নামজারি করার প্রয়োজন নেই যে সাতটি দলিল রেজিস্ট্রি হলে
আসসালামুআলাইকুম, সু-প্রিয় পাঠক বৃন্দ! বেস্টওয়াল্ড এর পক্ষ থেকে আপনাকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আমরা লক্ষ্য করছি যে, আপনি এই মুহূর্তে নামজারি করার প্রয়োজন নেই যে সাতটি দলিল রেজিস্ট্রি হলে এ সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আমরা উক্ত বিষয়টি নিয়ে এই আর্টিকেলে আলোচনা করেছি আশা করছি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়বেন।
বর্তমান সময়ে নানান জায়গা হতেই শোনা যাচ্ছে যে, নামজারি করার কোন প্রয়োজন নেই! বিষয়টি আসলে কতটুকু সত্য এবং আসলেই কি নামজারি করার কোন প্রয়োজন নেই? ইনশাল্লাহ আজকের এই আর্টিকালের মধ্যে আপনার এই সমস্ত প্রশ্নগুলোর সমাধান পেয়ে যাবেন।
ভূমিকা
নামজারি হচ্ছে একটি ভুমি দাবি করার এবং মালিকানার অন্যতম একটি মূল উপাদান। যাহার উপর ভিত্তি করে একজন ভূমি মালিক এবং সরকার নিশ্চিত হয় উক্ত ভুমিটি কার নামে রয়েছে। নামজারি এমন একটি মাধ্যম, যা হতে সরকার বুঝতে পারে কোন জমিটি কার নামে প্রচলিত রয়েছে। এই নামজারির উপর ভিত্তি করেই সাধারণত ভূমি মন্ত্রণালয়ের ইউনিয়ন ভূমি অফিস কর্তৃক ভূমি উন্নয়ন কর আদায় করা হয়।
নামজারি করার প্রয়োজন নেই
বর্তমান সময়ে নানান জায়গা হতে শোনা যাচ্ছে, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং ইউটিউবে এই সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের ভিডিও, কনটেন্ট আমাদের নজরে আসছে। তাহলে কি এখন থেকে আর নামজারি করার প্রয়োজন নেই? চলুন বিষয়টি সম্পর্কে একটি জেনে নেওয়া যাক।
আসলে নামজারি হবে না বা নামজারি করার প্রয়োজন নেই বিষয়টি মোটেও 100% সঠিক নয়। ভূমি মন্ত্রণালয় হতে এখনো এ ধরনের কোন নির্দেশনা বা প্রজ্ঞাপন জারি হয় নাই! যে, নামজারি করার প্রয়োজন নেই। তবে এটুকু সত্য যে, ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পাইলট প্রকল্প হিসাবে ১৭ টি উপজেলায় এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে যে নামজারি অটোমেশন হয়ে যাবে।
নামজারি অটমেশন কি
আসলে নামজারি অটোমেশন হচ্ছে, ভূমি মালিকগণ আমাদের বর্তমান সময়ে যে মাধ্যমে একটি ভূমি নামজারি করন করা হয়, সে সকল কাজগুলো উক্ত ভূমি মালিক না করে ভূমি মন্ত্রণালয় এবং আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে উক্ত কাজটি সম্পন্ন করা হবে।
আমরা সকলেই জানি যে একটি জমির দলিল সৃষ্টি করা হয় অর্থাৎ জমির দলিল রেজিস্ট্রি করা হয় আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে এবং উক্ত জমিটি নামজারি করা হয় ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে।বর্তমান সময়ে সরকারের এই দুই বিভাগ সমন্বয় করে ১৭টি উপজেলায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে নামজারির automation system চালু করা হয়েছে।
