পত্রিক সম্পত্তি নামজারি করার নিয়ম
সু-প্রিয় পাঠক বন্ধু নিশ্চয় নিজ কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। হাজার ব্যস্ততার ফাঁকেও আপনি পৈত্রিক সম্পত্তির নাম জারি করার জন্য অর্থাৎ ওয়ারিশান সম্পত্তি নামজারি করার নিয়ম সম্পর্কে জানতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আজ আমরা আপনাকে উক্ত বিষয়টি জানানোর ইচ্ছা পোষণ করছি। এজন্য আপনাকে আমাদের এই আর্টিকেলটি শুরু হতে শেষ পর্যন্ত পড়তে হবে।
পৈত্রিক সম্পত্তি অর্থাৎ ওয়ারিশান সম্পত্তি নামজারি করার একটি সুন্দর নিয়ম রয়েছে যা আপনার জানা প্রয়োজন। প্রতিটি সচেতন মানুষের জন্য ভূমি বিষয়ক জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা আপনাদেরকে ভূমি বিষয়ক সাধারণ তথ্যগুলো নিরলসভাবে আপনাদের সুবিধার জন্য আর্টিক্যাল লিখে আসছি ।
ভূমিকা
নামজারি হচ্ছে একটি স্থায়ী সম্পত্তির গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস। যার মাধ্যমে একটি ভূমি মালিকের মালিকানা প্রমাণ করতে অনেক ক্ষেত্রেই বেশ মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। এমনকি এই নামজারি কাগজের মাধ্যমে একজন ভূমি মালিকের ভূমি সংক্রান্ত প্রাসঙ্গিক আরও দুইটি গুরুত্বপূর্ণ দলিলের সৃষ্টি হয়।
নামজারি করে ভূমি সংক্রান্ত কয়টি দলিল পাওয়া যায়
আপনার একটি সম্পত্তি নামজারি করার ফলে আপনাকে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমির দলিল সরবরাহ করা হয়, যা একজন ভূমি মালিকের মালিকানা প্রমাণপত্র হিসেবে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। গুরুত্বপূর্ণ দলিল তিনটি হচ্ছে-
- খতিয়ান সরবরাহ করা হয়।
- ডি সি আর সরবরাহ করা হয়।
- সর্বোপরি ভূমি উন্নয়ন কর পরিষদের মাধ্যমে দাখিলা সরবরাহ করা হয়।
পৈত্রিক সম্পত্তি কি
পৈত্রিক সম্পত্তি বলতে আমরা যা বুঝি তা হচ্ছে, পূর্বপুরুষের রেখে যাওয়া সম্পত্তি। এখন যদি পূর্বপুরুষ সম্পর্কে না জানেন তাহলে বিষয়টি অন্যধরণ করতে একটু কষ্ট হতে পারে। তবে আমার মনে হচ্ছে না যে, পূর্বপুরুষ সম্পর্কে অবগত নাই এরকম মানুষ এখনো আছে! পাগল ছাড়া। পূর্বপুরুষের মধ্যে হোক সে বাবা কিংবা দাদা। যাহার মারফত হতে সম্পত্তি অর্জিত হয় সেটাই হচ্ছে পৈতৃক সম্পত্তি।
আরো পড়ুনঃ রেকর্ড ও নামজারি কি একই জায়গা হতে করা যায়
অন্যভাবে বলা যায়, আপনার নিজের ক্রয় কৃত সম্পত্তি নয় এমন অথবা কারো হতে দান, হেবা, এওয়াজ, ডিগ্রী, নিলামে ক্রয়কৃত সম্পত্তি নয় এমন। শুধুমাত্র ,কেবলমাত্র, একমাত্র আপনার ঊর্ধ্বতন পুরুষের ত্যক্ত সম্পত্তি হতে ওয়ারিস মোতাবেক আপনি যে সম্পদটি প্রাপ্ত হন তাহাই হচ্ছে পৈত্রিক সম্পত্তি বা ওয়ারিশান সম্পদ।
