সজনে পাতার উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম
আসসালামু আলাইকুম! প্রিয় পাঠক বৃন্দ আপনাকে জানাই আমাদের Bestwold ওয়েবসাইটে পক্ষ হতে শুভেচ্ছা ও স্বাগতম। আমরা লক্ষ্য করছি আপনি এই মুহূর্তে সজিনা পাতার উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে শুরু হতে শেষ পর্যন্ত পড়ে নেন তাহলে উক্ত বিষয়ে একটি স্পষ্ট ধারণা পেয়ে যাবেন।
সজিনা পাতা এমন একটি উদ্ভিদের পাতা যা অত্যন্ত উপকারী একটি পাতা। বর্তমান সময়ে সজিনা পাতা কে বিজ্ঞানীরা অলৌকিক পাতা হিসাবে আখ্যায়িত করছে। কিন্তু কেন এ পাতার এত গুণ, আপনি কি জানেন এই সজনে পাতার কত গুণ। আমরা হর হামেশাই সজনে পাতা ব্যবহার করে থাকি, কখনো শাগ হিসেবে, কখনো ভর্তা হিসাবে, কখনো বা বিভিন্ন ধরনের সবজির সাথে মিশিয়ে।
ভূমিকা
সজিনা পাতা একটি ঔষধি গুন সম্পন্ন পাতা, এই পাতার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের রোগের নিরাময় পাওয়া যায়। বিভিন্ন ধরনের ফোড়া, ব্যথা, পুরনো রোগ, কাটাছেঁড়া ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের রোগের নিরাময় হিসেবে এ পাতার ব্যাপক ব্যবহার ও গুণ রয়েছে। এছাড়াও সজিনা পাতা আমরা দৈনন্দিন রান্নার কাজে ব্যবহার করে থাকি যেমন ভর্তা হিসেবে, শাক হিসেবে, বড়া, বিভিন্ন সবজির সাথে মিশিয়ে থাকি।
সজনে পাতার বিভিন্ন নাম
বর্তমান সময়ের সজনা পতাকে বিজ্ঞানীরা অলৌকিক পাত্তা হিসেবে আখ্যায়িত করছে, এছাড়াও আমরা একটি প্রচলিত নাম শুনে থাকি তা হচ্ছে মরিঙ্গা। আর এই মরিঙ্গা টি হচ্ছে সজনে পাতা, সজিনা পাতা কে অনেক অঞ্চলে ছুটির পাতা হিসাবে জেনে থাকি। আমরা এমন কোন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ নেই যারা এই সজনা পাতা না খেয়েছি।
সজনে পাতার উপকারিতা
সজনা পাতায় বিভিন্ন ধরনের উপকার পাওয়া যায়, এ পর্যায়ে উপকার সমূহ আপনাকে জানিয়ে দিচ্ছি-
- এই পাতায় বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন পুষ্টিতে ও মিনারেল ভরপুর।
- সজিনা পাতা ঔষধি গুন সম্পূর্ণ একটি পাতা।
- সজিনা উদ্ভিদ হতে উন্নত মানের তেল আহরণ করা যায়।
- সজনা পাতা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য উপকরণ তৈরি করা যায়।
এই পাতায় বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন এর উপস্থিতি
সজনে পাতায় বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন এর উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়। চলুন তাহলে দেখে নেয়া যাক এ পাতায় কি কি ভিটামিনের উপস্থিতি পাওয়া যায়-
- ভিটামিন এ
- ভিটামিন বি
- ভিটামিন সি
এই পাতায় বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি এর উপস্থিতি
সজনে পাতায় বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি এর উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়। চলুন তাহলে দেখে নেয়া যাক এ পাতায় কি কি পুষ্টির উপস্থিতি পাওয়া যায়-শক্তি, কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, চর্বি, ফাইবার, পানি।
এই পাতায় বিভিন্ন ধরনের মিনারেলস এর উপস্থিতি
সজনে পাতায় বিভিন্ন ধরনের মিনারেলস এর উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়। চলুন তাহলে দেখে নেয়া যাক এ পাতায় কি কি মিনারেলসের উপস্থিতি পাওয়া যায়- ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, জিংক।
সজিনা পাতা ঔষধি গুন সম্পূর্ণ একটি পাতা
সজিনা পাতা ব্যবহারে বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পরিত্রাণ পাওয়া যায়, চলুন এ পর্যায়ে যে সকল রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার সুযোগ থাকে সজিনা পাতা ব্যবহারের ফলে সে সকল রোগ সম্পর্কে জেনে নেই।
- শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- রক্তের সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- লিভার সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
- রক্তে কোলেস্টরের মাত্রা কমিয়ে উচ্চ রক্তচাপ এর প্রবণতা কমায়।
- হাড় ও দাঁতের সুরক্ষায় বা মজবুত করনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
- রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে।
- দেহে প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করে।
- দেহের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে।
- খুশকি দূর করে ও চুল পড়া কমাতে সহায়তা করে।
- শরীর ব্যথা, কান ব্যথা, মাথা ব্যথা সহ বিভিন্ন ধরনের ব্যথা নাশক হিসাবে দারুন কাজ করে।
- বিভিন্ন ধরনের ফোড়া এর জন্য একটি উপকারী পাতা।
- বহুমূত্র, মূত্র পাথর, হাঁপানি ইত্যাদি রোগের নিরাময় হিসেবে কাজ করে।
সজিনা উদ্ভিদ হতে উন্নত মানের তেল আহরণ করা যায়
সজিনা গাছ হতে উৎপাদন কৃত সজিনা ডাটার বীজ হতে পাওয়া যায় উৎকৃষ্ট মানের তেল। সজিনা বীজগুলোকে ভালো করে ছড়িয়ে নিয়ে এটি রোদে ভালো করে শুকিয়ে নিয়ে তা হতে তেল পাওয়া যায়। আর এই তেল বিভিন্ন ধরনের কাজে ব্যবহার করা যায়।
সজনে পাতা খাওয়ার নিয়ম
আমরা সাধারণত সজিনা পাতা যেভাবে খেয়ে থাকি তা মোটেও ঠিক নয়, কারণ সজনাপাতা যখন গরম পানিতে সিদ্ধ করা হয় তখন তার ভিতরে থাকা সমস্ত প্রোটিন, ভিটামিন ও পুষ্টি সবগুলো আস্তে আস্তে নষ্ট হতে থাকে। তাহলে এখন বলতে পারেন কিভাবে খাব? সজনা পাতা খাওয়ার নিয়ম হচ্ছে।
আরো পড়ুনঃ চা পাতায় কোন ভিটামিন থাকে
কাঁচা পাতা বেটে বা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিয়ে ভর্তা হিসাবে, জুস হিসাবে খাওয়া বেশি উপকারী। তবে সজনা পাতা কে পাউডার ফরমে অর্থাৎ গুড়া করে নিয়ে খাওয়া যায়। যদিও এটি একটি প্রাকৃতিক খাদ্য তথাপিও এর কিছু নিয়ম আপনাকে মেনে চলতে হবে যেমন আপনার প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য এক থেকে তিন গ্রাম পরিমাণে খেতে পারবেন।
যদি কোন কারণবশত উক্ত পরিমানের চেয়ে বেশি পরিমাণ খেয়ে ফেলেন তাহলে বমি বমি ভাব হতে পারে, পেট ব্যথা করতে পারে, ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অতএব আপনি প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য এক গ্রাম মাত্রায় এই খাদ্যটি খেয়ে থাকবেন।
সজনা পাতা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য উপকরণ তৈরি
- সজনে পাতার ভর্তা।
- সজনে পাতার জুস।
- সজনে পাতার চা।
- সজনে পাতা রান্না করার শাক।
- সজনে পাতার ভাজি।
- সজনে পাতার বড়া।
- সজনি পাতার গুড়া অর্থাৎ মরিঙ্গা।
সজনা পাতার গুড়া অর্থাৎ মরিঙ্গা খাবার নিয়ম
সজনা পাতার গুড়া কোন ঔষধ নয় এটি একটি ফুড সাবলিমেন্ট! তবে এটি ঔষধি গুনসম্পন্ন। এটি খাওয়ার ফলে আপনার হুট করেই কোন রোগের উপকার পাওয়া যাবে না। এটি দীর্ঘদিন খেতে থাকলে আস্তে আস্তে রোগ সমূহ নিরময় হতে থাকবে। তবে এটিকে ঔষধ ভেবে ভুল করবেন না।
আরো পড়ুনঃ গরু মোটাতাজাকরণ করতে করণীয়
সকালে খালি পেটে এবং রাত্রে ঘুমানোর আগে দুই চা চামুচ পানিতে ভিজিয়ে মধু দিয়ে খাবেন। এছাড়া আপনি বিভন্ন ধরনের ফলের সাথে জুস করেও এটি খেতে পারেন। সজিনা পাতার গুঁড়া খেতে একটু তেতো তেতো ভাব লাগতে পারে এবং প্রথমে খেতে একটু অস্বস্তি বোধ হতে পারে তবে এটি মধু কিংবা দুধ এর সাথে অথবা কোন ফলের সাথে জুস করে খেলে ভালো হয়।
উপসংহার
যেহেতু এটি কোন ঔষধ নয় এটি হচ্ছে ঔষধি গুন সম্পূর্ণ ফুড সাপ্লিমেন্ট তাই কেউ এটিকে ঔষধ ভেবে সেবন করবেন না। এটি আপনার দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় রাখুন এবং সুযোগ হলেই এটি বিভিন্ন ফরমেটে আপনি আপনার খাদ্য তালিকায় রাখুন এতে করে আপনি বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পরিত্রানাও পেয়ে যেতে পারে।
লেখক এর কথা
যেহেতু এটি বৈজ্ঞানিকভাবে একটি আশ্চর্য ধরনের পাতা, যাতে বিভিন্ন ধরনের রোগের উপকার পাওয়া যাচ্ছে সেহেতু আমরা এই খাবারটিকে আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকার মধ্যে রাখার চেষ্টা করব। তবে এটি এমন একটি ফুড সাপ্লিমেন্ট যা সকল ধরনের মানুষ স্বাচ্ছন্দে খেতে পছন্দ করে।
আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার পরিচিত জনদের মাঝে শেয়ার করে দিন যাতে করে তারা বিষয়গুলো উপকৃত হতে পারে।
আমাদের এই পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে জানাই আমাদের পক্ষ হতে আন্তরিক ধন্যবাদ
Bestwold নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url