মালিকানা ভিত্তিতে ব্যবসা কয় প্রকার
আসসালামুআলাইকুম! সু-প্রিয় পাঠক বৃন্দ, বেস্টওয়াল্ড এর ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। আশা করছি আল্লাহর অশেষ রহমতে সুস্থ থেকে নিজ কাজে ব্যস্ত রয়েছেন! এরিফাকে আপনি মালিকানা ভিত্তিতে ব্যবসা কয় প্রকার সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আমরা আজ এই আর্টিকালের মাধ্যমে উক্ত বিষয়টি আলোচনা করেছি, আশা করছি স্পষ্ট ধারণা পেয়ে যাবেন।
মহান আল্লাহ তায়ালা ব্যবসা কে করেছেন হালাল এবং সুদকে করেছেন হারাম। ব্যবসা হচ্ছে একটি স্বাধীন বা মুক্ত পেশা। ব্যবসার কয়েকটি উপাদান রয়েছে আর এই ধরণগুলোকে আমরা মালিকানার ভিত্তিতে প্রকাশ করে থাকে। ব্যবসার এই ধরণসমূহ কে, এবং মালিকানার ভিত্তিতে যে বিষয় গুলো হয়েছে তার উপর ভিত্তি করেই আজকের এই আলোচনা।
ভূমিকা
মানব সভ্যতা বিকাশ ও উন্নয়নের সাথে ব্যবসার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ অঙ্গাঅঙ্গী ভাবে জড়িত। বর্তমান সময়ে ব্যবসা এতটাই বিস্তার লাভ করেছে যে, একটি জ্ঞান অর্জনের জন্য পৃথক একটি শাখা, শিখার জন্য আমাদের শিক্ষা কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। খোদেই ব্যবসাকে কেন্দ্র করেই আজ আমাদের বাংলাদেশেও এবং বিশ্বে বিবিএ কোর্স বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু রয়েছে।
ব্যবসা কাকে বলে
আমরা জানি, মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে উৎপাদন ও বন্টন সহ সকল বৈধ অর্থনৈতিক কাজকে ব্যবসা বলে। অন্যভাবে আমরা বলতে পারি যে, কোন কাজে যদি পাঁচটি উপাদান লক্ষ্য করা যায় এবং তা একে অপরের সাথে জড়িত সেই পাঁচটির উপর লক্ষ্য রেখেই আমরা তাকে ব্যবসা বলতে পারি। সেই পাঁচটি উপাদান হচ্ছে-
- মুনাফা অর্জন-অর্থাৎ অর্থনৈতিক কার্যক্রম হতে পারে সেটি মুনাফা অর্জন অথবা মুনাফারাস।
- উৎপাদন- কারবার এর উদ্দেশ্যে কোন কিছু উৎপাদন করাটাও ব্যবসায়ের অন্তর্ভুক্ত।
- বন্টন অর্থাৎ বাজারজাতকরণ- কোন কিছু উৎপাদন করার পর তা যদি সঠিক উপায়ে সঠিক জায়গায় বন্টন না করা হয় অর্থাৎ বাজারজাতকরণ না করা হয় তাহলে উক্ত উৎপাদিত পণ্য ব্যবসায়ের অন্তর্ভুক্ত নয়।
- স্বাধীন পেশা-আপনি যে কাজটি করছেন সেটি অবশ্যই স্বাধীন হতে হবে, যদি সেটি পরাধীন হয় তাহলে সেটি ব্যবসায়ের অন্তর্ভুক্ত নয়! তবে আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে স্বাধীন মানে কিন্তু উদাসীনতা নয়।
- বৈধতা থাকতে হবে- আপনি যে কাজটি করছেন তা অবশ্যই আইনত বৈধতা থাকতে হবে, আইন দ্বারা বৈধতা পাইনি এমন কোন কার্যক্রম ব্যবসায়ের অন্তর্ভুক্ত হবে না।
এখন আমরা ব্যবসায়ীকে একটি রূপ দিতে পারি সেটা হচ্ছে, কোন কার্যক্রমের মধ্যে যদি আমরা অর্থনৈতিক কার্যক্রম উৎপাদন বন্টন মুক্তপেশা এবং বৈধতা লক্ষ্য করি তাহলে উক্ত কার্যক্রমকে আমরা ব্যবসা বলতে পারি।
ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য
