বেদখল কৃত জমি ফিরে পেতে করণীয় কি
আসসালামু আলাইকুম! প্রিয় পাঠক বৃন্দ, আপনাকে জানাই আমাদের ওয়েবসাইট বেস্টওয়াল্ড এ স্বাগতম। আশা করছি আল্লাহর রহমতে সুস্থ থেকে নিজ কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। এরাই ফাঁকে বেদখল কৃত জমি ফিরে পেতে করণীয় কি সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রকাশ করছেন। আজ আমরা আপনাকে এই পোস্ট এর মাধ্যমে উক্ত বিষয়টি জানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি।
আপনার জমিতে যদি বেদখল হয়ে যায় তাহলে উক্ত জমিটি আপনি কিভাবে নিজ আয়ত্তে নিয়ে আসবেন অর্থাৎ উদ্ধার করবেন, এই বিষয়টি বিস্তারিত আলোচনা আজকের এই আর্টিকালের মাধ্যমে আপনাকে দিতে চলেছি। আশা করছি আপনি আমাদের সাথে শেষ পর্যন্ত থাকবেন। তাহলে চলুন আজকের আলোচনা শুরু করা যাক।
ভূমিকা
ছোট করে বলতে গেলে, বেদখল বলতে আমরা যেটা বুঝি সেটা হচ্ছে আপনার বা আপনার পৈত্রিক কোনো সম্পত্তি যেটা নিতান্তই আপনার বা আপনাদের। তবে উক্ত জমিটি ব্যবহার আপনি বা আপনারা করতে পারছেন না বা করতে দিচ্ছেনা এরূপ অবস্থার সৃষ্টি হওয়াটাই হচ্ছে বেদখল। এক্ষেত্রে আপনার করণীয় যা, তা আমরা পর্যায়ক্রমে আপনাকে জানিয়ে দিচ্ছি, আমাদের সাথেই থাকুন।
বেদখল কি? এটা সম্পর্কে ধারণা
বেদখল হচ্ছে কোন কিছু ব্যবহার বা স্বত্ব হতে মূল মালিক কে অপসারণ করা বা মূল মালিক কে তার মালিকানা হতে দূরে রাখার ফলাফলি হচ্ছে বেদখল। অন্যভাবে আমরা বলতে পারি, সম্পত্তি বেদখল বলতে বোঝায়, কোন জমির প্রকৃত মালিক কে তার মালিকানা থেকে উচ্ছেদ করে অবৈধভাবে হোক কিংবা জোরপূর্বক বল প্রয়োগ করে হোক। প্রকৃত ভূমি মালিক ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তি উক্ত সম্পত্তির স্বত্ব ও দখল প্রতিষ্ঠা করা।
উচ্ছেদ কি? উচ্ছেদ সম্পর্কে ধারণা
আপনার প্রকৃত কাগজীয় সম্পত্তি, যদি কোন কারণবশত বেদখল হয়ে যায়। তাহলে উক্ত সম্পত্তির জন্য আদালতের মাধ্যমে দখলকারী ব্যক্তি কে অপসারণ করার প্রক্রিয়াকে উচ্ছেদ বলা হয়। তবে আপনার জমি হতে দখলকারী ব্যক্তিকে উচ্ছেদ করতে অর্থাৎ আপনার জমি পুনরায় ফেরত পেতে আপনি দুই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন।
জমি পুনরায় উদ্ধার করার উপায়
প্রথমত আপনি আপনার স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে সরাসরি দখল কারীর ব্যক্তির সাথে বসে মীমাংসা করে নিতে পারেন। আর যদি এলাকাভিত্তিক আপনার কাজটি পরিপূর্ণ না হয় তাহলে আপনি দ্বিতীয় পদক্ষেপ অর্থাৎ আইনের শরণাপন্ন হতে পারেন। এজন্য আপনাকে ফৌজদারি অথবা দেওয়ানী আদালতে মামলা দায়ের করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ রেকর্ড ও নামজারি কি একই জায়গা হতে করা যায়
তবে আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে এই যে, যেহেতু আপনার জমিটি জোরপূর্বক কিংবা অবৈধভাবে বেদখল হয়েছে সে ক্ষেত্রে আপনি প্রথম পদক্ষেপটি গ্রহণ না করে সরাসরি দ্বিতীয় পদক্ষেপটি গ্রহণ করবেন। এতে করে আপনার কাজ টি দ্রুত সংশোধনের আশা করা যায়। কারণ আপনি যদি প্রথম পদক্ষেপটি গ্রহণ করেন তাহলে মামলা করার যে একটা সময়সীমা থাকে সেটি লংঘন হতে পারে।
জমি বেদখল হওয়ার কত দিনের মধ্যে মামলা দায়ের করতে হয়
