বন্টননামা ছাড়া জমি ক্রয়করে নামজারি করলে পরে কি সমস্যা হবে
আসসালামু আলাইকুম! সু-প্রিয় পাঠক বিন্দু! আপনাকে জানাই আমাদের ওয়েবসাইট বেস্টওয়াল্ড এর পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আমরা লক্ষ্য করছি আপনি এই মুহূর্তে, বন্টননামা ছাড়া জমি ক্রয়করে নামজারি করলে পরে কি সমস্যা হবে, এ বিষয় সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আমরা উক্ত বিষয়ে আজকের এই আর্টিকেলে সবিস্তারে আলোচনা করেছি। আশা করছি শেষ পর্যন্ত পড়ে নেবেন।
উপরোক্ত বিষয় সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নিতে হলে প্রথমে আপনাকে জেনে নিতে হবে, আসলে বন্টন-নামা টা কি? এরপর আপনাকে জানতে হবে কি কারনে হয়। বর্তমান সময়ে বন্টন নামা ছাড়া নামজারি করা যায় কিনা, বাস্তবিক অর্থে বন্টন নামার গুরুত্ব কি রকম। উল্লেখিত বিষয়গুলো স্পষ্ট ধারণা থাকলে আপনি বুঝতে পারবেন, আজকের আলোচ্য বিষয়।
ভূমিকা
আমাদের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আদালত গুলোতে যে সকল মামলা গুলো দায়ের করা হয় তার অধিকাংশ অর্থাৎ ৬০ থেকে ৬৫ পার্সেন্ট মামলা গুলোই ভূমি সংক্রান্ত। এরপর ভূমি সংক্রান্ত যে সকল মামলাগুলো রয়েছে তার ৫৫ পার্সেন্ট মামলায় উত্তরাধিকারী বা ওয়ারিশানের মামলা। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন আইন বিশেষজ্ঞগণ।
বন্টননামা কি
বন্টন নামানো হচ্ছে একটি জমির ভাগ বাটোয়ারা অর্থাৎ আমরা এভাবে বলতে পারি, কোন ভূমি মালিকের মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া যোগ্য ওয়ানিশগনের মধ্যে তার রেখেযাওয়া সম্পত্তি! অংশ মোতাবেক ভাগ বাটোয়ারা করাকে বন্টননামা বলে। তবে অবশ্যই উক্ত বন্টনমামা লিখিত ও রেজিস্ট্রি কৃত হতে হবে।
আমাদের সমাজে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় বন্টননামার বিষয়গুলো মৌখিক ভিত্তিতে রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই সম্পূর্ণ করা হয়। যা পরবর্তীতে উক্ত জমি বা ভূমি সমূহের মূল্য কম বেশি হওয়ার প্রেক্ষিতে ওয়ারিশদের মধ্যে ঝামেলার সৃষ্টি হয় এবং ঝামেলা মামলা পর্যন্ত গড়ায়, যার ফলাফল অত্যন্ত তিক্ত এবং আশা রূপ নয়।
বণ্টননামার কারণ কি এবং গুরুত্ব
কোন জমি বন্টন করার প্রয়োজন হয় কেন? এ বিষয়ে আমরা আপনাকে একটি স্পষ্ট ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করছি মাত্র। মনে করুন আপনার পিতা পাঁচ একর জায়গা রেখে মৃত্যুবরণ করেন। আপনারা “চার ভাই” “ছয় বোন” এবং “আপনার মা” জীবিত আছেন। আপনার বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তিগুলো বিভিন্ন মৌজায় বিভিন্ন দাগে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় রয়েছে।
