দাখিলা কি এবং দাখিলা একটি ভূমির প্রমাণপত্র?
আসসালামু আলাইকুম! সু-প্রিয় পাঠক আপনাকে বেস্টওয়াল্ড এর ওয়েবসাইটে প্রবেশের জন্য স্বাগতম। আমরা লক্ষ্য করছি এই মুহূর্তে আপনি দাখিলা কি এবং দাখিলা একটি ভূমির প্রমাণপত্র কিনা এই সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আপনারা আজ এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আপনাকে জানিয়ে দিচ্ছি দাখিলা বিষয়টি কি। এজন্য আপনাকে আমাদের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ করতে হবে।
দাখিলা ভূমি উন্নয়ন কর পরিষদ করার পর পাওয়া যায়। বর্তমান সময়ে এটির ফরমেট অত্যন্ত চমৎকার। অনলাইনের মাধ্যমে এই দাখিলার প্রমাণপত্রটি তৈরি করে সরবরাহ করা হচ্ছে। আজ থেকে এক বছর আগেও এটি হাতে লেখা ম্যানুয়াল ভাবে প্রদান করা হতো। তবে বর্তমান সময়ে স্মার্ট বাংলাদেশ হওয়ায় এটি এখন অনলাইনের মাধ্যমে ভূমি মালিকদের সরবরাহ করা হচ্ছে।
ভূমিকা
ভুমি মালিকদের জন্য যেমন জমির দলিল, খতিয়ান, মাঠ পর্চা, ডি সি আর, মৌজা ম্যাপ, দাগ নম্বর, জমির পরিমাণ ইত্যাদি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক একই ভাবে ভূমি উন্নয়ন কর পরিষদ করনের পর যে প্রমাণপত্র বা রশিদ সরবরাহ করা হয় সেটাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি ভুমি মালিকের মালিকানা প্রমাণ করার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে দাখিলা প্রদান করতে হয়।
দাখিলা কি
দাখিলা হচ্ছে একটি জমির মালিকের মালিকানার প্রমাণপত্র। এই দাখিলাটি সরবরাহ করা হয় ভূমির ভূমি উন্নয়ন কর পরিষদের পর। অর্থাৎ আমরা এভাবে বলতে পারি কোন ভূমি মালিক উক্ত ভূমির মালিক কিনা তা যাচাই-বাছাই করার জন্য ভূমি উন্নয়ন কর পরিষদ করনের পর যে রশিদটি পাওয়া যায় তাই হচ্ছে দাখিলা আর এই দাখিলার মাধ্যমে সর্বশেষ ভূমির মালিকানা দাবিদারকে পাওয়া যায়।
দাখিলা কি একটি ভুমির প্রমাণপত্র হতে পারে
অবশ্যই দলিল, খতিয়ান, রেকর্ড, মাঠ পর্চা, ডি সি আর, মৌজা ম্যাপ এগুলো যেমন একটি ভূমি মালিকের মালিকানা যাচাই করার মাধ্যম ঠিক তেমনই ভূমি উন্নয়ন কর পরিষদের পর যে রশিদ বা খাজনার রশিদ বা দাখিলা বা চেক সরবরাহ করা হয় সেটাও হচ্ছে একটি ভূমি মালিকের মালিকানা প্রমাণ করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট। যার মাধ্যমে মালিকানার সর্বশেষ অবস্থা বিবেচনা করা হয়।
দাখিলা কি কাজে ব্যবহার করা হয়
দাখিলা ভূমি মালিকদের এমন একটি প্রমাণ পত্র যা ভূমি সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। চলুন এ পর্যায়ে আমরা দাখিলা কি কাজে ব্যবহার করা হয় এ সংক্রান্ত কিছু ট্রাফিক জেনে নেই-
আরো পড়ুনঃ জমি খারিজ করতে কি কি প্রয়োজন
- পরবর্তী বছরে উন্নয়ন কর পরিষদের জন্য এই দাখিলাটি সংরক্ষণে রাখার প্রয়োজন পড়ে।
- আপনি একটি জমি ক্রয় বা বিক্রয় করবেন সে ক্ষেত্রে আপনাকে সর্বশেষ দাখিলার কাগজটি প্রদান করতে হবে।
- আপনি আপনার জমিটি আলাদাভাবে নিজ নামে নামজারি করবেন সে ক্ষেত্রে সর্বশেষ দাখিলাটি ব্যবহার করতে হবে।
- একটি ভূমির সর্বশেষ মালিকানা প্রমাণপত্র হিসাবে দাখিলা ব্যবহার করা হয়।
- আপনার একটি ব্যাংক লোন আছে সে ক্ষেত্রে প্রতিবছর আপনাকে সর্বশেষ দাখিলা প্রদান করতে হবে।
- এছাড়া একটি দাখিলার মাধ্যমে ভূমি মন্ত্রণালয় ভূমি মালিকদের হতে ভূমিকর আদায় করে থাকে।
দাখিলা কিভাবে পাওয়া যায়
দাখিলার মত ভূমির প্রমাণপত্র টি পেতে হলে আপনাকে কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করতে হবে। এ পর্যায়ে আমরা আপনাকে দাখিলা সংগ্রহ করার পদ্ধতি গুলো আপনাকে জানিয়ে দিচ্ছি-
- একটি দাখিলা সংগ্রহ করতে হলে আপনার কাছে থাকতে হবে, আপনার নিজ নামের খারিজ অথবা রেকর্ড। এছাড়া আপনার নিজের নামে দাখিলা পাওয়া সম্ভব নয়।