যে কোনো কাজ বা উপাদান তার বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভরশীল। কোন কার্যক্রমকে আমরা চিনতে পারি তার বৈশিষ্ট্য দেখে। ঠিক তেমনি ব্যবসা কে চিনতে তার কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে তা আমরা নিরূপণ করলে বুঝতে পারব সেটি ব্যবসা। চলুন এ পর্যায়ে আমরা ব্যবসা চিনার বৈশিষ্ট্যগুলো এক নজরে দেখে নেই-
- মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্য থাকতে হবে।
- উক্ত কার্যক্রমের মধ্যে ঝুঁকি এবং অনিশ্চয়তা থাকতে হবে।
- আপনার কার্যক্রমের মধ্যে অবশ্যই লেনদেন থাকতে হবে।
- কার্যক্রমটি অবশ্যই স্বাধীন ও মুক্ত হতে হবে।
- কার্যক্রমটির অবশ্যই আইনত বৈধতা থাকতে হবে।
- কার্যক্রমটির মাধ্যমে অবশ্যই উপযোগ ও সম্পদ সৃষ্টির কার্যকারিতা থাকতে হবে।
মালিকানার ভিত্তিতে ব্যবসায়ের প্রকারভেদ
আমরা লক্ষ্য করি যে, ব্যবসা পরিচালনার মাধ্যম বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। এরই মধ্যে একটি হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তা মালিকানা। মালিকানার ভিত্তিতে ব্যবসা পাঁচ প্রকার চলুন আমরা এই পাঁচ প্রকার ব্যবসায়ের নাম গুলো জেনে নেই-
- একমালিকানা অর্থাৎ একক মালিকানা ব্যবসা।
- অংশীদারি ব্যবসা।
- যৌথ মূলধনী ব্যবসা।
- সমবায় সমিতি।
- রাষ্ট্রীয় ব্যবসা।
আমাদের সমাজে উপরোক্ত পাঁচ ধরনের ব্যবসা লক্ষ্য করা যায় এর বাইরে অন্য কোন ব্যবসা এই মুহূর্তে আমরা লক্ষ্য করতে পারিনি বিধায় এই 5 ধরনের বাইরে কোন ব্যবসা নাই বলে আপাতত আমরা মনে করছি আর এটি বৈশ্বিকভাবে স্বীকৃত।
এক মালিকানা ব্যবসা
যে ব্যবসা একক ব্যক্তির মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত হয়ে থাকে এবং এর লাভ ক্ষতি একজনই বহন করে এ ধরনের ব্যবসাকে একক মালিকানা ব্যবসা বলে। আমাদের আশেপাশে সাধারণত যে সকল ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান দেখা যায় তা মূলত এক মালিকানা ব্যবসা। উদাহরণ হিসেবে আমরা বলতে পারি মুদি দোকান, মাছওয়ালা, সবজিওয়ালা, চা-পুরি ওয়ালা, কীটনাশক বিক্রেতা ইত্যাদি
অংশীদারী ব্যবসা
এ ব্যবসাটি সাধারণত এক মালিকানা ব্যবসায়ী হতে বৃহৎ। সাধারণত দুই বা ততোধিক ব্যক্তির দ্বারা গঠিত ও পরিচালিত ব্যবসাকেই অংশীদারি ব্যবসা বলে। অন্যভাবে বইয়ের ভাষায় বলা যায়, চুক্তিবদ্ধ সম্পর্কের ভিত্তিতে একাধিক ব্যক্তি কর্তৃক গঠিত ও পরিচালিত ব্যবসাকে এই অংশীদারি ব্যবসা বলে। বাংলাদেশ বহাল ১৯৩২ সালের অংশীদারি আইনের চারধারে বলা হয়েছে।
সকলের দ্বারা সকলের পক্ষে, একজনের দ্বারা পরিচালিত ব্যবসায়ের মুনাফা নিজেদের মধ্যে বন্টনের নিমিত্তে চুক্তিবদ্ধ ব্যক্তিবর্গ যে ব্যবসা গঠন করে তাকে অংশীদারী ব্যবসা বলে। অংশীদারি ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সাধারণ ব্যবসার জন্য ২০ জন অংশীদার এবং ব্যাংকিং ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ জন সদস্য থাকতে পারবে।
যৌথ মূলধনী ব্যবসা
