OrdinaryITPostAd

গরু মোটাতাজাকরণ করতে করণীয়

আসসালামু আলাইকুম! সু-প্রিয় পাঠক বৃন্দ, আমাদের ওয়েব সাইটে প্রবেশের জন্য আপনাকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা। এই মুহূর্তে আপনি গরু মোটাতাজাকরন বিষয়ে জানতে আগ্রহী। আজ আপনার কাঙ্ক্ষিত বিষয়টি নিয়েই আমাদের এই আর্টিকেলটি সাজিয়েছি। উক্ত বিষয়ে একটি সম্পূরক ধারণা নেওয়ার জন্য আশা করছি শেষ পর্যন্ত থাকবেন।
গরু মোটাতাজাকরণ
বাংলাদেশ একটি অতি দরিদ্র এবং কৃষি প্রধান দেশ। আমাদের দেশের প্রধান পেশা হলো কৃষি। আর এই কৃষির অন্তর্ভুক্ত পশু পালন একটি সেক্টর। আরো পড়ুনঃ বায়ো গ্যাস প্লান্ট কি? বায়ো গ্যাস প্লান্ট কিভাবে তৈরি করতে হয় । লাভজনক পশু সম্পদের মধ্যে রয়েছে ডেইরি খামার, গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্প, ছাগল খামার, ভেড়া খামার, গাড়লের খামার, হাঁস মুরগি পালন সহ ইত্যাদি।

ভূমিকা

গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্পটি হচ্ছে, লাইফ স্টক সেক্টরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। উক্ত বিষয়টি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা, ব্যাপক প্রচার ও প্রশিক্ষণের অভাবে প্রযুক্তিটি ব্যাপকভাবে পরিচিতি পায়নি। তবে বর্তমান সময় লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, অনেক শিক্ষিত উদ্যোক্তা এই সেক্টরটি নিয়ে প্রতিনিয়তই কাজ করে চলেছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা আপনাকে কিছু ধারনা দেওয়ার নিয়ত করেছি।

গরু মোটাতাজাক করুন কি

গরু মোটাতাজাকরণ হচ্ছে, একটি নির্দিষ্ট বয়সের গরুকে নির্দিষ্ট সময় উন্নত ব্যবস্থাপনায় রেখে, বিশেষ ধরনের খাবার সরবরাহ করে, এবং বিশেষ পরিচর্যা রেখে উক্ত গরুটির শারীরিক বৃদ্ধি ঘটিয়ে অর্থাৎ গরুটির মাংস ও চর্বি বৃদ্ধি করে অধিক লাভে বাজারে বিক্রয় করার পুরো প্রক্রিয়াটিকে মোটাতাজাকরণ বোঝানো হয়।

গরু মোটাতাজাকরণের উদ্দেশ্য

গরু মোটাতাজা করন আমাদের দেশে বর্তমান একটি আধুনিক লাভজনক প্রকল্প। গরু মোটাতাজাকরণের প্রধান উদ্দেশ্য গুলো হল-
  • দেশের আমিষের চাহিদা পূরণ করা।
  • জাতীয় আয় বৃদ্ধি করা ও বেকার সমস্যার আংশিক সমাধান করা।
  • বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের জন্য চামড়া শিল্পের বৃদ্ধি।
  • জৈব সার সহজলভ্য করা।
  • আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া।
  • পরিবেশ দূষণমুক্ত ও গবাদি পশু জাত শিল্প গড়ে তুলতে পারা।
  • বায়ো গ্যাস প্লান্ট স্থাপনের মাধ্যমে জৈবিক গ্যাস উৎপাদন করা।

