OrdinaryITPostAd

পুত্র সন্তান না থাকলে ওয়ারিস কে কে হতে পারে

আসসালামু আলাইকুম! সুপ্রিয় পাঠক বৃন্দ, বেস্টওয়াল্ডের পক্ষ হতে আপনাকে জানাই স্বাগতম। নিশ্চয়ই আপনি এই মুহূর্তে জানতে চাচ্ছেন, কোন ব্যক্তির যদি পুত্র সন্তান না থাকলে ওয়ারিস কে কে হতে পারে এই বিষয়টি। আমরা এই বিষয়ে অত্র আর্টিকালে আলোচনা করেছি, শেষ পর্যন্ত আর্টিকেলটি করলে আশা করছি একটি স্পষ্ট ধারণা পেয়ে যাবেন।
পুত্র সন্তান না থাকলে ওয়ারিস কে কে হতে পারে
বলা হয় পুত্র সন্তান একটি বংশের প্রদীপ! অর্থাৎ আপনার বংশ কে পরবর্তী প্রজন্ম পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মাধ্যম হচ্ছে পুত্র সন্তান। আজকের বিষয়টি হচ্ছে কোন ব্যক্তির যদি পুত্র সন্তান না থেকে থাকে তাহলে ওই ব্যক্তির ওয়ারিশ অন্য কোন কোন ব্যক্তি হবে এই বিষয়ে। চলুন তাহলে বিষয়টি সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা নেওয়া যাক।

ভুমিকা

যদি কোন ব্যক্তির পুত্র সন্তান না থাকে তাহলে ওই ব্যক্তির সম্পত্তি দুইটি মাধ্যমে হস্তান্তর হতে পারে। আমরা এ বিষয়টি নিয়ে আজকের এই আর্টিকেলে সবিস্তারে আলোচনা করব ইনশাল্লাহ। আশা করছি আপনাকে শেষ পর্যন্ত এই আর্টিকেলের সাথেই পাবো। আমার বিশ্বাস এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়লে আপনার আলোচ্য বিষয়টি নিয়ে আর কোন প্রশ্ন থাকবে না।

পুত্র সন্তান কে

আমরা এ বিষয়ে সকলে অবগত আছি যে, “পুত্র সন্তান কে” আপনার ঔরসজাত ছেলে সন্তানই হচ্ছে, পুরুষ বা পুত্র সন্তান এটুকু তো সকলেই নিশ্চিত। তবে একটু বিষয় যোগ করতে চাই সেটি হচ্ছে, বর্তমান সময়ে বহু মানুষের বন্ধুত্ব বসত সন্তানাদি না হওয়ায় অনেক সময় বা ক্ষেত্রেবিশেষে সন্তান দত্তক নিয়ে থাকেন।

আর এই আধুনিক সময় তো টেস্ট টিউব বেবি ও নেওয়া হচ্ছে সে ক্ষেত্রে আপনার বংশের প্রদীপ জালানোর জন্য যেকোনো উপায়ে পুত্র সন্তান নিতেই পারেন। বলা বাহুল্য যে, সম্পত্তি অর্থাৎ জায়গা জমি ভাগ বন্টন এর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মুসলিম পারিবারিক আইন অনুসারে এবং সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ আইন কোরআনের আইন অনুসারে পুত্র সন্তান সেই ব্যক্তি, যে আপনার নিজ ঔরসজাত পুত্র সন্তান।

পুরুষ সন্তান না থাকলে ওয়ারিস কে কে হতে পারে

কোন ব্যক্তির যদি পুরুষ সন্তান না থাকে তাহলে ওই ব্যক্তির ওয়ারিশগণ বেশ কিছু ব্যাক্তি হতে পারে তবে সেগুলো হচ্ছে ফারায়েজের বিষয়। আজ আপনাদেরকে আমরা মুসলিম পারিবারিক আইন এবং কুরআনের বর্ণনা অনুসারে কোন কোন ব্যক্তি উক্ত ব্যক্তির সম্পত্তি পাওয়ার অধিকার রাখে এ বিষয়ে নিয়ে জানিয়ে দিবো ইনশাল্লাহ। চলুন তাহলে এ বিষয়ে একটি স্পষ্ট ধারণা নেওয়ার চেষ্টা করি-

