বায়না দলিলের পূর্বে ও পরে যা যা করবেন
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক বৃন্দ, আমাদের ওয়েবসাইট বেস্টওয়াল্ডে আপনাকে স্বাগতম। ইমুতে আমরা লক্ষ্য করছি যে, আপনি বায়না দলিলের পূর্বে ও পরে যা যা করবেন সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আমরা এই আর্টিকেলের মধ্যে উক্ত বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে উক্ত বিষয়টির ধারণা গ্রহণ করবেন।
বায়না দলিল হচ্ছে একটি চুক্তিপত্র, যা দুইজন পক্ষ অর্থাৎ প্রথম পক্ষ এবং দ্বিতীয় পক্ষ উভয়ের মধ্যে কিছু শর্তসাপেক্ষে আদান-প্রদানের মাধ্যমে যুক্তিটি সম্পাদিত হয়। বায়না রেজিস্ট্রি দলিল হয়ে থাকলে এবং কোন মেয়াদ উল্লেখ না থাকলে সাধারণত মেয়াদ ৬ মাস হয়েছে থাকে কিন্তু বর্তমান নতুন আইন অনুসারে রেজিস্টিকৃত বায়না দলিলের মেয়াদ সাধারণত এক বছর করা হয়েছে।
ভূমিকা
একটি জমি ক্রয় করার পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে যে দলের সম্পাদন করা হয় অর্থাৎ চুক্তি সম্পাদন করা হয় তাহা হচ্ছে বাইনামা দলিল এর মাধ্যমে হতে পারে সে দলিলটি রেজিস্ট্রি ভুক্ত অথবা রেজিস্ট্রি ছাড়া তবে মনে রাখতে হবে বায়না দলিল এর গুরুত্ব তখনই থাকে যখন দলিল রেজিস্ট্রি ভুক্ত হয় রেজিস্ট্রি ছাড়া কোন দলিলের কার্যকারিতা থাকে না।
বায়না দলিল বা বায়না চুক্তি কি
বায়না দলিল হচ্ছে বিক্রেতা এবং ক্রেতার মধ্যে একটি চুক্তিপত্র। যার মধ্যে কিছু শর্ত এবং লেনদেনের বিস্তারিত বিবরণ সহ একটি সময় উল্লেখ থাকে। এবং সম্পাদিত চুক্তি পত্র অর্থাৎ বায়না দলিলটি অবশ্যই সাবরেজিস্টার অফিস করতে রেজিস্ট্রি ভুক্ত হতে হয়। উক্ত দলিলে যদি কোন রকম মেয়াদ উল্লেখ না থাকে তাহলে সাধারণভাবে বর্তমান আইনের প্রেক্ষিতে উহার মেয়াদ অটোমেটিক এক বছর হয়ে থাকে।
বায়না দলিলের প্রকারভেদ
বায়না দলিল অর্থাৎ বায়না চুক্তি সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে-যথাঃ
- রেজিস্ট্রি ভুক্ত বায়না দলিল
- রেজিস্ট্রি ছাড়া বায়না দলিল অর্থাৎ ৩০০ টাকার ডেমিতে একজন মুহুরী কর্তৃক লিখিত চুক্তি পত্র। এই দলিলের আইনি কোন গুরুত্ব নেই তবে এটি সামাজিকভাবে একটি সাধারণ প্রমাণপত্র হিসাবে তৈরি করা হয়।
বায়না দলিল সম্পাদনের পূর্বে এবং পরে যা যা করণীয়
- জমি কেনার পূর্বে আইনজীবীর চূড়ান্ত মতামত গ্রহণ করুন- আপনার কষ্টটা অর্জিত টাকা-পয়সা দিয়ে একটি জমি ক্রয় করবেন জমিটি অবশ্যই জেনে বুঝে ক্রয় করুন, মনে রাখবেন জমিতে কোন ঝামেলা রয়েছে কিনা কিংবা কোন ধরনের অসঙ্গতি রয়েছে কিনা তা প্রমাণ করার জন্য কাগজপত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তাই আপনার জমিটি ক্রয় করার পূর্বে এবং বায়না দলিল সম্পাদন করার পূর্বে একজন আইনজীবীর মাধ্যমে কাগজপত্র দেখে বুঝে নিন।
- জমির দখল সম্পর্কে খোঁজখবর নিন, ঝামেলামুক্ত কিনা নিশ্চিত হোন- একটি জমি ক্রয় করার পূর্বে অবশ্যই আপনাকে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে, জমিটির কাগজ পাতি ছাড়াও কোন ধরনের ওয়ারিশান ঝামেলা রয়েছে কিনা এবং উক্ত জমির আশেপাশের মালিকদের নিকট হতে নিশ্চিত হন যে উক্ত জমিটি বিক্রেতার দখলে আছে কিনা।
- তাড়াহুড়া করে বায়না করবেন না- কোন কাজই তাড়াহুড়া করে করা ঠিক নয়, বিশেষ করে যখন আপনার কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে একটি সম্পদ তৈরি করতে যাচ্ছে তখন তো একেবারেই তাড়াহুড়া করবেন না।
- মনে রাখবেন তাড়াহুড়া করা শয়তানের কাজ। আল্লাহ না করুক তাড়াহুড়া করতে গিয়ে কোন ধরনের তথ্য মিসটেক করার ফলে আপনার ক্রয় কৃত জমিটি হারাতে হয়। অতএ ব একটি জমি ক্রয় করার পূর্বে অবশ্যই সময় নিয়ে সকল ডকুমেন্টস দেখে বুঝে তারপর বায়না করুন।
