কোন ব্যক্তি মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া ওয়ারিশদের কর্তব্য
আসসালামু আলাইকুম! সু-প্রিয় পাঠক বৃন্দ, বেস্টওয়াল্ড এর পক্ষ থেকে আপনাকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। এ মুহূর্তে আমরা লক্ষ্য করছি যে আপনি, কোন ব্যক্তি মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া ওয়ারিশদের কর্তব্য সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা উক্ত বিষয়ে একটি ক্লিয়ার ধারণা দিয়েছি, আশা করছি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়বেন।
কোন ব্যক্তি মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া সম্পদ বন্টনের পূর্বে তার ওয়ারিশদের কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। যে সকল দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের পর মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পত্তি সমূহ তার ওয়ারিশ দের মাঝে ভাগ বন্টন করতে হয়। আজকের এই আলোচনায় উক্ত বিষয়গুলো নিয়ে স্পষ্ট আলোচনা করা হয়েছে।
ভূমিকা
সম্পদ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান! যা প্রতিটি মানুষের চলার পথে এবং জীবন ধারণের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজন। আল্লাহ তাআলা বলেছেন তিনি মানুষকে শুধু বিভিন্ন ধরনের মুসিবত দিয়েই পরীক্ষা করেন না বরং তিনি তার বান্দাকে সম্পত্তি, সন্তানাদি, বর্ধিত রুজি, এবং রুজি স্বল্পতা, অভাব-অনাটন, গরিব-দুখী ইত্যাদি মাধ্যমে বান্দাকে পরীক্ষায় ফেলেন যাতে করে উক্ত সময়ে বান্দা কি আচরণ করছে আল্লাহর প্রতি, তা স্পষ্ট হয় যদিও আল্লাহ পাক সর্বশক্তিমান ও সর্ব জ্ঞানী।
ওয়ারিশ বলতে কি বুঝায়
ওয়ারিশ হল সে সকল ব্যক্তিকে বলা হয় যারা কোন একজন মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া উত্তরাধিকার। অন্যভাবে বলা যায় কোন মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া রক্তের সম্পর্কিত এবং নিকট আত্মীয় ও দূরের আত্মীয়। প্রথমত রক্তের সম্পর্কিত, দ্বিতীয়ত নিকট আত্মীয়, সর্বশেষ দূর আত্মীয়, এগুলা নিয়ে হচ্ছে একজন মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকারী।
প্রথমটি পাওয়া গেলে দ্বিতীয় টির প্রয়োজন নেই দ্বিতীয়টি পাওয়া গেলে তৃতীয়টির প্রয়োজন নেই। অর্থাৎ প্রথমে তালাশ করতে হবে রক্তের সম্পর্কিত কেউ আছে কিনা, যদি রক্তের সম্পর্কিত কাউকে পাওয়া না যায় সে ক্ষেত্রে নিকট আত্মীয় তালাশ করতে হবে, নিকট আত্মীয় তালাশ করেও যদি কাউকে না পাওয়া যায় তাহলে দূর আত্মীয় তালাশ করতে হবে।
মৃত ব্যক্তির কারা ওয়ারিশ
একজন মৃত ব্যক্তির রক্তের সম্পর্কিত,নিকটাত্মীয় এবং দূর আত্মীয় ব্যক্তিবর্গ হচ্ছে মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশ।
- রক্তের সম্পর্কিত ওয়ারিশ- দাদা-দাদি,নানা-নানী,পিতা-মাতা,ভাই-বোন,ছেলে-মেয়ে,নাতি-নাতনি এগুলো হচ্ছে রক্তের সম্পর্কিত ওয়ারিশ।
- নিকট আত্মীয় ওয়ারিস- ভাইয়ের ছেলে,চাচা, চাচাই তো ভাই, চাচাতো ভাইয়ের ছেলে, বৈমাত্রিক ভাই বৈমাত্রিক বোন বইপ্রিক ভাই বই পিতৃক বোন ইত্যাদি।
- দূর আত্মীয় ওয়ারিশ- মামা, ফুপু, খালা, মামাতো ভাই, মামাতো ভাইয়ের ছেলে, ফুফাতো ভাই, ফুফাতো ভাইয়ের ছেলে, খালাই তো ভাই, খালাতো ভাইয়ের ছেলে ইত্যাদি।
মৃত্যুর পর ওয়ারিশদের কর্তব্য
একজন ব্যক্তির মৃত্যুবরণ করলে তার রেখে যাওয়া ওয়ারিশদের প্রথম দায়িত্ব এবং কর্তব্য হচ্ছে-
- মৃত ব্যক্তির যদি কোন ঋণ থেকে থাকে তাহলে উক্ত ঋণ পরিশোধ করা।
- মৃত ব্যক্তির দাফন কাফন সম্পন্ন করা।
- মৃত ব্যক্তির ওসিয়ত থাকলে তা পূরণ করা।
- সর্বশেষ তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি সমূহ তার যথাযথ ওয়ারিশদের মধ্যে সুষ্ঠুভাবে বন্টন করা।
ঋণ পরিশোধ করা
কোন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে তার রেখে যাওয়া সম্পদ হতে! প্রথম কাজ হবে, উক্ত ব্যক্তির যদি কোন ঋণ থেকে থাকে তাহলে উক্ত ঋণ পরিশোধ করা। কারণ আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন তোমরা কোন ঋণ রেখে মৃত্যুবরণ করিও না বিষয়টি সম্পর্কে স্পষ্ট বোঝা যায়।
