OrdinaryITPostAd

প্রবাসীদের জমি রেজিস্ট্রেশন করার পদ্ধতি কি? প্রবাসীরা কি জমি ক্রয়-বিক্রয় করতে পারে?

আসসালামুয়ালাইকুম! সু-প্রিয় পাঠক বৃন্দ, আশা করছি সুস্থ থেকে নিজ কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। যতটুক ধারণা করছি এই মুহূর্তে আপনি ”প্রবাসীদের জমি রেজিস্ট্রেশন করার নিয়ম কি” এই বিষয়ে জানতে চাচ্ছেন। আমরা আজ এই আর্টিকালের মাধ্যমে আপনাকে বিষয়টি জানানোর চেষ্টা করব। সেজন্য আপনাকে যেটি করতে হবে, আমাদের এই আর্টিকেলটি প্রথম হতে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে নিতে হবে।
প্রবাসীদের জমি রেজিস্ট্রেশন করার পদ্ধতি
একজন প্রবাসী দেশের মায়া মোহব্বত এর জ্বলাঞ্জলি দিয়ে বিদেশের মাটিতে অবস্থান করে, শুধু মাত্র তার পরিবারের মুখে এক ঝলক হাসি ফোটানোর জন্য। হাজারো কষ্টের মাঝেও বিদেশের মাটিতে অবস্থান করে ভাগ্যের চাকা পরিবর্তন করার আশায়। কষ্টোরজিত টাকা-পয়সার মাধ্যমে “কে বা না চায়” তার পছন্দের এক টুকরো জমি ক্রয় করতে।

ভূমিকা

একজন মানুষ প্রবাসে বসবাস করার পরেও সে দেশের মায়া মহব্বতের ফলে দেশের মাটিতে এক খন্ড জমি ক্রয় করার ইচ্ছা পোষণ করতে পারে। আবার অনেক সময় এরকম দেখা যায় বংশীয় বা পারিবারিক সম্পত্তি ভাগ বন্টনের প্রয়োজন হয় কিন্তু উক্ত পরিবারের কোন একজন সদস্য বিদেশের মাটিতে অবস্থান করছে। তাহলে উনার জন্য কি পরিবারের বাকি সদস্যদের ভাব বন্টন স্থগিত হয়ে যাবে। বিষয়টি মোটেও এই রকম নয়।

কিসের ভিত্তিতে বিদেশের মাটিতে থেকেও জমি রেজিস্ট্রেশন করা যায়

আপনি নিশ্চয়ই বিদেশের মাটিতে অবস্থান করছেন, অথবা আপনার পরিবারের কোন একজন সদস্য বিদেশের মাটিতে অবস্থান করছে। এখন বিদেশের মাটিতে অবস্থান করেও দেশের জায়গা জমি কিভাবে ক্রয় বা হস্তান্তর করতে পারবে? এর একমাত্র পদ্ধতি হচ্ছে আমমোক্তার নামা বা পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি নিয়োগ করা।

আমমোক্তার নামা বা পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি কি

আমমোক্তার বা পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি হচ্ছে মূল মালিকের অবর্তমানে তার মনোনীত কোন ব্যক্তি, সে যে সকল কাজ সম্পাদন করতে পারতো বা পারবে, আমমোক্তার বা পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি সেও তার অনুরূপ শর্তসাপেক্ষে বা সম্পূর্ণরূপে উক্ত কাজ সমূহ সম্পন্ন করতে পারে। এজন্য মূল মালিক তার বিশ্বস্ত বা মনোনীত কোন একজন ব্যক্তি কে তার সকল কার্য সম্পাদনের ক্ষমতা অর্পণ করে।

আমমোক্তার নামা বা পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি কয় ধরনের হয়ে থাকে

পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি বা আমমুক্তারনামা সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে-
ক) সাধারণ আমমোক্তারনামা বা পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি- যে সকল ক্ষমতার প্রদান করার মাধ্যমে একজন আমমোক্তার উক্ত মোক্তার দাতার পক্ষে জমি ক্রয় বিক্রয়, দেখাশোনা বা রক্ষণাবেক্ষণ, চুক্তি সম্পাদন করা, মুক্তারদাতার বিভিন্ন মামলা মোকদ্দমা পরিচালনা সহ যাবতীয় কাজের ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয় তাহাই হচ্ছে সাধারণ আমমোক্তারনামা বা পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি।
খ) বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগে আমমোক্তারনামা বা পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি- এক্ষেত্রে মুক্তার দাতা কোন একটি বিশেষ কাজের জন্য শর্তসাপেক্ষে আমমুক্তারনামা বা পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি নিয়োগ করে উক্ত কাজের ক্ষমতা প্রদান করে। তবে ২০১২ সালের আইন অনুসারে পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি আবার দুই প্রকার।
  • অ-প্রত্যাহারযোগ্য। 
  • প্রত্যাহারযোগ্য।

