ইতিকাফ কি? ইতিকাফের প্রকারভেদ করণীয় ও বর্জনীয়
আসসালামু আলাইকুম সু-প্রিয় পাঠক বৃন্দ! আমাদের ওয়েবসাইট বেস্টওয়াল্ড এর পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আমরা লক্ষ্য করছি যে, আপনি এই মুহূর্তে ইতিকাফ কি? ইতিকাফের প্রকারভেদ করণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আমরা এই আর্টিকালের মাধ্যমে উক্ত বিষয়ে আলোচনা করেছি! আশা করছি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়বেন।
ইতিকাফ হচ্ছে মুসলিম জাহানের জন্য রমজান মাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। বছরে ১২ টি মাস এর মধ্যে রমজান মাস হচ্ছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং মহামান্বিত কোরআন নাজিলের মাস। আর এই পবিত্র মাহে রমজান কে ঘিরে আমরা মুসলিম উম্মাহ বিশেষ করে মোমিনগণ বেশ কিছু ইবাদত বন্দগির মাধ্যমে এই মাসটি অতিবাহিত করি।
ভূমিকা
রমজানের সিয়াম পালন করা, তারাবির নামাজ আদায় করা, ইতিকাফ, লাইলাতুল কদর সহ এই মাসটিতে দান সদকা মানুষকে খাওয়ানো হতে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের ভালো ভালো কাজের আঞ্জাম দিয়ে থাকে শুধুমাত্র মাহে রমজানকে তার উপযুক্ত প্রাপ্য সম্মান দেওয়ার জন্য এবং সর্বোপরি মহান রব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে।
ইতিকাফ কি
ইতিকাফ শব্দটি আরবি শব্দ। যার শাব্দিক অর্থ হচ্ছে আটকে থাকা, মগ্ন থাকা, আঁকড়ে ধরা, অবস্থান করা, অভিমুখী হওয়া, নিবেদিত হওয়া, নিরবিচ্ছিন্ন হওয়া ইত্যাদি।
আরো পড়ুনঃ ওযুর ফরজ কয়টি ও কি কি
পরিভাষায় ইতিকাফ হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে দুনিয়ার যাবতীয় কার্যকলাপ হতে বিরত থাকা এবং পুরুষ ব্যক্তিদের জন্য জুম্মা মসজিদে অবস্থান করা এবং নারীদের জন্য ঘরের একটি নির্জন কোণে অবস্থান করা। সাথে সাথে আল্লাহকে সন্তুষ্টি রাখার জন্য যাবতীয় আমল করা যেমন নফল ইবাদত হিসেবে নামাজ পড়া, কোরআন পড়া, জিকির-আজগার করা এবং ধ্যানে মগ্ন থাকা।
ইতিকাফের প্রকারভেদ
ইতিকাফ হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে পুরুষ ব্যক্তিদের মসজিদে অবস্থান করা, যে মসজিদে পাঞ্জেগানা নামাজ আদায় করা হয় এবং জুমা মসজিদ হওয়া। ইতিকাফ যেহেতু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে রমজান মাসে পালন করা হয়ে থাকে সেই দিক বিবেচনায় ইতিকাফকে আমরা তিনটি ভাগে বিভক্ত দেখতে পাই। চলুন এ পর্যায়ে ইতিকাফের তিনটি ভাগ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ওয়াজিব ইতিকাফ- আলোর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে এবং কোন কিছুর জন্য মানত করে থাকলে অর্থাৎ ইতিকাফের মানত করে থাকলে সেই ইতিকাফ উক্ত ব্যক্তির পালন করা ওয়াজিব হয়ে যায়।
সুন্নত ইতিকাফ- পবিত্র মাহে রমজান মাসের শেষ দশক এ ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে অবস্থান করাকে সুন্নত ইতিকাফ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ বিষয়ে বুখারীর হাদিস নম্বর ২০৪৪ এবং সুনানে আবু দাউদ হাদিস নম্বর ২৪৬৩.
উল্লেখ আছে যে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা বর্ণনা করেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে অবস্থান করতেন। একবার তিনি যুদ্ধের কারন-বশত মসজিদে অবস্থান করতে না পারায় পরবর্তী সময়ে ২০ দিন ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে অবস্থান করেন।
আরো পড়ুনঃ গোসল ফরজ হওয়ার কারণ গুলো কি কি
আরেক হাদিসের বর্ণনায় পাওয়া যায় মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ প্রতি রমজানে শেষ দশকে ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে অবস্থান করতেন। তবে তিনি যে বছর আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করেন উক্ত বছর তিনি রমজান মাসে ২০ দিন ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে অবস্থান করেছিলেন।
নফল ইতিকাফ- ইতিকাফের নিয়তে যে সকল ব্যক্তি রমজান মাসের শেষ দশকে এক-দুই দিন বা দুই বা ততোধিক দিন মসজিদে অবস্থান করেন এবং রমজানের বাইরেও ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে অবস্থান করেন উক্ত অবস্থান করাকে নফল ইতিকাফ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
ইতিকাফের মৌলিক শর্ত সমূহ
