আশুরার দিনে করণীয় এবং বর্জনীয় কি কি
আসসালামু আলাইকুম! প্রিয় পাঠক বিন্দু, আপনাকে জানাই আমাদের ওয়েবসাইট বেস্টওয়াল্ড এর পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আপনি নিশ্চয়ই এই মুহূর্তে আশুরার দিনে করণীয় এবং বর্জনীয় কি কি বিষয়ে জানার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তারই ধারাবাহিকতায় আমরা আজ এই আর্টিকালের মাধ্যমে জানানোর চেষ্টা করছি। আশা করছি শেষ পর্যন্ত পড়বেন।
আশুরা এমন একটি দিন যে দিনটির ব্যাপারে হাদিসে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। ইসলামের গৌরবময় ইতিহাস। হাদিসে এই দিনটির ব্যাপারে অনেক উল্লেখ রয়েছে। আজ আমরা এই দিনটি সম্পর্কে একেবারে সামান্য কিছু জ্ঞান অর্জন করার লক্ষ্যে আর্টিকেলটি আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি।
ভূমিকা
আমরা এ বিষয়ে জানি যে আশুরার দিনটি হচ্ছে আরবি বছরের প্রথম মাস মহররম মাস এর ১০ তারিখ। এই দিনটি কে ঘিরে ইসলামে অনেক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, আমরা যদি এক একটি করে বলতে চাই তাহলে এর লিস্ট অনেক লম্বা হবে। তবে আমরা জানি যে এই দিনটিতে রোজা পালন করা, দান সদকা করা, রোজাদারদেরকে খাওয়ানো, নামাজ পড়া এবং কুরআন তেলাওয়াত করা অত্যন্ত নেকির কাজ।
আশুরা কি
আশুরা হচ্ছে একটি দিন! যে দিনটির অত্যন্ত গুরুত্ব রয়েছে এবং আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দিনটিকে মর্যাদাপূর্ণ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এবং এই দিনে তিনি রোজা পালন করেছেন। আশুরা হচ্ছে মহররম মাসের ১০ তারিখ।
আশুরা শব্দের অর্থ কি
আশুরা শব্দটি আরবি মহররম মাসের সাথে সম্পর্কিত। তাই চলুন আমরা আগে মহররম সম্পর্কে জেনে আসি। মহররম শব্দের অর্থ সম্মানিত, নিষিদ্ধ বা পবিত্র। আশুরা শব্দটি আরবি শব্দ “আশারা” হতে এসেছে, আর আমরা জানি আশারা শব্দের অর্থ আরবিতে ১০ ইঙ্গিত করা হয়। তবে আশুরা শব্দের নিজস্ব একটি অর্থ রয়েছে তা হচ্ছে বেগম, দুঃখীত, আত্মরক্ষাকারী ইত্যাদি।
আশুরার দিনে ঘটে যাওয়া ঐতিহাসিক উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা
- ১) মহান রব্বুল আলামিন এই দিনটিকে বেছে নিয়েছিলেন এই পৃথিবী সৃষ্টির জন্য। ভূমন্ডল নভোমন্ডল সৃষ্টি জগত বিভাজনের প্রক্রিয়ার সূচনা হয় এই আশুরার দিনে। মহান রাব্বুল আলামিন এই জগতকে ছয় দিনে বিভাজন করে সৃষ্টি করেছেন আর তার প্রথম দিনটি ছিল আশুরার দিন।
- ২) পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম মানব মৃত্যুর দিনটিও ছিল এই আশুরার দিন। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম মানুষ মৃত্যু ঘটে একটি হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে সে হত্যাযজ্ঞ টি ছিল হযরত আদম আলাইহি সাল্লাম এর দুই পুত্র হাবিল এবং কাবিলের মধ্যে।
- ৩) আমাদের আদি পিতা এবং পৃথিবীর প্রথম মানব হযরত আদম আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সৃষ্টি, উত্থান, পৃথিবীতে অবতরণ, খলিফা নিযুক্ত করুন, এবং হাওয়া আলাইহিস সাল্লাম এর সাথে একত্রিত করনের ঘটনাটিও ঘটে এই আশুরার দিনেই।
