ওসিয়তনামা দলিল কি এবং এর রেজিস্ট্রেশন খরচ কত
আসসালামু আলাইকুম! সু-প্রিয় পাঠক, নিশ্চয়ই নিজ কাজে ব্যস্ত থেকে আপনার দিনটি অতিবাহিত হচ্ছে। এরিফাকে আপনি ওসিয়তনামা দলিল সম্পর্কে এবং এর খরচ কত হতে পারে এ বিষয়ে জানার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আজ আমরা এই আর্টিকেলে আপনার উক্ত বিষয়টির উপর আলোকপাত করেছি। আমাদের সাথে শেষ পর্যন্ত থাকলে উক্ত বিষয়টি সম্পর্কে একটি সম্মুখ ধারণা অর্জন করতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।
ওসিয়াত নামা দলিলটি মূলত এক প্রকার উইল। যে কাগজের মাধ্যমে বা দলিলের মাধ্যমে একজন ভূমি মালিক তার মৃত্যুর পরে কে উক্ত সম্পদের দাবিদার হবে তা নির্ধারণ করে দেওয়ার একটি প্রক্রিয়াকে বা ভূমি মালিকের ইচ্ছা ব্যক্ত করার একটি দালিলিক প্রমাণ হচ্ছে ওসিয়ত নামা দলিল। তবে এই দলিলটি লিখিত ও রেজিস্ট্রি কৃত হওয়া জরুরী।
ভূমিকা
ওসিয়ত নামা দলিল হচ্ছে একজন ভূমি মালিকের মৃত্যুর পর তাকে দাবিদার হবে তার একটি পূর্ণাঙ্গ ইচ্ছাপত্র। এই দলিলটিও সকল দলিলের মতো লিখিত হতে হয় এবং একটি রেজিস্ট্রি ফি প্রদানের মাধ্যমে উক্ত ইচ্ছাপত্রটি অবশ্যই রেজিস্ট্রি দলের মাধ্যমে ব্যক্ত করতে হয়। আমরা এ পর্যায়ে আপনাকে পর্যায়ক্রমে ওসিয়ত নামা দলিলের বিষয়াদি জানিয়ে দিচ্ছি।
অছিয়তনামা দলিল কি
ওসিয়ত নামা দলিল হচ্ছে একপ্রকার উইল। মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে এই দলিলটি সম্পাদিত হয়ে থাকে। মুসলমানদের ক্ষেত্রে এই দলিলটিকে ওসিয়ত নামা দলিল বলা হয়। পক্ষান্তরে অন্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে এই দলিল সম্পাদন হলে তাকে উইল বলা হয়। এটি ওসিয়ত কারী ব্যক্তির ইচ্ছা পত্র বলা যায়।
আরো পড়ুনঃ হেবার ঘোষণাপত্র দলিল রেজিস্ট্রেশন খরচ কতো
ওসিয়ত কারী ব্যক্তি তার এই দলিলের মাধ্যমে সে তার ওয়ারিশদের মধ্যে কোন একজন ব্যক্তি কে অথবা প্রতিটি ওয়ারিস কে অথবা ওসিয়তকারী ব্যক্তি ওয়ারিশ ব্যতীত তৃতীয় কোন ব্যক্তিকেও তার সম্পত্তি ওসিয়ত করতে পারে। তবে ওয়ারিশ ব্যতীত তৃতীয় কোন ব্যক্তির নিকট ওসিয়ত করলে তার একটি সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এই সীমাবদ্ধতা কি তা একটু পরে আমরা আপনাকে জানিয়ে দিচ্ছি।
ওসিয়ত নামা দলিল কি রেজিস্ট্রিকৃত হতে হয়
জ্বি হ্যাঁ! বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুসারে আপনাকে প্রতিটি দলিলে লিখিত ও সাব রেজিস্ট্রি অফিসে অথবা আদালত কর্তৃক রেজিস্ট্রির অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। বর্তমান সময়ে মৌখিক কোন কথার আইনগত ভিত্তি নেই। এর প্রধান কারণ আইন চাই প্রমাণ। আমরা সকলেই জানি আইন বন্ধ হয়, আইন প্রমাণের উপর ভিত্তি করে তার কার্য সম্পাদন করে।
ওসিয়ত নামা দলিলের রেজিস্ট্রি খরচ কত
এ পর্যায়ে আমরা আপনাকে ওসিয়ত নামা দলিল রেজিস্ট্রি করতে কত টাকা খরচ হচ্ছে বর্তমান সময়ে তার একটি ধারণা আপনাকে দিয়ে দিচ্ছি। তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, এই খরচটি নির্ধারিত নয় সময়ের প্রেক্ষিতে এই খরচ কম বেশি হতে পারে। এমনকি সাব রেজিস্ট্রি অফিস এর নির্ধারিত অর্থাৎ এলাকা ভেদে এর খরচ ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। চলুন সরকারি খরচটি দেখে নিই-
- রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ - ২০০/=
- হলফনামা বাবদ- ৩০০/=
- ই ফিস বাবদ- ১০০/=
- এন ফিস বাবদ- ১৬০/=
- এম এন ফিস- ২৪০/=
উপরোক্ত খরচ সমূহ হচ্ছে সরকারি খরচ। তবে এর সাথে আপনাকে যুক্ত করতে হবে, যে মহরি কর্তিক বা আইনজীবী কর্তৃক দলিলটি লিখিয়ে নিবেন তার জন্য একটি সম্মানি। এবং এর সাথে অফিস খরচ আপনাকে প্রদান করতে হবে। এই অফিস খরচটি হচ্ছে আমাদের বর্তমান সময়ের ব্যাধি যা আপনাকে পরিশোধ করতে বাধ্য। এটির আইনগত কোন ভিত্তি নেই তারপরও আপনাকে প্রদান করতেই হবে।
কোন ব্যক্তি সমূহকে ওসিয়ত করা যায়
একজন ভূমি মালিক সে চাইলে যেকোনো ব্যক্তিকে তার নিকট বা তার সত্ব সম্পত্তি যে কারণে নিকোট ওসিয়ত করতে পারে। তবে একটি চাট দেওয়ার ব্যবস্থা আমরা করেছি যাতে আপনি সহজেই বিষয়টি অনুধাবন করতে পারেন। চলুন দেখে আসি-
- কোন একজন ওয়ারিস কে চাইলে ওসিয়ত করতে পারে।
- একাধিক ওয়ারিশকেও ওসিয়ত করতে পারে।
- যতজন ওয়ারিশ থাকবে চাইলে সকলকেই তাদের প্রাপ্য অংশ মোতাবেক ওসিয়ত করতে পারে, তবে এটি প্রয়োজন হয় না।
- ওসিয়ত কারী ব্যক্তি চাইলে তার ওয়ারিসগণ ব্যতীত তৃতীয় পক্ষের নিকট ওসিয়ত করতে পারে। তবে তৃতীয় ব্যক্তির নিকট ওসিয়ত করার জন্য কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এই বাধ্যবাধকতাটাকি এ বিষয়ে আপনাকে শীঘ্রই জানিয়ে দিচ্ছি।
ওসিয়াতকৃত সম্পদের সীমাবদ্ধতা
একজন ভূমি মালিক ইচ্ছা করলেই যেমন তার সকল সম্পদ দান বা হেবা করতে পারেনা ঠিক তেমনই একজন ভূমি মালিক ইচ্ছা করলেই তার সমস্ত সম্পদ ওসিয়ত করতে পারেনা। তার ইচ্ছাকৃত বা ওসিয়তকৃত সম্পত্তি ওসিয়ত করতে একটি সীমাবদ্ধতা রয়েছে তা আপনাকে এখন জানিয়ে দিচ্ছি-
ওশিয়ত কারী ব্যক্তি যদি তার ওয়ারিশ গন দের মধ্যে কোন একজন ব্যক্তি কে ওসিয়ত করতে চায় অথবা তার ওয়ারিশগণ ব্যতীত তৃতীয় কোন পক্ষের নিকট ওসিয়ত করতে চায় তাহলে ওসিয়তদাতা ব্যক্তির মোট সম্পদের তিন ভাগের এক ভাগ সে ওসিয়ত করতে পারবে। ওসিয়তনামা দলিলের ক্ষেত্রে এটাই হচ্ছে সীমাবদ্ধতা।
ওসিয়াত গ্রহীতা কখন উক্ত সম্পদের মালিক হবে
আমরা ইতিপূর্বে জেনেছি ওসিয়ত নামা দলিল হচ্ছে একটি উইল বা ইচ্ছাপত্র। অতএব এই দলিলটি তখনই কার্যকর হবে যখন ওসিয়ত দাতা মৃত্যুবরণ করবে অর্থাৎ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত উক্ত সম্পদের মালিক ও শিওর দাঁতাই থাকবে। ওসিয়ত দাতার মৃত্যুর পর ওসিয়ত গ্রহিতা উক্ত সম্পত্তিটি ভোগ দখল, বিক্রয়, দান, হেবা, এমনকি আবার ওসিয়ত নামা দলিল করার ক্ষমতা পাই।
ওসিয়ত নামা দলিল কি বাতিল হয়
প্রিয় পাঠক একটি কথা সকল সময়ের জন্য মনে রাখবেন, আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে যে দলিল বাতিল হয়। কিন্তু আপনি একজন সচেতন মানুষ আপনার এটি জানা প্রয়োজন যে, একটি রেজিস্ট্রিকৃত দলিল হোক সেটি চিটিং কিংবা ভুলবশত অথবা হতে পারে সেটি ইচ্ছাকৃত দুর্নীতি। তবে এটাই বাস্তব যে কোন রেজিস্ট্রি কৃত দলিল বাতিল হয় না।
