OrdinaryITPostAd

খতিয়ানে প্রাপ্ত সম্পত্তির থেকে বেশি বিক্রয়

সু-প্রিয় পাঠক বিন্দু, আসসালামু আলাইকুম! আপনাকে বেস্টওয়াল্ড এর ওয়েবসাইটে স্বাগতম। আশা করছি সুস্থ থেকে নিজ কাছে ব্যস্ত রয়েছেন, তথাপি খতিয়ানের প্রাপ্ত সম্পত্তির থেকে বেশি বিক্রয় সংশ্লিষ্ট বিষয় জানার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আমাদের এই আর্টিকেলে উক্ত বিষয় সম্পর্কিত একটি আলোচনা প্রস্তুত করা হয়েছে। যা আপনি শেষ পর্যন্ত পড়লে নিশ্চয় বুঝতে পারবেন।
খতিয়ানে প্রাপ্ত সম্পত্তির থেকে বেশি বিক্রয়
খতিয়া হচ্ছে ভূমি মালিকের মালিকানা প্রমাণের প্রমাণপত্র গুলোর মধ্যে একটি মূল উপাদান। যার উপর ভিত্তি করে একজন ভুমি মালিক তার দখলকৃত বা ভোগকৃত সম্পত্তির প্রমাণ দিয়ে থাকে। খতিয়ান সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রস্তুত করা হয়।

ভূমিকা

আমাদের বাংলাদেশের আদালত গুলোতে যত মামলা রয়েছে তার সিংহভাগ ভূমি সংক্রান্ত মামলা। আর এই ভূমি সংক্রান্ত মামলার একটি বিশেষ অংশ জুড়ে রয়েছে, যা হচ্ছে খতিয়ানে প্রাপ্ত সম্পত্তির থেকে বেশি বিক্রয় করে ফেলা বা হস্তান্তর করে ফেলা। আমাদের আজকের আলোচ্য বিষয়ে উক্ত বিষয়টি নিয়ে একটি স্পষ্ট ধারণা আপনাকে দেওয়ার চেষ্টা করছি।

খতিয়ান কি

খতিয়ান হচ্ছে একজন ভূমি মালিকের মালিকানা প্রমাণ করার জন্য একটি কাগজীয় উপাদান, যাহা সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক একজন ভূমি মালিক কে তার সকল প্রমাণ পত্র বিচার বিশ্লেষণ করে প্রদান করা হয়। আর একজন প্রান্তিক ভূমি মালিক উক্ত কাগজটি অর্থাৎ খতিয়ান দুইটি জায়গা হতে সংগ্রহ করতে পারে। 
অর্থাৎ আমি বলতে চাচ্ছি যে, একজন ভূমি মালিক কে দুইটিভাবে তার ভূমির মালিকানা প্রমাণপত্রের মূল উপাদান খতিয়ান সরবরাহ করা হয়। 
(ক) রেকর্ড অফিস হতে।
(খ) এসিলেন্ট অফিস হতে অর্থাৎ উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) এর কার্যালয় হতে।

খতিয়ানের প্রাপ্ত সম্পত্তির থেকে বেশি বিক্রয়

  • একজন ভূমি মালিক তার খতিয়ানে প্রাপ্ত সম্পত্তি থেকে বেশি সম্পত্তি বিক্রয় করার অধিকার রাখে কি?
  • একই খতিয়ানের অপর একজন প্রজা তার প্রাপ্ত অংশ হতে বেশি বিক্রয় করেছে এক্ষেত্রে বাকি প্রজাগুলো কি পদক্ষেপ নিতে পারে?
  • প্রাপ্ত অংশের চেয়ে বেশি বিক্রয় করলে উক্ত সম্পত্তিটি টিকবে কিনা?
  • খতিয়ানের প্রাপ্ত অংশ উদ্ধার করতে করণীয় কি?
উপরোক্ত প্রশ্নগুলো তখনই হওয়া সম্ভব, যখন আপনার একটি সম্পত্তি যৌথ মালিকানাধীন খতিয়ান অবস্থান করছে। আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাকে উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর যথাযথ উত্তর প্রদান করব ইনশাআল্লাহ। তাহলে চলুন প্রশ্ন গুলোর উত্তর জেনে নেই।

