গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবেনা
আসসালামু আলাইকুম! প্রিয় পাঠক বিন্দু, আপনাকে জানাই বেস্টওয়াল্ড এর পক্ষ হতে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আমরা লক্ষ্য করছি আপনি এই মুহূর্ত গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবেনা এই বিষয়টিতে জানার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আমাদের এই আর্টিকালে আপনার কাঙ্খিত বিষয়গুলো নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন ভালো কিছু পাবেন ইনশাল্লাহ।
গর্ভাবস্থায় প্রতিটি মহিলার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময় একজন মহিলা বা মা জীবনের সবথেকে কঠিন সময় পার করে। যে কারণে এই সময়টিতে একজন মহিলাকে অনেক কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়, বিশেষ করে খাদ্যভাসের বিষয়টা বিশেষভাবে গুরুত্ব প্রদান করতে হয়। এজন্য আপনার উচিত গর্ভাবস্থায় নিকটস্থ একজন গাইনি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া।
ভূমিকা
নিশ্চয়ই আপনি বাবা-মা হতে চলেছেন! আপনার অনাগত সন্তান ও আপনার জন্য বেস্টওয়াল্ড এর পক্ষ হতে অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। এই সময়টি আপনার জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তাই সব থেকে গুরুত্ব প্রদান করবেন আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকার ওপর। কারণ আপনার খাদ্য খাওয়ার উপর নির্ভর করে আপনার গর্ভে বেড়ে ওঠা সন্তানের সুস্বাস্থ্য।
গর্ভাবস্থায় কী খেতে হবে
গর্ভাবস্থায় আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সুষম খাবার, ভিটামিন ও খনিজ জাতীয় পদার্থ রাখুন। আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যে সকল খাদ্য রাখা উচিত তা আপনাকে এ পর্যায়ে জানিয়ে দিচ্ছি-
সুষম খাদ্য তালিকার মধ্যে রাখতে পারেন-ফলমূল, শাকসবজি, আমিষ, ডেইরি, স্নেহা জাতীয় খাদ্য।
ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের মধ্যে রাখতে পারেন-ক্যালসিয়াম, আয়োডিন, আয়রন, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি, ফলিক অ্যাসিড।
গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না
না ধোওয়া ফল এবং সবজি- গর্ভ অবস্থায় কোন ক্রমেই না ধোয়া ফল ও সবজি খাওয়া যাবেনা। কারণ বিভিন্ন ধরনের সবজিতে রয়েছে খোসা আর এই খোসার উপর বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর কীটনাশক ও ব্যাকটেরিয়া জমে থাকে যা না ধুয়ে খেলে আপনার এবং আপনার অনাগত শিশুর স্বাস্থ্য ঝুঁকি হতে পারে। এজন্য সকল সময় ফল ও সবজি ধুয়ে খেতে হবে।
আরো পড়ুনঃ সজনে পাতার উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম
এ পর্যায়ে আপনাকে জানিয়ে দিচ্ছি কোন কোন সবজি গর্ভাবস্থায় খাওয়া যাবেনা-
আনারস, করোলা, পেঁপে, সজিনা, অ্যালোভেরা, আধা সিদ্ধ ডিম, দোকান থেকে কেনা বিভিন্ন ধরনের সালাদ।
পেঁপে কেন খাওয়া যাবে না