এই ব্যবসাটি সাধারণত অংশীদারি ব্যবসা হতে বৃহৎ। এই ব্যবসাটি সাধারণত কিছু শিয়ার হোল্ডার বিক্রয়ের মাধ্যমে এবং আইনের অধীনে গঠিত ও পরিচালিত কৃত্রিম ব্যক্তিসত্তা অধিকারী সীমিত দায় বিশিষ্ট ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। এর ব্যাপকতা বিস্তৃত এবং কার্যক্রম সুগঠিত।
সমবায় সমিতি
সমবায় সমিতি হচ্ছে সম্মিলিত কর্ম প্রচেষ্টা বা সকলের মিলিত উদ্যোগে কোন কিছু গড়ে তোলার প্রয়াসকে বোঝায়। কিছু মানুষ নিজেদের অর্থনৈতিক কল্যাণ লাভের জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গড়ে তোলা সংগঠনকেই সমবায় সংগঠন বলে আর এই সংগঠন কর্তৃক যে সমিতি পরিচালিত হয় তাহাই হচ্ছে সমবায় সমিতি। চলুন এ পর্যায়ে সমবায় সমিতির কিছু বিশেষ উক্তি আমরা জেনে নিই-
- একতাই বল বা একতাই শক্তি।
- সকলের তরে সকলে।
- দশে মিলে করি কাজ।
- স্বাবলম্বনই শ্রেষ্ঠ অবলম্বন।
- সাম্য ও সহযোগিতা। ইত্যাদি
রাষ্ট্রীয় ব্যবসা
ঐ সকল ব্যবসাকে রাষ্ট্রীয় ব্যবসা বলা হয় যে সকল ব্যবসায়ী সাধারণ মানুষের কোন কর্তৃত্ব থাকে না। অর্থাৎ রাষ্ট্র করতে গঠিত ও পরিচালিত এবং পরবর্তীতে জাতীয়করণ কৃত কোন ব্যবসায়ের মালিকানা পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ রাষ্ট্রের অধীনে থাকে এরূপ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা বলে। উদাহরণস্বরূপ আমরা বলতে পারি যে বাংলাদেশ রেলওয়ে, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিআরটিসি, ওয়াসা, তিতাস, বাংলাদেশ বিমান ইত্যাদি।
উপসংহার
ব্যবসার ধরন এবং মালিকানার উপর ভিত্তি করেই আমাদের এই দেশে বর্তমানে পাঁচ ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয়ে থাকে, যা আমরা উপরোক্ত আলোচনায় স্পষ্ট করেছি। এই পাঁচ ধরনের ব্যবসা সারা পৃথিবী জুড়ে স্বীকৃত এবং পরিচালিত। ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে মালিকানা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
লেখক এর কথা
ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে মালিকানা যেমন গুরুত্বপূর্ণ পক্ষান্তরে উক্ত ব্যবসাটির আইনগত বৈধতা এবং মূলধনও গুরুত্বপূর্ণ। মূলধন ছাড়া যেমন কোন ব্যবসায়ী পরিচালনা করা সম্ভব নয়, পক্ষান্তরে সততা এবং আইনগত বৈধতা ছাড়াও একটি ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কোনভাবেই সম্ভব নয়। তাই ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে মূলধনের পাশাপাশি সততা এবং আইনগত বৈধতা জরুরি।
পরিশেষে বলতে চাই আমাদের এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনিসহ আপনার পরিচিত জনদেরকে আমাদের ওয়েবসাইট বেস্টওয়াল্ড কে ফলো করে রাখুন যাতে করে পরবর্তী আপডেট এবং নতুন আর্টিকেল এর সন্ধান পেয়ে যান।
শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকার জন্য বেস্টওয়াল্ড এর পক্ষ থেকে আপনাকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ।
Bestwold নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url