ওয়ারিশান বা পৈত্রিক সম্পত্তির দলিল পাচ্ছি না করণীয় কি
আসসালামু আলাইকুম! প্রিয় পাঠক বৃন্দ। আপনি এই মুহূর্তে ওয়ারিশান বা পৈত্রিক সম্পত্তির দলিল বিষয়ক কিছু জানতে চাচ্ছেন, আজ আমরা আপনাকে উক্ত বিষয়ে ধারণা দিচ্ছি। এজন্য আপনাকে আমাদের এই আর্টিকেলটি শুরু হতে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে। তাহলে চলুন নিচে উক্ত বিষয়টি নিয়ে জ্ঞান অর্জন করা যাক।
অনেক সময় দেখা যায় ওয়ারিশান কিছু সম্পত্তি আছে বা পৈত্রিক কিছু সম্পত্তি রয়েছে। কিন্তু কোন এক ওয়ারেশ এর কাছে উক্ত সম্পত্তির দলিলাদি রয়েছে তবে সে উক্ত সম্পত্তির দলিলাদি দিতে বা দেখাতে চাচ্ছে না। কিংবা বিষয়টি এমনও হতে পারে যে সম্পত্তি আছে কিন্তু কাগজপত্র হারিয়ে গেছে বা নষ্ট হয়ে গেছে সে ক্ষেত্রে করণীয় কি হবে?
ভূমিকা
আপনার পৈতৃক সম্পত্তি বা ওয়ারিশান সম্পত্তির দলিল খুঁজে পেতে বা উক্ত সম্পত্তির তথ্য জানতে আপনি বেশ কয়েকটি ফর্মুলা অনুসরণ করতে পারেন। আমরা এই সকল ফর্মুলা গুলোই আপনাকে আজকের এই আর্টিকালে জানিয়ে দিচ্ছি। আশা করছি উক্ত ফর্মুলা গুলো আপনি বাস্তবিক পক্ষে এপ্লাই করলে অবশ্যই আপনার সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবেন।
ওয়ারিশান বা পৈত্রিক সম্পত্তি কি
ওয়ারিশান বা পৈত্রিক সম্পত্তি কি এই বিষয়টি সম্পর্কে ধারণা নিতে হলে আপনাকে প্রথমে জানতে হবে ওয়ারিশ কি? ওয়ারিশ হচ্ছে কোন ব্যক্তির নিম্ন পুরুষ, উর্দু পুরুষ, সমগোত্রীয় পুরুষ অর্থাৎ ঔরসজাত সন্তান-সন্ততি, পিতা মাতা, ভাই বোন, আত্মীয়-স্বজন কে বোঝায়। চলুন এখন আপনাকে একটু জানিয়ে দিন ওয়ারিশান সম্পত্তিটি কি?
আরো পড়ুনঃ জমির মালিকানা বের করার উপায়
ওয়ারিশান সম্পত্তি হচ্ছে ওই সকল সম্পত্তি যা আপনার পূর্বপুরুষ, নিম্ন পুরুষ, বা সমগোত্রীয় পুরুষ এর মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া সম্পত্তির উপর আপনার হক বা দাবি থাকা এটাই হচ্ছে ওয়ারিশান সম্পত্তি। তবে হা কিছু কিছু ওয়ারিশ আছে যারা ওয়ারিশ হওয়া সত্ত্বেও মৃত ব্যক্তির তেক্ত সম্পত্তি হতে বঞ্চিত হয়। এ বিষয়ে আপনাকে অন্য কোন একটি আর্টিকেলের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।
ওয়ারিশান সম্পত্তি এবং পৈত্রিক সম্পত্তির মধ্যে কি কোন পার্থক্য রয়েছে
জ্বি হ্যাঁ! ওয়ারিশান সম্পত্তি এবং পৈত্রিক সম্পত্তির মধ্যে কিছু পার্থক্য তো রয়েছেই। চলুন এখন অল্প পরিসরে আপনাকে ওয়ারিশান সম্পত্তি ও পৈত্রিক সম্পত্তির মধ্যে দুইটি প্রধান পার্থক্য জানিয়ে দিই। এক পৈত্রিক সম্পত্তি হচ্ছে পিতা বা দাদার রেখে যাওয়া বা ত্যাক্ত সম্পত্তি। দুই পৈতৃক সম্পত্তিতে মাতৃ কুলের কোন সম্পত্তি অন্তর্ভুক্ত থাকে না অর্থাৎ নানা নানি হতে আগত সম্পত্তি।
ওয়ারিশান সম্পত্তি বা পৈত্রিক সম্পত্তি খুঁজে পাওয়ার প্রক্রিয়া
- দলিল দেখে নিশ্চিত হওয়া যায়।
- খতিয়ান হতে নিশ্চিত হওয়া যায়।
- ওয়ারিশগন দের মধ্যে তথ্য নিয়েও আপনি কিছুটা ধারণা নিতে পারেন।
- সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসে গিয়ে তথ্য নিতে পারেন।