গর্ভ অবস্থায় পেঁপে খাওয়া এ কারণেই যাবে না, কারণ পেঁপেতে ল্যাটেক্স নামক এক ধরনের উপাদান থাকে যা আপনার অনাগত সন্তানের স্বাস্থ্যের ক্ষতিসাধন করতে পারে।
আধা সিদ্ধ ডিম কেন খাওয়া যাবেনা
একজন গর্ভবতী মহিলার কখনোই আধার সিদ্ধ ডিম খাওয়া উচিত হবে না, এর কারণ হচ্ছে অল্প সিদ্ধ বা আধা সিদ্ধ ডিম সালমোনেরা দ্বারা দূষিত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায় যার কারণে আপনার বমি বমি ভাবের সৃষ্টি হতে পারে এবং ডায়রিয়া হতে পারে। এজন্য আপনাকে অল্প সিদ্ধ ডিম না খেয়ে ডিমটি পরিপূর্ণভাবে সিদ্ধ করে খেতে হবে।
সজিনা কেন খাওয়া যাবে না
একজন গর্ভবতী মহিলাকে অনেক কিছুই মেনে চলতে হয়, এর মধ্যে বেশ কিছু খাদ্য রয়েছে যা এড়িয়ে চলতে হয়। যে সকল খাবার গুলো এড়িয়ে চলতে হয় তাদের মধ্যে একটি হচ্ছে সজিনা পাতা। কারণ সজিনাতে রয়েছে এক ধরনের উপাদান যা “আলফা সিটেস্টেরল” নামে প্রচলিত। এই উপাদানটির মাধ্যমে হয়ে যেতে পারে গর্ভপাত। এজন্য এই সবজিটি এড়িয়ে চলা উচিত।
করলা কেন খাওয়া যাবে না
একজন গর্ভবতী মহিলার করলার সবজি এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ করলাতে গ্লাইকোলাইসিস, সেপনিক, মারোডিসিন নামক ক্ষতিকর পদার্থ থাকে যা আপনার অনাগত শিশুটির ক্ষতি সাধন করতে সক্ষম। এজন্য এই সবজিটি আপনার এড়িয়ে চলা উচিত।
এলোভেরা কেন খাওয়া উচিত নয়
এলোভেরার মাধ্যমে আপনার ত্বক, রূপচর্চা, এবং আপনার পেট পরিষ্কার রাখতে এলোভেরা রসের জুড়ি নেই, তবে এটি গর্ভাবস্থায় খাওয়া উচিত হবে না কারণ এলোভেরা খাওয়ার ফলে আপনার গর্ভপাত হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় যে সকল খাবার খাওয়া আপনার উচিত হবে না
- কাঁচা ডিম খাওয়া যাবেনা।
- সামুদ্রিক মাছ খাওয়া যাবে না।
- আধা সিদ্ধ মাংস খাওয়া যাবেনা।
- কলিজা এবং কলিজা দিয়ে তৈরিকৃত কোন খাবার খাওয়া যাবে না।
- অ্যালকোহল যুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না।
- অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার খাওয়া হতে বিরত থাকতে হবে।
- অতিরিক্ত চিনি জাতীয় খাবার খাওয়া সমুচিত হবে না।
গর্ভ অবস্থায় এই পাঁচটি ফল খাবেন
একজন নারী গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন নিয়ম এবং খাদ্য তালিকার মধ্যে বিভিন্ন খাদ্য মেনে খেতে হয় অর্থাৎ আপনাকে ডায়েট কন্ট্রোল করতে হয়। তবে নিচের পাঁচটি ফল আপনি বেশি বেশি খাবেন-
- পেয়ারা-পেয়ারাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি।
- কলা-পলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- কমলা-ফলিক এসিড ও ফাইবার এর জন্য গর্ভ অবস্থায় কমলা খাওয়া দরকার।
- আপেল-আপেলের প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে।
- কিউই-এই ফলটিতে বিভিন্ন ধরনের উপাদান রয়েছে, যেমন ফাইবার, ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন সি ও ই, এনটি অক্সাইড।
একজন গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকায় যা রাখবেন