আশা করা যাচ্ছে, অতি অল্প সময়ের মধ্যেই উক্ত প্রকল্পটি পাইলট প্রকল্পের আওতা হতে বেরিয়ে এসে সমস্ত বাংলাদেশে এই কার্য পর্যায়ক্রমে চালু করা হবে। তবে সেটি একান্তই ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে। অতএব ভূমি মালিকদের কে এখনোই অযথা টেনশন করে মালিকানা পরিবর্তনের অন্যতম মাধ্যম নামজারি করা হতে বিরত থাকা উচিত হবে না।
যে সাত ধরনের ভূমি মালিকের নামজারির প্রয়োজন হবে না
নামজারি সিস্টেম বর্তমানে যে ধরনের রয়েছে ঠিক সে ধরনের নামজারি সিস্টেম একেবারেই বিলুপ্ত হচ্ছে না। এটি আপনাকে মাথায় রাখতে হবে। তবে একথাও সত্য যে ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশক্রমে ৭ ধরনের ভূমি মালিকগণ তাদের নামজারীর ধরন অটোমোশন হতে যাচ্ছে। চলুন এ পর্যায়ে দেখে আসি কোন সাত ধরনের ভূমি মালিকগণের নাম জারি সিস্টেম পরিবর্তন হচ্ছে।
- বিক্রয় কবলা- আপনি যদি বিক্রয় কবলা দলিলের মাধ্যমে একটি জমির মালিকানা প্রাপ্ত হন তাহলে উক্ত জমিটির আলাদাভাবে নামজারি করার প্রয়োজন হবে না। আপনার জমি রেজিস্ট্রি হওয়ার পরেই নামজারি এর জন্য সরাসরি সাব রেজিস্টার অফিস হতে এসিল্যান্ড অফিসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল হয়ে নামজারি কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে।
- হেবার ঘোষণা বা দানপত্র- আপনি যদি হেবার ঘোষণা অথবা দানপত্র দলিলের মাধ্যমে একটি জমির মালিকানা গ্রহণ করেন তাহলে উক্ত দলিলটির নামজারি সম্পন্ন করার প্রয়োজন হচ্ছে না। কারণ আইন মন্ত্রণালয় ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে উক্ত জমির দলিল সমূহ অটোমেটিক নামজারির প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
- সরকারের খাস জমি- আপনি যদি সরকারের একটি খাস জমি কবুলিয়ত দলিলের মাধ্যমে মালিকানা পেয়ে থাকেন তাহলে উক্ত দলিলের শর্ত অনুযায়ী যত বছর পর আপনি উক্ত জমিটির পূর্ণ মালিকানা পেয়ে যাবেন সে সময় সরকার এর ভূমি মন্ত্রণালয় করতে উক্ত জমিটি আপনার নামে অটোমেটিক ভাবে নামজারি হয়ে যাবে।
- নিলামকৃত জমি- ব্যাংকে বন্ধকৃত জমি নিলাম হলে অথবা সরকার ভূমি উন্নয়ন কর ব্যাহত হওয়ার কারণে কিংবা অন্য যেকোনো কারণে একটি জমি নিলাম করলে উক্ত জমি যে ক্রয় করবে অর্থাৎ নিলামে যে মালিক হবে উক্ত জমিটি সরকারের আইন মন্ত্রণালয় এবং ভূমি মন্ত্রণালয় এর নিজ দায়িত্বে যে ব্যক্তি উক্ত জমি ক্রয় করবে বা মালিকানা পাবে তার নামে অটোমেটিক ভাবে নামজারির কাজ সম্পন্ন করা হবে।
- এওয়াজ বদল- আপনি যদি বিনিময় দলিলের মাধ্যমে অর্থাৎ এওয়াজ বদল দলিলের মাধ্যমে আপনার মালিকানা পরিবর্তন হয়ে থাকে, তাহলে উক্ত পরিবর্তিত মালিকানা ভুক্ত জমিটি এখন হতে জমি রেজিস্ট্রি হওয়ার পর অটোমেটিক ভাবে নামজারির কাজ সম্পন্ন করা হবে।
- ওসিয়ত নাম- সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পর হতে, আপনাদের যে সকল ভূমি মালিকগণ ওসিয়ত নামা দলিলের মাধ্যমে একটি ভূমির মালিকানা পাবেন তাদেরকে আর নতুনভাবে নামজারির আবেদন করে নামজারি কাজ সম্পন্ন করার প্রয়োজন হবে না। প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পর হতে উক্ত কাজটি সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে পরিণত হবে।
