OrdinaryITPostAd

গরুর ক্ষুরা রোগের ভ্যাকসিন লক্ষণ প্রতিকার ও প্রতিরোধ

আসসালামু আলাইকুম! প্রিয় পাঠক বৃন্দ আমাদের বেস্টওয়াল্ড ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। আমরা লক্ষ্য করছি যে আপনি এই মুহূর্তে গরুর ক্ষুরা রোগের ভ্যাকসিন লক্ষণ প্রতিকার ও প্রতিরোধ সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা আজকে আপনাকে উক্ত বিষয়টির একটি স্পষ্ট ধারণা দিচ্ছি। এজন্য আপনাকে আমাদের এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ে নিতে হবে।
গরুর ক্ষুরা রোগে
গবাদিপশুর যে সকল রোগ পরিলক্ষিত হয় তার মধ্যে ক্ষুরা রোগ একটি অন্যতম। এই রোগটি ভাইরাসজনিত রোগ, গবাদি পশুর মুখে এবং পায়ে এই রোগটি পরিলক্ষিত হয় দেখা যায়। এই রোগটি হওয়ার ফলে গবাদি পশু তীব্র জ্বালা যন্ত্রণা ভোগ করে। তবে আপনি একটু সচেতন হলে উক্ত রোগটি হতে আপনার পশুটিকে খুব সহজেই রক্ষা করতে পারবেন।

ভূমিকা

গোবাদীপশুর যে সকল মারাত্মক রোগের আবির্ভাব হয় তার মধ্যে ক্ষুরা রোগ একটি বিশেষ আতঙ্ক জনিত রোগ। কারণ আপনার একটু ভুলের কারণেই আপনার প্রিয় পশুটির হয়ে যেতে পারে মৃত্যু। অতএব উক্ত রোগটি হওয়ার পূর্বে আপনাকে পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে করে উক্ত রোগটি আপনার পশুর না হয়। 

এর জন্য বেশ কিছু ধাপ আপনাকে অবলম্বন করতে হবে। প্রথমত আপনাকে গরুটি কে যাতে করে এই রোগ না হয় এর জন্য প্রতিরোধের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে রোগবালাই তা আপনার হাতে নয় সেটি আল্লাহর হাতে। যদি আপনার পশুটির রোগটি হয়েই যায় তাহলে সেটির জন্য প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে হবে।

গরুর ক্ষুরা রোগে কাকে বলে

গবাদি পশুর যতগুলো রোগ পরিলক্ষিত হয় তার মধ্যে এফ.এম.ডি একটি মারাত্মক এবং আর্থিক ক্ষতি সাধন কারক রোগ। এই রোগটি ভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত হয়, গবাদি পশুর ক্ষুরা রোগকে আমরা এফএমডি রোগ হিসাবে ও জেনে থাকি। এফ এম ডি এর পূর্ণরূপ হচ্ছে (Foot And Mouth Disease). এই রোগটি গবাদিপশুর মুখে এবং পায়ের ক্ষুরে হয়ে থাকে।

অর্থাৎ আমরা বিষয়টি এভাবে উপস্থাপন করতে পারি, গবাদি পশুর মুখে এবং পায়ের ক্ষুরে সৃষ্ট ঘা হয়ে থাকলে বা ঘা এর উপস্থিতি বুঝতে পারলে সেটা আপনাকে বুঝে নিতে হবে উক্ত গরুটির অর্থাৎ পশুটি ক্ষরা রোগে আক্রান্ত হয়েছে। কোন পশু ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত হয়ে গেলে আপনাকে সঙ্গে সঙ্গে বসুটি আলাদা করে নিতে হবে এবং পশুটিকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

