OrdinaryITPostAd

জাল দলিল চেনার উপায় কি এবং প্রতিকার

আসসালামু আলাইকুম, সু-প্রিয় পাঠক বৃন্দ আশা করছি আল্লাহর রহমতে সুস্থ থেকো আপনার দিনগুলো অতিবাহিত হচ্ছে। তবে আপনি এই মুহূর্তে জাল দলিল চেনার উপায় সম্পর্কে জানতে বেশ আগ্রহী। আজ আমরা জাল দলিল চেনার উপায় সম্পর্কেই আলোচনা করব। এ বিষয়ে আপনাকে একটি স্পষ্ট ধারণা নিতে হলে আমাদের এই পোস্টটি শুরু হতে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।
জাল দলিল চেনার উপায় কি এবং প্রতিকার


জাল দলিল একটি মারাত্মক প্রতারণা! যার কবলে অনেক মানুষের প্রাণনাশ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেজন্য আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে, যাতে করে আপনি এই জাল দলিল এর প্রতারণায় প্রতারিত না হন। এজন্য আপনার কিছু ধারণা থাকা প্রয়োজন উক্ত বিষয়ে। চলুন তাহলে হলে আমরা এখন এই জাল দলিল এর বিষয়ে কিছু ধারণা জ্ঞান সংগ্রহ করে নিই।

ভূমিকা

জাল দলিল চেনার অনেকগুলো ধাপ রয়েছে। জাল দলিল এর ফলে অনেক মামলা-মোকদ্দমা সংগঠিত হয়ে থাকে। আপনার যদি এক খন্ড ভূমি থেকে থাকে তাহলে সেই ভূমিটির ডকুমেন্টস বা দলিলাদি কতটুকু সুরক্ষিত তা আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য আপনাকে সজাগ থাকতে হবে যাতে করে আপনার ভোমিটির দলিলাদি যেন এই জাল দলিলের অন্তরভূক্ত না হয়।

জমি কেনার আগে দলিল ঠিক আছে কি-না সেটি নির্ণয় করা প্রাথমিক কাজ। এক্ষেত্রে দলিল সম্পর্কে সাধারণ ধারনা প্রত্যেকের থাকা উচিত। যদি ধারণা না থাকে তাহলে নির্ভরযোগ্য কোনো আইনজীবী, মোহরী, সার্ভেয়ার কর্তৃক উক্ত জায়গা জমির দলিলাদি দেখিয়ে আপনাকে তা নিশ্চিত হতে হবে, যে সম্পত্তিটি আপনি ক্রয় করছেন তার দলিলাদি কতটুকু নিরাপদ। 

দলিল নম্বর দেখে জাল দলিল নির্ণয়

দলিলের প্রথম পাতায় সবার উপরে দুটি নাম্বার থাকে, যার একটি বামে এবং অন্যটি ডান দিকে থাকে। বাম দিকের নাম্বারটি ডান দিকের নাম্বার থেকে বড় হয়; বামদিকে ৪৯৩৮ থাকলে ডানদিকে তার থেকে ছোট সংখ্যা হবে যেমন ৪৮৯৩। বামদিকের সংখ্যাকে বলা হয় দলিলের ক্রমিক নাম্বার এবং ডান দিকের সংখ্যাকে বলা হয় দলিল নাম্বার। বাম দিকের ক্রমিক নাম্বারটি যদি ডান দিকের দলিল নাম্বার থেকে ছোট হয় তাহলে দলিলটি জাল দলিল হিসেবে সন্দেহের অবকাশ থাকে।

যে কাগজের উপর দলিলটি সম্পাদন করা হয় তা দেখে

প্রত্যেক নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প উত্তোলনের সময় স্ট্যাম্পের পিছনে উত্তোলনকারীর নাম এবং তারিখ থাকে। কোন দলিল উক্ত স্ট্যাম্পের উপর লিখিত হলে যদি দেখা যায় যে, স্ট্যাম্প উত্তোলনের তারিখের পূর্বের তারিখে দলিলটি সম্পাদন করা হয়েছে তাহলে দলিলটি জাল দলিল বলার অবকাশ থাকে।

দলিলদাতার স্বাক্ষর ও টিপসই যাচাই করে

দলিল দাতার সাক্ষর এবং টিপসই পরীক্ষা করে জালিয়াতি নির্নয় করা যায়। এর জন্য বিজ্ঞ আদালতে আবেদন করতে হয়। আবেদন করা হলে যার হাতের লেখা, টিপসই বা সাক্ষর বলে দাবি করা হচ্ছে তাকে নোটিস দিতে হয়। তারপর, উক্ত ব্যক্তির লেখা, সাক্ষর বা টিপসই নেওয়া হয়।
যদি মৃত্যু বা অন্য কোন কারনে লেখক বা স্বাক্ষরকারীকে না পাওয়া যায় তবে তার আগের কোন লেখা, টিপসই বা স্বাক্ষর অন্য দলিল হতে সংগ্রহ করে বিশেষজ্ঞের পরীক্ষার জন্য প্রেরন করা হয়। পরীক্ষার পর দলিলটি জাল কিনা সে সিদ্ধান্তে পোঁছানো যায়।