পৈতৃক সম্পত্তি নামজারি করার নিয়ম
আপনার ঊর্ধ্বতন পুরুষের মৃত্যুর পরে তার রেখে যাওয়া সম্পত্তির উপর আপনি সহ যে সকল ওয়ারিশগণ থাকবে তাদের হক। এই হক প্রতিষ্ঠা করতে হলে আপনাদের বা আপনাকে যে সকল কাজ সম্পাদন করতে হবে তা হচ্ছে-
- মৃত ব্যক্তির মৃত্যুর সনদপত্র সংগ্রহে করতে হবে।
- মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া প্রতিটি ওয়ারিশের নাম, বয়স, সম্পর্ক উল্লেখ পূর্বক ওয়ারিশান সনদ সংগ্রহ করতে হবে।
- মৃত ব্যক্তির সমুদয় সম্পত্তি হতে, যদি তার কোন ঋণ থেকে থাকে সেই সম্পদ হতে উক্ত ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
- মৃত ব্যক্তির যদি কোন ওসিয়ত থেকে থাকে তা পূরণ করতে হবে।
- মৃত ব্যক্তির যদি স্ত্রী জীবিত থাকে এবং তার মোহরানা অনাদায়ী থেকে থাকে তাহলে মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি হতে তার স্ত্রীর মোহরানা পরিশোধ করতে হবে।
- উপরোক্ত সকল দায় পরিশোধ করার পর যদি মৃত ব্যক্তির অবশিষ্ট কোন সম্পত্তি থেকে থাকে তা হলে উক্ত সম্পত্তি তার রেখে যাওয়া ওয়ারিশদের মধ্যে পারিবারিক বন্টননামা করে নিতে হবে।
- বণ্টনামাটি লিখিত হতে হবে এবং তা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস হতে নিবন্ধন করতে হবে।
- গুরুত্ব কাজগুলো সম্পন্ন হলে, তারপর আপনি আপনার অংশটুকু নিজ নামে নামজারির আবেদন করতে পারবেন।
উপরোক্ত কাজগুলোর যদি কোন একটি বাকি থাকে, তাহা হলে আপনার পৈতৃক সম্পত্তিটি নামজারিত হয়ে যাবে কিন্তু আপনি আপনার মনের দিক হতে আত্মতৃপ্তিবোধ করবেন না। কারণ আপনার পূর্বপুরুষের দায় পরিশোধ করা ব্যতীত তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি আপনার ভোগ করা মোটেও উচিত হবে না। এটা যেমন ইসলামের দৃষ্টিকোণ হতে ঘৃণিত ঠিক তেমনি আপনার মনের দিক থেকেও ঘৃণিত।
ওয়ারিশান সম্পত্তি নামজারি করতে কি কি কাগজপত্রের প্রয়োজন
- আপনার পূর্বপুরুষ হোক সে আপনার পিতা কিংবা আপনার দাদা, মাতা কিংবা দাদী যাহার নামে সম্পত্তি তাহার মৃত্যুর পর উক্ত ব্যক্তির মৃত্যুর সনদপত্র।
- মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সকল ওয়ারিশের উপস্থিতি পূর্বক ওয়ারিশান সনদপত্র।
- (এক্ষেত্রে যদি কোনভাবে কোন লিগ্যাল ওয়ারিশ বাদ পড়ে যায় বা ইচ্ছাকৃত বাদ দেওয়া হয় তাহলে আপনি উক্ত ব্যক্তিকে বাদ রেখে যে দলিলাদি সৃষ্টি করবেন সেই দলিলা দিও সঠিক হবে না। এবং অদূর ভবিষ্যতে উক্ত দলিলটি রহিত হবে এটা অবধারিত।)
- মৃত ব্যক্তির নামে যে খতিয়ান রয়েছে তার কপি।
- হাল সনের ভূমি উন্নয়ন কর।
- আপোষ বন্টন অর্থাৎ পারিবারিক বন্টন নমা দলিল এর কপি।
- আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি।