পশুর ক্ষুরা বা এফ.এম.ডি রোগের লক্ষণ

গবাদিপশু কি রোগে আক্রান্ত হয়েছে তা নির্ণয় করা জরুরী। কারণ রোগ নির্ণয় করতে না পারলে বা রোগ নির্ণয় করতে ব্যর্থ হলে উক্ত পশুটিকে চিকিৎসা করতেও আপনি ব্যর্থ হবেন। অতএব আপনাকে একটি পশু কি রোগে আক্রান্ত হয়েছে তা আপনাকে যথাযথভাবে চিহ্নিত বা নির্ণয় করতে হবে। চলুন আমরা এ পর্যায়ে পশুর ক্ষুরা বা এফ.এম.ডি রোগের লক্ষণ গুলো জেনে নিই-
  • শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক এর চেয়ে বেশি হয়ে যাবে, অর্থাৎ পশুটির গায়ে তীব্রমাত্রায় জ্বর থাকবে।
  • পশুটির গায়ে জ্বর থাকার কারণে পশুটি কাপাকাপি, হালনী করতে থাকবে।
  • পশুটি খাওয়া ছেড়ে দিবে অথবা অল্প খাবে। তবে সাধারণত মুখে ঘা থাকার ফলে খেতে পারে না।
  • পশুটি ক্ষুরিয়ে ক্ষুরিয়ে হাঁটবে।
  • মুখ হতে লালা মিশ্রিত হবে।
  • পশুটির পায়ের ক্ষুরায়, মুখে, জিহ্বায়, দাঁতের মাড়ি, এমনকি স্ত্রী পশু হলে পশুটির ওলানে ক্ষতের সৃষ্টি দেখা যাবে। যা দেখতে অনেকটা ফোসকার মতো এবং তা ফেটে লাল বর্ণ ধারণ করে।
  • আপনার পশুটি যদি দুধ দিয়ে থাকে তাহলে দুধ এর পরিমাণ কমে যাবে।
  • পশুটি খেতে না পারায় আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে পড়বে।
  • পশুটি খেতে না পারার ফলে মুখ নাড়াতে থাকে এবং মুখ হতে সাদা ফেনা ফেনা যুক্ত লালা বের হতে থাকে।
  • গবাদি পশু কি রোগে আক্রান্ত হয়েছে তা আপনাকে লক্ষণ দেখে বুঝে নিতে হবে। প্রতিটি রোগের জন্য আলাদা আলাদা লক্ষণ থাকে। তবে কিছু লক্ষণ থাকে যা প্রায় রোগেই পরিলক্ষিত হয় এজন্য আপনাকে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে এবং নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং সঠিক রোগ নির্ণয় করতে হবে।

পশুর ক্ষুরা বা এফ.এম.ডি রোগের প্রতিরোধ

পশুর যেমন রোগ আছে তেমন এই রোগ হতে পশুকে পরিত্রান দেওয়ার জন্য চিকিৎসাও রয়েছে। তবে আপনার জেনে রাখা ভালো যে পশুর রোগ হতে বাচাতে এর প্রতিরোধ ব্যবস্থায় উত্তম। অর্থাৎ পশুর রোগ প্রতিকার করার চেয়ে প্রতিরোধ করায় শ্রেয়। পশুর রোগ প্রতিরোধ করার জন্য বর্তমান সময়ে বাজারে বিভিন্ন ধরনের রোগের জন্য বিভিন্ন ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হয়েছে। 

আজ আপনাকে গবাদিপশুর ক্ষুরা বা এফ.এম.ডি রোগের প্রতিরোধ সম্পর্কে এই মুহূর্তে জানিয়ে দিচ্ছি-
  • আপনার পশুদের মধ্যে কোন পশুর উক্ত রোগ পরিলক্ষিত হলে সঙ্গে সঙ্গে আক্রান্ত পশুটিকে আলাদা করে নিতে হবে।
  • ক্ষুরা বা এফ.এম.ডি রোগের প্রতিরোধ করার জন্য ভ্যাকসিন করতে হয়।
  • পশুর ক্ষুরা বা এফ.এম.ডি রোগের প্রতিরোধ করতে হলে পশুকে প্রতি চার মাস পর পর ভ্যাকসিন প্রদান করতে হবে।
  • যেহেতু এটি ভাইরাসজনিত রোগ সেহেতু আপনাকে প্রচন্ড আকারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