ইতিকাফের মৌলিক শর্ত সমূহ অর্থাৎ ইতিকাফ অবস্থায় করণীয় হচ্ছে-
- পরিশুদ্ধভাবে ইতিকাফের জন্য নিয়ত করা।
- আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ইতেকাফ করা।
- পুরুষদের জন্য পাঞ্জেগানা নামাজ আদায় হয় এমন জায়গায় অর্থাৎ জুম্মা মসজিদে অবস্থান করা।
- নারীদের জন্য ঘরের এক কোণে নির্জনে একাকীত্ব হবে ইবাদত বন্দেগী করা যায় এমন একটি স্থানে অবস্থান করা।
- বড় ধরনের অপবিত্রতা হতে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা।
- রোজা অবস্থায় থাকা।
ইতিকাফ অবস্থায় যে সকল কাজ বর্জনীয়
- ইতিকাফ অবস্থায় কোন রোগীকে দেখতে যাওয়া যাবে না।
- ইতিকাফ অবস্থায় কোন জানাযার নামাজে শরিক হওয়া যাবে না।
- স্ত্রী সহবাস করা যাবে না।
- স্ত্রীর সাথে মেলামেশা করা যাবে না, চুম্বন করা যাবে না।
- প্রয়োজন ছাড়া অর্থাৎ গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন ছাড়া মসজিদ পরিত্যাগ করা যাবে না।
- সিয়াম পালন করা ব্যতীত ইতিকাফ হবে না এবং ইতিকাফে থাকা যাবে না।
- পুরুষ মানুষের জন্য জামে মসজিদ ছাড়া ইতিকাফে অবস্থান করা যাবে না।
ইতিকাফের জন্য কোথায় অবস্থান করবে
সওয়াবের দিক থেকে বিবেচনা করলে
- সর্বপ্রথম একজন মুসলমান ব্যক্তির জন্য সবচাইতে প্রাপ্তি হবে মসজিদে বাইতুল্লাহ অর্থাৎ হারাম শরীফে ইতিকাফের জন্য অবস্থান করা।
- দ্বিতীয়তঃ সবের নিয়তে মসজিদে নববীতে অবস্থান করা ইতিকাফের জন্য।
- তৃতীয়তঃ মসজিদুল আকসা।
উল্লেখিত তিনটি মসজিদ ব্যতীত আর কোন মসজিদ নেই। যেগুলোনেই বড় সোয়াবের নিয়তে ইতিকাফের জন্য অবস্থান করা যায়। তবে বলা বাহুল্য যে, উল্লেখিত তিন মসজিদ ব্যতীত আপনার নিকটস্থ সবচাইতে বড় মসজিদে এবং জুম্মা মসজিদে ইতিকাফের জন্য অবস্থান করা।
ইতিকাফের জন্য কোরআনের ভাষা
ইসলামে ইতিকাফের বিধান অনেক পুরানো ও প্রাচীন ভাবে প্রচলিত। ইতিকাফ সম্পর্কে মহান রাব্বুল আলামীন কুরআনে বর্ণনা করেছেন সূরাতুল বাকারায় ১২৫ নম্বর আয়াতে- আমি ইব্রাহিম ও ইসমাইলকে আদেশ করলাম তোমরা আমার ঘর কে সেই সকল লোকের জন্য পবিত্র কর যারা এখানে তাওয়াফ করবে ইতিকাফ করবে এবং রুকু সিজদা করবে।
আরো পড়ুনঃ ইসলামে বিয়ের জন্য মেয়ে দেখার নিয়ম
পবিত্র কোরআনের এই আয়াত হতে স্পষ্ট বোঝা যায় যে ইসলামে ইতিকাফের গুরুত্ব অত্যন্ত প্রাচীন।
ইতিকাফ সম্পর্কে হাদিসের বর্ণনা
হাদিসের কোন এক বর্ণনায় এসেছে, ইমুর ওমর ইবনুল খাত্তাব ইসলাম গ্রহণের পূর্বে কোন এক সময় মসজিদে হারামে এক রাতের জন্য গীতিকাফের মানত করেছিলেন পরবর্তী সময়ে ইসলাম গ্রহণের পর হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কে জানালে, প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ তার মানত পূরণের জন্য নির্দেশ দেন। বুখারীর হাদিস ২০২৩.
উপসংহার
ইতিকাফ এমন একটি ইবাদত যা প্রতিটি মুসলমান নর ও নারীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলত পূর্ণ। ইহা এমন একটি ইবাদত যা একটি জুমা মসজিদের অন্তর্ভুক্ত সকল মুসল্লিদের মধ্যে একজন আদায় করলে উক্ত মসজিদের অন্তর্ভুক্ত সকল মুসল্লির আদায় করা হয়ে যায় বলে জানা যায়। পক্ষান্তরে উক্ত মসজিদের অন্তর্ভুক্ত কোন মুসল্লী যদি ইতিকা পালন না করে তাহলে ওই মসজিদের অন্তর্ভুক্ত সকল মুসল্লি গুনাগার হবে।
লেখকের কথা
মাহে রমজান মাস প্রতিটি মুসলমান ঈমানদার এর জন্য একটি মহিমান্বিত মাস এ মাসকে যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ভালোবাসেন অনুরূপভাবে মুসলমান মুসলিম ঈমানদারগণ এ মাসটিকে যথাযথ মর্যাদা পূর্ণভাবে পালন করে থাকে।
মহান রাব্বুল আলামিন বলেছেন সিয়াম আমার জন্য আর এর প্রতিদান আমি নিজ হাতে দিব। তাই আমাদের সকলেরই উচিত হবে রমজান মাসের যথাযথ মর্যাদায় পালন করা এবং আমাদের পূর্ববর্তী সকল পাপ কাজের ক্ষমা আল্লাহর কাছে চেয়ে নেওয়া।
পরিশেষে বলতে চাই আমাদের এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনিসহ আপনার পরিচিত জনদেরকে আমাদের ওয়েবসাইট বেস্টওয়াল্ড কে ফলো করে রাখুন যাতে করে পরবর্তী আপডেট এবং নতুন আর্টিকেল এর সন্ধান পেয়ে যান।
শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকার জন্য বেস্টওয়াল্ড এর পক্ষ থেকে আপনাকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ।
Bestwold নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url