যে সকল কারণে জমি নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা হয়
আসসালামু আলাইকুম! সুপ্রিয় পাঠক বৃন্দ আপনাকে আমাদের ওয়েবসাইট বেস্টওয়াল্ডে স্বাগতম। এই মুহূর্তে আপনি যে সকল কারণে জমি নিয়ে মামলা মোকদ্দমা হয় বিষয়টি সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আজ আমরা এই আর্টিকালের মাধ্যমে উক্ত বিষয়টি আলোচনা করেছি। আপনারা একটি ধারণা হয়ে যাবে আমাদের এই আর্টিকেলটি সম্পন্ন করলে।
আমাদের বাংলাদেশের আদালত গুলোতে আজ যতগুলো মামলা রয়েছে, তোর পার্সেন্টেজ হিসাব করতে গেলে শতকরা ৬০% থেকে ৭০% মামলাগুলোই জমি সংক্রান্ত। বর্তমান সময়ে ওই সকল মামলা গুলো অর্থাৎ জমির বিষয়ক মামলাগুলো কমিয়ে আনার জন্য আদালত ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সরকারি কর্মকর্তার মাধ্যমে উক্ত ঝামেলাগুলো নিদর্শন এর চেষ্টা করছে। যেমন ভ্রাম্যমান আদালত, ম্যাজিস্ট্রেট, ইউ এন ও, এসি ল্যান্ড এদের মাধ্যমে কিছু কিছু মামলা শেষ করা হচ্ছে।
ভূমিকা
বাংলাদেশে ভূমি সংক্রান্ত মামলাগুলো বেসিরভাগ পারিবারিক বিরোধ, সিমানা নির্ধারণ, জমির দখল, ভূমি জরিপ এর তথ্য বিভ্রাট সংক্রান্ত বিষয় নিয়েই হয়ে থাকে। তবে বর্তমান সময়ে মামলার বিরোধ কমাতে সরকার বেশ ভূমিকা পালন করছে। বিশেষ করে ভূমি মন্ত্রণালয় গুরুত্বসহ কারে বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করছেন এবং এ সংক্রান্ত নানান ধরনের কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন।
যে সকল কারণে জমি নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা হয়
জমি নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা অনেক কারণেই হয়ে থাকে, তবে আজকে আমরা মামলাগুলোকে পাঁচটি ভাগে বিভক্ত করার চেষ্টা করেছি। আমরা সকল মামলা গুলোর তথ্য বিশ্লেষণ করে পাঁচটি ক্যাটাগরির কারণে মামলা গুলো বেশি হয়ে থাকে তা খুঁজে পেয়েছি। চলুন এ পর্যায়ে ক্যাটারিং গুলো সম্পর্কে জেনে নিই।
- পারিবারিক বিরোধ এর কারণে মামলা।
- জমির সীমানা নির্ধারণে সমস্যা জনিত মামলা।
- জমির ভোগ দখল সংক্রান্ত মামলা।
- ভূমি জরিপ বা রেকর্ড তথ্য গরমিল সংক্রান্ত মামলা।
- সতর্কতা হীনতার কারণে জমি হারানোর মামলা।
পারিবারিক বিরোধ এর কারণে মামলা
আমাদের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ভূমি সংক্রান্ত যত মামলা গুলো রয়েছে তার অধিকাংশই পারিবারিক বিরোধের কারণে হয়ে থাকে। অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বলেছেন, বাংলাদেশের ভূমি সংক্রান্ত মামলা গুলোর মধ্যে ৫৫ থেকে ৬০ ভাগ পারিবারিক বিরোধের কারণেই হয়ে থাকে।
তিনি আরো বলেন, ভূমি সংক্রান্ত মামলাগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিবারের মেয়ে সন্তানদের ভাগ বাটোয়ারা গুলো কম দেওয়ার ফলে এবং জায়গা না বুঝিয়ে দেওয়ার ফলে এই মামলাগুলো বেশি হয়ে থাকে। পারিবারিক বিরোধের মামলাগুলো সাধারণত তখনই ঘটে যখন, কোন জমির মালিক মৃত্যুবরণ করার পর তার রেখে যাওয়া ওয়ারিসগণ উক্ত সম্পত্তি বাটোয়ারা অর্থাৎ বন্টন করার সময় হয়।