- এবং সর্বশেষ প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান।
পৈতৃক সম্পত্তি নামজারি তে প্রতিবন্ধকতা
পৈতৃক সম্পত্তি অর্থাৎ ওয়ারিশান সম্পত্তি নাম জারি করতে আমাদের বর্তমান সমাজে অনেক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। আমাদের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ভূমি সংক্রান্ত অধিকাংশ মামলায় ওয়ারিশান সম্পত্তি জনিত। এক্ষেত্রে একটু লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, ওয়ারিশগণ এর মধ্যে কোন আপোষ বন্টন থাকে না। যার কারণে সমস্যা গুলো প্রকট আকার ধারণ করে।
অনেক সময় লক্ষ্য করা যায় যে, এই ওয়ারিশান সম্পত্তিগুলো কোন একজন ওয়ারিশ অপর ওয়ারিশকে ঠকিয়ে বা হাইড করে গোপনে, একটি ভুয়া ওয়ারেশন সংগ্রহ করে নামজারি দলিল ইত্যাদি করে বসে। যার ফলে সৃষ্টি হয় ভূমি বিষয়ক জটিলতা, শেষ পর্যন্ত তা মামলা মোকদ্দমা পর্যন্ত গড়ায়।
এজন্য বর্তমান নতুন ভূমি আইনে স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছে যে, এখন হতে ওয়ারিশান সম্পত্তি সমূহ হস্তান্তরের ক্ষেত্রে নাম জারি করা বাধ্যতামূলক। এবং নামজারীর করার পূর্বে উক্ত ওয়ারিশান সম্পত্তি নিজেদের মধ্যে অর্থাৎ ওয়ারিশ গণ দের মধ্যে আপোষ বন্টন অর্থাৎ বণ্টননামা দলিল লিখিতভাবে সাব রেজিস্টার কর্তৃক রেজিস্ট্রি করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
উপসংহার
পৈত্রিক সম্পত্তি বা ওয়ারেশন সম্পত্তি নামজারি করতে হলে যেহেতু আপোষ বন্টন অর্থাৎ পারিবারিক বন্টন নাম্বার প্রয়োজন হচ্ছে, তাহলে যদি কোন কারণবশত ওয়ারিশগণ এই বাটোয়ারা দলিল করতে না চায় তাহলে কি বাকি ওয়ারিশ গান নামজারি করতে পারবে না! বিষয়টি মোটেও তা নয়। এর জন্য বিকল্প পন্থা অবলম্বন করতে হবে। অতি শীঘ্রই আমরা উক্ত বিষয়টি নিয়ে একটি আর্টিকেল নিয়ে আসব।
লেখক এর কথা
বর্তমান যুগ উপযোগী ভূমি আইন পাশ হয়েছে, বাংলাদেশের কোর্ট গুলোতে ৫০ প্লাস পারসেন্ট কেসগুলো হচ্ছে ভূমি সংক্রান্ত, ঐ সকল মামলাগুলো কমাতে বর্তমান আইন বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বর্তমান আইনে প্রচলিত ভূমি সেবা গ্রহণের ফলে, ওয়ারিশান সম্পত্তির বাটোয়ারা সহ নানাবিধ যে নিয়ম পরিলক্ষিত হচ্ছে তাতে ভূমি সংক্রান্ত মামলাগুলোর জটিলতা অনেকটাই সারিয়ে নেওয়া সম্ভব।
আমাদের এই আর্টিকেলটি যদি আপনার তথ্যবহুল ও ভালো মনে হয়ে থাকে তাহলে উক্ত পোস্টটি আপনার পরিচিতজনদের মাঝে ছড়িয়ে দিন, যাতে করে তারাও উক্ত বিষয়টি পড়ে উপকৃত হতে পারে।
শেষ পর্যন্ত আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে জানাই আমাদের পক্ষ হতে আন্তরিক
ধন্যবাদ
Hallo