- ৪) হযরত নূহ আলাইহিস সাল্লাম এর প্লাবনের সময় নৌকায় যাত্রা শুরু হয় এই আশুরার দিনে।
- ৫) হযরত মুসা আলাইহিস সাল্লাম তার কওমকে স্বৈরাচারী শাসক ইসলামের এক নিকৃষ্টতম ব্যক্তি ফেরাউনের হাত হতে অর্থাৎ ফেরাউনের কবল হতে বনী ইসরাইলদের পরিত্রাণ দিয়েছিলেন মহান রাব্বুল আলামিন যেদিন সেটিও ছিল এই আশুরার দিন।
- ৬) এই দিনটি ছিল সেই দিন, যেদিন হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সাল্লাম তদানীন্তন স্বৈরাচারী শাসক শক্তিধর মূর্তিপূজারী নমরুদের তৈরি কৃত আগুনের কুন্ডলিপি হতে আল্লাহর কুদরতে উদ্ধার হন।
- ৭) আশুরার দিন হচ্ছে সেই দিন যে দিনে হযরত ইউনুস আলাইহিস সাল্লাম মাছের পেট থেকে মুক্তি পেয়েছিল, এটি সেই দিন যে দিন হযরত আসিয়া হযরত মুসা আঃ পুত্র হিসেবে পেয়েছিলেন। এমনই বহু সাক্ষী এই দিন, ইসলামের ইতিহাসে অগণিত ঘটনা ঘটেছে এই দিনটিকে ঘিরে।
তাইতো আজও মুসলিম সম্প্রদায় এই দিন জিকির আজকার, কোরআন তেলাওয়াত, নামাজ সালাত, রোজা সিয়াম পালন করে থাকেন। এই দিনটি সম্পর্কে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিনটিকে ঘিরে রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। যদিও এই রোজারটি নফল রোজা।
তবে আমাদের পূর্ববর্তী নবীদের উপর আশুরার দিনে রোজা রাখা ফরজ ছিল। আমাদেরকে মহান আল্লাহ তায়ালা অত্যন্ত দয়া করে মায়া করে পুরা রমজান মাস থেকে রোজা পালনের জন্য সুযোগ করে দিয়েছেন। যার ফলে আমরা পেয়েছি একটি মহিমান্বিত মাস যে মাসে সারা জীবনের পাপ পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া যায়।
আশুরার দিনে করণীয়
এটি এমন একটি দিন! যে দিনের গুরুত্ব এবং ফজিলত অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, এই দিনটিকে ঘিরে অনেক হাদিস রয়েছে যে হাদিসে ইঙ্গিত করা হয়েছে এই দিনটির কথা । মক্কার ইহুদী-মুশরিকেরা এই দিনটিতে সিয়াম পালন করতো। এবং তারা বলতো এটি আমাদের নবী হযরত মুসা আলাই সাল্লাম পালন করতেন তাই আমরা পালন করি।
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ তিনি বলেছিলেন তোমাদের হতেও আমি হযরত মূসার ধর্মের নিকটবর্তি তাই এই দিনটিতে তিনিও সিয়াম পালন করতেন এবং সাহাবীদের নির্দেশ প্রদান করলেন এই দিনে সিয়াম পালন করার জন্য তবে মুশরিক ও ইহুদীদের হতে একটু ব্যতিক্রম নির্দেশ প্রদান করলেন। তিনি বললেন আশুরার ১০ তারিখ এবং পূর্ব ও পরবর্তী তারিখ অর্থাৎ ০৯ এবং ১১ তারিখ রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন।
চলুন এ পর্যায়ে আশুরার দিনে করণীয় কি কি রয়েছে তা জেনে নিন
- আশুরার দিনে রোজা রাখে।
- আশুরার আগের দিন ও পরের দিন সিয়াম পালন করা।
- রোজাদারদের ইফতারের ব্যবস্থা করা।
- সাধ্যমত দান সদকা করা।
- গরিবদের আহারের ব্যবস্থা করা।
- জিকির-আজগার করা।
- নফল সালাত আদায় করা।
- কোরআন তেলাওয়াত করা।
- বেশি বেশি ইস্তেগফার আদায় করা।
আশুরার দিনে বর্জনীয়