ব্যক্তিটি যদি পুরুষ অর্থাৎ পিতার সম্পদ হয়ে থাকে

কোন একজন পুরুষ ব্যক্তি মৃত্যু কালে কোন পুত্র সন্তান না রেখে মৃত্যুবরণ করে! তাহলে তার রেখে যাওয়া সম্পত্তিগুলো যে সকল ব্যক্তি ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত হবেন তাহা-
  • মৃত ব্যক্তির ঔরসজাত কন্যা সন্তান বা সন্তানগণ।
  • মৃত ব্যক্তির বৈবাহিক সম্পর্কিত জীবিত স্ত্রী।
  • উক্ত ব্যক্তির জীবিত পিতা এবং মাতা অর্থাৎ ঊর্ধ্ব দুই পুরুষ। (পিতা-মাতা, দাদা-দাদি)
  • মৃত ব্যক্তির নিজ ভাই-বোন।
উপরোক্ত ৪ শ্রেণীর কোন ব্যক্তি যদি অবশিষ্ট না থাকে তাহলে তালাশ করতে হবে মৃত ব্যক্তির কোন ভাতুষ্পুত্র অর্থাৎ ভাইয়ের পুত্র যদি থেকে থাকে তাহলে উক্ত সম্পত্তি সে পাবে। যদি ভাইয়ের পুত্র অবশিষ্ট না থাকে তাহলে মৃত ব্যক্তির চাচা কিংবা চাচাতো ভাই অথবা চাচাতো ভাইয়ের পুত্র গণ উক্ত সম্পত্তির দাবিদার হবে। 

যদি এ সকল ব্যক্তি ও উপস্থিত না থাকেন সেক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির নানীর দিকে অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির নিকট আত্মীয় তালাশ করতে হবে। এক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির মামা হতে পারে, মামাতো ভাই হতে পারে, ফুপাতো ভাই হতে পারে, যদি এরকম কোন নিকট আত্মীয় খুঁজে না পাওয়া যায় তাহলে উক্ত ব্যক্তির সম্পত্তিটুকু সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন হয়ে যাবে। 

আশা করছি বিষয়টি একটু লম্বা হলেও আপনি একাধিকবার পড়লে এবং মনোযোগ সহকারে পড়লে বিষয়টি অবশ্যই বোধগম্য হবে। উল্লেখিত বিষয় যে মৃত ব্যক্তির যদি সৎ ভাই বা বোন, হোক সে বৈপিত্রক কিংবা বৈমাত্রিক যেকোনো ধরনের হয়ে থাকে সেটিও তালাশ করতে হবে।

কোনরকম যদি কোন অবশিষ্ট ভোগী না পাওয়া যায় তাহলে সে ক্ষেত্রে উক্ত সম্পত্তি টি সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন হবে। যদি কোন ক্রমে একজন ব্যক্তিও উপস্থিত থাকে তাহলে উক্ত সম্পত্তি অংশ মোতাবেক সেই ব্যক্তি পেয়ে যাবে।