গরু মোটাতাজাকরণ এর গুরুত্ব

গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্প গ্রহণ করে, একজন বেকার যুবক বা যে কোনো বয়সের ব্যক্তি সঠিকভাবে খাদ্য সরবরাহ এবং পরিচর্যার মাধ্যমে এই সেক্টর হতে ভালো কিছু করা সম্ভব-
  • অল্প সময়ে গরু মোটাতাজাকরণ করে বাজারে বিক্রয় করা যায়।
  • এটি স্বল্প মেয়াদী প্রকল্প বিধায় খুব সহজেই লাভ ক্ষতি নির্ণয় করা যায়।
  • স্বল্প মূলধন খাটিয়ে এই প্রকল্পটি গ্রহণ করা যায়।
  • বেকার ও মহিলাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
  • বাজারে মানুষের চাহিদা পূরণ করে আর থিক লাভবান হওয়া যায়।

গরু মোটাতাজাকরণের মোক্ষম সময়

আমাদের বাংলাদেশী একটি মুসলিম দেশ বিধায় বছরে একটি সময় গরুর চাহিদা ব্যাপক থাকে। আপনি যদি দুইটি ঈদ কে টার্গেট করে আপনার প্রকল্পটি গ্রহণ করতে পারেন তাহলে ভালো লাভের সম্ভাবনা থাকে। একটি হচ্ছে ঈদুল ফিতর এবং অপরটি হচ্ছে ঈদুল আযহা।

বিশেষ করে ঈদ উল আযাহাকে টার্গেট করে যদি আপনি গরু মোটাতাজাকরণের প্রকল্পটি হাতে নিতে পারেন তাহলে আপনার জন্য প্রকল্পটি বেশ লাভবান হবে। তবে মনে রাখতে হবে দুইটি উৎসবের কমপক্ষে পাঁচ থেকে ছয় মাস পূর্বেই আপনাকে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করতে হয়।

অর্থাৎ উৎসব দুটির পাঁচ থেকে ছয় মাস পূর্বেই আপনাকে আপনার খামারে আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী গবাদি পশু তুলে নিতে হবে।

গরু মোটাতাজাকরণে যে বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখতে হবে

  • প্রকল্প চালুর উপযুক্ত সময় নির্বাচন করতে হবে।
  • পশু নির্বাচন ও ক্রয় পশুর বয়স ও জাত গুরুত্বসহকারে দেখে নিতে হবে।
  • গরুর জন্য স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • নির্বাচনকৃত গরুটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করতে হবে।
  • সুষম খাদ্য পরিমাণ মতো সরবরাহ করতে হবে।
  • সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে টিকা দিতে হবে।
  • পশুর দৈহিক ওজনের রেকর্ড সংরক্ষণ করতে হবে।

গরু মোটাতাজা করতে করণীয়

বাজার থেকে গরু ক্রয় করার পর বাসায় নিয়ে এসে তিন থেকে পাঁচ দিন অবজারভেশন করতে হবে। গরুটির কোন অসুখ-বিসুখ আছে কিনা। যদি গরুটির স্বাস্থ্য ঠিক থাকে তাহলে তিন থেকে পাঁচ দিন পর উক্ত গরু টিকে প্রথমত কৃমিনাশক অর্থাৎ কৃমি দমন করতে হবে।বাজারে বিভিন্ন ধরনের কৃমিনাশক ঔষধ এবং ইনজেকশন পাওয়া যায়।

এ পর্যায়ে কয়েকটি কৃমিনাশক ঔষধের নাম আপনাকে বলে দিচ্ছি-
রেনাডেক্স, এন্ডকিল, হেলমেক্স, ইনডেক্স, বেনাজল, নাভাডেক্স ইত্যাদি

কৃমিনাশক করা হয়ে গেলে গরুটিকে লিভারটনিক দিতে হবে। লিভার টনিক গরুটির লিভারের কাজ করবে। কারণ গরু কি কৃমিনাশক করার পর গরুটি শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে যায়, যার ফলে আপনাকে উক্ত গরুটিকে কিছু ভিটামিন জাতীয় খাদ্য খাওয়াতে হবে। গরুটিকে ভিটামিন এ ডি৩ ই ইঞ্জেকশন প্রদান করতে হয়।

