যে সকল জমি নামজারি করা যাবে না বা হবেনা
আসসালামুআলাইকুম! সু-প্রিয় পাঠক বৃন্দ, বেস্টওয়াল্ড এর ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। আমরা লক্ষ্য করছি যে, আপনি এই মুহূর্তে যে সকল জমি নামজারি করা যাবে না বা হবেনা এ বিষয়ে জানার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আমরা এই আর্টিকেলের মধ্যে উক্ত বিষয়ে আলোচনা করেছি, আশা করছি শেষ পর্যন্ত আপনি পড়ে নিলে উক্ত বিষয়ে একটি স্বচ্ছ ধারণা পেয়ে যাবেন।
জমি কেন নামজারি করা হয় আশা করছি বিষয়টি আপনার জানা আছে। যদি জানা না থাকে তাহলেও সমস্যা নেই। আমরা এই আর্টিকেলে আপনাকে কেন নামজারির প্রয়োজন সেটা সম্পর্কেও ধারণা দিয়ে দিচ্ছি। এক কথায় এই আর্টিকেলটি আপনি সম্পূর্ণ করলে নামজারি বিষয়ক একটি ভালো ধারণা অর্জন করতে সক্ষম হবেন।
ভূমিকা
একটি জমির মালিকানা প্রমাণ করতে হলে বেশ কয়েকটি উপাদান রয়েছে, তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে খতিয়ান অর্থাৎ নামজারি কেউ আমরা খতিয়ান বলে থাকি। যদিও নাম জারি খতিয়ানটি প্রস্তাবিত খতিয়ান নামে প্রচলিত। তবে আপনি যে সকল জমির নাম জারি করতে পারবেন না উক্ত বিষয়টি নিয়ে আজকের আলোচনা। চলুন বিষয়টি জেনে নেওয়া যাক।
নামজারি কি
নামজারি হচ্ছে, রেকর্ড পরবর্তী সময়ে একজন ভূমি মালিকের পরিবর্তন হওয়ার প্রেক্ষিতে ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক মালিকানার যে প্রমাণপত্র সরবরাহ করা হয় অল্প কিছু ফি এর বিনিময়ে এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্তৃক ডিসিআর এর মাধ্যমে উক্ত অর্থ আদায় করে নতুন ভূমি মালিক কে যে কাগজ সরবরাহ করা হয় এর সমস্ত কার্যক্রমকেই মূলত নামজারি বলে।
নামজারি হচ্ছে একজন ভূমি মালিকের, সকল ভূমির প্রমাণপত্রের উপাদান সমূহের একটি মুখ্য উপাদান। অর্থাৎ সহজ ভাবে আমরা বলতে পারি একটি মালিক তার ভূমির মালিকানা প্রমাণ করার জন্য যে সকল দলিলাদি সরবরাহ করে বা সংরক্ষণ করে তার মধ্যে নামজারি খতিয়ান একটি মুখ্য বিষয়।
অন্যভাবে বলা যায় একজন ভূমি মালিক তার পূর্ব ভূমি মালিকের নাম পরিবর্তন করে নিজ নামে খতিয়ান গ্রহণ করাই হচ্ছে নামজারি অর্থাৎ রেকর্ড কারেকশন বিষয়টি এখানে আমরা জোরালো ভাবে বলতে পারি। একেবারে সহজ ভাষায় বোঝেন যে নামজারি একটি জমির প্রমান পত্র।
যে সকল জমির নাম জারি করা যাবে না বা হবে না
আমাদের একটি জমির মালিকানা পরিবর্তন হলেই আমরা উক্ত জমিটির নামজারি করে থাকি। তবে কিছু প্রেক্ষাপট আছে, যে সকল প্রেক্ষাপটে একজন ভূমি মালিক কে সহকারী কমিশনার (ভূমি) নামজারীর অনুমতি দেয় না বা উক্ত জমিটির নাম জারি করা যাবে না বা হবেনা। চলুন উক্ত জমিগুলো সম্পর্কে সংক্ষেপে জেনে নেই-
- অংশের বেশি নামজারি করতে চাইলে।
- দলিলে বেশি আছে, দখলেও রয়েছে কিন্তু মূল খতিয়ানে আবেদনকৃত জমি নেই এ সকল ক্ষেত্রে।
- আবেদনকৃত জমিটি যদি এক নম্বর খতিয়ানের হয়ে থাকে।
- আবেদনকৃত জমিটি যদি ভ্যাসটেট প্রপার্টি হয়ে থাকে।
- জমির মালিকানার ধারাবাহিকতা সঠিক না থাকলে।
- পৈত্রিক সম্পত্তির বন্টন না থাকলে।
- বিভিন্ন দাগের জমি এক দাগে নামজারি নিতে চাইলে।
- আপনার আবেদনকৃত জমিটির যদি মূল প্রমাণপত্র অর্থাৎ দলিল ভুয়া দলিল হয়ে থাকে। (প্রভৃতি)