আপনার কাগজীয় সম্পত্তি যখন অন্যায় ভাবে অথবা জোরপূর্বক বল প্রয়োগের মাধ্যমে দখল সত্য হারাবেন ঠিক সেইদিন হতে দুই মাসের মধ্যে ফৌজদারি আদালতে মামলা দায়ের করতে হবে। দুই মাস অতিক্রম করলে ফৌজদারি মামলা করার অধিকার হারাবেন।
আরো পড়ুনঃ পত্রিক সম্পত্তি নামজারি করার নিয়ম
তবে হতাশ হওয়ার কোন কারণ নেই, আপনি স্থানীয়ভাবে সামাজিক মাধ্যমে মীমাংসা করতে গিয়ে, যদি দুই মাস অতিক্রম করে ফেলেন তাহলে ফৌজদারী আদালতে মামলা করার অধিকার হারালেও দেওয়ানী আদালতে মামলা করার সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে আপনাকে “সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৮ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চেয়ে দেওয়ানী আদালতে মামলা করতে হবে”।
তবে এই মামলাটি করতে হলে অবশ্যই আপনার উক্ত সম্পত্তিতে মালিকানা রয়েছে মর্মে আপনার স্বপক্ষে প্রমাণ দাখিল করতে হবে। এবং এই মামলাটি আপনার জমি বে দক্ষল হওয়ার ১২ বছরের মধ্যে মামলা দায়ের করতে হবে। আর মামলা দায়ের করতে যত দেরি করবেন উক্ত সময়ে উক্ত সম্পত্তিটির মূল্যের উপর ভিত্তি করে আপনাকে কোট ফি জমা দিতে হবে।
উচ্ছেদ মামলায় রায় পেতে কতদিন সময় লাগে
আসলে আমাদের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দেখা যায় যে, আদালত এ যত ধরনের মামলা রয়েছে তার সিংহভাগ জমি সংক্রান্ত মামলা। কারো জমি বেদখল হয়ে গেছে, প্রতারিত হওয়া, জোরপূর্বক বল প্রয়োগ করে দখলের চেষ্টা, দলিল ও খতিয়ানের অসঙ্গতি, পরিস সম্পত্তি বন্টনের ঝামেলা, চিটারি বাটপারি করে জমি হস্তান্তর ইত্যাদি।
এজন্য মামলাগুলোর রায় হতে অনেক দেরি হয়ে যায়, তবে আপনি যদি আপনার মামলাটির যথাযথ তদবির করেন এবং আপনার উকিলের অ্যাক্টিভিটির উপর নির্ভর করে যদি মামলার ডেট গুলো দ্রুত নিতে পারেন তাহলে দেখা যায় যে অল্প সময়ের মধ্যেই অর্থাৎ দুই থেকে তিন বছর এর মধ্যে আপনার মামলাটি নিষ্পত্তি হয় এবং আপনার বেদখলকৃত জমিটি পুনরায় ফেরত পাবেন।
অন্যের জমি দখলের শাস্তি
অন্যের জমি জোরপূর্বক বল প্রয়োগ করে কিংবা প্রতারণা করে অন্যায় ভাবে, ভুয়া কিংবা মিথ্যা দলিল তৈরি করে, অন্যের জমি সম্পূর্ণ কিংবা অংশবিশেষ উল্লেখ করে হস্তান্তর এর দলিল করা হলে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দণ্ডিত বিধান রেখে নতুন আইন ২০২৩ উত্থাপন করেন ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। তার ওই প্রেক্ষিতে আইনটি ২০২৩ প্রণয়ন করা হয়েছে।
জমি দখল সংক্রান্ত আইন ২০২৩
ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২৩ সালের ৩৬ নম্বর আইন। ২০২৩ এ বেদখলকৃত জমি ফিরে পেতে বা বেদখল কৃত জমির সংক্রান্ত কিছু তথ্য-
- ভূমি প্রতারণা সংক্রান্ত অপরাধ ও দন্ড।
- ভূমি জালিয়াতি সংক্রান্ত অপরাধ ও দন্ড।
- ভূমি বিষয়ক প্রতারণা ও জালিয়াতি সংক্রান্ত অপরাধে রেখে ব্যবস্থা।
- অবৈধ দখল প্রতিরোধ ও দন্ড।
- অবৈধভাবে দখল জুতো ব্যক্তির দখল পুনরুদ্ধার।
- ক্রেতা বরাবর বিকৃত ভূমির দখল হস্তান্তর না করিবার দন্ড।
- সীমানা বা ভূমির ক্ষতিসাধনের দন্ড।
- সরকারি আধা সরকারি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বা জনসাধারণের ব্যবহার্য ভূমির অবৈধ দখল, প্রবেশ বা কোন কাঠামো নির্মাণ বা ক্ষতিসাধনের দন্ড।
- সরকারি, আধা সরকারি,