ব্যক্তিটি যদি মহিলা অর্থাৎ মাতার সম্পদ হয়ে থাকে

কোন একজন মহিলা ব্যক্তি যদি মৃত্যু কালে কোন পুত্র সন্তান রেখে না যায় তাহলে তার রেখে যাওয়া সম্পত্তিগুলো যে সকল ওয়ারিশ বা ব্যক্তিগণ প্রাপ্ত হবেন তাহা হচ্ছে-
  • মৃত ব্যক্তির ঔরসজাত কন্যা সন্তান বা সন্তানগণ।
  • মৃত ব্যক্তির বিবাহিত অর্থাৎ বৈবাহিক সম্পর্ক যুক্ত জীবিত স্বামী।
  • মৃত ব্যক্তির ঊর্ধ্ব দুই পুরুষ অর্থাৎ তার জীবিত (বাবা-মা, দাদা-দাদি)।
  • মৃত ব্যক্তির জীবিত ভাই।
এক্ষেত্রেও উপরোক্ত চার শ্রেণীর ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত না থাকলে তার সম্পত্তিগুলো উপরে বর্ণিত পুরুষ ব্যক্তির ক্ষেত্রে যে সকল ব্যক্তিবর্গ প্রাপ্ত হবেন ঠিক তেমনি মহিলা ব্যক্তির ক্ষেত্রেও তালাশ করতে হবে।
পুত্র সন্তান না থাকলে বাকি ওয়ারিসগণ কে কতটুকু সম্পদ পাবে।

বলা হয়ে থাকে যে পুরুষ সন্তান একটি বংশের ধারাবাহিকতার রক্ষাকবচ। যদি কোন ব্যক্তির এই পুরুষ সন্তানের না থেকে থাকে তাহলে তার রেখে যাওয়া সম্পদ গুলো যে সকল ব্যক্তির মধ্যে ভাগ বন্টন করা হয়ে থাকে তাদের অংশের পরিমাণ এই পর্যায়ে আপনাকে জানিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছি। চলুন তাহলে বাকি অরিসগণ কে কতটুকু সম্পদ পাবে এ বিষয়ে একটি স্পষ্ট ধারণা।

মৃত ব্যক্তির যদি উর্ধ্ব দুই পুরুষ জীবিত থেকে থাকে তাহলে মৃত ব্যক্তির মোট সম্পত্তির ১/৬ অংশপ্রাপ্ত হবেন। এবং মৃত ব্যক্তির যদি স্ত্রী হয় তাহলে মোট সম্পত্তির দুই আনার অংশ প্রাপ্ত হবেন আর যদি মৃত ব্যক্তির স্বামী হয়ে থাকেন তাহলে এক্ষেত্রে স্বামী মোট সম্পদের চার আনার অংশ প্রাপ্ত হবেন।

যদি একজন কন্যা জীবিত থাকে অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির যদি ওয়ারিশ একজন কন্যা হয়ে থাকে তাহলে মোট সম্পদের অর্ধেক উক্ত কন্যা প্রাপ্ত হবেন। আর যদি মৃত ব্যক্তির একাধিক কন্যা ওয়ারিস হয়ে থাকে তাহলে মোট সম্পদের তিন ভাগের দুই ভাগ অংশ প্রতি কন্যা সমান অংশে প্রাপ্ত হবেন।

একথা বলা জরুরি যে, মৃত ব্যক্তির যদি উর্দ্ধ দুই পুরুষ জীবিত থাকে সাথে যদি মৃত ব্যক্তির স্বামী অথবা স্ত্রী জীবিত থাকে তাহলে মোট সম্পদ ভাগ বাটোয়ারা ক্ষেত্রে যদি মোট পরিমাণ এক এর বেশি হয়ে যায় তাহলে আউয়াল নীতি অনুসরণ করে ক্রমান্বয়ে অংশ কম পাবে।

অর্থাৎ আমি বোঝাতে চেয়েছি যদি মোট সম্পদের ভাগ বাটোয়ারা ১০০% এর অধিক হয়ে যায় তাহলে এক্ষেত্রে আওয়াল নীতি অনুসরণ করতে হবে। চলুন একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি ক্লিয়ার হওয়া যাক-

উদাহরণ

মনে করুন,একজন মৃত ব্যক্তির দুইজন কন্যা সন্তান ,একজন স্ত্রী, এবং মৃত ব্যক্তির পিতা এবং মাতা জীবিত রয়েছে। মৃত ব্যক্তির মোট সম্পদের পরিমাণ এক একর। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ভোগী হিসেবে মৃত ব্যক্তির পিতা এবং মাতা মোট সম্পদের ১/৬ প্রাপ্ত হবেন অর্থাৎ ১০০ পার্সেন্ট এর মধ্যে পিতা পাবে ১৬.৬৭% , মাতা পাবে ১৬.৬৭% এবং জীবিত স্ত্রী পাবে ১২.৫০% .

