ইসলামে বিয়ের জন্য মেয়ে দেখার নিয়ম
আসসালামু আলাইকুম! সুপ্রিয় পাঠক বৃন্দ আমাদের ওয়েবসাইট বেস্টওয়াল্ডে স্বাগতম। নিশ্চয়ই আপনি এই মুহূর্তে ইসলামে বিয়ের জন্য মেয়ে দেখার নিয়ম সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আপনার আগ্রহটিকে আমরা গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছি। আমাদের এই পোস্ট হতে উক্ত বিষয়টির একটি স্বচ্ছ ধারণা পেয়ে যাবেন। এজন্য আপনাকে পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ে নিতে হবে।
বিবাহ হচ্ছে হযরত মুহাম্মদ (সা.)এর সুন্নত। প্রতিটি নবী ও রাসূলগণ বিবাহ করেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় একজন সামর্থ্যবান পুরুষের বিয়ে করা ফরজ। পৃথিবীর প্রথম মানব আমাদের আদি পিতা হযরত আদম (আ.) এর স্ত্রী ছিলেন হযরত হাওয়ালে (আ.)। যুগে যুগে নবী ও রাসুলগণ প্রত্যাকে তার আপন আপন স্ত্রী বা সহধর্মনির সাথে জীবন যাপন করেছেন। ইসলামে বৈরাগ্যের কোন জায়গা নেই।
ভূমিকা
প্রতিটি মানবকেই সংসার করতে হয়। আর এই সংসার করার মূল উপাদান গুলোর মধ্যে একটি উপাদান হচ্ছে বিবাহ। একজন সামর্থ্যবান পুরুষ বিয়ে করবে এটাই বিধান। কারণ বিবাহ বন্ধনের আবদ্ধ হওয়ার মাধ্যমে একদিকে যেমন আত্মীয়তার সম্পর্ক বৃদ্ধি পায়, অপরদিকে দ্বীন ধর্ম পালনের জন্য এবং বংশবৃদ্ধি করার জন্য বিবাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম ও ব্যবস্থা।
বিয়ে করার প্রয়োজনীয়তা
মানুষ একটি সামাজিক জীব, এর জন্য মানুষ স্বভাবতই সমাজবদ্ধ ভাবে বসবাস করতে সাচ্ছন্দ বোধ করে। একাকী বসবাস করা যার স্বভাব সিদ্ধ নয়। তাই প্রতিটি মানুষেরই প্রয়োজন হয় সঙ্গী সাথী, আত্মীয়-স্বজন, বান্ধবী এবং সহচর। আর এজন্যই প্রয়োজন পরে বিবাহের। মানুষের প্রাকৃতিক ভাবে জৈবিক চাহিদা পূরণের আকাঙ্ক্ষা থাকে, তা বৈধ উপায় একমাত্র বিবাহের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব।
আরো পড়ুনঃ খোলাফায়ে রাশেদীন কারা এবং তাদের শাসন আমল
বিবাহ মানুষকে সুন্দর চরিত্র দান করে, অবৈধ দৃষ্টি থেকে চক্ষুকে সংযত রাখে, লজ্জাস্থান হেফাজত করার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবেও আবির্ভূত হয়। একমাত্র বিবাহই হচ্ছে মাধ্যম যার ফলে নতুন আত্মীয়-স্বজনের সৃষ্টি হয়, এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এর উম্মত বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। বিবাহের মাধ্যমে পৃথিবীর আবাদ রাখার সঠিক ও সুশৃংখল বৈধ ব্যবস্থা, মনের শান্তি, হৃদয়ের প্রশান্তি, চরিত্র পবিত্রতা রক্ষা করা, বংশের আভিজাত্য, সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ে করা কি
বিয়ে করার বিভিন্ন স্তর রয়েছে ক্ষেত্রে রয়েছে, ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ে করার কয়েকটি ক্ষেত্র রয়েছে আপনাকে এ পর্যায়ে বিয়ে করার ক্ষেত্রে সমূহ জানিয়ে দিচ্ছি-
- বিয়ে করা সুন্নত- সকল নবী রাসুলগণ বিবাহ করেছেন, আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) তিনিও বিবাহ করেছেন এবং তার উম্মতদেরকে বিবাহ করার জন্য উৎসাহিত করেছেন এজন্য বিবাহ করা সুন্নত।