- স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের স্বার্থযুক্ত বা জনসাধারণের ব্যবহার্য ভূমি অবৈধ ভরাট, শ্রেণী পরিবর্তন, ইত্যাদির দন্ড।
- মাটির উপরে স্তর কর্তন ও ভরাটের দন্ড।
- অপরাধ প্রতিরোধের ব্যবস্থা।
- আদেশ অমান্যদন্ড, অপরাধ সংঘটনের সহায়তা বা প্রচারণারদন্ড, কোম্পানি কর্তৃক অপরাধ, ক্ষতিপূরণ ও প্রতিকার, সাক্ষীর সুরক্ষা, মোবাইল কোড কর্তৃক বিচার্য, ভূমি তথ্য সম্বলিত সমন্বয়ে ডাটাবেজ প্রস্তুত করুন, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের সহায়তা, ও স্পষ্টতা দূরীকরণ, বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা, ইংরেজিতে অনুদ্রীত পাঠ প্রকাশ।
জমি দখলে আছে দলিল নাই
জমির কাগজপত্র সবই আছে কিন্তু দখল নেই এ বিষয়ে আপনি একটি ব্যবস্থা অবশ্যই নিতে পারছেন সেটি হচ্ছে “ভূমি প্রতিকার ও প্রতিরোধ আইনে মামলা” করতে পারছেন বর্তমানে এবং “সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৮ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চেয়ে দেওয়ানি আদালতে মামলা করতে পারছেন” এখন প্রশ্ন হল, আমার জমি দখলে আছে কিন্তু কাগজপত্র নেই।
এ পর্যায়ে আপনার প্রশ্নের জবাব দিতেছি, প্রথমে বলে রাখা ভালো যে যদি আপনি অন্যায় ভাবে জালিয়াতির মাধ্যমে কোন জমি দখল করে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনাকে উক্ত জমিটি ছাড়তে হচ্ছে, কারণ আপনার কাছে কোন বৈধ কাগজপত্র নেই অর্থাৎ আপনি ভূমিটির মালিকই নন।
এ পর্যায়ে আসা যাক মূল কোথায়, আপনার জমির দখল আছে কিন্তু কাগজপত্র নেই কি কারনে কাগজপত্র নেই তার কয়েকটি ধাপ হতে পারে।
- উক্ত জমিটি আপনার পৈতৃক সম্পত্তি হতে পারে, সে ক্ষেত্রে আপনার নামে কোন কাগজপত্র না থাকাটাই স্বাভাবিক কিন্তু অবশ্যই আপনার পূর্বপুরুষের নামে কাগজপত্র আছে।
- প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আপনার জমির কাগজপত্র নষ্ট হতে পারে, যার ফলে আপনার কাছে উক্ত জমির কাগজপত্র নেই।
- উক্ত জমিটির কাগজপত্র হারিয়ে যেতে পারে, পুড়ে যেতে পারে, চুরি হয়ে যেতে পারে, এক্ষেত্রে আপনার কাছে উক্ত জমিটির কাগজপত্র না থাকাটাই স্বাভাবিক।
এরকম ক্ষেত্রে কোন সমস্যা নেই, উক্ত কাগজপত্র আপনি যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট হতে পুনরায় আবেদনের মাধ্যমে স্যাটিস্ফাই কপি গ্রহণ করতে পারবেন।
উপসংহার
জায়গা জমির মামলা একটি ধৈর্য, অর্থ ব্যয়, এবং কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাই আপনার উচিত হবে যাতে করে আপনার জমিটি সুরক্ষিত থাকে এর জন্য যা করা প্রয়োজন মামলার আগ পর্যন্ত আপনাকে তাই করতে হবে। আপনার জমিটিতে একবার মামলার রেস ঢুকে গেলে আপনি অশান্তির মজা জলে আবদ্ধ হয়ে গেলেন।
লেখকের কথা
আপন ভূমির কাগজপত্র এবং দখল সকল সময়ের জন্য নিজের কাছে রাখি এতে করে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে। তবে অনাকাঙ্ক্ষিত ঝামেলা গুলো তৈরি হয়ে গেলে আপনাকে তা প্রতিহত করার ক্ষমতা রাখতে হবে।
পরিশেষে বলতে চাই যে, আমাদের এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনিসহ আপনার পরিচিত জনদেরকে আমাদের ওয়েবসাইট বেস্টওয়াল্ড ফলো করে রাখুন যাতে করে পরবর্তী আর্টিকেলগুলোর নোটিফিকেশন আপনার কাছে চলে যাই।
Bestwold নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url