সরকারি খাস জমি বন্দোবস্ত নেওয়ার নিওম
আসসালামু আলাইকুম সুপ্রিয় পাঠক বিন্দু! আপনাকে জানাই আমাদের ওয়েবসাইড বেস্টওয়ার্ল্ডের পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আমরা লক্ষ্য করছি যে, এই মুহূর্তে আপনি সরকারি খাস জমি বন্দোবস্ত নেওয়ার নিওম এই বিষয়ে জানার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে উক্ত বিষয়টি নিয়ে স্পষ্ট ধারণা দিয়েছি, আশা করছি শেষ পর্যন্ত পড়ে নিলে উক্ত বিষয়ে একটি স্পষ্ট ধারণা পেয়ে যাবেন।
খাস জমি হচ্ছে সরকারের অধিভুক্ত এক ধরনের কৃষি এবং অকৃষি জমি সমূহ যা মূলত বাংলাদেশ সরকারের ০১ (এক) নম্বর খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত। মূলত রেকর্ডকালীন সময়ে যে সকল জমি সমূহের কোন মালিকানা ওয়ারিশ পাওয়া যায় না সে সকল জমি সমূহ সরকারের খাস জমির অন্তর্ভুক্ত হয়। আবার বাংলাদেশ আইনের ধারা মোতাবেক কোন প্রজা যদি তিন বছর ভূমি উন্নয়ন পর পরিষদ না করে তাহলে উক্ত জমি সরকার চাইলে খাস করে নিতে পারে।
ভূমিকা
খাস জমি এমন একটি জমি যার মালিকানা কেবলমাত্র দেশের সরকার। খাস জমির সমূহ সরকার তার নিজ কাজে ব্যবহার করে থাকে আবার কোন কোন সময় তার জনগণকে লিজ হিসাবে বা বন্দোবস্ত হিসাবে দিয়ে থাকে। বর্তমান সময়ে মাত্র ছয় টাকার বিনিময়ে সরকারি খাস জমি পাওয়া সম্ভব। তবে উক্ত জমি পেতে হলে বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে এবং ক্যাটাগরি রয়েছে। সে সকল ক্যাটাগরির মধ্যে আপনাকে থাকতে হবে।
খাস জমি কি
সরকারি খাস জমি বন্দোবস্ত নেওয়ার পূর্বে আপনাকে জানতে হবে আসলে খাস জমি কি? চলুন আমরা এ পর্যায়ে জেনে নিই সরকারি খাস জমি কি- খাস শব্দটি ফারসি শব্দ এর বাংলা হচ্ছে নিজ, নিজস্ব বা আপন। ১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় প্রজাস্বত্ব আইনের ৭৬ (ছিয়াত্তর) ধারা অনুযায়ী যখন কোন জমি সরকারের হাতে চলে যায়।
সরকার নিজের আয়ত্তে নিয়ে নেই বা সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে যায় তখন উক্ত জমিকে খাস জমি বলে। এছাড়াও কোন ব্যক্তি তিন বছরের অধিক ভূমি উন্নয়ন কর পরিষদ করতে ব্যর্থ হলে উক্ত জমিও সরকার চাইলে খাস জমির অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। এছাড়াও নদী ভাঙ্গনের ফলে যে সকল জমি নদীর গর্ভে চলে যায় সে সকল জমির খাস জমির অন্তর্ভুক্ত।
জমি কেন খাস হয়
সরকারি খাস জমি বন্দোবস্ত নেওয়ার পূর্বে চলুন আমরা জেনে আসি জমি কেন খাস হয়? বেশ কিছু কারণে জমি খাস হয়ে যেতে পারে।
- কোন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করার পর তার রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে যদি কোন ওয়ারিশ না থাকে তাহলে উক্ত জমি সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে যায় এবং সেই জমি খাস জমিতে রূপান্তরিত হয়।
- কোন ব্যক্তি যদি স্বেচ্ছায় সুস্থ মস্তিষ্কে অন্যের বিনা প্ররোচনায় এবং কোন হুমকি ধামকির মাধ্যমে না হয়ে একেবারে নিজ উদ্যোগে তার সম্পত্তি সরকারের হাতে নেস্ত করে তাহলে উক্ত সম্পত্তি খাস জমির অন্তর্ভুক্ত হবে।