- বিয়ে করা ফরজ- বিয়ে করা সুন্নত তবে ক্ষেত্রে বিয়ে করা ফরজ। বিয়ে করা সেই সকল সময়ে ফরজ যখন আপনি বুঝতে পারছেন আপনার আল্লাহর অবাধ্যতার ভয় অসংকৃত হবেন, চক্ষু ও লজ্জাস্থানের হেফাজত করতে ব্যর্থ হবেন, যৌন করছি লিপ্ত হয়ে যাচ্ছেন এরকম আশঙ্কা করেন বা হয়ে যাচ্ছেন এরকম সময় আপনার বিবাহ করা ফরজ।
- বিয়ে করা ওয়াজিব- কোন যুবক যদি অসংখ্য করে তার চরিত্র রক্ষা করতে, স্বাস্থ্য হানি হচ্ছে, যৌন চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে, নিজের লজ্জা স্থানের হেফাজত করতে ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা অনুভব করছেন এমত অবস্থায় আপনার বিয়ে করা ওয়াজিব।
- বিয়ে করা হারাম- শুনেছি বিয়ে করা সুন্নত, বিয়ে করা ওয়াজিব তবে বিয়ে করা হারাম এটা আবার কি হবে? আপনার জেনে রাখা ভালো যে, কিছু সম্পর্ক আছে যাদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া হারাম। এরই জন্য আমরা বিবাহ করা হারাম পয়েন্ট টি উল্লেখ্য করেছি।
বিয়ের জন্য মেয়ে দেখার নিয়ম
কোন মুসলিম সামর্থ্যবান পুরুষ যদি বিয়ে করার ইচ্ছা প্রকাশ করে তাহলে সে যেন তার পরিবারের সাথে বিষয়টি শেয়ার করে এবং পাত্রী পছন্দ হলে ওই পাত্রীর পরিবারের নিকট প্রস্তাব পাঠাতে হয়। পাত্রীপক্ষ সম্মতি প্রদান করলে পত্রপক্ষ বিশেষ করে পাত্রের মা এবং বোন পাত্রী দেখে তার চারিত্রিক গুণাবলী এবং আভ্যন্তরিক গুণাবলী বিবেচনা করে দেখতে হবে।
বিয়ের জন্য পাত্রী দেখার ইসলামিক নিয়ম
- ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ের আগে কনের কোনোরকম ননমাল অর্থাৎ গায়রে মাহরেম ব্যক্তি দ্বারা দেখাশুনা করা জায়েজ নাই। শুধুমাত্র বিয়ের জন্য পাত্র এবং পাত্রের মা এবং বোন শর্তসাপেক্ষে পাত্রী দেখার অধিকার রাখে।
- পাত্র-পাত্রী চাইলে আলাদা হয়ে একত্রে কথা বলতে পারে তবে শর্ত থাকে যে বা প্রকাশ্য থাকে যে কোন অবস্থাতেই স্পর্শ করা যাবে না।
- পাত্রপক্ষের কোন পুরুষ পাত্রীকে সরাসরি দেখতে পাবে না। যেমন পিতা, ভাই, বন্ধু ইত্যাদি তারা যেহেতু গায়রে মাহরেম ব্যক্তি এজন্য তাদের পাত্রী দেখা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং হারাম।
- পাত্র যদি পাত্রী দেখতে চাই তাহলে শুধুমাত্র পাত্রীর মুখমন্ডল, উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত, এবং উভয় পায়ের টাকনো পর্যন্ত দেখতে পাবে। এছাড়া অন্য কোন অঙ্গ দেখা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
- পাত্র এবং পাত্রী নির্জনে একাকীত্ব স্থানে একত্রিত হওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
ইসলামে পাত্রীর যে সকল গুন দেখতে বলা হয়েছে
বিবাহর জন্য একজন পুরুষ মত প্রকাশ করলে তার পরিবারের পক্ষ হতে পাত্রী পরিবার কে অবহিত করে, পাত্রীপক্ষ উক্ত প্রস্তাবে রাজি হয়ে যদি পাত্রী দেখার জন্য আমন্ত্রণ জানাই সেক্ষেত্রে পাত্রপক্ষ পাত্র পাত্রী দেখতে যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে। তবে পাত্রপক্ষের উচিত হবে মহানবী (সাঃ) এর বাণী অনুসারে চারটি গুণ দেখে পাত্রী নির্বাচন করা।
চলুন এ পর্যায়ে আমরা হাদিসে বর্ণিত পাত্রীর চারটি গুণের সম্পর্কে জেনে নিই-
- পাত্রীর সম্পদ দেখে বিবাহ করতে হবে।
- পাত্রীর বংশ মর্যাদা দেখে বিবাহ করতে হবে।
- পাত্রীর রূপ সৌন্দর্য দেখে বিবাহ করতে হবে।
- পাত্রীর ধর্মভীরতা এবং চরিত্র দেখে বিবাহ করতে হবে।
