মহান মুক্তিযুদ্ধের সাত জন বীরশ্রেষ্ঠের নাম ও সংক্ষিপ্ত পরিচয়
আসসালামু আলাইকুম! সু-প্রিয় পাঠক বিন্দু, বেস্টওয়াল্ডের পক্ষ হতে আপনাকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আমরা লক্ষ্য করছি যে আপনি এই মুহূর্তে মহান মুক্তিযুদ্ধের সাত জন বীর সৃষ্টির নাম ও সংক্ষিপ্ত পরিচয় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। এই আর্টিক্যাল এ আমরা উক্ত বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে আহ্বান জানাচ্ছি।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্র। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে এবং লক্ষ্য প্রাণের বিনিময়ে পেয়েছি আমরা এই স্বাধীনতা। পেয়েছি হাজারও দামাল ছেলে তারই মধ্যে পেয়েছি আমাদের এই সাতজন বীরশ্রেষ্ঠকে। যারা মৃত্যুকে পরোয়া না করে শুধুমাত্র দেশের মাটিকে ভালোবেসে বুকের তাজা রক্ত বিলিয়ে দিয়েছে।
ভূমিকা
মহান মুক্তিযুদ্ধে যে সমস্ত শহীদ রয়েছে তাদের প্রতি আমাদের অন্তরের অন্তরস্থল থেকে রয়েছে শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা। হাজারো বীর বাঙালির মধ্যে শ্রেষ্ঠ অর্থাৎ বীর শ্রেষ্ঠ সাত জন নিয়ে আজকের আলোচনা। আমাদের এই সার্বভৌমত্ব স্বাধীন রাষ্ট্র স্বাধীন করতে তাদের রয়েছে কাল বিজয় ী এক ইতিহাস। যা এই স্বাধীন বাংলার মানুষ চিরদিন মনে রাখবে।
মহান মুক্তিযুদ্ধের সাত জন বীরশ্রেষ্ঠের নাম
লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে আমাদের অর্জিত এই স্বাধীনতা এবং স্বাধীন সার্বভৌমত্ব বাংলাদেশের জন্মের গুরুত্বপূর্ণ এবং কৃতিত্ব রেখেছে যে সাতজন তাদেরকে আমরা বীরশ্রেষ্ঠ হিসেবে জানি। চলুন এ পর্যায়ে সাত জন বীর সৃষ্টির নাম জেনে নিই-
- মুন্সি আব্দুর রউফ
- মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল
- মোহাম্মদ রুহুল আমিন
- হামিদুর রহমান
- মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর
- নূর মোহাম্মদ শেখ
- মতিউর রহমান
এই সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির দামাল ছেলে তাদের কর্ম ও কর্তব্যর সাথে কখনো বেইমানি করেনি তারা জীবন দিয়ে ভালোবেসে গেছে দেশের মানুষকে এবং একটি স্বাধীন সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্র গঠনে তাদের অবদান অনস্বীকার্য।
সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
মুন্সি আব্দুর রউফ- তিনি ফরিদপুর জেলার অন্তর্গত বোয়ালমারী থানার সালামত পুর গ্রামে ৮ই মে ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মুন্সি মেহেদী হাসান এবং মাতা মুকিদুন্নেসা। তিনি ০৮ মে ১৯৬৩ সালে পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসে যোগদান করেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামের বুড়িঘাট গ্রামে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীদের সঙ্গে মোটর শেলএর আঘাতে ৮ এপ্রিল ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে শহীদ হন। মোহন মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি এক নম্বর সেক্টরে দায়িত্বে ছিলেন এবং তিনার শহীদের পর রাঙ্গামাটি জেলার বুড়ি ঘাটে কবরস্থ করা হয়।
মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল- তিনি বরিশাল জেলার অন্তর্গত দৌলতখান থানার পশ্চিম হাজিপাড়া গ্রামে সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে পিতা হাবিবুর রহমান এর ঔরসে জন্মগ্রহণ করেন। ১৮ এপ্রিল ১৯৭১ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়ার দূরউইন গ্রামে শহীদ হন।
মন মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি দুই নম্বর সেক্টরে দায়িত্ব পালন করেন এবং তিনি সিপাহী সেনাবাহিনী বেঙ্গল রেজিমেন্ট এ যোগদান করেন, শহীদ হওয়ার পর তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অন্তর্গত আখাউড়াই কবরস্থ করা হয়।
মোহাম্মদ রুহুল আমিন- তিনি তৎকালীন নোয়াখালী জেলার বর্তমানে ফেনী জেলার অন্তর্গত বাঘচাপড়া গ্রামে ১৯৩৫ সালের জুন মাসে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনার পিতা আজহার পাটোয়ারী এবং মাতা জুলেখা খাতুন। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রথমে দুই নম্বর সেক্টরের অধীনে।
এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন এবং পরবর্তীতে ১০ এ নম্বর সেক্টরে দায়িত্ব পালন করেন, তিনি কর্মজীবনে ইঞ্জিনরুম অফিসার্স নৌবাহিনী ছিলেন। ১০ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে খুলনার রুপসা উপজেলার বাগমারা গ্রামে শাহাদাত বরণ করেন। তিনাকে খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার বাগমারা গ্রামে রূপসা নদীর তীরে কবরস্থ করা হয়।
হামিদুর রহমান- তিনি ঝিনাইদহ জেলা শহরের অদূরে কালীগঞ্জের খদ্দখালিশপুর গ্রামে দুই ফেব্রুয়ারি ১৯৫৩ সালে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আকাশ আলী মন্ডল এবং মাতা মোসাম্মৎ কাইমুন্নেসা। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি চার নম্বর সেক্টরে দায়িত্ব পালন করেন এবং তিনি সিপাহী সেনাবাহিনী বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর সদস্য ছিলেন।
মৌলভীবাজার জেলার দলি কমলগঞ্জ এ ২৮ অক্টোবর ১৯৭১ সালে শাহাদাত বরণ করেন। তিনাকে প্রথমে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে সমাধিত করা হয় এবং পরবর্তী সময়ে ২০১০ সালে ঢাকার মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর- তিনি বরিশাল জেলার অন্তর্গত বাবুগঞ্জ উপজেলার রহিমগঞ্জ গ্রামে পিতা আব্দুল মোতালেব হাওলাদার এবং মাতা সাফিয়া বেগম এর ঔরসে ৭ই মার্চ ১৯৪৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ৭ নম্বর সেক্টরে দায়িত্ব পালন করেন, তিনি ক্যাপ্টেন সেনাবাহিনী বেঙ্গল রেজিমেন্ট এ কর্মরত ছিলেন।
১৪ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি ছিলেন বীরশ্রেষ্ঠদের মধ্যে সর্বশেষ শহীদ। তিনাকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার ছোট সোনা মসজিদ প্রাঙ্গণে সমাহিত করা হয়।
নূর মোহাম্মদ শেখ- তিনি যশোর জেলার অন্তর্গত নড়াইল মহকুমার মহেশখলা গ্রামে ২৬ শে ফেব্রুয়ারি ১৯ ৩৬ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মোঃ আমানত শেখ এবং মাতা জেন্নাতুন নেসা। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি চার নম্বর সেক্টরে দায়িত্ব পালন করেন এবং তিনি সেনাবাহিনীর সিপাহী পদে পদাইত ছিলেন। ৫ই সেপ্টেম্বর ১৯৭১ সালে যশোর জেলার গোয়ালহাটি গ্রামে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। যশোর জেলার কাশিপুর গ্রামে তাকে সমাহিত করা হয়।
মতিউর রহমান- তিনি ১৯ শে অক্টোবর ১৯ ৪১ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। টিনার বাবা ছিলেন মৌলভী আব্দুস সামাদ এবং মাতা মোবারকুন্নেসা। নয় ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন ষষ্ঠতম। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি নিজ কর্মস্থল পশ্চিম পাকিস্তানের দায়িত্বরত ছিলেন, তিনি তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের ফ্লাইট লেফটেনডেন্ট বিমান বাহিনীতে যোগদান করেন।
তিনি একমাত্র বীরশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি যিনি দেশের বাইরে পাকিস্তানের করাচিতে মাশরুর বিমান ঘাঁটিতে শাহাদাত বরণ করেন ২০-ই আগস্ট ১৯৭১ সালে। তিনাকে পাকিস্তানের করাচির মাশরুর বিমান ঘাঁটিতেই সমাহিত করা হয়েছিল পরবর্তীতে ২০০৬ সালে ঢাকার মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
উপসংহার
লক্ষ্য প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতা যাদের বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে পেয়েছি আমরা এক স্বাধীন সার্বভৌমত্ব ভূখণ্ড তাদেরকে এ জাতি মনে রাখবে চিরকাল। আজ আমরা যে যার সাতজন বাঙ্গালী বীর সন্তান দের সংক্ষিপ্ত একটি পরিচয় তুলে ধরলাম তা আশা করছি আপনার দেশ উপকারে আসবে।
পরিশেষে বলতে চাই আমাদের এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনিসহ আপনার পরিচিত জনদেরকে আমাদের ওয়েবসাইট বেস্টওয়াল্ড কে ফলো করে রাখুন যাতে করে পরবর্তী আপডেট এবং নতুন আর্টিকেল এর সন্ধান পেয়ে যান।
শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকার জন্য বেস্টওয়াল্ড এর পক্ষ থেকে আপনাকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ।
Bestwold নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url