একটি জমি নামজারি করতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই উক্ত জমিটির সকল প্রমাণ পত্র যা যা প্রয়োজন তা অবশ্যই নিজ সংরক্ষণে রাখতে হবে। তাছাড়া উক্ত জমিটির মালিকানার ধারাবাহিকতা এবং দলিল আদির বিশুদ্ধতা থাকতে হবে। এর ব্যতিক্রম হলে আপনি উক্ত জমিটি নামজারি করতে ব্যর্থ হবেন।
অংশের বেশি নামজারি করতে চাইলে
অংশের বেশি নামজারি অর্থ হচ্ছে, আপনি একটি খতিয়ানের মালিক বা আপনি যার কাছে হতে একটি জমির মালিকানা পেয়েছেন তার খতিয়ানের অংশ এর বেশি আপনি নিতে পারবেন না এবং তা নামজারি হবে না। কোনক্রমে হয়ে থাকলেও ভবিষ্যতে তা বাতিল করা সম্ভব। একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি ক্লিয়ার হওয়া যাক-
মনে করুন আপনার খতিয়ানে আপনি জমির মালিক ৪০ শতাংশের, এখন আপনি যদি ৬০ শতাংশ জায়গা বিক্রয় করেন বা আলাদাভাবে নামজারি করেন সেক্ষেত্রে আপনাকে নামজারি দেওয়া হবে না বা আপনি ৬০ শতক জমি নামজারি করতে পারবেন না।
দলিলে বেশি আছে, দখলেও রয়েছে কিন্তু মূল খতিয়ানে আবেদনকৃত জমি নেই এ সকল ক্ষেত্রে
মনে করুন আপনি একটি জমি ক্রয় করেছেন! উক্ত জমির কাগজপত্র আপনি দেখে শুনেই ক্রয় করেছেন। আপনার দলিলে ৬০ শতক জমি ক্রয় করেছেন, দখলেও ৬০ শতক জমে রয়েছে। উক্ত জমিটি আপনি রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রিভক্ত করেছেন।
পরক্ষণে নামজারিতে যাওয়ার সময় আপনি বিষয়টি বুঝতে পারলেন যে, আপনি যেই দাগে জমিটি ক্রয় করেছেন উক্ত দাগে আপনার পূর্ব মালিকের ৬০ শতক জমি অবশিষ্ট নেই। এইরকম প্রেক্ষাপটে আপনি আপনার রেজিস্ট্রি দলিল থাকা শর্তেও এবং আপনার উক্ত জমিটি দখলে থাকা শর্তেও আপনি ৬০ শতক জমি নামজারি করতে পারবেন না।
এখানে আপনাকে অংশ মোতাবেক যেটুকু জমি পাচ্ছেন ঠিক ততটুকু জমি নামজারি নিতে হবে। তবে আপনার সাথে এরকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে থাকলে অবশ্যই আপনি আইনের সহযোগিতা গ্রহণ করতে পারেন। আমাদের সকলেরই আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রাখা উচিত। আপনার সাথে এরকম ঘটনা ঘটে থাকলে দ্রুত আইনি সহযোগিতা গ্রহণ করুন।
আবেদনকৃত জমিটি যদি এক নম্বর খতিয়ানের হয়ে থাকে
আপনার প্রাপ্ত জমিটি যদি এক নম্বর খাস খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে তাহলে এক্ষেত্রে আপনি উক্ত জমিটি আপনার নিজ নামে নামজারি করতে পারবেন না। কারণ এটি নিয়মবহির্ভূত,এটি সরকারি মালিকানাধীন সম্পত্তি। উক্ত জমিটি আপনি ব্যবহার করতে পারবেন, কিন্তু নিজ নামে নিতে পারবেন না।
আবেদনকৃত জমিটি যদি ভ্যাসটেট প্রপার্টি হয়ে থাকে
আপনার আবেদন কৃত ভুমিটি যদি ভিপি সম্পত্তি হয়ে থাকে তাহলে আপনি আপনার নিজ নামে নামজারি করতে পারবেন না। বলা বাহুল্য যে, যদি আপনার কাছে উপযুক্ত কোন প্রমাণ থেকে থাকে অর্থাৎ বিনিময় দলিল থেকে থাকে সেক্ষেত্রে কোর্টের অর্ডার নিয়ে উক্ত জমিটি আপনাকে নাম জারি করতে হবে।
জমির মালিকানার ধারাবাহিকতা সঠিক না থাকলে
আপনি একটি সম্পত্তির মালিক হয়েছেন, কিভাবে হয়েছেন, কোথা থেকে হয়েছে তার সঠিক প্রমাণ পত্র আপনি দাখিল করতে পারছেন না। অর্থাৎ আপনার পূর্ববর্তী মালিকদের মালিকানার ধারাবাহিকতা ঠিক নেই এক্ষেত্রেও আপনি আপনার প্রাপ্য জমে টুকু আপনার নিজ নামে নাম জারি করতে ব্যর্থ হবেন।
পৈত্রিক সম্পত্তির বন্টন না থাকলে