আরো পড়ুনঃ পত্রিক সম্পত্তি নামজারি করার নিয়ম
তবে এখন আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, দলিল যদি ভুল হয় কিংবা চিটিং হয় অর্থাৎ জাল হয় তাহলে কি উক্ত দলিলটিও কার্যকর থেকে যাবে? জ্বি না, বিষয়টি মোটেও তা নয়। একটি রেজিস্ট্রি কৃত দলিলের উপরে যদি কোন অভিযোগ দায়ের করা হয়, তাহলে উক্ত অভিযোগ টিকে গুরুত্ব দিয়ে তা বিচার-বিশ্লেষণ করে যদি মনে হয় উক্ত দলিলটি ত্রুটিপূর্ণ তাহলে উক্ত দলিলটিকে রোহিতকরণ করা হয়।
অসীয়ত নামা দলিল রহিত হওয়ার কারণ সমূহ
এ পর্যায়ে আমরা আপনাকে ওসিয়ত নামা দলিল রহিত হওয়ার কারণসমূহ জানিয়ে দিচ্ছি-চলুন তাহলে বিষয়টি দেখা যাক।
- ওসিয়ত কারী ব্যক্তি যদি ওসিয়াতকৃত সম্পত্তিটি হতে কিছু অংশ বিক্রয় করে।
- ওসিয়ত কারী ব্যক্তি সম্পত্তিটি যদি তার নিজ ওয়ারিশ ব্যতীত এবং কোন ওয়ারিশ ছাড়া পরেছে এমনভাবে ওসিয়ত করে আর সেটি তার মোট সম্পদের এক তৃতীয় অংশের বেশি হয় তাহলে উক্ত দলিলটিও রোহিত করার দাবিদার।
- অসিত কারী ব্যক্তির যদি কোন ওয়ারিশ উক্ত দলিলের উপর অভিযোগ দায়ের করে।
ওসীয়ত নামা দলিল কখন নামজারি করা হয়
ওসিয়ত নামা দলিলটি তখনই নামজারীকরণ করা হয় যখন ওসিয়তদাতার মৃত্যুর পর ওসিয়ত গ্রহিতা উক্ত সম্পত্তির মালিকানা অর্জন করে। এজন্য ওসিয়াত গ্রহীতা কে নামজারি করন করার জন্য কয়েকটি কাগজীয় দলিল সংগ্রহে রাখতে হবে তা নিচে আপনাকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিচ্ছি।
আরো পড়ুনঃ নামজারি ছাড়াই জমি হস্তান্তর করার নিয়ম
- ওসিয়ত কারীর মৃত্যুর সনদপত্র।
- ওসিয়তকৃত দলিলের ফটোকপি।
- ওসিয়ত দাতা এর নামে হাল সালের ভূমি উন্নয়ন করের রশিদ।
- আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি।
- এবং প্রয়োজনীয় অর্থ।
উপসংহার
উপযুক্ত তথ্যাদি পর্যালোচনা করে আমরা এই কথায় উপনীত হতে পারি যে কোন ব্যক্তি তার মোট সম্পদের এক তৃতীয় অংশ সম্পদ যে কাউকে ওসিহত করতে পারে। তবে সম্পূর্ণ সম্পত্তি ওসিহত করতে হলে তার সমুদয় অরিস গনের মধ্যে ওসিহত করতে হবে। তবে এটুক জানা রাখা ভালো যে ইসলামে কোন ব্যক্তির সমুদয় সম্পত্তি ওসিয়ত করা নিষিদ্ধ।
লেখক এর কথ
মুসলিম ফারায়েজ অনুযায়ী বিধান আছে যে, কোন ব্যক্তি তার সমুদয় সম্পত্তি হেবা, ওসিয়ত করতে পারবে না। অতএব বিষয়টির উপর আপনাকে গুরুত্ব আরো করতে হবে। আপনি যদি আমাদের এই আর্টিকেলটি সম্পন্ন করে থাকেন তাহলে বিষয়টি অবশ্যই অনুধাবন করতে পারছেন।
পরিশেষে একটি কথা বলতে চাই যে, আমাদের এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার পরিচিতজনদের মাঝে এটি ছড়িয়ে দিন যাতে করে আপনার পরিচিত ব্যক্তিরা ও বিষয়টি সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা অর্জন করতে পারে।
শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে যেন আমাদের পক্ষ হতে আন্তরিক ধন্যবাদ
বিষয় টি পড়ে অনেক ভালো লাগলো।