- কোন ব্যক্তি যদি তিনটি বছর তার সম্পত্তির কোন খোঁজ খবর না রাখে এবং পরিত্যক্ত হিসেবে থাকে এবং ব্যবহার না করে থাকে সাথে সাথে ভূমি উন্নয়ন কর যদি তিন বছর বন্ধ থাকে তাহলে উক্ত জমি খাস জমিতে রূপান্তরিত হবে।
- কোন ব্যক্তি তার জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় ব্যবহার না করে, ভূমি উন্নয়ন কর পরিষদ না করে, তার উত্তরাধিকার গণ ৫ বছর যাবত যদি উক্ত সম্পত্তি কোন খোঁজ খবর না রাখে এবং পরিত্যক্ত অবহেলিত থাকে এবং পাঁচ বছর ভূমি উন্নয়ন কর পরিষদ না করে, তাহলে উক্ত সম্পত্তি খাস জমির অন্তর্ভুক্ত হবে।
- কোন জমির যদি নিয়মিত খাজনা পরিষদ না করা হয় এবং তা যদি অনধিক তিন বছর যাবত খাজনা পরিশোধ না করে তাহলে উক্ত জমি সরকার চাইলে খাস জমির অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।
- নদী ভাঙ্গনের ফলে যে সকল জমি নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যায়, পরে সে সকল জমি পুনরায় জাগলে উক্ত জমি সরকারি খাস জমির অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।
কারা খাস জমি বন্দোবস্ত নিতে পারে
তিন প্রকার ব্যক্তি রয়েছে যারা খাস জমি বন্দোবস্ত পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারে অর্থাৎ খাস জমি পাওয়ার জন্য তিন শ্রেণীর ব্যক্তিকে উপযুক্ত ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। চলুন এ পর্যায়ে আমরা তিন প্রকার ব্যক্তি সম্পর্কে জেনে নেই যারা খাস জমি বন্দোবস্ত নিতে পারে।
- খাস জমি বন্দোবস্ত পেতে হলে প্রথমত তাকে কৃষক হতে হবে।
- ভূমিহীন হতে হবে খাস জমি পেতে হলে।
- সর্বশেষ ওই সকল ব্যক্তি যাদের ১০ শতকের কম জায়গা জমি রয়েছে উক্ত ব্যক্তি সকল সরকারের খাস জমি বন্দোবস্ত পাওয়ার আবেদন করতে পারে।
কাদের অগ্রধিকার দেওয়া হয়
খাস জমি পাওয়ার ক্ষেত্রে কাদের অগ্রাধিকার বেশি প্রদান করা হয় এ বিষয়ে আমরা এই মুহূর্তে আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করছি। খাস জমি বন্দোবস্ত দেওয়ার পূর্বে কিছু বিষয়ে যাচাই-বাছাই করা হয়।
- প্রথমত অগ্রধিকার দেওয়া হয় মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধা পরিবার দের।
- নদী ভাঙ্গনের ফলে ভূমিহীন হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের অগ্রধিকার দেওয়া হয়।
- বিধবা নারীরদেরকে অগ্রধিকার দেওয়া হয় তবে এখানে শর্ত থাকে যে উক্ত বিধবা নারীর একজন সক্ষম পুত্র সন্তান থাকতে হবে।
- কৃষি ভূমিহীন ব্যক্তি অর্থাৎ যে সকল ব্যক্তির বসতভিটা রয়েছে তাও আবার ১০ শতকের কম। উক্ত ব্যক্তিবর্গকে সরকারি খাস জমি বন্দোবস্ত দেওয়ার জন্য অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
- সরকারের অধিগ্রহণের ফলে কোন ব্যক্তি যদি ভূমিহীন হয়ে যায় তাহলে উক্ত ব্যক্তিকে সরকারের খাস জমি হতে বন্দোবস্ত দেওয়া হয় অগ্রধিকারের ভিত্তিতে।
খাস জমি চেনার উপায়
খাস জমি বন্দোবস্ত নেব! তো কিভাবে জানবো কোন জমিগুলো খাস জমির অন্তর্ভুক্ত। খাস জমি বন্দোবস্ত নেওয়া তো যাবে। আমরা তো খাস জমির নেওয়ার অগ্রধিকার রাখি এপর্যন্ত তো কনফার্ম। কিন্তু কোন জমিটুকু খাস তা আমরা আইডেন্টিফাই করব কিভাবে?