- আপনার নিজ নামে নামজারি হওয়ার পর ইউনিয়ন ভূমি অফিস হতে হোল্ডিং খুলে নিয়ে উক্ত হোল্ডিং বরাবর ইউনিয়ন ভূমি অফিস কর্মকর্তার নিকট হতে ভূমি উন্নয়ন কর পরিষদ করার পর দাখিলা সংগ্রহ করতে পারবেন।
- বর্তমানে দাখিলা গুলো অনলাইনে পেমেন্ট করার মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে, এজন্য আপনাকে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের মাধ্যমে, একটি মোবাইল নাম্বার এর অধীনে, একটি আইডি রেজিস্ট্রেশন করে, উক্ত আইডির মধ্যে আপনার ভূমিটির তথ্য সংযুক্ত করে ইউনিয়ন সহকারী কর্মকর্তার নিকট হতে পারমিশন নিয়ে “ভূমি উন্নয়ন কর” পরিষদ করে দাখিলাটি সংগ্রহ করতে পারবেন।
একটি দাখিলায় কি তথ্য থাকে
দাখিলাটি হচ্ছে ভূমি উন্নয়ন কর এর রশিদ যা আমরা ভূমি উন্নয়ন কর পরিষদের মাধ্যমে এটি পেয়ে থাকি। দলিল, খতিয়ান, পর্চা, রেকর্ডীয় খতিয়ান এর মতই দাখিলাও একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল ভূমি মালিকদের জন্য। কারণ এই দাখিলার উপর ভিত্তি করেই একটি জমির সর্বশেষ মালিকানার প্রমাণ পাওয়া যায়। তাহলে চলুন দেখে নেই এই দাখিলাতে কি কি তথ্য থাকে-
- জমিটির ঠিকানা অর্থাৎ মৌজা, উপজেলা, জেলা এর নাম স্পষ্টভাবে লেখা থাকে।
- জমিটির মালিক বা মালিকগণের নাম। পূর্বে দাখিলা গুলো নিয়ে একাধিক মালিক থাকলে একজন মালিক এর নাম উল্লেখ করে দাখিলা সরবরাহ করা হতো কিন্তু বর্তমানে ভূমি সেবার উন্নয়নের ফলে অর্থাৎ স্মার্ট ভূমি সেবা হওয়ার কারণে একটি খতিয়ানে যতজন মালিক থাকে ঠিক ততজনেরই নাম দাখিলাতে স্পষ্ট হয় উল্লেখ করা হয়।
- জমির শ্রেণী, জমির পরিমাণ, খতিয়ান নম্বর, হোল্ডিং নম্বর, দাগ নম্বর, এমন কি ভূমি উন্নয়ন কর বাবদ কত টাকা পরিশোধ করা হয়েছে এবং কত বছরের জন্য বা কত বছরের বকেয়া কিংবা অগ্রিম সকল কিছু এইটা খেলার মাধ্যমে জানা যায়।
দাখিলা কে কাকে সরবরাহ করে
একটি জমির অন্যতম মালিকানার প্রমাণপত্র দাখিলা, এটি বাংলাদেশ ভূমি মন্ত্রণালয় এর আওতাধীন উপজেলা সার্কেলের অন্তর্ভুক্ত ইউনিয়ন ভূমি অফিস কর্তৃক ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের প্রেক্ষিতে কর পরিষদ এর প্রমাণস্বরূপ একটি রশিদ বা চেক সরবরাহ করা হয় সেটাই মূলত দাখিলা আর এটি একচ্ছত্র ভাবে ইউনিয়ন ভূমি অফিস সরবরাহ করে থাকে, প্রতিটি ভূমি মালিক কে।
উপসংহার
প্রতিটি ভূমি মালিকের উচিত প্রতিবছর তার ভূমি উন্নয়ন কর পরিষদ করে তার গুরুত্বপূর্ণ জমি জায়গার সম্পর্কিত একটি প্রমাণ পত্র বদলীল নিজ সংগ্রহে রাখা। কারণ দাখিলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ডকুমেন্টস প্রতিটি ভূমি মালিকের জন্য।
তাছাড়া বাংলাদেশের ভূমি সংক্রান্ত আইনে বলা আছে যে, কোন ভূমি মালিক যদি অনধিক তিন বছর ভূমি উন্নয়ন কর পরিষদ না করে তাহলে উক্ত জমি সরকার নিলাম বা খাস করতাম করতে পারে। তাই আপনার সুরক্ষিত রাখার জন্য এবং নিলাম ও খাস কর্তন হতে রক্ষা করার জন্য টিবছর আপনার ভূমিকাটি পরিশোধ করুন এবং দাখিলা সংরক্ষণে রাখুন।
লেখক এর কথা
নিয়মিত ভূমির উন্নয়ন কর পরিষদ করি এবং দাখিলাটি নিজ সংগ্রহ রাখি। এবং নিজের ভুমিটি অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যার মুখোমুখি হওয়া থেকে বিরত থাকি। কারণ আপনার কমিটি আপনার কষ্টে অর্জিত টাকা-পয়সা দিয়ে কেনা অথবা আপনার অতি নিকটের আত্মীয়স্বজন হতে অথবা আপনার পৈতৃক সম্পত্তি হতে পাওয়া।
পরিশেষে বলতে চাই আমাদের এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনি সহ আপনার পরিচিত জনদের কে বেস্টওয়াল্ড এর ওয়েবসাইটটি ফলো করে রাখতে বলুন যাতে করে আমাদের পরবর্তী আর্টিকেল গুলোর নোটিফিকেশন আপনারা পেয়ে যান।
শেষ পর্যন্ত বেস্টওয়াল্ড এর সাথে থাকার জন্য আপনাকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ
Bestwold নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url