এবং মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া দুইজন কন্যা সন্তান পাবেন ৬৬.৬৭% ( যেহেতু মৃত ব্যক্তির পুত্র সন্তান না থাকাই একাধিক কন্যা সন্তান তার ওয়ারিস অনুসারে মোট সম্পদের এক তৃতীয় অংশের দুই অংশ প্রাপ্ত হন) উপরোক্ত বর্ণনা অনুসারে মোট সম্পদের পরিমাণ ১০০ পার্সেন্ট এর চেয়ে বৃদ্ধি পেয়ে ১১২. ৫ % উপনীত হচ্ছে এক্ষেত্রে আমাদেরকে আউয়াল নীতি অনুসরণ করতে হবে।

অর্থাৎ তাদের অংশ মোতাবেক বৃদ্ধি অংশটুকু সকলেই অংশ মোতাবেক কম পাবে অর্থাৎ আমরা যদি বিষয়টি এভাবে উপস্থাপন করি তাহলে দাঁড়াবে- পিতা এবং মাতা উভয়ে যথাক্রমে ২% হারে জীবিত স্ত্রী ১.৫৬% এবং কন্যাদয় ৮.৩৪% হারে কম পাবে। তাহলে তাদের মোট অংশ দাঁড়াচ্ছে, পিতা পাচ্ছে ১৪.৬৭% , মাতা পাচ্ছে ১৪.৬৭%, স্ত্রী পাচ্ছে ১১% এবং কন্যাদয় পাচ্ছে ৫৯.৬৭% হারে।

আশা করছি বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন, যদি বুঝতে অসুবিধা হয় তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন অথবা আর্টিকেলটি একাধিকবার পড়ে নিলে বিষয়টি বোধগব্য হবে বলে আশা করছি।

উপসংহার

বর্তমান সময়ে এরকম পরিস্থিতি খুব একটা লক্ষ্য করা যায় না কারণ, যদি কোন ব্যক্তির পুত্র সন্তান না হয়ে থাকে তাহলে ওই ব্যক্তি তার জীবন দশায় অর্থাৎ জীবিত থাকা অবস্থায় তার সমস্ত সম্পত্তি তার স্ত্রী এবং কন্যাগণ এর মধ্যে ওসিয়ত নামা করে যায়। তবে মানুষের মৃত্যু তো আর বলে আসে না তাই কোরআনের আইন সর্বশ্রেষ্ঠ আইন।

লেখকের কথা

পুত্র সন্তান না থাকলে কে কে ওয়ারিশ হবে তা আমরা আপনাকে সবিস্তারে বলার চেষ্টা করেছি, যদি কোন কারণবশত বা ভুলবশত কোন ব্যক্তি ছাড়া পড়ে থাকে বলে আপনার মনে হয় তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে জানাবেন আপনার জানানোর বিষয়টি আমরা গুরুত্বসহকারে নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করে তা অবশ্যই সংশোধন করে নিব।

পরিশেষে বলতে চাই আমাদের এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনি সহ আপনার পরিচিত জনদেরকে আমাদের এই ওয়েবসাইট বেস্টওয়াল্ড ফলো করুন যাতে করে আমাদের পরবর্তী আর্টিকেলগুলো আপনার নোটিফিকেশনে চলে যায় এবং আপনারা তা স্বাচ্ছন্দ্যে পড়ে নিতে পারেন।

শেষ পর্যন্ত বেস্টওয়াল্ডের সাথে থাকার জন্য আপনাকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Bestwold নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url