দলিল লেখার ফরমেট নির্ণয়

১৯৬০ সালের পর থেকে বাংলাদেশ তথা পূর্ব পাকিস্তানে দশমিক পদ্ধতির হিসাব প্রবর্তিত হয়; ১৯৬০ সনের পূর্বের দলিলে যদি দশমিক পদ্ধতিতে জমির হিসাব খাজনার পরিমান উল্লেখ থাকে তবে দলিলটি জাল হিসেবে গন্য করার অবকাশ থাকে।

দায়িত্ব কর্মকর্তার স্বাক্ষর আসবো আচ্ছা ঠিক আছে আচ্ছা ঠিক আছে চাই

কোন রেজিষ্ট্রি দলিল নিয়ে সন্দেহের উদ্বেগ হলে তর্কিত রেজিষ্ট্রি দলিলটি সম্পাদনের সময় উক্ত অঞ্চলে সাব-রেজিষ্ট্রার কে ছিলেন তা বাহির করে তার স্বাক্ষর কৃত বিশুদ্ধ অন্য দলিলের সহিত তর্কিত দলিলটির স্বাক্ষর মিলিয়ে দেখে জাল দলিল সনাক্ত করা যায়।

দলিলে লিখিত বিভিন্ন ভাষা বা শব্দ যাচাই

'ভূমি উন্নয়ন কর' শব্দটি ১৯৭৬ সনে ভূমি উন্নয়ন কর অধ্যাদেশ জারির পর থেকে ভূমি ব্যবস্থাপনায় ব্যবহার হয়ে থাকে। ১৯৭৬ সালের পূর্বের দলিলে যদি 'ভূমি উন্নয়ন কর' শব্দটি লিখে তা পরিশোধের কথা বলা হয়ে থাকে তাহলে দলিলটি জাল হিসেবে ধরে নেওয়ার অবকাশ থাকে।

লিখিত দলিলটির মালিকানাার ধারাবাহিকতা যাচাই

সন্দেহকৃত দলিলে যদি বিভিন্ন দলিল বা খতিয়ানের রেফারেন্স দেওয়া থাকে তাহলে উক্ত দলিল বা খতিয়ান পর্যালোচনার মাধ্যমে মালিকানা হস্তান্তরের ধারাবাহিক বিবরণ পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে তর্কিত দলিলের সহিত বায়া দলিলের মালিকানা হস্তান্তরের বিবরনের সামঞ্জস্য না থাকলে দলিলটি জাল দলিল হিসেবে গন্য করার অবকাশ থাকে।

বালাম বই বা রেজিস্টার যাচাই

দলিলের রেজিষ্ট্রেশন নিয়ে সন্দেহের উদ্বেগ হলে রেকর্ড রুমে তল্লাশীর মাধ্যমে দলিলটি রেজিষ্ট্রেশন হয়েছে কি হয় নাই তা জানা যায়। তল্লাশীর মাধ্যমে বালাম বহিতে যদি দলিলটির রেজিষ্ট্রেশন নিয়ে কোন তথ্য না পাওয়া যায় তাহলে দলিলটি জাল দলিল বলে গন্য করা হবে।

বর্তমান সময়ে দলিলে যে ছবি থাকে তা যাচাই করা

অনকে সময় দেখা যায়, জাল দলিলকারী মূল দলিলটির দাতা-গ্রহীতার নাম, ঠিকানা,দলিলের অন্যান্য বিবরণ ঠিক রেখে শুধুমাত্র দাতা-গ্রহীতার ছবি পরিবর্তন করে অন্যজনের ছবি সংযুক্ত করে হুবুহু একটি জাল দলিল সৃজন করে। 
আপনি যখন দলিলটি তল্লাশি দিবেন তখন মুল দাতা-গ্রহীতার নাম, ঠিকানা সবই সঠিক পাবেন এবং দলিলটি যে জাল সেটি সনাক্ত করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে দলিলে সংযুক্ত ব্যক্তিটির ঠিকানা এবং তার ছবিটি সঠিক রয়েছে কিনা তা যাচাই করে নিতে হবে।

উপসংহার

উপরোক্ত বিষয়গুলো আপনাকে বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে আসতে হবে। কোন জমি ক্রয় করার পূর্বে আপনাকে উক্ত বিষয়গুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখে নিতে হবে আশা করা যায় তাহলে আপনার জমি ক্রয় করা সম্পূর্ণরূপে সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

লেখকের কথা

আপনি যে জমিটি ক্রয় করবেন অবশ্যই তার দলিলাদি সঠিক আছে কিনা তা যাচাই-বাছাই করে নিবেন। কারণ যদি জাল দলিলের কবলে পড়েন তাহলে জমি নিয়ে অশান্তির শেষ থাকবে না। আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার যদি কিঞ্চিৎ পরিমাণ উপকার হয়ে থাকে তাহলে আপনার পরিচিতজনদের মাঝে শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন।
আমাদের এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে আপনাকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Bestwold নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url