- স্থানীয় কোন একজন সার্ভেয়ার বা আমীন এর সহায়তা নিয়ে কিছু তথ্য সরবরাহ করে আপনি আপনার কার্য হাসিল করতে পারেন।
- সংশ্লিষ্ট সাব রেজিস্ট্রি অফিস হতেও তথ্য পাওয়া যায়।
- জেলা রেকর্ডরুম হতে তথ্য পাওয়া যায়।
ওয়ারিশান সম্পত্তির দলিল পাচ্ছিনা এক্ষেত্রে করণীয়
আপনার পৈত্রিক সম্পত্তি বা ওয়ারিশান সম্পত্তি রয়েছে কিন্তু আপনি উক্ত সম্পত্তির কোন প্রকার দলিলাদি খুঁজে পাচ্ছেন না অথবা এরকম হতে পারে উক্ত সম্পত্তির দলিলাদি আপনার কোন একজন ওয়ারিসের কাছে গচ্ছিত আছে কিন্তু সে কোনক্রমে উক্ত সম্পত্তির দলিলাদি দেখাতে বা সরবরাহ করতে চাচ্ছে না সে ক্ষেত্রে আপনি যে কাজগুলো করতে পারেন।
- উক্ত সম্পত্তিটি কোন মৌজার অন্তর্ভুক্ত, অর্থাৎ উক্ত সম্পত্তি টি কোন এলাকায় এটি আপনাকে নিশ্চিত হয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে।
- যতটা সম্ভব উক্ত মৌজার কত নম্বর দাগ এ সম্পত্তিটি রয়েছে তার তথ্য সংগ্রহ করতে হবে।
- যদি সম্ভব হয় তাহলে উক্ত সম্পত্তিতে খতিয়ান নম্বর সংগ্রহ করতে হবে।
- যদি আপনি উপরোক্ত কিছুই না পান, তাহলে অন্তত মৌজার নাম এবং কার নামে উক্ত সম্পত্তি রয়েছে এইটুক তথ্য আপনাকে সংগ্রহ করতেই হবে।
কোন কোন তথ্য দিয়ে ওয়ারিশান সম্পত্তি বের করা যায়
আপনার কাছে যদি আপনার পৈত্রিক সম্পত্তির কোন হার্ডকপি দলিল আদি না থেকে থাকে তাহলে কিছু তথ্য সংগ্রহ করেই আপনি উক্ত সম্পত্তির স্যাটিসফাই কপি সংগ্রহ করে আপনার কার্য সম্পাদন করতে পারেন। একটি সম্পত্তির সার্টিফাই কপি পেতে যে সকল তথ্যের প্রয়োজন হয় এ পর্যায়ে আপনাকে তা জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে-
মৌজার নাম, মালিকের নাম, খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর, দলিল নম্বর, হোল্ডিং নম্বর, মালিকের পিতার নাম, ভূমি উন্নয়ন করের রশিদ, মাঠ পর্চা বা ওয়ার্কিং পর্চা, ইত্যাদি। উল্লেখিত তথ্য সমূহের মধ্যে যদি আপনার কাছে দুই বা ততোধিক তথ্য থেকে থাকে এবং উক্ত সম্পত্তিটির আপনি দলিলের সার্টিফাই কপি পেতে চাচ্ছেন তাহলে উক্ত তথ্যর মাধ্যেমে আপনি উক্ত সম্পত্তির দলিলাদি খুব সহজেই পেয়ে যাবেন।
ওয়ারিশান সম্পত্তির কিছু তথ্য প্রদান করে দলিলাদি বের করার স্থানসমূহ
আপনার কাছে যদি আপনার ওয়ারিশান সম্পত্তির বা পৈত্রিক সম্পত্তির দুই বা ততোধিক তথ্য থেকে থাকে, আর আপনার যে ওয়ারিশের কাছে সম্পত্তির দলিলাদি গচ্ছিত আছে সেই উক্ত সম্পত্তির দলিলাদি সরবরাহ করতে রাজি না থাকে তাহলে আপনি আপনার পৈতৃক সম্পত্তির দলিলাদি কিছু অর্থ খরচ করে দুই বা ততোধিক তথ্যের ভিত্তিতে আপনার ওয়ারিশান সম্পত্তির সকল দলিলাদি পেয়ে যাবেন।
এজন্য আপনাকে স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যোগাযোগ করতে হবে। যদি ইউনিয়ন ভূমি অফিসেও কোন কারণবশত তথ্য না পান তাহলে আপনার কাছে থাকা তথ্য সমূহ নিয়ে উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে যোগাযোগ করে আপনার কাঙ্খিত কার্যটি হাসিল করতে পারবেন।