- বন্টন নামা দলিল- আমরা যে সকল ভূমি মালিকগণ তাদের ওয়ারিশান সম্পত্তি নিজেদের মধ্যে অর্থাৎ ওয়ারিসদের মধ্যে ভাগ বন্টন করে, সাব রেজিস্ট্রি অফিসের মাধ্যমে একটি জমি বন্টন নামা দলিলের সৃষ্টি করব উক্ত দলিলটি সম্পাদন হওয়ার পরেই প্রতিটি ভূমি মালিকের নামে একত্রে অথবা আলাদা আলাদা ভাবে অটোমেটিকলি নামজারীর কাজটিও সম্পূর্ণ হয়ে যাবে।
সাত ধরনের দলিলের নামজারি কিভাবে হবে
ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পর উপরোক্ত ৭ ধরনের জমি আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের মাধ্যমে রেজিস্ট্রি ভুক্ত হওয়া মাত্রই উক্ত জমির প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্রের মাধ্যমে নতুন পরিবর্তিত হওয়া ভূমি মালিকের নামে ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক নামজারির কাজটি অটোমেটিক ভাবে সম্পন্ন করা হবে। এজন্য বর্তমান সময়ে যে ভূমি মালিকদের কে ই নামজারির আবেদনটি করতে হয় সেটির আর প্রয়োজন হবে না।
জেনে রাখা ভালো
অবশ্যই আমাদের মনে রাখতে হবে যে, উপরে উল্লেখিত ৭ ধরনের মালিকানা পরিবর্তনের বাইরে যে সকল মাধ্যমে একটি ভূমির মালিকানা পরিবর্তন হবে উক্ত মালিকবর্গ কে অবশ্যই নামজারির কাজটি সম্পন্ন করে নিতে হবে। এবং আরো মনে রাখতে হবে যে, প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত যে সকল মাধ্যমেই মালিকানা পরিবর্তন হোক না কেন উক্ত মালিকানা পরিবর্তনের নামজারি করে নিতে হবে নিজ দায়িত্বে।
উপসংহার
বর্তমান সময়ে আমাদের স্মার্ট বাংলাদেশে স্মার্ট ভূমি সেবার মাধ্যমে ভূমি মালিকদের কে অনেক সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে তারই ধারাবাহিকতায় নামজারির যে একটি জটিল প্রক্রিয়া ছিল তা সময়ের ব্যবধানে সহজলভ্য হতে যাচ্ছে। আমরা আশা করছি যে অতি শীঘ্রই ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্দেশনা পাবো এবং প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে তা সকল স্তরের জনগণকে জানিয়ে দেওয়া হবে উক্ত কার্যক্রমের ফলাফল।
লেখকের কথা
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ইউটিউব হতে প্রাপ্ত এবং বিভিন্ন লোক মারফত প্রাপ্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে আপনাদের চলমান নামজারি কার্যক্রম গুলো ফেলে রাখবেন না। কারণ জমি রেজিস্ট্রি করাই বর্তমানে মালিকানা পরিবর্তনের মূল উপাদান নয় বরং রেজিস্ট্রি করার পাশাপাশি নামজারি করার মাধ্যমে একটি জমির মালিকানা পরিবর্তন হয় এটি আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
পরিশেষে বলতে চাই আমাদের এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনিসহ আপনার পরিচিত জনদেরকে আমাদের ওয়েবসাইট বেস্টওয়াল্ড কে ফলো করে রাখুন যাতে করে পরবর্তী আপডেট এবং নতুন আর্টিকেল এর সন্ধান পেয়ে যান।
শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকার জন্য বেস্টওয়াল্ড এর পক্ষ থেকে আপনাকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ।
Bestwold নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url