গরু মোটাতাজাকরণের জন্য সুষম খাদ্যের চাট

এক কেজি খাদ্যে যে পরিমাণ খাদ্য উপাদান অর্থাৎ উপকরণ থাকবে তা নিচে দেওয়া হল-
  • গমের ভুষি- ১৭০ গ্রাম।
  • চাউলের গুঁড়া- ১৫০ গ্রাম।
  • সরিষার খৈল- ২৫০ গ্রাম।
  • চাউলের খুদ- ১০০ গ্রাম।
  • কালাই অথবা যে কোন ধরনের ডাউল ভাঙ্গা- ২০০ গ্রাম।
  • ডি সি পি- ২০ গ্রাম।
  • লবন- ২৫ গ্রাম।
  • ভিটামিন প্রিমিক্স- ০৫ গ্রাম।
এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের খাদ্যের মিশ্রণ করে আপনি প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল এর সংমিশ্রণ ঘটে বিভিন্ন ধরনের চাট প্রস্তুত করে অর্থাৎ খাদ্য মিশ্রণ তৈরি করে আপনি গরু কে খাওয়াতে পারেন।

গরু মোটাতাজাকরণের অসুবিধা সমূহ নিয়ে কিছু পরামর্শ

  • যে প্রকল্পে লাভের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে সে সকল প্রকল্পে অবশ্যই তার বিপরীত আমি অর্থাৎ বিপরীতমুখী ঘটনা রয়েছে। এ পর্যায়ে আপনাকে গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্প হাতে নেওয়ার অসুবিধা সমূহ জানিয়ে দিচ্ছি।
  • প্রশিক্ষণের অভাব অর্থাৎ অভিজ্ঞতার অভাব থাকলে এই সেক্টরে হুট করে না আসায় আপনার জন্য ভালো হবে।
  • কারো কথায় প্ররোচিত হয়ে, কোন কিছু না জেনে এই সেক্টরে অর্থ বিনিয়োগ করা আপনার জন্য উচিত হবে না।
  • হুট করে কোন কিছু না জেনে, এই সেক্টরের ব্যাপারে ধারণা না থাকলে আপনি তড়িঘড়ি করে লাভের আশায় করা থেকে বিরত থাকবেন।
  • কোন কিছু না জেনেই ভোট করে বিনিয়োগ করলে লসের সম্মুখীন হবেন।
  • একই সাথে অধিক পরিমাণের পশু উত্তোলন করা উচিত হবে না।
  • যেকোনো ধরনের পশু উত্তোলন করা এই সেক্টরের জন্য উচিত হবে না।
  • আপনাকে ভালো জাত নির্বাচন করতে হবে, যে সকল জাত অতি স্বল্প সময়ে অধিক মাংস গেম করতে পারে।

উপসংহার

গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্প একটি লাভজনক প্রকল্প। যদি পরিকল্পনা অনুযায়ী এবং নিজস্ব পরিশ্রম দেওয়ার সক্ষমতা থাকে তাহলে উক্ত প্রকল্পটি আপনার জন্য হতে পারে একটি ভাগ্যের চাকা। এবং এই প্রকল্পটি হাতে নিয়ে আপনি নিজে স্বাবলম্বী হতে পারেন সাথে সাথে কিছু মানুষকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে পারেন আপনার সমর্থ অনুযায়ী।

লেখকের কথা

প্রিয় পাঠক একটি কথা সব সময়ের জন্য মনে রাখবে যে কোন কাজ করার পূর্বে পরিবারের সাথে, এবং নিজ জ্ঞানের উপর আলোচনা ও প্রায়োরিটি উভয় দিক নিয়ন্ত্রণ করে যে কোন কাজের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। কারো কথায় প্ররোচিত না হয়ে নিজের মন-মানসিকতা, বুদ্ধি-বিবেক কাজে লাগিয়ে যেকোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। আশা করি উক্ত সিদ্ধান্ত তে আপনি বিজয়ী হবেন।

পরিশেষে বলতে চাই আমাদের এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার পরিচিতজনদের মাঝে শেয়ার করে দিন, যাতে করে তারাও এ বিষয়ে ধারণা অর্জন করতে পারে।
আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে আপনাকে জানাই আন্তরিক
ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Bestwold নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url