প্রবাসে অবস্থান করেও কি পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি নিয়ম করা যায়

অবশ্যই যাই! তবে কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এর কার্য সম্পন্ন করতে হয়। আমরা এ পর্যায়ে আলোচনা করব প্রবাসে অবস্থান করে পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি নিয়োগ করার প্রক্রিয়া-
  • পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি অবশ্যই লিখিত আকারে হতে হবে।
  • উক্ত দলিলে যে বিষয়গুলোর ক্ষমতা প্রদান করা হবে তা স্পষ্ট হবে উল্লেখ করতে হবে।
  • পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি অবশ্যই বিশ্বস্ত বা মনোনয়ন কারী ব্যক্তি কে প্রদান করতে হবে।
  • পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি দাতা অবশ্যই তার শর্তগুলো স্পষ্ট হবে উল্লেখ করবে।
  • মোক্তার দাতা যদি প্রবাসে অবস্থান করে তাহলে দলিল লিখে তা ডাক যোগের মাধ্যমে মোক্তার দাতার প্রবাস ঠিকানায় প্রেরণ করতে হবে।
  • মোক্তার দাতা দলিলটি পাওয়ার পর বিদেশের অবস্থানরত বাংলাদেশ দূতাবাসে গিয়ে কাউন্সিলরের উপস্থিতিতে সহস্তে স্বাক্ষর করে এবং সেই কাউন্সিলরই উক্ত দলিলে স্বাক্ষর করে ডাকযোগের মাধ্যমে পুনরায় প্রেরণ করবে।
  • উক্ত দলিলটি দেশে পৌঁছানোর পর অফিসিয়াল সকল কাজ সম্পন্ন করার পর তা পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়।

পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি কি রেজিস্ট্রেশন করতে হয়

যে সকল পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি মাধ্যমে সম্পত্তি বিক্রয়ের অধিকার দেওয়া হয় শুধুমাত্র সেই সকল পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। তবে সব ধরনের পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি রেজিস্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক নয়।

পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি কি বাতিল করা হয়

পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি দলিল রেজিস্ট্রেশন করার পর দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি আইনত সেই সকল ক্ষমতার অধিকারী হয়ে থাকে, যে কাজগুলো আপনি মালিক হওয়া সত্বে সম্পাদন করতে পারেন ঠিক সে সকল কাজ এর ক্ষমতা উক্ত ব্যক্তি পেয়ে থাকে। তবে মোক্তার দাতা চাইলে যে কোন সময় পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি বাতিল করার সম্পূর্ণ অধিকার রাখে।

যে সকল সময় অটোমেটিকলি পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি বাতিল হয়ে যায়

  • পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য করা হলে উক্ত মেয়াদ শেষ হলে এর ক্ষমতা বাতিল হয়ে যায়।
  • পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি নির্দিষ্ট কোন কাজের জন্য নিয়োগ করা হলে উক্ত কাজ শেষ হওয়া মাত্রই এর ক্ষমতা বাতিল হয়ে যায়।
  • পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি যৌথভাবে সম্পাদন করা হলে কোন একজন মৃত্যুবরণ করলে উক্ত ক্ষমতাটি বাতিল বলে গণ্য হয়।