পশুর ক্ষুরা বা এফ.এম.ডি রোগের প্রতিকার

আপনার গবাদি পশুটি যদি এই রোগে আক্রান্ত হয়ে যায় তাহলে আপনাকে উক্ত পশুটিকে চিকিৎসা করে উক্ত রোগটি সারিয়ে তুলতে হবে, এজন্য আপনাকে যে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে তা আমরা আপনাকে পর্যায়ক্রমে জানিয়ে দিচ্ছি-

এ রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা

  • প্রথমে আপনাকে আক্রান্ত পশুটিকে অন্য পশু হতে আলাদা করে নিতে হবে।
  • আক্রান্ত পশুটিকে পটাশ মিশ্রিত পানি দিয়ে ক্ষতস্থানগুলো ধুয়ে দিতে হবে।
  • ফিটকিরি ১০ গ্রাম বা দুই চা চামচ ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে মুখের ক্ষতস্থানগুলো এবং পায়ের ক্ষতস্থানগুলো ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
  • সোহাগার দানাগুলো ভালো করে কাঠ খোলায় ভেজে নিয়ে তাতে মধু মিশিয়ে মুখে ও পায়ের ক্ষতস্থানগুলোতে লাগিয়ে দিতে হবে।
  • আক্রান্ত পশুটিকে কাদাযুক্ত মাটিতে রাখা উচিত হবে না।
  • খাওয়ার সোডা চল্লিশ গ্রাম এক লিটার পানিতে মিশিয়ে অথবা সালফানাসাইড ঔষধ ৫ থেকে ৭ দিন ব্যবহার করতে হবে।
  • পশুকে নরম খাবার সরবরাহ করতে হবে, যাতে করে তার মুখে ঘা বা ক্ষতস্থান আহত না হয়।
  • সুস্থ পশুকে নিয়মিত ভ্যাকসিন করতে হবে।

এফ এম ডি রোগের এলোপ্যাথিক চিকিৎসা

ইনজেকশন ডায়াডিন , সেলিডন,ডিমিডিন, সালফাজল- যেকোনো একটি ইঞ্জেকশন প্রতি ২০০ থেকে ২৫০ কেজি ওজনের পশুর জন্য দিনে ৬০ থেকে ৭০ মিলি পশুর শিরায়/মাংসে দিতে হবে, দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার সময় এটির অর্ধেক অর্থাৎ ৩০ থেকে ৩৫ মিলি পুশ করবে।

উপসংহার

এফএমডি রোগটি যেহেতু ভাইরাসজনিত রোগ সেহেতু আপনার উচিত হবে আপনার গরুটিকে সর্বদা সেভ জনে রাখা। অর্থাৎ আপনি যদি খামারি হয়ে থাকেন তাহলে তো অবশ্যই আপনার খামারে বহিরাগত লোকের প্রবেশ অধিকার ন্যারো করতে হবে। এবং আপনাকে সকল সময়ের জন্য সতর্ক থাকতে হবে।

লেখক এর কথা

ভাইরাস জনিত রোগ গুলো সাধারণত মশা ,মাছি, খাবার, চারণ ভূমি, বাতাস ইত্যাদির মাধ্যমে ছড়ায়। এজন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত যাতে করে আপনার প্রিয় পশুটি তীব্রমাত্রায় আক্রান্ত না হয়ে পড়ে এজন্য প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। কারণ রোগ প্রতিকারের চাইতে প্রতিরোধই উত্তম।

সর্বশেষ আপনাকে বলতে চাচ্ছি যে, আমাদের এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে আমাদের ওয়েবসাইট বেস্টওয়াল্ড টিকে ফলো দিয়ে রাখুন এবং আপনার পরিচিত জনদেরও ফলো করতে বলুন যাতে করে পরবর্তীতে নতুন কিছু আপলোড করলে আপনি তা দেখে নিতে পারেন।

শেষ পর্যন্ত বেস্টওয়াল্ড এর সাথে থাকার জন্য আপনাকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
1 জন কমেন্ট করেছেন ইতোমধ্যে
  • Anonymous
    Anonymous December 16, 2023 at 3:16 PM

    খুব উপকৃত হলাম বিষয়টি যেনে।

মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Bestwold নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url