এবং আরো বলেছেন কোন ব্যক্তির যদি ঋণ থেকে থাকে তাহলে উক্ত ব্যক্তির জানাজা দেওয়ার আগে ওই ঋণ পরিশোধ করা। আল্লাহর রাসূলের উক্ত উক্তি দুইটি থেকে আমরা স্পষ্ট বুঝতে পারি যে কোন ব্যক্তির ঋণ থেকে থাকলে তার জানাজা দেওয়াই যাবে না।
এখানে একটি কথা বলা বাহুল্য যে, মৃত ব্যক্তির সম্পদ বন্টনের পূর্বে আরও একটি দায়ী তার ওয়ারিশদের গ্রহণ করতে হয় সেটা হচ্ছে যদি মৃত ব্যক্তি পুরুষ হয় এবং তার মোহরানা বাকি থাকে তাহলে তার রেখে যাওয়া সম্পদ হতে মোহরানা আদায় করে দিতে হয় যদি স্ত্রী জীবিত থাকে তাহলে।
দাফন কাফন সম্পন্ন করা
কোন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে তার ওয়ারিশদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে উক্ত ব্যক্তির দাফন কাফনের ব্যবস্থা করা, যদি উক্ত ব্যক্তির কোন ওয়ারিশ না থেকে থাকে তাহলে উক্ত ব্যক্তির দাফন কাফনের ব্যবস্থা মুসলিম ভাই-বোন করবে।
ওসিয়ত থাকলে তা পূরণ করা
মৃত ব্যক্তির যদি কোন ওসিয়ত থেকে থাকে আর সেটা যদি তার রেখে যাওয়া সম্পত্তির অর্থাৎ সম্পদের মোট তিন ভাগের এক ভাগ হয় তাহলে উক্ত ওসিয়ত তার ওয়ারিশগণ আদায় করার পর বাকি সম্পদ তার যোগ্য ওয়ারিসদের মাঝে বন্টন করে নিবে হবে। বলা বাহুল্য যে ওসিয়তকৃত সম্পদ যদি এক তৃতীয় অংশের বেশি হয় তাহলে ওয়ারিশগণ এক তৃতীয় অংশ ওসিয়ত পূরণ করার পর বাকি অংশটুকু চাইলে আদায় নাও করতে পারে তাতে কোন সমস্যা নেই।
যহ্য ওয়ারিশ গঙ্গের মধ্যে রেখে যাওয়া সম্পদ বন্টন করা
মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পদ হতে তার ঋণ মোহরানা দাফন কাফন এবং ওশীয় সবটুকু করে ফেলার পর বাকি সম্পত্তিটুকু তার যোগ্য অরিসগণের মধ্যে সুষ্ঠুভাবে বন্টন করে দিতে হবে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ওয়ারিশদের সম্পত্তি বন্টন
বাংলাদেশের চলমান আইন অনুসারে মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পত্তির বন্টন এবং কোরআনিক আইনে লিখিত বন্টন হুবহু মিল থাকলেও কেবলমাত্র একটি বিষয়ে প্রচলিত আইন এবং কোরআনে আইনের সংঘর্ষ রয়েছে! কোরআনের দৃষ্টিকোণে মৃত ব্যক্তির পূর্বে তার ওয়ারিশদের মধ্যে কোন সন্তান যদি মৃত্যুবরণ করে তাহলে উক্ত সন্তানের রেখে যাওয়া ওয়ারিশ মৃত ব্যক্তির কোন সম্পদের ভাগীদার হবে না। কিন্তু আমাদের বর্তমান বাংলাদেশের আইন অনুসারে মৃত ব্যক্তির সকল ওয়ারিশ সম্পদ পবে।
উপসংহার
আমাদের প্রতিটি মানুষেরই উচিত মৃত ব্যক্তির প্রতি এহসান করা। কারণ একজন ব্যক্তি জানেনা সে কোন সময় মৃত্যুবরণ করবে তাহলে তার রেখে যাওয়া ঋণের কি হবে?। তার যদি ঋণ থেকে থাকে তাহলে তার সম্পদ হতে অথবা তার সম্পদ যদি না থাকে তাহলে তার ওয়ারিশগণ তার ঋণটি পরিশোধ করবে এটিই হচ্ছে মৃত ব্যক্তির প্রতি এহশান করা।
লেখকের কথা
মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পদ বন্টনের ক্ষেত্রে উপরে উল্লেখিত চারটি বিষয় মাথায় রেখে তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি বন্টন করা উচিত অনেক সময় আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটে দেখা যায় উপরোক্ত দুইটি কাজ সম্পূর্ণ করেন এবং দুইটি কাজ সম্পন্ন করতে অনেক সময় অস্বীকৃতি জানান যেমনটি হচ্ছে মৃত ব্যক্তির ঋণ এবং ওসিয়ত।
ভূমি সংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ে পরামর্শ পেতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আমরা বিভিন্ন ভাবে ভূমি সংক্রান্ত পরিষেবা প্রদান করে থাকি।
পরিশেষে বলতে চাই আমাদের এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনিসহ আপনার পরিচিত জনদেরকে আমাদের ওয়েবসাইট বেস্টওয়াল্ড কে ফলো করে রাখুন যাতে করে পরবর্তী আপডেট এবং নতুন আর্টিকেল এর সন্ধান পেয়ে যান।
শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকার জন্য বেস্টওয়াল্ড এর পক্ষ থেকে আপনাকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ।
Bestwold নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url