক্ত রোগটি আপনার না হয়।
ভূমিকা
পিপিআর হচ্ছে এমন একটি রোগ যা কিছু প্রাণীর মধ্যে পরিলক্ষিত হয়। তার মধ্যে রয়েছে ছাগল, ভেড়া, গাড়ল এই ধরনের পশু। পিপিআর একটি ভাইরাসজনিত রোগ। তবে এ রোগটির বেশ কিছু লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়, বর্তমান সময়ে বাজারে পিপিআর রোগের ভ্যাকসিন পাওয়া যায়। যার দ্বারা উক্ত রোগটি প্রতিরোধ করা যায়। এমনকি এই রোগটির জন্য চিকিৎসাও রয়েছে।
পিপিআর কি
পিপিআর হচ্ছে একটি ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ। এই রোগটি ছাগল ভেড়া এবং গাড়লের জন্য মারাত্মক একটি রোগ। যদি কোন ভেড়ার পালে একটি ভেড়া, ছাগল, কিংবা গাড়লের এ রোগের লক্ষণ পাওয়া যায় তাহলে উক্ত পশুটিকে লক্ষণ প্রকাশ হওয়া মাত্রই আলাদা করে নিতে হবে। তা না হলে উক্ত পশুটির মাধ্যমে আপনার পালের অন্য পশুগুলোর মধ্যেও এই রোগটি ছড়িয়ে যেতে পারে।
পিপিআরে আক্রান্ত পশুর লক্ষণ সমূহ
পি পি আর এর লক্ষণ- আপনি নিচের দিকে পরলে দেখতে পাবেন আমরা এর লক্ষণ সমূহ নিয়ে আলোচনা করছি।
- আক্রান্ত পশুর অবসাদ,খুদা মন্দা ও জর হবে।
- এ সময় পশুর নাক দিয়ে তরল পদার্থ নির্গত হবে। যা উক্ত পশুটির নাকে এবং চোখে একটি মোটা প্রলেপের সৃষ্টি করে যা দেখতে অত্যন্ত বিশ্রী আকার ধারণ করে। প্রলেপটি হচ্ছে মিউকাশ, অর্থাৎ পুটা জাতীয় এবং পিষ্টি জাতীয়।
- এ সময়ে উক্ত পশুটির শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হবে।
- আক্রান্ত পশুটি পাতলা পায়খানা করবে এবং পায়খানা দুর্গন্ধযুক্ত হবে।
- উক্ত পশুটির মুখে এক ধরনের ক্ষতের সৃষ্টি হবে যা পশুটির ঠোঁটে এবং দাঁতের মাড়িতে ও জিহব্বায় অবস্থান করে।
- উক্ত পশুটির পাতলা পায়খানার সঙ্গে আমযুক্ত ও রক্তক্ষরণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- পশুটি যদি গর্ব অবস্থায় থাকে অনেক সময় উক্ত পশুর গর্ভপাত হতে পারে।
- আক্রান্ত পশুটি র শরীরের তাপমাত্রা বহু গুনে বৃদ্ধি পেয়ে যায়।
- পশুটির চোখগুলো স্বাভাবিক থাকে না।
- এ রোগে আক্রান্ত পশু পানি ছাড়া অন্য কিছু খেতে চায় না।
- এমনকি পশুর টি মারা যেতে পারে।
পিপিআর রোগের নির্ণয় করন
পালের অন্য পশুগুলো অর্থাৎ পালের অনেক পশু যদি এই রোগে আক্রান্ত হয়, আর এর তথ্য আপনি পেয়ে যান তাহলে এই রোগটি নির্ণয় করতে আপনার খুব সহজ হবে।
এছাড়াও আপনি উপরে উল্লেখিত লক্ষণগুলো পরিলক্ষিত করে বা দেখে আপনি খুব সহজেই পিপিআর কোন পশুর হয়েছে কিনা তা আপনি নিজেই পরিলক্ষিত করতে পারবেন।
পিপিআর রোগের প্রতিকার
রোগ হলে তো অবশ্যই এর চিকিৎসা নিতে হবে। তবে মনে রাখবেন রোগ যাতে না হয় এর জন্য যা করা দরকার আপনাকে তাই করতে হবে। অর্থাৎ বিষয়টি আমরা আপনাকে এভাবে বলতে পারি “রোগের চিকিৎসা থেকে রোগ প্রতিরোধ করাই বেশি জরুরী” তবে এই মুহূর্তে আপনাকে আমরা পিপিআর রোগের চিকিৎসা বিষয়ে জানিয়ে দিচ্ছি।
পিপিআর রোগের চিকিৎসা- এই রোগটি ভাইরাসজনিত রোগ হওয়ার কারণে এর সুনির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা এ পর্যন্ত আমাদের চোখে পড়েনি। তবে কিছু মেডিসিন ব্যবহার করার ফলে এই রোগটির অনেক ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। তাহলে চলুন পিপিআর রোগের চিকিৎসা সমূহ পর্যায়ক্রমে অল্প অল্প করে জেনে নিই।
প্রথমত আপনাকে এর চিকিৎসার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হবে।
- ইনজেকশনঃ (Diadin) ডায়াডিন।
- ইনজেকশনঃ (Dimidin) ডিমাইডিন।
- ইনজেকশনঃ (Sulfasol vet). ইত্যাদি
(যেকোনো একটি ব্যবহার করতে হবে)
মাত্রা ও প্রয়োগ বিধি অর্থাৎ নিয়মঃ
প্রথম দিন: প্রতি ৫০ কেজি বডি ওয়েট এর জন্য ১৫ থেকে ৩০ সিসি ইনজেকশন মাংসপেশীতে/চামড়ার নিচে/শিরায় যেকোনো একটি মাধ্যমে প্রয়োগ করতে হবে।
দ্বিতীয় দিন: প্রথম দিনে প্রয়োগকৃত মাত্রার অর্ধেক! ২৪ ঘন্টা পর পর ৫ থেকে ৭ দিন প্রয়োগ করতে হবে।
দ্বিতীয়ত আপনাকে এই রোগের জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন ব্যবহার করতে হবে-
- ইনজেকশন: Asta vet.