খতিয়ানে প্রাপ্ত সম্পত্তি থেকে বেশি সম্পত্তি বিক্রয় করার অধিকার রাখে কি

আপনার এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর হচ্ছে কখনোই “না”। তাহলে চলুন একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি ক্লিয়ার হওয়া যাক। মনে করুন একটি খতিয়ানে তিনজন অংশীদার রয়েছে, তারা হচ্ছে জনাব সেতার উদ্দিন, মইনুদ্দিন ও লতিফুন্নেসা। তাদের অংশ যথাক্রমে ৪ আনা, ৪ আনা, ৮ আনা। উক্ত খতিয়ানের সম্পত্তির পরিমাণ ১একর ৩৪।

তাহলে তাদের অংশ মোতাবেক সেতার উদ্দিন জমি পাচ্ছে ৩৩.৫ শতাংশ এবং মইনুদ্দিন পাচ্ছেন ৩৩.৫ শতাংশ আর লতিফুন্নেসা পাচ্ছেন ৬৭ শতাংশ। এখন সেতার উদ্দিন তার পারিবারিক কাজের জন্য অথবা কোন কারণবশত তার জমিটি হস্তান্তর করতে চাচ্ছেন, তিনি তার প্রাপ্ত অংশ ৩৩.৫ শতাংশ সম্পত্তিটি যেকোনো সময় যে কারো কাছে হস্তান্তর করার অধিকার রাখে। 

তবে আমাদের প্রশ্নমতে সেতার উদ্দিন কোনক্রমেই ৪০ শতাংশ সম্পত্তি বিক্রয় করার অধিকার রাখে না। কারণ তার প্রাপ্ত অংশটুকুই হচ্ছে ৩৩.৫ শতাংশ, সে কোনক্রমে যদি ৪০ শতাংশ জায়গা হস্তান্তর করে তাহলে পরবর্তী সময়ে মইনুদ্দিন অথবা লুৎফুন্নেসা কিংবা তাদের ওয়ারিশগণ যেকোনো সময় সেতার উদ্দিনের হস্তান্তরকৃত ৪০ শতাংশ জায়গার মধ্য হতে ৬.৫ শতাংশ জায়গা বের করে নিতে সক্ষম, আশা করছি বিষয়টি বুঝতে পারছেন।

একই খতিয়ানের অপর একজন প্রজা তার প্রাপ্ত অংশ হতে বেশি বিক্রয় করেছে এক্ষেত্রে বাকি প্রজাগুলো কি পদক্ষেপ নিতে পারে

মনে করুন খতিয়ানের তিনজন প্রজার মধ্যে সেতার উদ্দিন চল্লিশ শতাংশ জায়গা বিক্রয় বা হস্তান্তর করেছেন। এক্ষেত্রে মঈন উদ্দিন এবং লতিফুন্নেসার করণীয় গুলো কি হতে পারে। ভূমি মালিকগণ এমন একটি পর্যায়ে এসে বিষয়টি উপলব্ধি বা জানতেপেরেছেন, যখন খতিয়ানে উল্লেখিত তিনজন ব্যক্তির কেউই জীবিত নেই এমনকি তাদের রেখে যাওয়া সরাসরি ওরসজাত সন্তানেরাও জীবিত নাই। রয়েছে তাদের রেখে যাওয়া সন্তানদের সন্তান অর্থাৎ তাদের নাতি-পুতি।
  • প্রথমত যদি সুযোগ থাকে অর্থাৎ খতিয়ানে উল্লেখিত ব্যক্তিবর্গ যদি জীবিত থাকে তাহলে তাদের সাথে বসে বিষয়টি মীমাংসা করে নিতে হবে। সে জেনে করুক অথবা ভুলবশত করুক তা সংশোধন করে নিতে হবে।
  • এখন আসা যাক, যদি উক্ত খতিয়ানের সরাসরি অংশীদারগণ জীবিত না থাকেন সে ক্ষেত্রে কি করা যায়। আপনি যদি ভুক্তভোগী হন এক্ষেত্রে আপনার করণীয় বর্তমান সময়ে উক্ত সম্পত্তিটুকু কার কাছে বিদ্যমান রয়েছে তাকে বিষয়টি অবগত করা। সে যদি বিষয়টি ভালোভাবে বুঝে নেই এবং মেনে নেয় তাহলে বিষয়টি অতি সহজ।
  • তবে তাকে জানানোর পরও যদি সে বিষয়টি বুঝতে বা মানতে রাজি না হয় তাহলে আপনি যেটি করতে পারেন তা হচ্ছে। আপনাকে উক্ত জমিটি দখলে নিতে হবে এবং আইনের শরণাপন্ন হতে হবে।