আরো পড়ুনঃ পত্রিক সম্পত্তি নামজারি করার নিয়ম
যদি উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিস হতেও কোনো তথ্য না পান তাহলে আপনি জেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস অথবা রেকর্ড রুম হতে আপনার কাছে থাকা দুই বা ততোধিক তথ্য সরবরাহ করে আপনি উক্ত সম্পত্তির দলিলাদির সার্টিফাই কপি সংগ্রহ করতে পারবেন।
ওয়ারিশান সম্পত্তির কোন কোন কাগজপত্র থাকা জরুরি
আপনার কাছে থাকা সম্পত্তি টুকু যদি ওয়ারিশান সম্পত্তি হয়ে থাকে তা হলে আপনার কাছে যে সকল কাগজপত্রাদি থাকতে হবে তা হল-
- উত্ত সম্পত্তিটির মূল দলিল সহ সকল বায়া দলিল বা পিট দলিল।
- উক্ত সম্পত্তি সংশ্লিষ্ট সকল ধরনের খতিয়ান হোক সেটি নামজারি বা রেকডিও।
- ভূমি উন্নয়ন করের দাখিলা এর কপি সংগ্রহে রাখতে হবে।
- যাহার নামে সম্পত্তি তাহার মৃত্যু সনদ সংগ্রহে রাখতে হবে।
- সকল ওয়ারিশদের নাম,বয়স ও সম্পর্ক সহ ওয়ারিশান সনদ সংগ্রহে রাখতে হবে। কোন ওয়ারিশে বাদ পড়া রয়েছে এমুন ওয়ারিশ সনদ কার্যকর হবেনা। আর সামায়িক কার্যকর হলেও তার ভবিষৎ ভালো হবে না। অতএব সকল ওয়ারিশ এর উপস্থিতি ওয়ারিশান সনদে থাকা জরুরি।
ওয়ারিশান কাগজ সমূহ সংগ্রহ করতে কি রকম খরচ হতে পারে
ওয়ারিশান কাগজ সমূহ সংগ্রহ করতে এলাকা ভেদে ভিন্ন ভিন্ন খরচ হয়ে থাকে। খরচের বিষয়ে একুরেট বলা সম্ভব নয়। তবে আপনার সুবিধার ক্ষেত্রে হালকা তথ্য দিচ্ছি যেটা কাছাকাছি হবে তবে একুরেট না। এর মূল কারণ হচ্ছে আমাদের বর্তমান সময়ে সরকারি খরচের চেয়ে উপরি খরচটি বেশি হয়। তাহলে চলুন উক্ত বিষয়টি নিয়ে কিছু ধারণা দিয়ে দেই।
- দলিল সংগ্রহ বাবদ আনুমানিক ৩০০০ টাকা।
- নামজারি খতিয়ান সংগ্রহ বাবদ ১০০০ টাকা।
- রেকর্ডীয় খতিয়ান সংগ্রহ বাবদ ৫০০ টাকা।
- পিঠ দলিল সংগ্রহ বাবদ প্রতি দলিল তিন হাজার টাকা হারে।
- ভূমি উন্নয়ন কর সংগ্রহ বাবদ যত বছরের খাজনা বাকি থাকবে উক্ত খাজনা প্রদান করতে হবে।
উপসংহার
আপনার পৈতৃক সম্পত্তি বা ওয়ারিশান সম্পত্তির দলিলাদি বা কাগজপত্র যদি খুঁজে না পান বা দিতে না চায় আর আপনার যদি প্রয়োজন হয় তাহলে কারো জন্য অপেক্ষা না করে নিজ দায়িত্বে কিছু তথ্য সংগ্রহ করে কিছু অর্থের বিনিময়ে কাগজপত্র সংগ্রহ করে নিজ দায়িত্বে রাখুন।
লেখক এর কথা
ওয়ারিশান সম্পত্তি বা পৈত্রিক সম্পত্তির উপর আপনার যেমন হক রয়েছে ঠিক তেমনি উক্ত সম্পত্তির কাগজপত্র উপরও আপনার হক বা অংশ রয়েছে। তাই উক্ত সম্পত্তির কাগজপত্র নিজ দায়িত্বে নিজের কাছে কিছু মূল কপি অথবা মূলক এর ফটোকপি রেখে দিন।
পরিশেষে বলতে চাই আমাদের এই আর্টিকেলটি যদি আপনার কাজে লেগে থাকে তাহলে আপনি আপনার পরিচিত জনদের মাঝে এই আর্টিকেলটি ছড়িয়ে দিন যাতে করে আপনার পরিচিত জনরাও এ বিষয়ে একটি ধারণা লাভ করতে পারে।
আমাদের এই আর্টিকেলটি শুরু হতে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে আপনাকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ
Bestwold নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url