উপরোক্ত চারটির মধ্যে সর্বনিমেষটি সবচাইতে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে অর্থাৎ পাত্রী ধার্মিক কিনা ধর্মবিরোগী না এই বিষয়টিতে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
বিবাহ বিষয়ক কয়েকটি হাদিস
হযরত আবু হুরায়রা রাঃ হতে বর্ণিত, মহানবী সাঃ বলেছেন-নারীদের চারটি বিষয় দেখে বিবাহ করা হয়। ধন-সম্পদ, বংশ মর্যাদা, রূপ সৌন্দর্য, ধর্মভীরতা। তবে তুমি ধার্মিক নারীকে বিয়ে করে সফল হও অন্যথায় তুমি লানচিত হবে। (বুখারী ও মুসলিম হাদিস নম্বর যথাক্রমে- ৫০৯০ ও ১৪৬৬)
জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রাজিআল্লাহু তা'আলা হতে বর্ণিত, আমি এক নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার পর তাকে দেখার আকাঙ্ক্ষা অন্তরে গোপন রেখেছিলাম। এরপর আমি গোপনে তার মধ্যে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য দেখি যা আমাকে তাকে বিয়ে করতে আগ্রহী করে তোলে। এরপর আমি তাকে বিয়ে করি। ( আবু দাউদ হাদিস নম্বর-২০৮২)
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবেনা
মাগীরা ইবনে সাবা (রা.) হতে বর্ণিত, আমি এক নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দিলাম। এটা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম আমাকে জিজ্ঞেস করলেন তুমি তাকে দেখেছো? আমি বললাম না দেখিনি, তখন তিনি বললেন তাকে দেখে নাও। তোমার এই দর্শন তোমাদের দাম্পত্য জীবনে প্রণয় ভালবাসা গভীর হওয়া ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। (তিরমিজি হাদিস নম্বর-১০৮৭)
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম কে প্রশ্ন করা হল হে আল্লাহর রাসূল কোন স্ত্রী উত্ত? ম তিনি বললেন যে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে স্বামী প্রকৃত হয় কোন নির্দেশ দিলে আনুগত্য করে এবং স্বামীর নিজস্ব ব্যাপারে বা তার অর্থ সম্পদের ব্যাপারে সে যেটা পছন্দ করে তার বিপরীত কিছু করে না। (সুনানে আহমদ হাদিস নম্বর-১৮৩৮)
উপসংহার
বিবাহ করো যেমন প্রতিটি সমার্থবান পুরুষের জন্য ফরজ ঠিক তেমনি যদি বিয়ের বয়স হয়ে যায় এবং সামর্থ্য না থাকে তবে তার যৌন হেফাজত করার জন্য রোজা রাখার অভিধান রয়েছে। তাই উপযুক্ত বয়সে বিবাহ করে নিজের চরিত্র এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করুন।
লেখকের কথা
প্রতিটি অভিভাবকের উচিত তাদের ছেলে এবং মেয়েদের বয়স হওয়া মাত্রই বিয়ের ব্যবস্থা করা। কারণ আপনি অভিভাবক থাকা অবস্থায় বিয়ে না হওয়ার কারণে যদি আপনার ছেলে মেয়ে কোন অঘটন ঘটায় তাহলে এর দায়ভার কিন্তু আপনার।
তাই আমি বলব আপনি আপনার ছেলে মেয়ের উপযুক্ত বয়স হলে বিয়ের ব্যবস্থা করুন। পাশাপাশি আরও কিছু বলতে চাই সেটি হচ্ছে কোন অবস্থাতেই আপনার সিদ্ধান্ত ছেলেমেয়েদের উপর বল পূর্বক অর্থাৎ জোর করে চাপিয়ে দিবেন না অবশ্যই তাদের সিদ্ধান্ত কেউ গুরুত্ব দিন।
পরিশেষে বলতে চাই আমাদের এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে আমাদের ওয়েবসাইট বেস্টওয়াল্ড কে ফলো দিয়ে রাখুন যাতে করে পরবর্তী পোস্টগুলোর নোটিফিকেশন আপনি পেয়ে যান।
শেষ পর্যন্ত বেস্টওয়াল্ড এর ওয়েবসাইটে অবস্থান করার জন্য আপনাকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ।
Bestwold নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url