- বায়না দলিল অবশ্যই রেজিস্ট্রেশন করতে হবে- আমাদের সমাজে দুই ধরনের বায়না চালু হয়েছে রেজিস্ট্রি ছাড়া যে বায়নাটি করা হয় তা হচ্ছে হাত বায়না নামে পরিচিত। যার কোন আইনে গুরুত্ব নেই।
- যদিও হাত ব্যানার লিখিত থাকলে সামাজিকভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রদান করা হয় যাহা অনেক সময় ফলপ্রসু হয় না। অতএব আপনি জমি সংক্রান্ত বিষয়ে টাকা পয়সা লেনদেন করলে অবশ্যই তা রেজিস্ট্রিভূক্ত বায়না দলিল করে নিন।
- বায়না দলিল রেজিস্ট্রেশনের পর বর্ণিত জমিতে বায়না গ্রহীতার নামে একটি সাইনবোর্ড লাগাতে হবে। এবং উক্ত শাহীন বোডে ক্রয় কৃত জমির বিস্তারিত বর্ণনা লিখে ক্রয় কৃত জমি স্থাপন করতে হবে। সাইনবোর্ডে আপনি যা যা লিখতে পারেন তা হচ্ছে উক্ত জমিটির দাগ নম্বর, খতিয়ান নম্বর, মৌজার নাম, জমির পরিমাণ এবং বায়নাকৃত ব্যক্তির নাম।
- বায়না দলিল রেজিস্ট্রেশনের পর যেকোন জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে। যাতে করে পরবর্তীতে কোন ব্যক্তির প্রশ্ন উত্থাপন করতে না পারে যে, উক্ত জমিটি আমার অগোচরে বিক্রি করা হয়েছে অর্থাৎ কোন অংশীদার অথবা অগ্রক্রয়ের মামলা করতে পারে এমন ব্যক্তি যাতে অবগত হয় তার জন্য প্রমাণপত্র হিসেবে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রদান করতে হয়।
- তাড়াহুড়া করবেন না, ধৈর্য ধরুন, সময় নিন, সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন।
গুরুত্বপূর্ণ ও লক্ষণীয় বিষয়
একটি জমি ক্রয় করার পূর্বে এবং বায়না করার পূর্বে অবশ্যই উক্ত জমিটি সম্পর্কে ভালোভাবে তথ্য গ্রহণ করুন এবং উক্ত জমির কাগজপত্র ভালোভাবে যাচাই বাছাই করুন। আপনি যদি কাগজ সম্পর্কে একটু কম বোঝেন তাহলে একজন আইনজীবী, দলিল লেখক, কিংবা দলিল সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রাখে এমন একজন ব্যক্তির নিকট হতে সহযোগিতা নিতে পারেন।
আমরাও ভূমি সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করে থাকি। আপনি চাইলে আমাদের সাথেও যোগাযোগ করতে পারেন । আপনার ভূমি সম্পর্কিত তথ্য শেয়ার করে আপনার জমিটির দলিলাদি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সমূহ জেনে নিতে পারেন। আপনি আমাদেরকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সরবরাহ করলে উক্ত কাগজপত্র দেখে আমরা আপনাকে একটি সুপরামর্শ দিব ইনশাল্লাহ।
উপসংহার
একটি জমি ক্রয় করার পূর্বে অবশ্যই আপনি বাইনামা দলিল সম্পাদন করুন এবং উক্ত দলিলটি রেজিস্ট্রি করুন। একটি জমি বায়নামা রেজিস্ট্রি করার ফলে আপনি হাতে যেমন সময় পাচ্ছেন ঠিক তেমনি একটু জমিটি সম্পর্কে গভীরভাবে আপনি তথ্য সংগ্রহ করে বিচার বিশ্লেষণ করার সুযোগ পাচ্ছেন। এবং উক্ত জমিতে যদি কোন ব্যক্তির দাবী দেওয়া থাকে তাহলে উক্ত সময়ের মধ্যে তা প্রকাশ্যে আসবে।
লেখক এর কথা
জমি সংক্রান্ত যেকোনো কাজ করার পূর্বে আপনাকে উক্ত কাজটি সম্পাদনের পূর্বে অবশ্যই তথ্য সংগ্রহ করতে হবে এবং জায়গা জমির দলিলাদি সঠিকভাবে বুঝে নিতে হবে। এবং কোন অবস্থাতেই তাড়াহুড়া করা যাবে না, ধীর স্থির ভাবে সময় নিয়ে পর্যবেক্ষণ করে একটি জমি ক্রয় করুন এবং গোপনে কোন কার্যসম্পাদন করবেন না যা করবেন প্রকাশ্য করবেন জমি সংক্রান্ত বিষয়।
পরিশেষে বলতে চাই আমাদের এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনিসহ আপনার পরিচিত জনদেরকে আমাদের ওয়েবসাইট বেস্টওয়াল্ড কে ফলো করে রাখুন যাতে করে পরবর্তী আপডেট এবং নতুন আর্টিকেল এর সন্ধান পেয়ে যান।
শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকার জন্য বেস্টওয়াল্ড এর পক্ষ থেকে আপনাকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ।
Bestwold নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url