প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় আমিষ জাতীয় খাদ্য অবশ্যই রাখবেন, আমিষ জাতীয় খাদ্যের মধ্যে রয়েছে মাছ কম চর্বিযুক্ত মাছ, পরিপূর্ণ সিদ্ধ ডিম, ডাল, বাদাম ইত্যাদি। শর্করা জাতীয় খাদ্য খাদ্য তালিকা মধ্যে রাখতে হবে-ভাত, রুটি, আলু, লুডুস ইত্যাদি।
গর্ভাবস্থায় একজন মেয়ে যে সকল সবজি ও ফল বেশি পরিমাণে খাবে
গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের প্রচুর পরিমাণ এনার্জীর প্রয়োজন, কারণ তার গর্ভে বেড়ে ওঠে অন্য একটি তাজা প্রাণ, আপনার অনাগত শিশুটির শারীরিক গঠন, মস্তিষ্ক অর্থাৎ ব্রেন মায়ের গর্ভ অবস্থাতেই তৈরি হয়। এজন্য একজন মা গর্ভ অবস্থায় সর্ব উৎকৃষ্ট মানের খাবার গ্রহণ করা উচিত।
আরও পড়ুনঃ চা পাতায় কোন ভিটামিন থাকে
এ পর্যায়ে আপনাকে জানিয়ে দিচ্ছি একজন মা গর্ভ অবস্থায় যে সকল সবজিগুলো বেশি খাবে এর মধ্যে রয়েছে-পালং শাক, মটরশুটি, টমেটো, মিষ্টি আলু, মিষ্টি কুমড়া, কচু শাক, গাজর প্রভৃতি। এবার আপনাকে জানিয়ে দেই যে সকল ফল বেশি পরিমাণে খাবে-আম, পেয়ারা, কলা, লেবু, নাশপাতি, আপেল, বেল, বড়ই, ইত্যাদি।
গর্ভকালীন চেকআপ
গর্ভকালীন সময়ে আপনার মনের ভেতর অনেক আতঙ্ক কাজ করে, এজন্য আপনার নিয়মিত স্বাস্থ্য চেকআপ করার প্রয়োজন। আপনি গর্ভধারণ করার পর একটি সময় অতিবাহিত হওয়ার পর একজন গাইনি বিশেষজ্ঞের টাচে থাকবেন, যাতে করে আপনার গর্ভ অবস্থায় আপনার গর্ভের শিশু কোন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে কিনা এ বিষয়ে আপনি হলফ করতে পারেন।
কারণ গর্ভকালীন সময়ে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে-যেমন
- রক্তশূন্যতা।
- অকাল প্রসব।
- মৃত সন্তান প্রসব।
- কম ওজনের সন্তান জন্মদান।
উপসংহার
গর্ভ অবস্থায় একজন মহিলা তার জীবনের সর্বোচ্চ কষ্টের সময় অতিবাহিত করে। শুধুমাত্র তার পরিবারকে একটি সন্তান দেওয়ার আশায়। এজন্য প্রতিটি গর্ভবতী মহিলাকে এক্সট্রা ভাবে কেয়ার করা উচিত। এবং তাদের খাদ্য তালিকা এমনভাবে করা উচিত যাতে করে তার এবং আগত শিশুর স্বাস্থ্যের কোন ব্যাঘাত না ঘটে।
লেখকের কথা
একজন মা জানে সন্তান জন্মদানে কি নিদারুণ কষ্ট। এজন্য আমাদের প্রতিটি মানুষেরই উচিত একজন গর্ভবতী নারীকে সকল সময়ের জন্য সকল বিধি ব্যবস্থা মেনে চলতে উৎসাহ প্রদান করা এবং তার প্রয়োজনীয় খাদ্য এবং স্বাস্থ্যের গুরুত্ব প্রদান করা।
আমাদের এই আর্টিকেল হতে আপনারা যা কিছু শিখলেন বা জানতে পারলেন সেই সমস্ত কিছু অবশ্যই পালন করবেন সাথে সাথে অবশ্যই একজন নিকটস্থ গাইনি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিবেন। আমরা বিভিন্ন ব্লগ হতে তথ্য সংগ্রহ করে আপনাদেরকে একটি গুছানো তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি মাত্র।
পরিশেষে এটাই বলতে চাই আমাদের এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার পরিচিতজনদের মাঝে শেয়ার করে দিন এবং নিত্য নতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি ফলো করুন এবং আপনার পরিচিতজনদের ফলো করতে বলুন।
আমাদের সাথে শেষ পর্যন্ত থাকার জন্য আপনাকে জানাই বেস্টওয়াল্ড এর পক্ষহতে আন্তরিক ধন্যবাদ
কথাগুলো অনেক দরকারি। ধন্যবাদ