সাধারণত বর্তমান সময়ে পাঁচ একর জায়গা একত্রে বা একই মৌজাই হওয়া খুব একটা লক্ষ্য করা যায় না। এক্ষেত্রে তাহলে আপনাদেরকে বিক্ষিপ্ত মৌজাই এবং বিক্ষিপ্ত জমিগুলো কিভাবে ভোগ দখল করবেন, এই প্রশ্নটি অবশ্যই আসবে। এক্ষেত্রে সমাধান হচ্ছে বন্টন অর্থাৎ আপনার পিতার রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে আপনার অংশ কোন ভাইকে ছেড়ে দেবেন এবং কোন ভাই তার অংশ ছেড়ে আপনাকে দেবে,আর এটাই হচ্ছে বন্টন।
বিষয়টি আরেকটু ক্লিয়ার করি, আপনার পিতার রেখে যাওয়া সম্পত্তিগুলো পাঁচটি মৌজায় বিভক্ত। আপনারা ওয়ারিসগণ উক্ত পাঁচটি জায়গাতেই আপনাদের অংশ মোতাবেক জমি পাবেন। তবে বিষয়টি যদি এমন হয় পাঁচটি মৌজার জমি আপনি একটি মৌজাই বা দুইটি মৌজাই পেয়ে গেলেন! তাহলে বিষয়টি কেমন হবে, অবশ্যই বিষয়টি ভালো হবে।
আরো পড়ুনঃ নামজারি ছাড়াই জমি হস্তান্তর করার নিয়ম
আর এই ভালো করার জন্য যে মাধ্যমটির প্রয়োজন সেটি হচ্ছে বন্টন বা ভাগ-বাটোয়ারা। তবে এটা “অবশ্যই লিখিত ও রেজিস্ট্রি করে নেবেন” যাতে করে পরবর্তীতে উক্ত জমি সমূহের দাম বৃদ্ধি হলে কোন ওয়ারিশগণ বা আপনি ঝামেলার সৃষ্টি বা ঝামেলার মধ্যে না পড়েন।
বণ্টননামা ছাড়া নামজারি করা যায় কিনা
আমরা এই পর্যায়ে এসে বলতে পারি বা আমাদের বর্তমান বাংলাদেশের আইনে বন্টননামা ছাড়া কোন জমির নামজারি করা যায় কিনা এ বিষয়ে যদি আপনাকে একটি স্পষ্ট ধারণা দিয়ে তাহলে কথাগুলো এরকম হবে।
বন্টননামা ছাড়া নামজারি করা যায়
বণ্টননামা ছাড়া নামজারি করতে হলে আপনাকে আপনার অংশটুকু অর্থাৎ ওয়ারিসান ভিত্তিতে আপনার অংশটুকু আপনি নামজারি করতে পারবেন। তবে সাধারণত বন্টননামা ছাড়া নামজারি করাটি উচিত নয়। এতে ভবিষ্যতে সমস্যার তৈরি হয়।
বন্টননামা ছাড়া নামজারি করা যায় না
আপনার পিতা রেখে যাওয়া বিক্ষিপ্ত জমিগুলো যখন আপনি আপনার অংশটুকু একই জায়গায় নামজারি করতে ইচ্ছুক হবেন সেক্ষেত্রে বন্টনামা দলিল ছাড়া আপনি উক্ত জায়গাটি নামজারি করতে পারবেন না। উক্ত জায়গাটি নাম জারি করতে হলে আপনাকে অবশ্যই রেজিস্ট্রিকৃত বন্টননামা দলিল সাবমিট করতে হবে।
বন্টননামা রেজিস্টিকৃত দলিল ছাড়া আপনি উক্ত জমিটি নামজারি করতে ব্যর্থ হবেন অর্থাৎ আপনাকে নামজারি দেওয়া হবে না। বিক্ষিপ্ত জমিগুলো অর্থাৎ আপনার পিতার বা মাতার বা আপনি যার মাধ্যমে জমিগুলো প্রাপ্ত হবেন তার রেখে যাওয়া বিক্ষিপ্ত জায়গা গুলো একত্রে পাওয়ার ক্ষেত্রে।
বন্টননামা ছাড়া জমি ক্রয়করে নামজারি করলে পরে কি সমস্যা হবে
বন্টননামা ছাড়াই জমি ক্রয় করে নামজারি করলে পরবর্তীতে আপনি বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। এবং আমাদের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই সমস্যাটি হয়েই থাকে। তাই জমি কেনার পূর্বে আপনি সতর্কতা অবলম্বন করুন কারণ আপনার কষ্টার্জিত অর্থের মাধ্যমে জমি ক্রয় করে যদি সমস্যার সম্মুখীন হয়ে যান তাহলে বিষয়টি অন্যরকম আকার ধারণ করবে।
চলুন কি কি সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন বিষয়টি জেনে নেওয়া যাক-
- ক্রয় কৃত জমিটি আপনাকে বিভিন্ন স্থানে নিতে হতে পারে তবে এটি আপস মীমাংসার মাধ্যমে।