জমির পরিমাণ নিয়ে এবং জমির পজিশন নিয়ে, এমনকি গ্রাম পর্যায়ে মেয়ে সন্তানদের জমি না দেওয়ার প্রবনতা অনেক আগে থেকেই চলে আসছে, এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সময়ে মানুষ কিছুটা সচেতন হওয়ার ফলে এবং জমি জায়গার দাম বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে মেয়ে সন্তানদের জমি বুঝিয়ে না দেওয়ার প্রবণতাটা রয়ে যাওয়ার ফলে পারিবারিক বিরোধের মামলাগুলো বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জমির সীমানা নির্ধারণে সমস্যা জনিত মামলা
জমির সীমানা নির্ধারণ বর্তমান সময়ে একটি বিরাট সমস্যা ধারণ করেছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে জমির স্বল্পতা এবং চাহিদার পরিমাণ বেশি থাকা। এবং প্রচলিত যতগুলো রেকর্ড রয়েছে তার তাবাস স্টেশনগুলো অর্থাৎ নকশার তাবাস স্টেশনগুলোর কোন চিহ্ন না থাকার ফলে জমি পরিমাপ কারক অর্থাৎ আমিন গন সুষ্ঠুভাবে সীমানা নির্ধারণ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন।
এর প্রধান কারণ হচ্ছে ভূমি মালিকগন। কারণ রেকর্ড চলাকালীন সময়ে যে সকল তাবাসী স্টেশনগুলো বা পিলার গুলো বসানো হয়েছিল তার অস্তিত্ব বর্তমানে একেবারেই নাই। যার ফলে সীমানা নির্ধারণ করা অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। এরই ফলশ্রুতিতে জমির সীমানা নির্ধারণের সমস্যা জনিত মামলা গুলো উত্তর উত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এছাড়াও প্রতিনিয়ত জমির মালিকানা পরিবর্তন হওয়ার কারণে একই জমি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে পরিমাপ হওয়ার ফলে সীমানা সংক্রান্ত জটিলতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এছাড়াও জমির সীমানা নির্ধারণে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে নিজস্ব লোক অর্থাৎ আত্মীয়-স্বজন। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় প্রতিটি জমির পার্শবর্তী মালিক এই আত্মীয়-স্বজনেরাই থাকে।
জমির ভোগ দখল সংক্রান্ত মামলা
জমি সংক্রান্ত মামলাগুলোর মধ্যে একটি বড় অংশের মামলা হচ্ছে বেআইনিভাবে কোন জমির দখল নেওয়া এবং ভূমি মালিক এর ভূমিটিকে জোরপূর্বক বা বল প্রয়োগ করে অন্যায় ভাবে দখলে নিয়েছে এমন ঘটনার প্রেক্ষিতে। বিষয়গুলো এমন ভাবে দাঁড়াই যে, কোন ভূমি মালিক তার ভুমি ইযারা বা প্রচলিত কথাই কটে রেখেছিল সময়ের ব্যবধানে উক্ত জমির মালিক দুর্বল হলে।
আরো পড়ুনঃ পত্রিক সম্পত্তি নামজারি করার নিয়ম
সেই জমি হারানোর সম্ভাবনা থেকে যাই, কারন যখন কট কারী ব্যক্তি ক্ষমতাধর হয়। এরকম ঘটনা বহু ঘটে। তবে অধিকাংশ দেখা যায় নদীর ভাঙ্গনে! ভেঙ্গে যাওয়ার পর উক্ত জমিতে চর পড়ার পরে, সেই জমি বেআইনিভাবে দখল করার প্রবণতা। আর এই সকল কারণে জমির ভোগ দখল ভূমি মালিক হতে অন্যজনের হাতে চলে যাওয়ার ফলে এ সংক্রান্ত মামলাগুলো হয়ে থাকে।
এছাড়াও ভূমি দখলের মামলাগুলো পরিবার থেকেও হয়ে থাকে পরিবারের কোন সদস্য জোরপূর্বক অন্য আরেক সদস্যের ভূমি বা জায়গা দখল করে বসে এক্ষেত্রে মামলা গুলো হয়ে থাকে। এছাড়াও পারিবারিক এজমালি সম্পত্তিগুলো বন্টন না করার ফলে বিভিন্ন অংশীদার বিভিন্ন জায়গায় জমি পেয়ে থাকে, কিন্তু সে তার ক্ষমতা অনুসারে ভালো জমিগুলো দখলে নেই।
ভূমি জরিপ বা রেকর্ড তথ্য গরমিল সংক্রান্ত মামলা