আরো পড়ুনঃ ওয়ারিশান সম্পত্তি নামজারি করবেন কিভাবে
চলুন এ পর্যায়ে কোন জমিগুলো খাস তা আইডেন্টিফাই করার নিয়ম টুকু জেনে নেই- স্থানীয় ভূমি অফিসে গিয়ে উক্ত ইউনিয়ন ভূসি অফিসের সংশ্লিষ্ট ৮ নম্বর রেজিস্টার হতে আমরা জানতে পারবো উক্ত ইউনিয়নের কোন জমিগুলো খাস।
খাস জমির প্রকারভেদ
ইউনিয়ন ভূমি অফিস এ সংরক্ষিত ৮ নম্বর রেজিস্টার হতে জানা যায় যে খাস জমি ৪টি পাটে বিভক্ত করে রেজিস্ট্রার ভক্ত করা হয়। আর এই খাত হতেই আমরা বুঝতে পারি যে খাস জমির প্রকারভেদ চার ধরনের। চলুন এ পর্যায়ে আমরা খাস জমির প্রকারভেদ বা পাঠ সমূহ জেনে নেই।
খাস জমি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ৮ নম্বর রেজিস্টার এর তথ্য অনুযায়ী যে চারটি ভাগে বিভক্ত করা হয় তা হচ্ছে-
- পাবলিক ব্যবহারিত খাস জমি অর্থাৎ পাবলিক যে সমস্ত খাস জমি ব্যবহার করে থাকে সেগুলো এক নাম্বার খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত খাস জমি।
- সরকারি কৃষি ও অকৃষি খাস জমি।
- সরকার তার নিজস্ব কাজে ব্যবহার করার জন্য যে সকল জমি প্রজাদের নিকট হতে অধিগ্রহণ বা একুয়ার করে থাকে উক্ত জমিগুলো খাস জমির অন্তর্ভুক্ত এবং এক নম্বর খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত সর্বোপরি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ৮ নম্বর রেজিস্টার এর অন্তর্ভুক্ত।
- সর্বশেষ নদী ভাঙনের ফলে যে সকল জমি নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যায় পরবর্তী সময়ে উক্ত জমিগুলো জেগে উঠলে সেই সকল জমি সমূহ এক নম্বর খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত ৮ নম্বর রেজিস্টারে থাকে।
সরকারি খাস জমি বন্দোবস্ত নেওয়ার নিয়ম
উপরোক্ত বিষয়গুলো জানা জরুরী ছিল বিধায় এতক্ষণ আমরা খাস জমি সম্পর্কে একটি ধারণা দিয়ে দিলাম এ পর্যায়ে আপনাকে আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত বিষয়টি অর্থাৎ বন্দোবস্ত নেওয়ার প্রসেস এবং নিয়মগুলো জানিয়ে দেব তাহলে চলুন এ পর্যায়ে আমরা আমাদের কাঙ্খিত বিষয়টি সম্পর্কে একটু জেনে নেই।
- খাস জমি বন্দোবস্ত নেওয়ার জন্য আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে।
- সদ্য তোলা ছবি আবেদন এর সাথে সংযুক্ত করতে হবে।
- চেয়ারম্যান কর্তৃক ভূমিহীন এর একটি সনদ সংগ্রহ করতে হবে।
- ন্যাশনাল আইডি কার্ডের ফটোকপি সংযুক্ত করতে হবে।
- আপনার সকল ডকুমেন্টস অর্থাৎ ছবি আইডি কার্ড সহ যাবতীয় সকল কাগজ চেয়ারম্যান কর্তৃক সত্যায়িতা করে নিতে হবে।
- সর্বশেষ আপনার আবেদনটি সংশ্লিষ্ট ডিসি বরাবর দাখিল করতে হবে। খাস জমির বন্দোবস্ত দেওয়ার একচ্ছত্র মালিক হচ্ছে সংশ্লিষ্ট ডিসি মহোদয়।
- আপনার আবেদনটি সাবমিট হওয়ার পর ডিসি অফিস কর্তৃক আবেদনটি সংশ্লিষ্ট উপজেলা ভূমি অফিস এসেলেন্ট বরাবর প্রেরণ করা হবে এবং উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি উক্ত আবেদনটি তদন্তের জন্য ইন্ডিয়ান ভূমি অফিস প্রেরণ করবে এবং উক্ত কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে যাচাই বাছাই করে ডিসি অফিস উক্ত ব্যক্তির বরাবরে ৯৯ বছরের জন্য লিজ প্রদান করবেন এবং উক্ত ব্যক্তিকে একটি কবুলিয়ত দলিল এর মাধ্যমে উক্ত সম্পত্তি প্রদান করবেন।
- উক্ত কবুলিয়ত দলিল বা পাট্টা দলিলের এক কপি সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে প্রেরণ করা হবে সাব রেস্টার সাহেব উক্ত দলিলটি সাব রেস্টার রেজিস্ট্রি করে নেবেন।
পরিশেষে বলতে চাই আমাদের এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনিসহ আপনার পরিচিত জনদেরকে আমাদের ওয়েবসাইট বেস্টওয়াল্ড কে ফলো করে রাখুন যাতে করে পরবর্তী আপডেট এবং নতুন আর্টিকেল এর সন্ধান পেয়ে যান।
শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকার জন্য বেস্টওয়াল্ড এর পক্ষ থেকে আপনাকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ।
Bestwold নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url