আশুরা এমন একটি দিন যে দিনে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রিয় নাতি হযরত হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তদানীন্তন সময় ইরাকের ফরাত নদীর তীরে জালিম শাসক ইয়াজিদের সৈন্যের হাতে নির্মমভাবে শহীদ হন। এরই ধারাবাহিকতায় দিনটিকে একটি শোকের দিন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
যার ফলশ্রুতিতে আমাদের এই অঞ্চলে বিষেস করে ভারত,বাংলাদেশ,পাকিস্তান, বেশ কিছু শির্ক এবং বিদআতের প্রচলন আবির্ভূত হয়েছে যা হতে আমাদেরকে বিরত থাকা ঈমানী দায়িত্ব এবং সাথে সাথে মুসলিম ভাইদেরকে অবহিত করাও প্রয়োজন কোনটা ঠিক এবং কোনটা অনুচিত।
চলুন এ পর্যায়ে বর্জনীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে একটু ধারণা নেয়া যাক
- বিলাপ করে কান্না করা যাবে না।
- বুক চাপড়ানো বা আহাজারি করা যাবে না।
- বিভিন্ন প্রকার ধারালো অস্ত্রধারা যেমন ব্লেট, খুর, চাকু ইত্যাদি এর মাধ্যমে নিজের শরীরে আঘাত করে রক্তাক্ত করা যাবে না।
- তাজিয়া মিছিল বের করা যাবে না।
- তাজিয়া বানানো যাবে না।
- নকল হোসেনের কবর তৈরি করা যাবে না।
- নকল খবর তৈরি করে উক্ত কবরে নজরানা, হাদিয়া প্রদান করা যাবে না।
- হায় হোসেন, হায় আলী বলে বিলাপ করা যাবেনা এবং মতন করা যাবে না।
- আশুরাকে উল্লেখ করে কোন ধরনের বিশেষ পোশাক পরিধান করা যাবে না।
- আশুরা উপলক্ষে নির্দিষ্ট করে কোন জলসা বা মাহফিলের আয়োজন করা যাবে না।
আশুরা এমন একটি দিন যে দিন টিতে রয়েছে অত্যান্ত মাহাত্ম্য তাই আমরা এই দিনটিকে ঘিরে নামাজ রোজা জিকির-আজগার কোরআন তেলাওয়াত এবং সিয়াম পালন করবো। আবার পক্ষান্তরে এই দিনটিতেই ঘটে গেছে ইসলামের সিপাহ শালা হযরত হোসাইন রাদিয়াল্লাহু তা'আলার মৃত্যু। সেই দিকটি চিন্তা করলে অবশ্যই দিনটি বেদনাদায়ক এবং কষ্টের।
আর ইসলামে আছে কোন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে তিন দিনের বেশি শোক পালন করা যাবে না! তাই আমাদের সমাজে আজও যে সকল বিদআত কর্মকাণ্ড প্রচলিত আছে এবং যে সকল কুসংস্কার প্রচলিত আছে সেগুলোকে চিরদিনের জন্য দাফন করে দিতে হবে। এবং আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ যে সকল কাজের আঞ্জাম দিতে বলে গেছেন তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে।
উপসংহার
আশুরা দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এই দিনে ঘটে গেছে অসংখ্য ঐতিহাসিক ঘটনা। তারি ধারাবাহিকতায় আমরা শুকরিয়া আদায়ের জন্য এই দিনটিকে ঘিরে নামাজ রোজা জিকির-আজগার এর মাধ্যমে দিনটি অতিবাহিত করি। এবং আমাদের সমাজে যে সকল সংস্থা এবং বিদআত প্রচলিত আছে তারা বর্জন করে সঠিক আমলের অভ্যাস গড়ে তুল।
পরিশেষে বলতে চাই আমাদের এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনিসহ আপনার পরিচিত জনদেরকে আমাদের ওয়েবসাইট বেস্টওয়াল্ড কে ফলো করে রাখুন যাতে করে পরবর্তী আপডেট এবং নতুন আর্টিকেল এর সন্ধান পেয়ে যান।
শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকার জন্য বেস্টওয়াল্ড এর পক্ষ থেকে আপনাকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ।
Bestwold নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url