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ ভূমি জরিপ বা রেকর্ড এর তথ্য গড়মিলের কারণে ভূমি সংক্রান্ত মামলাগুলো বেশি হচ্ছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে ভূমি মালিকগণ সময় মতো তাদের ভূমিগুলোর নামজারি করে না এবং ওয়ারিসান সম্পত্তি বাটোয়ারা করে না। যার ফলে উক্ত সময় সরকার কর্তৃক ভূমি মন্ত্রণালয়ের জরিপ বিভাগ! জরিপ পরিচালনা কালে-
নামজারি অথবা পূর্ব রেকর্ডভুক্ত যে সকল প্রজা থাকে তাদের নামে পুনরায় রেকর্ড করে। যার ফলে যে সকল ব্যক্তিগুলো নামজারি করেনি উক্ত ব্যক্তিগুলো বা ভূমি মালিকগুলো তথ্য না দেওয়ার ফলে তাদের রেকর্ডটি পূর্বের মালিকের নামে হয়ে যায় এরকম পরিস্থিতিতে নতুন ভূমি মালিকগণ ঝামেলা করে। এবং সে ঝামেলা সংক্রান্ত সমস্যা গুলো উত্তোলনের জন্য মামলার দ্বারস্থ হতে হয়।
আইনের শরণাপন্ন হতে হয়, আর আইনের সহায়তার মূল মাধ্যম হচ্ছে মামলা। এছাড়াও কিছু অসাধু ব্যক্তি রয়েছে যারা জরিপ কারকদেরকে ভুয়া তথ্য দেখিয়ে রেকর্ড ভুক্ত করে অর্থাৎ রেকর্ড বিভ্রাট করে। যার ফলেও পরবর্তী সময়ে ভূমি জরিপ বা রেকর্ড তথ্য গরমিল সংক্রান্ত মামলাগুলো হয়ে থাকে।
সতর্কতা হীনতার কারণে জমি হারানোর মামলা
ভূমি মালিকের সতর্কতা হীনতার কারণেও অনেক সময় জমি হারাতে হয় এবং যার ফলে পরবর্তীতে উত্তম মালিক জমি ফিরে পেতে মামলা করে। চলুন কি কি বিষয়ে একজন ভূমি মালিক সতর্কতা হীনতার কারণে জমি হারায় উক্ত বিষয়গুলো জেনে নেওয়া যাক-
- সময়মতো ভূমি উন্নয়ন কর পরিষদ না করার ফলে।
- জমি ক্রয় করেছে কিংবা কোন মাধ্যমে জমি পেয়েছি কিন্তু এখন পর্যন্ত নিজ নামে নাম জারি করেনি।
- ওয়ারিশান সম্পত্তি ভাগ বন্টন হচ্ছে কিন্তু উক্ত সময়ে সে উপস্থিত হচ্ছেনা এরকম পর্যায়ে।
- ভূমি রেকর্ডের সময় ভূমি মালিক উক্ত স্থলে উপস্থিত না হওয়া। প্রভৃতি
উপসংহার
ভূমি সংক্রান্ত মামলাগুলো এড়াতে আপনাকে যেমন সচেতন হতে হবে! ঠিক একই ভাবে বর্তমান সময়ে যে সকল আইনগুলো করা হচ্ছে সরকার কর্তৃক সে সকল আইনগুলোর বাস্তবায়ন করতে হবে। এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের অফিসগুলোতে স্পিড মানির মাধ্যমে যে সকল কার্যগুলো সম্পাদন করা হয় উক্ত কার্যগুলো শক্ত হাতে প্রতিরোধ করতে হবে। তাহলেই ভূমি সংক্রান্ত মামলাগুলোর জটিলতা কমে আসবে।
লেখক এর কথা
ভূমি সংক্রান্ত মামলাগুলো প্রথম অন্তরায় হচ্ছে পরিবার এর সদস্যগণ। আমার মনে হয় ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা গুলো দূর করতে হলে বর্তমানে যে সকল আইনগুলো করা হয়েছে তার সুষ্ঠু প্রয়োগ ঘটাতে হবে। আমাদের প্রশাসন বা আইনি ব্যবস্থা যদি উক্ত কার্যগুলো সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারে তাহলে আমাদের বাংলাদেশ ভূমি সংক্রান্ত মামলাগুলো অনেকটাই কমে আসবে। তবে এর মূল শর্ত হচ্ছে প্রত্যেককে নিজ নিজ জায়গা হতে সচেতন হতে হবে এবং সৎ হতে হবে।
পরিশেষে বলতে চাই আমাদের এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনি সহ আপনার পরিচিত জনদেরকে আমাদের এই ওয়েবসাইট বেস্টওয়াল্ড ফলো করুন যাতে করে আমাদের পরবর্তী আর্টিকেলগুলো আপনার নোটিফিকেশনে চলে যায় এবং আপনারা তা স্বাচ্ছন্দ্যে পড়ে নিতে পারেন।
শেষ পর্যন্ত বেস্টওয়াল্ডের সাথে থাকার জন্য আপনাকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ।
Bestwold নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url