প্রবাসী থেকে কি জমি বিক্রি বা হস্তান্তর করা যায়

একজন ব্যক্তি প্রবাসে থাকা শর্তেও সে যদি ইচ্ছা প্রকাশ করে যে তার দেশে রেখে যাওয়া সম্পত্তি বিক্রয় বা হস্তান্তর করবে তাহলে সে প্রবাসে বসবাস করেও উক্ত সম্পত্তি বিক্রয় বা হস্তান্তর করতে পারে। অথবা মনে করেন কোন একজন ব্যক্তি বিদেশে অবস্থান করছে এমত অবস্থায় তাদের পারিবারিক সম্পত্তি ভাগ বাটোয়ারা করার প্রয়োজন এক্ষেত্রে তাদের করণীয় যা হতে পারে।
  • প্রবাসে অবস্থানকারী ব্যক্তি তার বিশ্বস্ত একজন ব্যক্তিকে পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি দলিলের মাধ্যমে ক্ষমতা প্রদান করবে।
  • দেশে অবস্থান রত সম্পত্তি হস্তান্তরের দলিল আদি একজন আইনজীবির মাধ্যমে প্রস্তুত করে তা প্রবাসরত ব্যক্তির কাছে, তার ঠিকানায় প্রেরণ করতে হবে।
  • উক্ত দলিলে যে সম্পত্তি টি হস্তান্তর হবে তার বিস্তারিত বিবরণ যেমন খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর, হোল্ডিং নম্বর, মৌজার নাম, উপজেলার নাম, জেলার নাম, জমির পরিমাণ, ইত্যাদি প্রয়োজনীয় তথ্য স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।
  • সাথে সাথে প্রেরণ করতে হয়, তার বিশ্বস্ত ব্যক্তির পাসপোর্ট সাইজের এক কপি ছবি ও জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি ডাকযোগের মাধ্যমে।
  • প্রবাসের ব্যক্তি উক্ত দলিলটি পাওয়ার পর তার নিজের এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি ও জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি সঙ্গে নিয়ে উক্ত দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশ দূতাবাস এগিয়ে একজন কাউন্সিলর এর সাহায্যে বা কাউন্সিলর এর উপস্থিতিতে উক্ত দলিলে সিগনেচার বা স্বাক্ষর করবেন এবং সেই কাউন্সিলর উক্ত দলিলে স্বাক্ষর করবে।
  • প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করে পাওয়ার দাতা উক্ত দলিলটি ডাকযোগের মাধ্যমে পুনরায় দেশে প্রেরণ করবে।
  • পাওয়ার গ্রহীতা ডাক হতে উক্ত দলিলটি গ্রহণ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দলিলটি নিয়ে যাবেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই দলিলটি পরীক্ষা করে সত্যায়িত করে দিবেন।
  • পাওয়ার গ্রহীতা উক্ত দলিলটি নিয়ে তার নির্ধারিত ডিসি অফিসের রাজস্ব কার্যালয় জমা প্রদান করবেন। সেখানে দলিলটি আঠাযুক্ত প্রয়োজনীয় স্ট্যাম্প লাগিয়ে দিবে এরপর এক কপি সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে প্রেরণ করা হবে।
  • এরপর পাওয়ার গ্রহীতা তার প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করে সে তার ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারবে।

প্রবাসী যে সকল কারণে পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি নিয়োগ করে থাকে

  • প্রবাসে থাকাকালীন সময়ে তার যদি কোন মামলা পরিচালনার প্রয়োজন পড়ে সে ক্ষেত্রে পাওয়ার গ্রহীতা বা পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি নিয়োগ করতে পারে।
  • দেশে অবস্থানরত তার স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি দেখাশোনা তত্ত্বাবধায়ন করার জন্য পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি নিয়োগ প্রদান করতে পারে।
  • ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার জন্য স্থাবর সম্পত্তি বন্ধক রাখার ক্ষেত্রে পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি প্রয়োজন হতে পারে।
  • দেশে অবস্থানরত পারিবারিক বন্টন, বিক্রয় এর উদ্দেশ্যেও পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি প্রয়োজন হতে পারে।

উপসংহার

পাওয়ার দাতা ব্যক্তিকে অবশ্যই পাওয়ার গ্রহীতা ব্যক্তি সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে, যাতে করে পাওয়ার গ্রহীতা বিশ্বস্ত হয়। যদি পাওয়ার গ্রহীতা কোন কারণবশত বিশ্বাস ভঙ্গ করে তাহলে পাওয়ার দাতা অনেক ক্ষেত্রেই বিপদের সম্মুখীন হতে পারে। এজন্য পাওয়ার দাতা, পাওয়ার গ্রহ গ্রহিতা নির্বাচনে সবচাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ প্রদান করতে হবে।

লেখক এর কথা

আপনি যদি প্রবাসী হয়ে থাকেন, এবং যদি ইচ্ছা প্রকাশ করেন আপনার দেশে থাকা সম্পত্তিটি আপনি হস্তান্তর করবেন তাহলে আপনি নির্দ্বিধায় একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তি খুজে বের করে তাকে পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি ক্ষমতা প্রদানের মাধ্যমে আপনার উক্ত সম্পত্তি টি প্রয়োজনে হস্তান্তর করতে পারেন।

আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার যদি সামান্যতর উপকার হয়ে থাকে, তাহলে আপনার পরিচিত জনদের মাঝে শেয়ার করে উক্ত বিষয়টি তাকে জানার সুযোগ করে দেন।
শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে জানাই আন্তরিক
ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
1 জন কমেন্ট করেছেন ইতোমধ্যে
  • Anonymous
    Anonymous November 29, 2023 at 9:28 AM

    পোষ্ট টি পড়ে অনেক ভালোলাগলো।

মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Bestwold নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url