আপনার পৈত্রিক সম্পত্তি যদি বন্টন না থাকে তাহলে আপনি ক্ষেত্রবিশেষে নামজারি করতে ব্যর্থ হবেন। বিষয়টি এরকম যে, আপনার পৈতৃক সম্পত্তি বেশ কয়েকটি মৌজায় বিদ্যমান সে ক্ষেত্রে আপনার অংশটি যদি আপনি এক জায়গায় গুপ্ত ভাবে নিতে চান সে ক্ষেত্রে আপনার বন্টন নাম্বার দলিল আবশ্যক। এক্ষেত্রে দলিল ছাড়া আপনি নামজারি করতে ব্যর্থ হবেন।
বিভিন্ন দাগের জমি এক দাগে নামজারি নিতে চাইলে
আপনি একটি জমি মালিকানা পেয়েছেন! একটি দলিলের মাধ্যমে। উক্ত দলিলে বেশ কয়েকটি দাগ উল্লেখ করা আছে এবং এও বলা আছে যে, আপনি ভোগ দখল করবেন একটি দাগে। প্রেক্ষাপটটি যদি এমন হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে উক্ত জমিটি আপনি নিজ নামে নামজারি করতে চাইলে। একটি দাগে আপনি নামজারি করতে পারবেন না। সে ক্ষেত্রে আপনাকে উক্ত দলিলে উল্লেখিত দাগ সমূহেই নামজারি গ্রহণ করতে হবে।
আপনার আবেদনকৃত জমিটির যদি মূল প্রমাণপত্র অর্থাৎ দলিল ভুয়া দলিল হয়ে থাকে
আপনি যে দলিলের মাধ্যমে একটি জমির মালিকানা পেয়েছেন উক্ত দলিলটি যদি জাল হয় বা ভুয়া হয় সেক্ষেত্রে আপনি আপনার দলিল থাকা শর্তেও উক্ত জমিটি নামজারি করতে পারবেন না। আপনি যদি এরকম প্রতারণার শিকার হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আইনের সহযোগিতা গ্রহণ করুন। মনে রাখবেন আইনের সহযোগিতা ছাড়া আপনি কোন কাজ করলে তা যেন বেআইনি না হয়ে যায়।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
আপনি এক খন্ড জমি ক্রয় করবেন কিংবা আপনি যে কোন ভাবে মালিক হবেন। বিষয়টি আপনি বুঝতে পারেন এবং জানতে পারেন তাহলে অবশ্যই আপনি উক্ত জমিটির কাগজপত্র ভালোভাবে যাচাই বাছাই করে নেবেন। প্রয়োজনে একজন আইনজীবীর সহযোগিতা গ্রহণ করুন। আমরাও জমি সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখে দিয়ে থাকি প্রয়োজনে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
উপসংহার
জমি জায়গা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থায়ী সম্পদ এবং প্রতিটি মানুষের জন্য একটি একটি সেনসিটিভ বিষয়। তাই ভূমি সংক্রান্ত যেকোনো কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই গুরুত্বসহ করে বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এমনটি হয়ে না যায়, যে আপনার একটু ভুলের কারণে চলে আসুক বিভিন্ন ধরনের সমস্যা, বিষয়টি মনে রাখবেন।
লেখক এর কথা
ভূমি সংক্রান্ত যেকোনো হস্তান্তরের ক্ষেত্রে আপনি উক্ত ভূমির প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র গুরুত্ব সহকারে দেখে নিবেন, নিজে বুঝতে অক্ষম হলে একজন ভালো আইনজীবীর সহযোগিতা গ্রহণ করতে পারেন, প্রয়োজনে আমাদের সহযোগিতা নিতে পারেন আমরা ভূমি সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম করে থাকি।
পরিশেষে বলতে চাই আমাদের এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনিসহ আপনার পরিচিত জনদেরকে আমাদের ওয়েবসাইট বেস্টওয়াল্ড কে ফলো করে রাখুন যাতে করে পরবর্তী আপডেট এবং নতুন আর্টিকেল এর সন্ধান পেয়ে যান।
শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকার জন্য বেস্টওয়াল্ড এর পক্ষ থেকে আপনাকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ।
Bestwold নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url