- আপনার ক্রয় কৃত জমিটি আপনাকে ছেড়ে দিতে হতে পারে।
- আপনি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।
- আপনার নামজারিটি বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- আপনার দলিলটি রোহিতকরণ বা বাতিল হতে পারে।
- আপনার ক্রয় কৃত জমিটি দখল হারাতে পারে না।
- আপনার জমির পজিশন হারাতে পারেন।
এরকম বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে যদি আপনি সতর্ক না হোন এবং বন্টন যোগ্য ভূমির বন্টন ছাড়া জমি ক্রয় করে নামজারি করে ফেলেন তাহলে উপরোক্ত সমস্যা গুলো আপনাকে ফেস করতে হতে পারে। ম্যাক্সিমাম ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে উক্ত সমস্যাগুলো হরহামেশাই লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
বন্টন যোগ্য জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে কি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে
- বন্টন যোগ্য জমির ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই বন্টননামা দলিল দেখে নিতে হবে।
- উক্ত জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে তাদের সকল অংশীদার কে স্পষ্টভাবে জানাতে হবে।
- এরকম জমির ক্ষেত্রে সম্ভব হলে তাদের অংশীদারদের কে আপনার দলিলে শনাক্তকারী এবং সাক্ষী হিসেবে রাখতে পারেন।
- জমিটি যদি একই জায়গায় হয় তাহলে অবশ্যই চৌহরদী উল্লেখপূর্বক স্পষ্ট করে লিখতে হবে।
- বন্টন যোগ্য জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই বিশেষ ভূমিকা পালন করতে হবে।
উপসংহার
বর্তমান বাংলাদেশের নতুন আইনে বন্টন নামা দলিল ছাড়া নামজারি করা একপ্রকার নিষিদ্ধ বটে, তবে ক্ষেত্র বিশেষে ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে আপনাকে আপনার জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং আপনি যদি কাগজ সম্পর্কে না বুঝে থাকেন তাহলে অবশ্যই একজন আইনজীবী অথবা মুহুরী অথবা একজন সার্ভেয়ারের সহযোগিতা নিতে পারেন।
লেখকের কথা
আপনার কষ্টার্জিত অর্থের বিনিময়ে আপনি একটি জমি ক্রয় করবেন অবশ্যই ভেবে চিন্তে জমি ক্রয় করবেন যাতে করে উত্তর জমি আপনার ক্ষতির কারণ না হয় এবং উক্ত জমি ক্রয়ের ফলে আপনি যেন মামলা মুকদ্দমার মধ্যে নিমজ্জিত না হন সেই বিষয়টি লক্ষ্য করে আপনি এক খণ্ড জমি ক্রয় করবেন। বলা বাহুল্য একটি কথা প্রচলিত আছে যে জমি কিনছেন নাকি ঝামেলা কিনছেন বিষয়টি মাথায় রেখে অবশ্যই আপনি ক্রয় করবেন।
পরিশেষে বলতে চাই আমাদের এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনি সহ আপনার পরিচিত জনদেরকে আমাদের এই ওয়েবসাইট বেস্টওয়াল্ড ফলো করুন যাতে করে আমাদের পরবর্তী আর্টিকেলগুলো আপনার নোটিফিকেশনে চলে যায় এবং আপনারা তা স্বাচ্ছন্দ্যে পড়ে নিতে পারেন।
শেষ পর্যন্ত বেস্টওয়াল্ডের সাথে থাকার জন্য আপনাকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ।
Bestwold নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url