- ইনজেকশন: Hista vet.
- ইনজেকশন: Antihista vet. ইত্যাদি
(যেকোনো একটি ব্যবহার করতে হবে)
মাত্রা ও প্রয়োগ বিধি অর্থাৎ নিয়মঃ
চার থেকে পাঁচ সিসি মাংসপেশীতে প্রয়োগ করতে হবে। দিনে একবার, পরপর তিনদিন।
তৃতীয় তো আপনাকে উক্ত পশুটির ডায়রিয়া হওয়ার কারণে যে ওষুধ ব্যবহার করতে হবে-
- ট্যাবলেট: Sulpha vet.
- ট্যাবলেট: Sulphadin-S vet.
- ট্যাবলেট: Diatrim vet. ইত্যাদি
(যেকোনো একটি ব্যবহার করতে হবে)
মাত্রা ও প্রয়োগ বিধি অর্থাৎ নিয়মঃ
প্রস্তুতকারকের নির্দেশনা মোতাবেক অথবা রেজিস্টার কৃত চিকিৎসকের নিয়ম অনুসারে।
চতুর্থতো পশুটির পাতলা পায়খানা হওয়ার কারণে শরীর হতে অনেক পানি চলে যায় এজন্য উক্ত পশুটিকে তার চাহিদা পরিমাণ পানির যোগান দিতে বাজারে ব্যবহারিত বেশ কিছু স্যালাইন পাওয়া যায় তা আক্রান্ত পশু থেকে খাওয়াতে হবে।
এখন আমি আপনাকে পশু শ্যালাইন খাওয়ার নিয়ম টি বলে দিচ্ছি-
এক লিটার পানিতে এক গ্রাম স্যালাইন মিশিয়ে বারবার খাওয়াতে থাকতে হবে।
পশুর পিপিআর রোগ প্রতিরোধে করণীয়
এ পর্যায়ে আপনাকে আমরা পিপিআর রোগ প্রতিরোধ করতে কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয় এ বিষয়ে আপনাকে জানিয়ে দিচ্ছি-
- প্রথমে আপনাকে যেটি করতে হবে তা হচ্ছে, আপনাকে প্রতিনিয়ত আপনার পশুগুলোকে নিয়ম মেনে প্রতি বছর একবার পিপিআর ভ্যাকসিন প্রদান করতে হবে।
- যদি আপনার আশেপাশে পিপিআর ভাইরাসের সংক্রমণ বেশি পরিলক্ষিত হয় তাহলে আপনার পশুগুলোকে কোন অবস্থাতেই মুক্ত অঙ্গনে ছেড়ে দিবেন না।
- আপনি যদি লক্ষ্য করতে পারেন আপনার কোন একটি পশুর উক্ত লক্ষণগুলো প্রকাশ পেয়েছে, তাহলে দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে ওই পশুটিকে আলাদা করে ফেলতে হবে।
পশুর পিপি আর
আপনার পশু টি সুরক্ষিত রাখার জন্য নিয়মিত পিপিআর ভ্যাকসিন প্রদান করুন। মনে রাখবেন রোগ হওয়ার থেকে রোগ প্রতিরোধ করায় বেশি ভালো। এজন্য আপনাকে নিয়ম মেনে প্রতিবছর প্রতিটি রোগের ভ্যাকসিন আপনার পশুকে নিজ দায়িত্বে করে নিতে হবে। আর যদি আপনার পশুটির রোগ পরিলক্ষিত হয়ে যায়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
উপসংহার
পি পি আর এমন একটি রোগ যা আপনি যদি বুঝতে না পারেন, যদি ভেবে থাকেন শুধুমাত্র সর্দি লেগেছে অথবা ঠান্ডা লেগেছে, এই ভেবে থেকে যান কোনদিন কখনো নিয়ম মেনে ভ্যাকসিন প্রদান না করেন এবং আপনার পশুটি রোগে আক্রান্ত হওয়ার মাত্র সঠিকভাবে চিকিৎসা প্রদান না করান তাহলে আপনি বেশ ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন।
লেখকের কথা
আমি আপনাকে একটি বিষয় বলবো সেটি হচ্ছে, পিপিআর যেহেতু একটি সংক্রামক ভাইরাসজনিত ব্যাধি। তাই আপনি নিয়ম করে পিপিআর এর ভ্যাকসিন আপনার পশুকে পুশ করুন। এবং রোগাক্রান্ত হওয়ার পূর্বে রোগ যাতে করে না হয় এর জন্য প্রতিরোধের ব্যবস্থা করুন।
পরিশেষে বলে যেতে চাই আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
আর শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে জানাই, আমাদের পক্ষ হতে আন্তরিক
ধন্যবাদ।
Bestwold নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url