প্রাপ্ত অংশের চেয়ে বেশি বিক্রয় করলে উক্ত সম্পত্তিটি টিকবে কিনা

খতিয়ানের প্রাপ্ত অংশের চেয়ে বেশি অংশ বিক্রি করলে অর্থাৎ আমাদের উপরোক্ত উদাহরণে সে তার উদ্দিন এর মত অংশের চেয়ে বেশি বিক্রয় করলে বেশি অংশটুকু টিকবে না। আপনাকে যদি বিষয়টি ক্লিয়ার করতে চাই তাহলে বিষয়টি এমন দাঁড়ায়। 

সেতার উদ্দিনের প্রাপ্ত অংশ ৩৩.৫ শতাংশ, সে হস্তান্তর করেছে ৪০ শতাংশ। তাহলে সে বেশি হস্তান্তর করেছে ৬.৫ শতাংশ এক্ষেত্রে সে তার উদ্দিনের ৬.৬ শতাংশ জমিটি টিকবে না। কোন না কোনদিন কেউ না কেউ অবশ্যই উক্ত সম্পত্তি টুকু নিয়ে যাবে।

খতিয়ানের প্রাপ্ত অংশ উদ্ধার করতে করণীয় কি?

  • প্রথমে জমিটি আপনাকে দখলে নিতে হবে।
  • উক্ত জমিটি যদি বেশি করে নামজারি করে নেই কোন অংশীদার। তাহলে বর্ধিত অংশটুকু উপর মিশ কিসের আবেদন করতে হবে।
  • যে ব্যক্তি উক্ত সম্পত্তিটুকু বর্ধিত করে হস্তান্তর করেছে তাকে বিষয়টি অবহিত করতে হবে। অথবা তার অংশীদারদের অথবা উক্ত সম্পত্তিটি যেকোনোভাবে প্রাপ্ত বর্তমানের যে রয়েছে তাকে অবহিত করতে হবে।
  • বিষয়টি সে যদি বুঝতে পারে এবং মেনে নেয় তাহলে খুবই ভালো। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো বুঝেও না বুঝার ভান করে, এবং তা ছাড়তে রাজি থাকে না।

উপসংহার

খতিয়ানের প্রাপ্ত অংশ থেকে কোন সময়তেই বেশি সম্পত্তি হস্তান্তর করার চেষ্টা করবেন না। এতে করে আপনি সাময়িকভাবে উপকৃতহলেও বা কারো ক্ষতি করতে পারলেও। স্থায়ীভাবে এর ভবিষ্যৎ অত্যান্ত খারাপ এবং নেক্কারজনক। তাই এ সকল কাজ হতে বিরত থাকুন। এবং খতিয়ানের প্রাপ্ত যথাযথ অংশটুকুই ব্যবহার, ভোগ দখল, বিক্রয় হস্তান্তর করুন।

লেখকের কথা

যে সকল ব্যক্তি তার প্রাপ্ত অংশ থেকে বেশি বিক্রয় করতে চাই তারা তাদের শরীকদেরকে অবহিত করে বন্টন করে কাজটি অতি সহজে করতে পারেন। তবে যদি আপনার মনে কু ধারণা পোষণ করেন তাহলে বিষয়টি ভিন্ন। তবে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এ সকল গর্হিত নেক্কারজনক কাজ করা হতে বিরত থাকুন। যদি আপনার একান্তই প্রয়োজন হয় তাহলে অবশ্যই অবশ্যই অংশীদারদের সাথে কথা বলে বিষয়টি সমাধান করুন।

পরিশেষে বলতে চাই আমাদের এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনিসহ আপনার পরিচিত জনদেরকে আমাদের ওয়েবসাইট বেস্টওয়াল্ড কে ফলো করে রাখুন যাতে করে পরবর্তী আপডেট এবং নতুন আর্টিকেল এর সন্ধান পেয়ে যান।

শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকার জন্য বেস্টওয়াল্ড এর পক্ষ থেকে আপনাকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Bestwold নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url